বায়ান্নর দিনগুলো সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে বায়ান্নর দিনগুলো প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে বায়ান্নর দিনগুলো প্রবন্ধের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর গুলো বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বায়ান্নর দিনগুলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীমূলক রচনার অংশবিশেষ। এই রচনায় ১৯৫২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী তাৎপর্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবহুল দিনগুলোর কথা স্থান পেয়েছে। তৎকালীন সরকার রাজনৈতিক নেতাদের বিনাবিচারে বছরের পর বছর আটকে রাখে। এরই প্রতিবাদে জেলের মধ্যে রাজবন্দি হিসেবে অনশন ধর্মঘট করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সহবন্দি মহিউদ্দিন আহমদ কীভাবে প্রস্তুত হচ্ছিলেন এখানে সেই বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে তাঁদের জেলগেটে নেওয়া হয়।তাঁদের ফরিদপুর জেলে পাঠানো হবে জেনে বঙ্গবন্ধু ইচ্ছাকৃতভাবে কৌশলে দেরি করতে থাকেন, যাতে ঢাকা বা নারায়ণগঞ্জের নেতাদের তাঁদের স্থানান্তর ও অনশনের খবরটা জানিয়ে দেওয়া যায়। সেই সুযোগ তৈরি হয় নারায়ণগঞ্জের একটি হোটেলে। সেখানে তিনি সহকর্মীদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে পরবর্তী কর্মসূচির কথা জানিয়ে দিলেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে ফরিদপুর জেলে গিয়ে তাঁরা আমরণ অনশন শুরু করেন। সিভিল সার্জন ও জেল কর্তৃপক্ষ তাঁদের অনশন ভাঙার জন্য অনুরোধ করলেও বঙ্গবন্ধু তাঁর সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন।
একুশে ফেব্রুয়ারি রাতে বঙ্গবন্ধু জানতে পারলেন ঢাকায় কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। এর প্রতিবাদে ফরিদপুরে হরতাল শোভাযাত্রা চলল। মিছিলটি আরও অনেক স্লোগান দিতে থাকে। শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মী, কয়েকজন অধ্যাপককেও জেলে পাঠানো হয়। ২৫ তারিখে বঙ্গবন্ধুর স্বাস্থ্য পরিক্ষা করে সিভিল সার্জন দেশের জন্য তাঁকে বেঁচে থাকার গুরুত্বের কথা বোঝান।
আরো পড়ুন: অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
২৭ তারিখে ডেপুটি জেলার এসে তাঁর মুক্তির অর্ডার পড়ে শোনান। মহিউদ্দিন আহমদ তাঁকে ডাবের পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান। একদিন পর বঙ্গবন্ধুর বাবা তাঁকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলেন। পাঁচ দিন পর বাড়ি পৌঁছে তিনি স্বজনদের দেখলেন, তাঁদের সেবাযত্নে কাটালেন। এভাবে বায়ান্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনার বিবরণ সংবলিত রচনাটির নামকরণ ‘বায়ান্নর দিনগুলো যথার্থ’ সুন্দর ও সার্থক হয়েছে।
বায়ান্নর দিনগুলো সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
উদ্দীপক: ১
বর্ণবাদ, বৈষম্য আর নিপীড়নের কারণে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এক সময় ফুঁসে ওঠে দক্ষিণ আফ্রিকার কালো মানুষগুলো। এদের পুরোধা ছিলেন নেসসন-ম্যান্ডেলা। আন্দোলন নস্যাৎ করতে শুরু হয় নির্যাতন। তাঁকে পুরে দেওয়া হয় জেলে। সশ্রম কারদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় তাঁকে। পাথর ভাঙার মতো সীমাহীন পরিশ্রমের কাজ করতে গিয়ে একসময় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু সে সময় এ পাষাণ হৃদয়ের মানুষগুলোর পাশাপাশি কিছু ভালো মনের মানুষও ছিলেন সেখানে যাদের ভালোবাসা, মমত্ববোধ আর সেবায় সিক্ত হয়েছিন তিনি। অবশেষে দীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগের পর তাঁর মুক্তি মেলে।
ক. ‘‘বায়ান্নর দিনগুলো’’ রচনায় বর্ণিত মহিউদ্দিন সাহেব কোন রোগে ভুগছিলেন?
খ. ‘মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল করতে থাকে’-কোন প্রসঙ্গে লেখক এ কথাটি বলেছেন?
গ. উদ্দীপকের নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে ‘‘বায়ান্নর দিনগুলো’’ রচনায় লেখকের সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি তুলে ধর।
ঘ. প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও চেতনাগত ঐক্যই নেলসন ম্যান্ডেলা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একসূত্রে গেঁথেছে-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:
ক. বায়ান্নর দিনগুলো রচনায় বর্ণিত মহিউদ্দিন সাহেব প্লুরিসিস রোগে ভুগছিলেন।
খ. ভাষা আন্দোলনে তৎকালীন সরকার আন্দোলনকারীদের হত্যা করে চরম ভুল করার প্রসঙ্গে লেখক এ কথা বলেছিলেন। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমিন তার চূড়ান্ত পতনের আগে বেশকিছু অপরিণামদর্শী কাজ করে গেছেন। তার সর্বশেষ ভুল ছিল ভাষা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ। মাতৃভাষার দাবিতে পাকিস্তান ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও এ ঘটনা ঘটেনি। এছাড়াও আন্দোলন দমানোর জন্য বুদ্ধিজীবি, রাজনীতিবিদ নির্বিশেষে যেকোনো মানুষকেই তিনি অযথা গ্রেফতার করে নির্যাতন চালিয়েছে। মূলত মানুষ তার পতনের আগ মুহূর্তে হিত্যাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে একের পর এক ভুল করতে থাকে। লেখক সেই প্রসঙ্গেই বলেছেন মানুষের যখন পতন আসে তখন পদে পদে ভুল হতে থাকে।
গ. উদ্দীপকের নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে ‘বায়ান্নর দিনগুলো রচনায় সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনরত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কারাভোগের দিকটি সাদৃশ্যপূর্ণ। সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই শাসকশ্রেণি সাধারণ মানুষের ওপর ব্যাপক শোষণ আর নির্যাতন চালিয়েছে। আর সেই শোষণের বিরুদ্ধে যুগে যুগে মানুষ প্রতিবাদ করেছে। প্রতিবাদী মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে অত্যাচারের শিকার হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ শাসকগোষ্ঠী সেখানকার সাধারণ কালো মানুষের নানাভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন করত। সাদা আর কালো মানুষের মধ্যে ব্যাপক বৈষম্য থাকায় নেলসন ম্যান্ডেলা কালোদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম শুরু করেন।
শাসকগোষ্ঠী তাঁকে প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে সশ্রম কারাদন্ডে দণ্ডিত করে। সুদীর্ঘ ২৭ বছর কারাভোগের পর তিনি মুক্তিলাভ করেন। অনুরূপ ভাবে দেশভাগের পর থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বাঙালির ওপর শোষণ দেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। এজন্য বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে বিনাবিচারে দীর্ঘদিন জেলে আটক রাখা হয়। এভাবে জেলে রাজবন্দি থাকার দিক দিয়ে নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে লেখক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাদৃশ্য বিদ্যমান।
ঘ. সাধারণ জনগণের অধিকার আদায়ের চেতনগত ঐ্যকই নেলসন ম্যান্ডেলা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একসাথে গেঁথেছে। নেলসন ম্যান্ডেলা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এমন দুজন নিঃস্বার্থ মানুষ যারা আজীবন নিপীড়িত মানুষের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। অত্যাচারিত মানুষের অধিকার আদায়ে তারা ছিলেন আপসহীন। তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই দুটি নিপীড়িত জাতি অধিকার আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার কালো মানুষেদের দাসের মত ব্যবহার করত। নেলসন ম্যান্ডেলা এই বৈষম্য মেনে নিতে পারেননি।
তিনি বর্ণবাদী সরকারের বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলেন। তিনি জীবনের অধিকাংশ সময়ই নির্যাতিত হয়েছেন। তবুও মানুষের মুক্তির সংগ্রাম থেকে তিনি পিছুপা হয়নি। বাহান্নর দিনগুলো রচনায় দেখা যায়,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও একই চেতনার অধিকারী ছিলেন। দেশভাগের পর পাকিস্তানের সরকার বাঙ্গালিদের বিভিন্নভাবে শোষণ করতে থাকে। অত্যাচারী শাসকের নির্যাতনের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোচ্চার হন। তিনি জনগণকে সাথে নিয়ে তুমুল আন্দোলন করে দিলেন। শত অত্যাচারেও তিনি তাঁর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি।
নেলসন ম্যান্ডেলা আন্দোলন করেছেন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্দোলন করেছেন পাকিস্তানি অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে। এভাবে তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন হলেও চেতনাগত ঐক্য বিদ্যমান। তবে তারা উভয়েই আন্দোলন করেছেন অত্যাচারিত- নিপীড়িত মানুষের পক্ষে, যা তাদেরকে একসূত্রে গেঁথেছে।
উদ্দীপক: ২
মাতৃভাষার জন্য যারা জীবন দেয়, তারা কেমন মানুষ আজ আমার ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে, আমার বুকের মধ্যে সেই বাংলাদেশের জন্য সেই বাংলা ভাষার জন্য একটুখানি বাঙালি হয়ে ওঠার জন্য, একটা ভয়ংকর যন্ত্রণা টনটন করে ওঠে!
ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর জেলে বসে কয়টি চিঠি লিখেছিলেন?
খ. ‘‘এদের কি দয়া মায়া আছে?’’-কেন কথাটি বছেলেন বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী?
গ. ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার কোন দিকটি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখা কর।
ঘ. ‘‘উদ্দীপকের বিষয়টিই বায়ান্নর দিনগুলো রচনার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য।’’ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:
ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর জেলে বসে চারটি চিঠি লিখেছিলেন।
খ. জেল থেকে মুক্তি পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাড়িতে গেলে তাঁর শরীর-মনের অবস্থা থেকে তাঁর স্ত্রী প্রশ্নোলিখিত কথাটি বলেছেন। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অপশাসনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য নেতাকে দীর্ঘদিন জেলে কাটাতে হয়েছে। বিনাবিচারে রাজবন্দিদের জেলে আটক রাখার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। অনশন ধর্মঘট পালন করতে গিয়ে যদি তার কিছু হয়ে যেত, তাতে শাসকগোষ্ঠীর কিছুই হতো না; ক্ষতি যা হতো তাঁর পরিবারের হতো, এদেশের মানুষের হতো কারণ শাসকগোষ্ঠীর কোনো দয়া মায়া নেই। এ প্রসঙ্গেই শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব আলোচ্য কথাটি বলেছেন।
গ. বায়ান্নর দিনগুলো রচনায় মাতৃভাষার প্রতি যে অনুরাগ প্রকাশিত হয়েছে, আলোচ্য উদ্দীপকে তাই প্রতিফলিত হয়েছে। বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা। এই ভাষার উপর অন্যায় আঘাত হেনেছিলো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। মুক্তিপাগল, সংগ্রামী বাঙালি জনগণ মেনে নেয়নি এ অন্যায়, তারা প্রতিবাদ করেছে। এ কারণে তাদের জেল খাটতে হয়েছে, জীবন পর্যন্ত দিতে হয়েছে। বায়ান্নর দিনগুলো রচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা প্রকাশ পেয়েছে।
বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে যারা আন্দোলন করেছিলেন তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম। এজন্য তাঁকেও কারাবরণ হয়েছে। জেলে বসেই তিনি ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনা শুনেছেন। ভাষার মিছিলে পুলিশের গুলি চালানোর খবর তাকে অত্যন্ত ব্যথিত ও বিচলিত করেছে। উদ্দীপকেও মাতৃভাষার প্রতি গভীর অনুরাগ ও ভালোবাসার প্রকাশ লক্ষ করা যায়। উদ্দীপকের কবির অনুভবেও মাতৃভাষার জন্য যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ পেয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের বিয়টিই বায়ান্নর দিনগুলো রচনার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য।-মন্তব্যটি আংশিক সত্য। প্রত্যেকের মধ্যেই মাতৃভূমি, মাতৃভাষার প্রতি সুগভীর আবেগ বিদ্যমান। এ দুটির প্রতি কোনো আগাত কেউ মেনে নিতে পারে না। তাই শত আঘাত সহ্য করেও মাতৃভূমির সন্তানরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। প্রকৃত অর্থে েএসব প্রতিবাদীই দেশপ্রেমিক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার। আজীবন তিনি শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন, প্রতিবাদ করেছেন। এ প্রতিবাদ করতে গিয়ে তাঁকে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে।
তাঁর এই আপসহীন সংগ্রামী জীবনের খণ্ডাংশ বায়ান্নর দিনগুলো রচনায় ফুটে উঠেছে। এখানে মাতৃভাষার জন্য তাঁর সংগ্রাম অনবদ্য বাণীরূপ লাভ করেছে। উদ্দীপকেও মাতৃভাষার জন্য বাঙালির সংগ্রামের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। বাংলা ভাষার জন্য ভালোবাসা সংগ্রাম উদ্দীপক ও আলোচ্য রচনায় প্রকাশিত হয়েছে। তবে এ রচনায় অন্তর্নিহিত তাৎপর্য হলো বঙ্গবন্ধুর আপসহীন সংগ্রামী জীবন এবং দেশপ্রেম। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি আংশিক সত্য। উদ্দীপকটি বায়ান্নর দিনগুলো রচনার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বহন করে না।
উদ্দীপক: ৩
ভাষা আন্দোলনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। আজন্ম মাতৃভাষাপ্রেমী এই মহান নেতা ১৯৪৭ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনাপর্ব এবং পরবর্তী সময় আইনসভার সদস্য হিসেবে এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি মৃত্যেুর পূর্ব পর্যন্ত বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও বিকাশে কাজ করে গেছেন এবং বাংলা ভাষা ও বাংলা ভাষাভাষীদের দাবির কথা বলে গেছেন।
ক. ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থটির কত সালের সংস্করণ থেকে বায়ান্নর দিনগুলো রচনাটি সংকলন করা হয়েছে?
খ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন কেন?
গ. উদ্দীপকে বায়ান্নর দিনগুলো রচনার কোন দিকটি উদ্ভাসিত? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকটি বায়ান্নর দিনগুলো রচনার ব্যাপকতাকে ধারণ করতে পারিনি। মন্তব্যটির সত্যতা যাচাই কর।
উত্তর:
ক. অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থটির ২০১২ সালের সংস্করণ থেকে বায়ান্নর দিনগুলো রচনাটি সংকলন করা হয়ছে।
খ. ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র-জনতার অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার কথা শুনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর জেল বন্দি ছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে সিপাহিরা ডিউটিতে এসে তাঁকে খবর দেয় যে, ঢাকায় ভীষণ গোলমাল হয়েছে। অনেক লোক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। ঢাকায় এমন পরিস্থিতির খবর শুনে তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন।
গ. উদ্দীপকে বায়ান্নর দিনগুলো রচনায় উল্লিখিত বাংলাদেশের ভাষা, আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য অবদানের দিকটি উদ্ভাসিত। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের ঘটনা বাঙালির জীবনে গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। বাঙালির দীর্ঘদিনের বঞ্চনার আগুন জ্বলে ওঠে এই দিনে। তবে এর সূচনা ঘটে মূলত আরও আগে, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই। বায়ান্নর দিনগুলো রচনায় ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশের প্রতি বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর ভালোবাসা জেলজীবন ও জেল থেকে মুক্তিলাভের স্মৃতি বিবৃত হয়েছে। শাসকগোষ্ঠীর অপশাসন তিনি মুখ বুজে সহ্য করেননি।
ভাষা, অর্থনীতি সর্বক্ষেত্রে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী দ্বারা বাঙালি শাসিত-শোষিত হয়েছে। তিনি জেলে থাকা অবস্থায় রাজবন্দিদের বিনাবিচারে দিনের পর দিন জেলে আটকে রাখার প্রতিবাদে ১৯৫২ সালে অনশন ধর্মঘট করেন। উদ্দীপকে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের দিকটি প্রতিফলিত। ১৯৪৭ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনাপর্ব এবং পরবর্তী সময়ে আইনসভার সদস্য হিসেবে ও রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় তৎপর ছিলেন।
ঘ. উদ্দীপকটি বায়ান্নর দিনগুলো রচনার ব্যাপকতাকে ধারণ করতে পারেনি। মন্তব্যটি সত্য। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলার আপামর জনতার মুক্তির দূত, বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়-অত্যাচার থেকে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষা করার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন, বারবার কারাবরণ করেছেন। বায়ান্নর দিনগুলো রচনায় বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি-আদর্শ, দায়িত্ববোধ, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং সংগ্রামী জীবনের পরিচয় পাই। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়ে তাঁকে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছে। তবে তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে ছিলেন আপসহীন, নির্ভীক।
আরো পড়ুন: লালসালু উপন্যাসের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং রাজবন্দিদের প্রতি অবিচারের কারণে তিনি ফরিদপুর জেলে অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। উদ্দীপকে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানে বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। আজন্ম মাতৃভাষাপ্রেমী এই মহান নেতা বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় সংগ্রাম করেন। উদ্দীপকটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপসহীন মনোভাব এবং বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে তুলে ধরে। বায়ান্নর দিনগুলো রচনায় এ বিষয়গুলো ছাড়াও আছে তাঁর জেলজীবন ও সেখানে অনশন ধর্মঘট পালন করার কথা, যা আলোচ্য উদ্দীপকে নেই। আর এ কারণে উদ্দীপকটি বায়ান্নর দিনগুলো রচনার ব্যাপকতাকে ধারণ করতে পারেনি।
উদ্দীপক: ৪
১৯৬৯ সাল। চারদিকে মিটিং-মিছিল আর কারফিউ। পুলিশ গুলি করে হত্যা করছে মানুষ। ওসমান বহুদিন যাবৎ জেলহাজতে বন্দি। তার সঙ্গে তার বেশ কজন সঙ্গীও রয়েছে। স্বাধীনতা, মুক্তি ও গণতন্ত্রের জন্য তারা লড়ে যাচ্ছে প্রাণপণ। গতকাল ওসমানের স্ত্রী একটা পুত্রসন্তানের জন্ম দিয়েছে। ওসমান সেকথা জানে না। অনেকদিন হলো সে পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন।
ক. কাদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর কোনো অভিযোগ ছিল না?
খ. খবর চাপা থাকে না-কোন খবর? ব্যাখ্যা কর।
গ. বায়ান্নর দিনগুলো রচনার কার সঙ্গে উদ্দীপকের ওসমানের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত?
ঘ. উদ্দীপক এবং বায়ান্নর দিনগুলো রচনায় যোগ্য নেতৃত্বের পাশাপাশি পরিজনদের বিচ্ছেদ বেদনাও অবিচ্ছেদ্যভাবে চিত্রিত হয়েছে-মন্তব্যটি বিচার কর।
উত্তর:
ক. কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর কোনো অভিযোগ ছিল না।
খ. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অন্য কোনো জেলে পাঠানোর খবর চাপা থাকে না-এ বিষয়টি বোঝাতেই আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে। ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধু যখন রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে অনশন ধর্মঘট শুরু করেন তখন তাঁর শারীরিক অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। ১৫ ফেব্রুয়ারি সকাল বেলা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহকর্মী মহিউদ্দিনকে জেলগেটে আনা হয় অনশন ধর্মঘটের ব্যাপারে কথা আছে বলে। মূলত তাঁদের অন্য জেলে পাঠানোর হুকুম হয়। কিন্তু কোন জেল পাঠানো হবে তা বঙ্গবন্ধু জানতেন না। পরে অবশ্য একজন বলে দেয় ফরিদপুর জেলে তাঁদের নেওয়া হবে। এ কারণে বঙ্গবন্ধু বলেন, খবর চাপা থাকে না।
গ. বায়ান্নর দিনগুলো রচনার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে উদ্দীপকের ওসমানের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকে শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের ওপর শোষণ ও নির্যাতন চালাতে থাকে। কিন্তু বাংলার দামাল ছেলেরা সেই অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করেন না। বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তির আকাঙ্খা জাগিয়ে রাখেন। শত কষ্ট সহ্য করে নেতারা তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। বায়ান্নর দিনগুলো রচনাতে বঙ্গবন্ধু তাঁর বন্দি ও সংগ্রামী জীবনের কথা তুলে ধরেছেন। নিপীড়িত মানুষের হয়ে প্রতিবাদ করায় জীবনের বেশিরভাগ সময় তাঁকে কাটাতে হয় জেলে।
জেলে মধ্যেও তাঁর আন্দোলন থেমে থাকেনি। তিনি জেলের মধ্যে অনশন ধর্মঘট পালন করেছেন। উদ্দীপকের ওসমানও লড়াই করেছে এভাবে। স্বাধীনতা, মুক্তি ও গণতন্ত্রের জন্য সঙ্গীদের নিয়ে লড়াই করে ওসমান। তাই আমরা বলতে পারি, আত্মীয়-পরিজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে জেলহাজতে বসেও মুক্তির জন্য প্রাণপণ লড়াই করার মানসিকতার দিক দিয়ে উদ্দীপকের ওসমানের সঙ্গে বায়ান্নর দিনগুলো রচনার লেখক বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
ঘ. উদ্দীপক এবং বায়ান্নর দিনগুলো রচনায় যোগ্য নেতৃত্বের পাশাপাশি পরিজনদের বিচ্ছেদ বেদনাও অবিচ্ছেদ্যভাবে চিত্রিত হয়েছে। একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক নেতার কাছে তাঁর দেশ বড়। দেশের মুক্তি ও জাতির কল্যাণ সাধনই তাঁর জীবনের ব্রত। সাধারণ মানুষের সার্বিক মুক্তি, উন্নতি ও কল্যাণ কাজে আত্মনিয়োগ করে শাসকগোষ্ঠির রোষানলে পড়ে নেতাকে তাঁর পরিবার-পরিজন থেকে দূরে থাকতে হয়। বায়ান্নর দিনগুলো রচনায় বাঙালির সার্বিক মুক্তির দূতকে পাওয়া যায়, যিনি বাঙালি জাতির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বাঙালির সার্বিক মুক্তির জন্য তিনি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন। এ কারণে তাঁকে অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। পরিবার-পরিজনদের ছেড়ে বিনা বিচারে থাকতে হয়েছে। ১৯৫২ সালে জেল থেকে মুক্তিলাভ করে তিনি যখন তাঁর পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরে গেলেন, তখন তাদের মানসিক অবস্থা, আবেগ, অনুভূতির বহিঃপ্রকাশের দিক সম্পর্কে তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীমূলক রচনায় তুলে ধরেছেন। আলোচ্য বায়ান্নর দিনগুলো-তেও তাঁর প্রতিফলন ঘটেছে। সাতাশ-আটাশ মাস পর তিনি যখন তাঁর পরিবারের কাছে ফিরে যান তখন তাকে বিনা অভিযোগে গ্রহণ করেছেন। তাঁকে চোখের জলে সিক্ত করে তাঁরা আবেগে আপ্লুত হয়েছেন।
তাঁর স্ত্রী স্বামীকে দীর্ঘদিন পর ফিরে পেয়ে কষ্ট-যন্ত্রনা, সমস্যা-জটিলতার নানা কথা বলে বুকের পাথর সরিয়ে হালকা হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রিয় জনদের সবার কথা শুনে তাদের সান্ত্বনা দিয়েছেন, সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে দীর্ঘদিন তাদেরকে কাছে না পাওয়ার কষ্ট ভুলেছেন। উদ্দীপকের ওসমানের ক্ষেত্রেও এ অনুভূতির প্রকাশ লক্ষ করা যায়। ওসমানও জেলহাজতে বন্দি থাকার কারণে পরিবারের লোকজনের খবর রাখতে পারেনি। তাঁর স্ত্রী যে এক পুত্রসন্তান জন্ম দিয়েছে সেই খবরও তাঁর অজানা। তাঁর পরিবারের সদস্যরাও তাঁর জন্য অপেক্ষায় থাকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর পিতা-মাতা-স্ত্রীর গভীর ভালোবাসা ও অনুরাগের বিষয়টি বায়ান্নর দিনগুলো রচনায় লিপিবন্ধ করেছেন। এখানে পরিবার থেকে তাঁর বিচ্ছিন্ন থাকার বিষয়টি আলোচ্য উদ্দীপকের ওসমানের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাঁরা উভয়েই দেশের বৃহত্তর স্বার্থে প্রিয়জনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শাসকের কারাগারে বন্দি। তাঁদের প্রিয়জনরা তাঁদের পথ চেয়ে একইভাবে অপেক্ষা করেন।
উদ্দীপক: ৫
অং সান সু চিকে মায়ানমারের গণতন্ত্রের মানসকন্যা বলা হয়। সেদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন। ফলে শাসকগোষ্ঠী তাঁকে কারাবন্দি করে রাখে। বন্দিজীবনে অসহ্য যন্ত্রণার পরও তিনি দাবি আদায়ের প্রশ্নে কোনো আপস করেননি।
ক. অনশনের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কোন কারাগারে বন্দি ছিলেন?
খ. পাকিস্তানি শাসনামলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সহকর্মীদের নির্যাতিত হতে হয়েছিলো কেন?
গ. উদ্দীপকের অং সান সু চি ‘বায়ান্নর দিনগুলো রচনার কার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে ইঙ্গিত করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. ‘‘উদ্দীপকটি বায়ান্নর দিনগুলো রচনার মূল চেতনাকে ধারণ করেছে। মন্তব্যটি কতখানি যুক্তিযুক্ত তা আলোচনা কর।
উত্তর:
ক. অনশনের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরিদপুর কারাগারে বন্দি ছিলেন।
খ. শোষকশ্রেণির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণে পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমান ও তাঁর সহকর্মীদের নানাভাবে নির্যাতিত হতে হয়। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালিকে চিরকাল গোলাম করে রাখার জন্য বাঙালির ওপর বর্বর অত্যাচার চালিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সহকর্মীরা তা মেনে নেননি। তাঁরা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। তাই তো তারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সহকর্মীদের ওপর নানাভাবে নির্যাতন চালিয়েছিল।
গ. উদ্দীপকের অং সান সু চি ‘বায়ান্নর দিনগুলো’ রচনার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে ইঙ্গিত করে। একটি দেশের জাতীয় কোনো পরিবর্তনের জন্যে যোগ্য নেতৃত্বের ভূমিকা সর্বাপেক্ষা বেশি। একজন দেশপ্রেমিক তাঁর দূরদর্শিতা, যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে জাতিকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে নিয়ে যান। তখন দেশ প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পায়। দেশ ও জাতির স্বার্থে এসব মহান নেতা তাঁদের জীবন উৎসর্গ করতেও পিছপা হন না। বায়ান্নর দিনগুলো রচনায় বাঙালির সার্বিক মুক্তির দূতকে পাওয়া যায়, যিনি বাঙালি জাতির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন;
তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির সার্বিক মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য তিনি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন। এ কারণে তাঁকে অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই বৈশিষ্ট্যের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে আলোচ্য উদ্দীপকে। এখানে মায়ানমারের গণতন্ত্রের মানসকন্যা অং সান সু চির সংগ্রামী চেতনা ও তাঁর জাতির মুক্তির জন্য কষ্টভোগের দিকটি উপস্থাপন করা হয়েছে যা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী চেতনার ইঙ্গিত বহন করে।
ঘ. উদ্দীপকটি বায়ান্নর দিনগুলো রচনার মূল চেতনাকে ধারণ করেছে। মন্তব্যটি সঠিক। কারণ উভয় স্থানেই যোগ্য নেতার সংগ্রামী চেতনা ও আত্মত্যাগের বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। যুগে যুগে বীর সন্তানরা অন্যায় শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। তাঁরা তাঁদের গতিশীল নেতৃত্ব দিয়ে জাতিকে যথার্থ মুক্তির পথ দেখান। উদ্দীপকের অং সান সু চি মায়ানমারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আপসহীন নেত্রী। তিনি সামারিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। এ কারণে তাঁকে অনেক জেল-জুলুম-নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে।
তবু তিনি সংগ্রাম থেকে পিছপা হননি। বায়ান্নর দিনগুলো রচনাতেও বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপসহীন সংগ্রামের দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বৈরাচারী পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। এজন্য তিনি দীর্ঘদিন করাভোগ করেছেন। শত যন্ত্রনা সহ্য করেও তিনি শোষকদের সাথে আপস করেননি। বঙ্গবন্ধুর এই চেতনাকে উদ্দীপকটি ধারণ করেছে। অতএব, মন্তব্যটি সন্দেহাতীতভাবেই যুক্তিযুক্ত।
উদ্দীপক: ৬
১৯৭১ সালে দেশকে স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধে যেতে চায় রুমী। কিন্তু রুমীর মা প্রথমে তাকে বাধা দিয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে বলেন। কিন্তু রুমী তার আদর্শ থেকে সরে আসতে নারাজ। তাই সে বলে, পড়াশোনা শিখে হয়তো বড় হতে পারব কিন্তু দেশের এ দুর্যোগময় মুহূর্তে যদি যুদ্ধে না যাই, তবে কোনোদিন দেশের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব না। মায়ের অনুমতিতে যুদ্ধে যায় রুমী। যুদ্ধ শেষে রুমী ভীষণ আহত হয়ে প্রায় অর্ধমৃত অবস্থায় বাড়ি ফিরলে তাকে দেখে তার মা-বাবা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিলাপ করতে থাকেন।
ক. শেখ মুজিবুর রহমান কখন ফরিদপুর পৌঁছেছিলেন?
খ. শেখ মুজিবুর রহমানের নাশতা করতে যাবার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের রুমীর মধ্যে বায়ান্নর দিনগুলো রচনার শেখ মুজিবুর রহমানের কোন বৈশিষ্ট্য খুঁজে
পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের রুমীর পরিবার ও বায়ান্নর দিনগুলো রচনার শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের মানুষগুলোকে একসূত্রে গাঁথা যায় কি? যুক্তিসহ তা আলোচনা কর।
উত্তর:
ক. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাত চারটায় ফরিদপুর পৌঁছেছিলেন।
খ. সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা করাই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাশতা করতে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য। পাকিস্তানি শাকসগোষ্ঠী অন্যায়ভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জেলে বন্দি করে। শাসকগোষ্ঠীর অপশাসন ও বিনাবিচারে বছরের পর বছর রাজবন্দিদের কারাগারে আটক রাখার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু অনশন ধর্মঘট করেন। তাঁকে ঢাকা সেন্ট্রাল জেল থেকে ফরিদপুর জেলে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু তাঁদের জাহাজ রাতে ফরিদপুর পৌঁছালে সে রাতে জেল কর্তৃপক্ষ তাদের গ্রহণ করেন না বিধায় তাদের পুলিশ ব্যারাকে থাকতে হয়। সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সুবেদারকে প্রস্তাব করেন নাস্তা খাওয়ার জন্য। তাঁর নাস্তা খেতে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল সেখানে সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা হলে তারা জানতে পারবেন যে, তিনি ফরিদপুর জেলে আছেন এবং অনশন ধর্মঘট করছেন।
গ. উদ্দীপকের রুমীরি মধ্যে বায়ান্নর দিনগুলো রচনার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায়। একটি রাষ্ট্রের শাসকের উচিত সেই দেশের অধিবাসীদের সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা। কিন্তু শাসকগোষ্ঠী যখন স্বার্থান্ধ হয়ে স্বৈরশাসকে রূপ নেয়, তখন তারা সাধারণ মানুষের ওপর চালায় অত্যাচার আর নির্যাতন। অস্ত্র ও ক্ষমতার জোরে তারা জনসাধারণের দাবিকে দমিয়ে রাখে। বায়ান্নর দিনগুলো রচনায় বাংলাদেশের মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসীম ত্যাগ স্বীকার করার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাঙালির প্রাণের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে অস্বীকার করে। এর বিরুদ্ধে বাঙালিরা আন্দোলন শুরে করে। তখন শাসকগোষ্ঠী বাঙালির ওপর চালায় অকথ্য নির্যাতন। তারা বাঙালির প্রাণের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেককেই জেলে বন্দি করে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর এই অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে জেলে অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। অবশেষে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী অর্ধমৃত অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। উদ্দীপকেও দেখা যায় দেশপ্রেমিক রুমীকে।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনারা যখন এদেশের মানুষের ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালাতে শুরু করে, তখন দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে রুমী পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যুদ্ধ শেষে রুমী ভীষণ আহত হয়ে অর্ধমৃত অবস্থায় বাড়ি ফিরে আসেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ ও দেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করার বৈশিষ্ট্যটি তাই উদ্দীপকের রুমীর মধ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
ঘ. উদ্দীপকের রুমীর পরিবার ও বায়ান্নর দিনগুলো রচনার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের মানুষগুলোকে একসূত্রে গাঁথা যায়। জননী কিংবা জন্মভূমি যখন বিপদাপন্ন তখন কোনো বিবেকবান সন্তানই চুপ করে থাকতে পারেন না। অসীম সাহস আর দেশপ্রেম নিয়ে জন্মভূমিকে সেই বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য তারা ঝাঁপিয়ে পড়েন। এতে অনেকেই জীবন দেন, আবার কেউ হন আহত। তবুও জননী , জন্মভূমির জন্য যুদ্ধ করায় তাঁরা তাঁদের জীবনকে সার্থক মনে করেন।
বায়ান্নর দিনগুলো রচনায় দেখা যায়, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেককেই বিনাবিচারে ও অন্যায়ভাবে জেলে আটক রাখে। জেলে বঙ্গবন্ধু তাঁর সহকর্মীসহ বাঙালির ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার ও অপশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে অনশন ধর্মঘট পালন করেন। প্রিয় সন্তানের খোঁজ পাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর বাবা দিনের পর দিন ছুটে বেড়িয়েছে। মৃতপ্রায় সন্তানকে জেলগেটে দেখার পর কোনোমতে চোখের পানি মোছেন।
প্রিয় সন্তানের জন্য তাঁর মা শোকে পাথর। বহুদিন পর স্বামীকে দেখতে পেয়ে বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী কেঁদে ফেললেন। ছেলে কামাল বাবাকে অনেক দিন দেখতে না পেয়ে তাঁর চেহারাই ভুলে গেছেন। উদ্দীপকে এমনই করুণ অবস্থার বর্ণনা রয়েছে। সেখানে ১৯৭১ সালে মায়ের অনুমতি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন রুমী। যুদ্ধে আহত সন্তানকে অর্ধমৃত অবস্থায় দেখে রুমীর মা-বাবা কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রিয় সন্তানের এমন অবস্থার জন্য তারা বিলাপ করতে থাকেন।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অপশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও উদ্দীপকের রুমী। উভয়ের পরিবারের সদস্যদের একই কারণে সহ্য করতে হয়েছে কষ্ট। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের রুমীর পরিবার ও বায়ান্নর দিনগুলোা রচনার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের মানুষগুলোকে একসূত্রে গাঁথা যায়।
উদ্দীপক: ৭
মিছিলটা তখন মেডিকেলের গেট পেরিয়ে কার্জন হলের কাছাকাছি এসে গেছে। তিনজন আমরা পাশাপাশি হাঁটছিলাম। রাহাত স্লোগান দিচ্ছিলো। আর তপুর হাতে ছিল একটা মস্ত প্ল্যাকার্ড। তার ওপর লাল কালিতে লেখা ছিল, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। মিছিলটা হাইকোর্টের মোড়ে পৌঁছুতে অকস্মাৎ আমাদের সামনের লোকগুলো চিৎকার করে পালাতে লাগল চারপাশে। ব্যাপারটা কি? বুঝবার আগেই চেয়ে দেখি, প্ল্যাকার্ডসহ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে তপু। কপালের ঠিক মাঝখানটায় গোল একটা গর্ত। আর সে গর্ত দিয়ে নির্ঝরের মতো রক্ত ঝরছে তার। কারণ পাকিস্তানি বাহিনী নির্মম ভাবে গুরি চালিয়েছে।
ক. বায়ান্নর দিনগুলো কোন জাতীয় রচনা?
খ. ভরসা হলো, আর দমাতে পারবে না-কেন?
গ. উদ্দীপকের সাথে পাঠ্যবইয়ের বায়ান্নর দিনগুলো শীর্ষক আত্মজীবনীমূলক রচনার পটভূমিতে অভিন্নতা রয়েছে। মন্তব্যটি যাচাই কর।
ঘ. উদ্দীপকে গল্পকথকের জবানিতে বর্ণিত মহান একুশের ভাষাচিত্রটির সাথে বায়ান্নর দিনগুলো রচনাটির কথক ও কাহিনিীর ভিন্নতাও রয়েছে। মতামতসহ মন্তব্যটি যাচাই কর।
উত্তর:
ক. বায়ান্নর দিনগুলো আত্মজীবনী মূলক রচনা।
খ. ‘‘ভরসা পেলাম, আর দমাতে পারবে না-’’ এই কথাটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর বাংলাদেশের ছোট ছোট-হাট বাজারে একুশের চেতনায় হরতাল পালনের খবর শুনে। ১৯৫২ সালে ঢাকায় গুলি চালানোর পর জনগণ বুঝতে পেরেছিল যে, যারা দেশ শাসন করেছে তারা দেশের আপনজন নয়। একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনা প্রবল বেগে বাতাসে ভাসতে ভাসতে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামের ছোট ছোট হাট-বাজারে মানুষ হরতাল পালন করে ভাষার সংগ্রামকে সমর্থন, শক্তি ও অনুপ্রেরণা জোগায়। এর মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট হয় যে, গ্রামের সাধারণ মানুষও অধিকার সচেতন হয়ে উঠেছে। সারাদেশের মানুষের এ জাগরণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। এ বিশ্বাস থেকেই তিনি প্রশ্নোক্তটি কথাটি বলেছেন।
আরো পড়ুন: মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
গ. উদ্দীপকের সাথে পাঠ্যবইয়ের বায়ান্নর দিনগুলো শীর্ষক আত্মজীবনীমূলক রচনার পটভূমিগত অভিন্নতা রয়েছে। মন্তব্যটি যথার্থ। ১৯৫২ সালে বাঙালি বীর সন্তানরা ভাষার জন্য প্রাণ দেয়। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তাঁরা রাজপথে নামেন এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর গুলিতে সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা অনেকে শহিদ হন। উদ্দীপকের পটভূমি ও বায়ান্নর দিনগুলো রচনার পটভূমি একই। উদ্দীপকের তপু, রাহাত েএবং গল্পকথক সবাই ভাষার দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে নামে। মিছিলে ছাত্র-জনতা স্লোগান দেয় এবং প্ল্যাকার্ড হাতে এগিয়ে যায়।
সেই মিছিলে গুলিবর্ষণ হলে তপু শহদি হন। বায়ান্নর দিনগুলো রচনাটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থ থেকে সংকলিত। এই রচনায় ফুঠে উঠেছে ১৯৫২ সালের রাজনৈতিক অবস্থা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলে বসেই বাইরের খবর পাচ্ছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়। গুলিতে ছাত্র-জনতার মৃত্যেুর খবরও তিনি পাচ্ছেন।
এভাবেই তিনি তখন দেশের অবস্থা, রাজনীতি, সংগ্রামের কথা তুলে ধরেছেন তাঁর রচনায়। মূলত বায়ান্নর দিনগুলোই স্থান পেয়েছে সংকলনটিতে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের সঙ্গে পাঠ্যবইয়ের বায়ান্নর দিনগুলো শীর্ষক আত্মজীবনীমূলক রচনার পটভূমিগত অভিন্নতা রয়েছে ব্যাখ্যা করা হলো।
ঘ. উদ্দীপকে গল্পকথকের জবানিতে বর্ণিত মহান একুশের ভাষাচিত্রটির সাথে বায়ান্নর দিনগুলো রচনাটির কথক ও কাহিনীর ভিন্নতাও রয়েছে। মন্তব্যটি যথার্থ। পৃথিবীর বুকেই বাঙালিই একমাত্র বীরের জাতি যারা ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। ১৯৫২ সালে বাংলার সাহসী তরুণেরা রাষ্ট্রভাষা বাংলা হিসেবে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য রাজপথে মিছিলে নামে। একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখে ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলিবর্ষণ করে।
এতে শহিদ হন সালাম, রফিক, বরকত সহ নাম না জানা অনেকে। বায়ান্নর দিনগুলো রচনাটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থ থেকে সংকলিত। এ রচনাটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জেল জীবন ও জেল থেকে মুক্তিলাভের স্মৃতি বিবৃত হয়েছে। আরও বিবৃত হয়েছে ঢাকায় একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখে ছাত্র-জনতার মিছিলে গুলিবর্ষণের খবর। রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে অনশনরত অবস্থা, স্ত্রী-সন্তানদের কথা ইত্যাদিও তিনি তুলে ধরেছেন স্মৃতিচারণমূলক এ রচনায়। অন্যদিকে উদ্দীপকে কেবল গল্পকথকের জবানিতে ফুটে উঠেছে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্র-জনতার মিছিল, যে মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণ ও কথকের বন্ধুর মৃত্যেুর কথা।
উদ্দীপকে কেবল ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার কথা এবং পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর গুলিবর্ষণের কথা বর্ণিত হয়েছে। আর বায়ান্নর দিনগুলো রচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে বর্ণনা করেছেন দেশের তৎকালীন অবস্থা, নেতাদের দৃঢ়তা, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অপশাসন ইত্যাদি। তাই বলা যায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
আমরা অনশন ভাঙব না-উক্তিটি বুঝিয়ে লেখ
‘‘আমরা অনশন ভাঙব না’’ উক্তিটিতে মুক্তি রাজবন্দিদের কারামুক্তির সংগ্রামী দৃঢ়তা প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৫২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সঙ্গীদের জেলে বন্দি করে রাখে তৎকালীন পাকিস্তানি সরকার। তাই শাসকগোষ্ঠীর অপশাসন ও বিনাবিচারে বছরের পর বছর রাজবন্দিদের কারাগারে আটক রাখার প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সহকর্মী মহিউদ্দিন আহমদ অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। তাঁরা আলোচনা করে ঠিক করেন যাই হোক না কেন আমরা অনশন ভাঙব না। অর্থাৎ তাঁদের ন্যায্য দাবি না মানা পর্যন্ত তাঁরা অনশন ভাঙবেন না।
শেখ মুজিবুর রহমানকে নারায়ণগঞ্জ থানায় নেওয়া হয়েছিলো কেন?
জাহাজ ঘাটে পৌঁছানোর আগে জাহাজ ছেড়ে যাওয়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নারায়ণগঞ্জ থানায় নেওয়া হয়েছিলো। শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকা সেন্ট্রাল জেল থেকে ফরিদপুর জেলখানার উদ্দেশ্য নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকা থেকে ফরিদপুর জেলখানায় যেতে হলে নারায়ণগঞ্জ থেকে জাহাজে করে গোয়ালন্দ ঘাটে যেতে হয়। একটি জাহাজ সকাল ১১টায়, অন্যটি রাত ১টায়। সামান্য দেরি হওয়ায় তারা ১১টার জাহাজ ধরতে পারে না। তাই পুলিশ হেফাজতে রাখার জন্য বঙ্গবন্ধুকে শেখ মুজিবুর রহমানকে নারায়ণগঞ্জ থানায় নেওয়া হয়েছিলো।
কয়েকজন লোক গুলি খেয়ে মরেছে-কেন?
ভাষার জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে আন্দোলনকারীদের কয়েকজন পুলিশের গুলিতে নিহত হন। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফরিদপুর জেলে রাজবন্দি হিসেবে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই সময় জেলে বসে তিনি খবর পান ঢাকায় একুশে ফেব্রুয়ারিতে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে মিছিল বের করেন। সেই মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে বেশ কয়েকজন নিহত হন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন কয়েদিকে দিয়ে গোপনে কেন কয়েক টুকরা কাগজ আনালেন?
চিঠি লেখার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন কয়েদিকে দিয়ে গোপনে কয়েক টুকরো কাগজ আনালেন। অনশনরত অবস্থায় বেশি দুর্বল বলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিছানা থেক ওঠার শক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাঁর হার্টে ভীষণ প্যালপিটিশন হচ্ছিল। নিশ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছিল, দুহাত কাঁপছিল। তিনি ভাবলেন আর বেশিদিন আয়ু নেই। এমতবস্থায় একান্ত প্রিয়জন পিতা-মাতা, স্ত্রী এবং রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে চিঠি লেখার জন্য একজন কয়েদি মারফত গোপনে কয়েক টুকরো কাগজ আনালেন।
জেল থেকে মুক্তির সংবাদটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কীভাবে পেলেন?
ডেপুটি জেলারের মুখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেল থেকে তাঁর মুক্তির সংবাদটি পেলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে ডেপুটি জেলার বললেন, ‘‘আমি পড়ে শোনাই’’ আপনার মুক্তির অর্ডার এসে গেছে রেডিওগ্রামে এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের অফিস থেকেও অর্ডার এসেছে। দুইটা অর্ডার পেয়েছি। ডেপুটি জেলার সাহেব পড়ে শুনালেন। শুনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বাস করতে চাইলেন না। তখন তাঁর সহবন্দি মহিউদ্দিন আহমদ অর্ডারটা দেখে তাঁকে নিশ্চিত করলেন যে, তাঁর মুক্তির আদেশ সত্যিই এসেছে।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে বায়ান্নর দিনগুলো সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url