সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন ও উত্তর বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন ও উত্তর গুলো বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন ও উত্তর বিস্তারিত জেনে নিন
সিকানদার আবু জাফরের সিরাজউদ্দৌলা নাটকে প্রধান-অপ্রধান মিলিয়ে চরিত্র রয়েছে প্রায় চল্লিশটি। এতে নায়ক সিরাজউদ্দৌলাসহ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোর মধ্যে মিরজাফর, রাজবল্লভ, উমিচাঁদ, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ, মোহনলাল, মিরমর্দান, মিরন, রাইসুল জুহালা, ওয়াটস, ক্লাইভ, ঘসেটি বেগম ও লুৎফুন্নেসা অন্যতম।

সিরাজউদ্দৌলা নাটকের কাহিনী-সংক্ষেপ

১৭৫৬ সালের ১৯শে জুন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সেনাবাহিনী ইংরেজদের ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণ করে। ক্যাপ্টেন ক্লেটন মুষ্টিমেয় গোলন্দাজ নিয়ে কামান চালাচ্ছেন আর অন্য সৈন্যদের প্রাণপণে যুদ্ধ করার জন্য অনুপ্রাণিত করছেন। এর মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করার আদেশ দেওয়ার অনুরোধ করলেন ক্লেটন বাঙ্গালীদের উদ্দেশ্যে আপত্তিকর মন্তব্য করায় বাঙালি ওয়ালি খান তার প্রতিবাদ করেন। এ সময় হলওয়েল প্রবেশ করে নবাবের কাছে আত্মসমর্পণ করার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। গভর্নর ড্রেকের সঙ্গে পরামর্শের কথা বলে ক্লেটন পালিয়ে যান। তখন দুর্গের দায়িত্ব এসে পড়ে ও হল ওয়েলের উপর। 

যুদ্ধ জয়ী নবাব দ্রুত বেগে প্রবেশ করে হলওয়েলের কাছে কৈফিয়ত চাইলেন- বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে বাঙালির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরবার স্পর্ধা ইংরেজরা পেল কোথা থেকে? নবাবের নির্দেশে কাশিমপুর কুঠির পরিচালক বন্দি ওয়াটসকে আনা হলে নবাব তাদের আচরণ ও অনাচারের জবাব চাইলেন। তারা কাশিম বাজারে গোলাবারুদ আমদানি করছে, কলকাতার আশেপাশের গ্রামগুলো নিজেদের দখলে নিচ্ছে, দুর্গ সংস্কার করে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছে, নবাবের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে কৃষ্ণবল্লভকে আশ্রয় দিয়েছে, এমনকি নবাব কে নজরানা পর্যন্ত পাঠায়নি। 
এসব ‍ধূষ্টতার জবাবদিহিতা না করা পর্যন্ত নবাব বাংলায় তাদের বা তাদের বাণিজ্য করার অধিকার বন্ধ করার ঘোষণা দিলেন দিলেন। একই সঙ্গে তিনি নির্দেশ দিলেন যেন তাদের কাছে কোন সওদা বিক্রি না করে, সেটা জানিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। তিনি আরো নির্দেশ দিলেন, প্রত্যেক ইংরেজের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে যেন নবাবের তহবিলে জমা করা হয়। কোম্পানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক ইংরেজের কাছ থেকে কলকাতা অভিযানের সমস্ত খরচ আদায় করারও ফরমান জারি করলেন নবাব। কলকাতা থেকে বিতাড়িত হয়ে ভাগীরথী নদীতে ভাসমান ফোর্ট উইলিয়াম জাহজে আশ্রয় নেয় পলাতক ইংরেজরা। 

অন্ন-বস্ত্রের অভাবে তারা অসহনীয় অবস্থার মধ্যে পড়ে। এর মধ্যে বন্দি করে বিচারের উদ্দেশ্য নিয়ে যাওয়া হলওয়েল ও ওয়াটসনকে নবাব ছেড়ে দিয়েছে। তাদের ধারণা, কিছু উপহার-উপঢৌকন নিয়ে নবাবের দরবারে হাজির হলে তাঁর সঙ্গে এখনও ভালো সম্পর্ক তৈরি করা যাবে। দূতের মাধ্যমে নবাবের অন্যতম অমাত্য উমিচাঁদের চিঠিতে তাদের জানানো হলো যে, কলকাতার দেওয়ান মানিকচাঁদ বারো হাজার টাকা নজরানা নিয়ে ইংরেজদের ব্যবসায় করার অনুমতি দিয়েছে। 

এছাড়া সিরাজের সিপাহসালার মিরজাফর, অমাত্য রাজবল্লভ ও জগৎশেঠের দল শওকতজঙ্গকে সমর্থন দেবে এবং উমিচাঁদ ইংরেজদের সঙ্গে বন্ধুত্বের আশ্বাস দিয়েছেন। নবাব আলিবর্দি খাঁর ইঙ্গিতে সিরাজ ঢাকার সেনাপতি হোসেন কুলি খাঁকে হত্যা করেলে সিরাজের সঙ্গে তাঁর খালা ঘসেটি বেগমের সম্পর্কের অবনতি হয়। সেই ঘটনার সুত্র ধরে সিরাজের স্থলে নিজ পালকপুত্র শওকতজঙ্গক নবাবি আসনে বসানোর প্রক্রিয়ায় প্রধান সেনাপতি ও অন্যতম অমাত্যদের সমর্থন লাভের উদ্যোগ নেন মতিঝিল প্রাসাদে। 

এ সময় নবাব সিরাজউদ্দৌলা উপস্থিত হয়ে ঘসেটি বেগমকে এক প্রকারের বন্দি করেই নিজ প্রাসাদে নিয়ে আসেন। কারণ নবাব বুঝতে পারছেন, তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্তকারীরা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে রেখেছে। ওদিকে ইংরেজরাও ব্যবসায়ের নামে বাঙালিদের ওপর নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছে। এ অবস্থায় চক্রান্তকারীদের অন্তরে শুভবোধ জাগ্রত করার জন্য সেনাপতি ও আমাত্যবর্গ এবং ইংরেজ প্রতিনিধিদের নিজ দরবারে ডেকে তিনি তাঁদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন। কিন্তু ধর্মমত অনুযায়ী শপথ করলেও নিজ নিজ অবস্থানে তারা পুনরায় ষড়যন্ত্রে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। 

এর মধ্যে নবাব মোহনলালকে দিয়ে শওকতজঙ্গকে দমন ও হত্যা করেন। মানিকচাঁদকে কয়েদ করে দশ লক্ষ টাকা মুক্তিপন আদায় করেন। এর ফলে ষড়যন্ত্রকারী ও ইংরেজরা প্রমাদ গুনল। অবশেষে তাদের এই পর্বের শেষ মন্ত্রণাসভা বসল মিরজাফরপুত্র মিরনের বাড়িতে। নর্তকীদের সমাগমে এভানে এলেন রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, মিরজাফর। মহিলার ছদ্মবেশে আসেন ক্লাইভ ও ওয়াটস। রায়দুর্লভ এসে তার নিজের জন্য সিপাহসালারের পদটির পত্যাশা জানিয়ে যান। ধুরন্ধর রবার্ট ক্লাইভ এ কথা বুঝতে পেরে নিরাপদ বোধ করেন। 
কারণ এখানে সবাই স্বার্থের পশ্চাতে ধাবমান। বিশেষ করে উমিঁচাদের লোভের সীমা-পরিসীমা নেই। তাই তাঁকে ঠকানোর জন্য নকল দলিলে বিশ লক্ষ টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়, আর আসল দলিলে উমিঁচাদের কোনো উল্লেখই থাকে না। দলিলে ভয়ানক যে বিষয়টি রাজবল্লভ লক্ষ করেন তা হলো এই সন্ধি অনুসারে সিপাহসালার শুধু মসনদে বসবেন। আর রাজ্য চালাবে কোম্পানি। মিরজাফরের তখন এত কিছু ভেবে দেখার মতো অবস্থা ছিল না। এভাবেই ইংরেজদের কূটকৌশলচক্রে ধরা দিয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সুবিধালোভী এদেশীয় দালালরা বাংলাকে বিক্রি করে দেয়। 

নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাঁর সংক্ষিপ্ত শাসনামলে একদিনের জন্যও নিশ্চিন্তে কাটাননি। স্ত্রী লুৎফার সঙ্গে আলোচনা প্রসেঙ্গে বলেছেন তিনি নিজের চারিদিকে কেবল দেয়ালের সমাহার দেখছেন। কেনোটি ভাঙছেন, কোনোটি ভিঙাচ্ছেন তবুও দেয়ালের শেষ হচ্ছে না। পলাশির যুদ্ধের আগের রাতে নবাব তাঁর অনুগত সেনাপতির সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধের হিসাব-নিকাশ করেছেন। ইংরেজদের মোট সৈন্য তিন হাজারের বেশি নয়, নবাবে পঞ্চাশ হাজার। 

ছোট-বড় মিলিয়ে ওদের কামান দশটি, আর নবাবের পঞ্চাশটিরও বেশি। তবুও নবাব চিন্তিত,কারণ তিনি জানতেন তাঁর বড় সৈন্যদলের সেনাপতিরাই বিশ্বাসঘাতকতা করবে। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশির প্রান্তরে ইংরেজদের সঙ্গে নবাবের যুদ্ধ শুরু হয়। নবাবের কাছে একের পর এক সেনাপতির মৃত্যেুর সংবাদ আসতে থাকে। 

মোহনলাল আর মিরমর্দান নবাবকে যুদ্ধ বন্ধ না করার অনুরোধ করেন, তখন তাঁরা বিজয়ের প্রান্তে। কিন্তু এ সময় মিরজাফর ও রায় দুর্লভের পরামর্শে তিনি যুদ্ধ বন্ধ করার ষোষণা দিয়ে মুর্শিদাবাদ রওয়ানা হন। যাওয়ার পথে তিনি ধরা পড়ে বন্দি হন। পরে মিরনের আদেশে মোহাম্মাদি বেগ তাঁকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের মৃত্যেুর মধ্যে দিয়ে অস্তমিত যায় বাংলার স্বাধীনতার সূর্য।

সিরাজউদ্দৌলা নাটকের নামকরণের সার্থকতা

বাংলার রাজনীতির পটপরিবর্তন ও জনগণের ও জনগনের ভাগ্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সিরাজউদ্দৌলার সিংহাসন আরোহণ, চক্রান্তজাল আটক হওয়া, ইংরেজদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও যুদ্ধ এবং শেষ পর্যন্ত পরাজিত হওয়া একটি নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। সিরাজউদ্দৌলা এই বিরুদ্ধ পরিবেশে এসে, এর সঙ্গে থেকে, এর মধ্যে থেকে চক্রান্তজাল উন্মোচনের চেষ্টা করেছেন, এ জাল নির্মূলের জন্য সক্রিয় হয়েছেন। কিছুমাত্র ভয় পাননি, মনোবল হারাননি, সমান্যতম ভেঙ্গে পড়েননি।

কেননা তিনি ছোট বেলা থেকেই অমাত্য, সেনাপতি আত্মীয়-স্বজনের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবহিত। নানার অবর্তমানে কিছুটা বিপর্যস্ত হলেও কর্তব্যের ক্ষেত্রে তিনি পুরোপুরি সচেতন। এ কারণেই ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণ করে, গভর্নর ড্রেকের বাড়ি কামানের গোলায় উড়িয়ে দিয়ে এবং তাৎক্ষণিক কিছু কড়া নির্দেশ ঘোষণা করে তিনি ইংরেজদের বোঝাতে চেয়েছেন, বাংলায় নিয়মনীতি মেনেই বাণিজ্য করতে হবে এবং বাণিজ্যের নামে রাজনীতেতে নাক গলানো যাবে না। 

কিন্তু সুযোগসন্ধানী ইংরেজ এবার তাদের ভাগ কর ও শাসন কর নীতির ছায়ায় নবাবের বিরুদ্ধাচারীদের খুঁজতে থাকে। ঘসেটি বেগম, শওকতজঙ্গ, রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ, উমিচাঁদ, মিরজাফরকে সঙ্গে নিয়ে তারা সিরাজকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। ষড়যন্ত্রকারী নিজ খালা ঘসেটি বেগমকে তিনি মতিঝিল প্রাসাদ থেকে নিজ প্রাসাদে েএনে নজরবন্দি করে রাখেন। 

আর জাতীয় ঐক্য নষ্ট হওয়ার ভয়ে অন্যদিকে দণ্ড প্রদানের পরিবর্তে তাদের শুভবুদ্ধি জাগ্রত করার চেষ্টা করেন যাতে বাংলার স্বাধীনতা, শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ প্রশস্ত হয়। কিন্তু এত কিছু করার পরও বাংলার জমিন থেকে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব হয়নি। শেষমেষ সিরাজউদ্দৌলাকে জীবন দিতে হয় বিশ্বাসঘাতকদের কাছে।

সিরাজউদ্দৌলার দেশপ্রেম, কর্তব্যবোধ, সাহস, শৌর্য-বীর্যের অনুভূতি যেমন পাঠকের মনে জাগিয়ে তোলে, তেমনি নাটকের শেষে সিরাজের করুণ পরিণতিতে পাঠক-দর্শক বেদনায় মুহ্যমান হয়ে পড়ে। এসব বিবেচনায় এবং উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, নাটকের নামকরণ সিরাজউদ্দৌলা যথার্থ ও সার্থক হয়েছে।

সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন ও উত্তর

উদ্দীপক: ১

শুনলাম, আমাদের স্বাধীন পাহাড়িয়া জাতিতার উপর ইংরেজ আর কাবুল আমির দুজনেরই লোলুপ দৃষ্টি পড়েছে। আর কয়েকজন দেশদ্রোহী শয়তান ২ ভাগে বিভক্ত হয়ে দেশটাকে অন্যের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছে। না, না যতক্ষণ এই য়ূসোফ খাঁর এক বিন্দু রক্ত থাকবে গায়ে আর মাথাটা ধড়ের সঙ্গে লাগা থাকবে, ততক্ষণ কেউ, কোন অত্যাচারী সম্রাট আমার জন্মভূমির এক কণা বালুকাও স্পর্শ করতে পারবে না। তুমি বাহুতে শক্তি দাও!- এই তরবারির তৃষ্ণা মেটাব-প্রথেমে দেশদ্রোহী শয়তানদের জিগরে খুনে, তারপর দেশি-শত্রুর কলুষ রক্তে।

ক. আমি নিস্তব্ধ হয়েছি অগ্নিগিরির মতো প্রচণ্ড গর্জনে ফেটে পড়বার জন্যে-উক্তিটি কার?

খ. নবাবকে আমার ভয় নেই,কারণ সে আমার কিছুই করতে পারবে না-উক্তিটি ব্যখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকের দেশদ্রোহী শয়তানদের সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের কাদের সাদৃশ্য রয়েছে?

ঘ. য়ূসোফ খাঁর দেশপ্রেম নবাব সিরাজউদ্দৌলার দেশপ্রেমেরই প্রতিচ্ছবি-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

উত্তর:

ক. আমি নিস্তব্ধ হয়েছে অগ্নিগিরির মতো প্রচণ্ড গর্জনে ফেটে পড়বার জন্য-এ উক্তিটি মিরজাফরের।

খ. নবাবরে সঙ্গে বেইমানি করার জন্য সব সভাসদ ক্লাইভের দলে যোগ দিয়েছে বলেই ক্লাইভ প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছে। নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রধান সভাসদরা অর্থের বিনিময়ে এবং ক্ষমতার লোভে ক্লাইভের দলে যোগ দেয়। নবাবের বিরুদ্ধে তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তাই নবাব যখন ক্লাইভের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন তখন ক্লাইভ এ উক্তিটি করে। কারণ ক্লাইভ জানে যে নবাবের শক্তি কমে গেছে। আর তার শক্তি এখন অনেক বেশি। এ কারণেই সে উক্তিটি করতে সাহস পায়।

গ. উদ্দীপকের দেশদ্রোহী শয়তানদের সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলার নাটকের ঘসেটি বেগম, মিরজাফর, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ, জগৎশেঠ ও উমিচাঁদের ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার দিক থেকে সাদৃশ্য রয়েছে। একজন দেশপ্রেমিকের কাছে সবকিছুর উর্ধ্বে তার দেশ। সবাই নিজ জননী-জন্মভূমিকে ভালোবাসে। আর যারা তা করে না, তারা দেশদ্রোহী পর্যায়ভুক্ত, নরাধম। তারা নিজেদের স্বার্থের জন্য দেশকে অন্যের কাছে বিক্রি করে দিতেও দ্বিধা করে না। 

উদ্দীপকে দেশপ্রেমিক য়ূসোফ দেশের অবস্থা নিয়ে অত্যান্ত বিচিলিত। এর কারণ স্বাধীন পাহাড়িয়া জাতিটাকে তার দেশেরই গুটিকতক লোক দেশটাকে বিভক্ত করে অন্যের হাতে তুলে দিতে যাচ্ছে। উদ্দীপকের এ হীন স্বার্থবাদী লোকদের মতো সিরাজউদ্দৌলা নাটকের ঘসেটি বেগম, মিরজাফর, রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ, জগৎশেঠ ও উমিচাঁদ অর্থের বিনিময়ে 

বাংলার নবাবের বিরুদ্ধে ইংরেজদের পক্ষ নিয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় এবং ইংরেজদের কাছে বাংলার স্বাধীনতা বিকিয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের দেশদ্রোহী শয়তানদের সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের ঘসেটি বেগম, মিরজাফর, রাজবল্লভ, জগৎশেঠ ও উমিচাঁদের সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ. য়ূসোফ খাঁর দেশপ্রেম নবাব সিরাজউদ্দৌলার দেশপ্রেমেরই প্রতিচ্ছবি-মন্তব্যটি যথার্থ। জননী ও জন্মভূমি প্রত্যেক মানুষের কাছে পরম শ্রদ্ধার। দেশপ্রেমিকরা দেশকে জননীর মতোই সম্মান করে, ভালোবাসে। দেশের বিপদে তারা জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে। উদ্দীপকে য়ূসোফ নামের একজন সত্যিকারের দেশপ্রমিককে পাওয়া যায়। দেশের দুর্দিনে তাঁর হৃদয় হাহাকার করে ওঠে। তিনি নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে, তাঁর শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকতে, মাথাটা শরীরের সঙ্গে লেগে থাকলে এদেশের এক বিন্দু ধূলিকণায়ও কেউ হাত দিতে পারবে না। 

তাঁর উন্মুক্ত তরবারি দিয়ে তিনি শত্রুকে হত্যা করবেন। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে দেশকে শত্রুমুক্ত করবেন। সিরাজউদ্দৌলা নাটকের নবাব সিরাজও এমনই একজন দেশপ্রেমিক শাসক। তিনি সবসময় চোখ-কান খোলা রেখে শোষণের হাত থেকে দেশের সাধারণ কৃষক-প্রজাকে রক্ষা করেছেন। যুদ্ধের অবস্থা খারাপ হলেও নতুন উদ্যমে তিনি রাজধানীতে ফিলে স্বাধীনতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। 

শেষ পর্যন্ত তিনি জীবনের বিনিময়ে শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। নবাব সিরাজ ও য়ূসোফ শেষ পর্যন্ত শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চেয়েছেন। তাঁরা উভয়ই স্বদেশের কল্যাণে জীবন বাজি রেখেছেন। নিজ জীবনের চেয়ে তাঁদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে স্বদেশের স্বাধীনতা। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

উদ্দীপক: ২

আপনাদের রক্তে যখন তৈরি হয় আধাখানা শাড়ি তখন গুলশানের পুঁজিপতির শীতল সেলারে ঢোকে এক বাক্স স্কচ। যখন আপনারা একটি পুরো শাড়ি বানান,তখন তার দরোজায় হাজির হয় ঝকঝকে নতুন মডেলের একটা জাপানি গাড়ি। কিন্তু তখন আপনাদের পেট খালি, আপনাদের স্ত্রীদের শরীর উদোম আর চাষীদের ঘরে ঘরে আহাকার। অর্থাৎ বন্ধুরা, আপনারা যখন উৎপাদন করেন, তখন উৎপাদন করেন কুৎসিত শোষণ।

ক. কাকে ষুষ দিয়ে চন্দননগর ধ্বংস করা হয়?

খ. আমি বরং নবাবকে বিশ্বাস করতে পারি-ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকের সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের মিল কিসে?

ঘ. যুগে যুগে শোষকের পরিচয় কেবল শোষকই-মন্তব্যটি উদ্দীপক ও সিরাজউদ্দৌলা নাটকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

উত্তর:

ক. নন্দনকুমারকে ষুষ দিয়ে চন্দননগর ধ্বংস করা হয়।

খ. আমি বরং নবাবকে বিশ্বাস করতে পারি-ক্লাইভ কথাটি রাজবল্লভকে বলেছেন। ক্লাইভের সঙ্গে নবাবের প্রধান অমাত্যবর্গ হাত মেলায়। নিজের লোকের সঙ্গে যারা প্রতারণা করতে পারে তারা অন্যের সঙ্গেও প্রতারণা করতে পারে এমন শঙ্কা থেকেই ক্লাইভ এ কথাটি বলেছেন। ক্লাইভ যখন রাজবল্লভ ও জগৎশেঠের সঙ্গে কথা বলেন তখন জগৎশেঠ ও রাজবল্লভের কথার প্রত্যুত্তরে ক্লাইভ বলেন, আজ নবাবকে ডোবাচ্ছেন, কাল আমাদের পথে বসাবেন। অর্থাৎ যারা ক্ষতিকর ব্যক্তি তারা কারও বন্ধু হতে পারে না, তারা সুযোগ পেলেই ক্ষতি করে। ক্লাইভের কাছে তাই তাদের থেকে নবাবকেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে। কারণ নবাব অন্তত কথার খেলাপ করেন না।

গ. উদ্দীপকের শোষক ও শোষিতের সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের ইংরেজ ইজারদার ও উৎপীড়িত লবণচাষিদের মিল রয়েছে। উদ্দীপকে পুঁজিপতি শোষকদের দ্বারা কিভাবে তাঁতি বা পন্য উৎপাদনকারী শোষণের শিকার হয় তা দেখানো হয়েছে। উৎপাদনকারীরা সবসময় শোষিত হয়। তাদের পণ্যে অন্যরা লাভবান হয়, অথচ খাদ্য-বস্ত্র থেকে বঞ্চিত থাকে তাদের স্ত্রী সন্তানরা। 
সিরাজউদ্দৌলা নাটকে লবণের ইজারাদার ইংরেজ কুঠিয়ালদের অত্যাচারের নিদর্শন রয়েছে। সেখানে লবণচাষির পরিবারের করুণ অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। শোষক ইংরেজ তাদের প্রতি হৃদয়হীন। তাদের এ অত্যাচার উদ্দীপকের শোষকদের কথা মনে করিয়ে দেয়। আর লবণ চাষি যেন উদ্দীপকের তাঁতি, পণ্যে উৎপাদনকারী বা চাষিদের প্রতিচ্ছবি। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের শোষক ও শোষিতের সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের ইংরেজ ইজারদার ও উৎপীড়িত লবণ চাষির মিল রয়েছে।

ঘ.যুগে যুগে শোষকদের পরিচয় কেবল শোষকই-মন্তব্যটি যথার্থ। সমাজে শোষকদের একটাই পরিচয়-সে শোষক। গরিবের রক্ত শোষণ করে সে লাভবান হয়। টাকার পাহাড় গড়ে। গরিব চাষার কোনো দুঃখ-কষ্টই তাদের দৃষ্টিগোচর হয় না। উদ্দীপক ও সিরাজউদ্দৌলা নাটকে শোষকদের হাতে তাঁতি, সাধারণ উৎপাদনকারী, চাষাকে শোষিত ও অত্যাচারিত হতে দেখা যায়। 

পরবর্তী সময়েও এদেশের সাধারণ মানুষকে শাসকগোষ্ঠী নানাভাবে শোষণ-নির্যাতন করেছে। মূলত সময় বদলালেও শোষেকের পরিচয় বদলায় না। শোষকের একটাই পরিচয়-সে কেবল শোষক। উদ্দীপকেও বস্ত্র উৎপাদনকারীর শ্রমে এক শ্রেণির মানুষ গাড়ি-বাড়ি আয়েশ করে। অথচ উৎপাদনকারীর পেট খালি, তাদের স্ত্রীদের শরীর উদোম। তাদের ঘরে হাহাকার। 

নাটকেও লবণচাষির কাছ থেকে কম দামে লবণ কিনে সেই লবণই একশ্রেণির লোককে বেশি দামে বিক্রি করে লাভবান হতে দেখা যায়। প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর অত্যাচার শুরু হয়। আসলে ইংরেজ হোক কিংবা অন্য জাতি হোক, শোষক তো শোষকই। তারা অন্যকে শোষণ করে আয়েশ করে। আর শোষিতরা হয় রক্তাক্ত। যার যথার্থ প্রমাণ উদ্দীপক ও সিরাজউদ্দৌলা নাটকে প্রতিফলিত। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ সত্য।

উদ্দীপক: ৩

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর আনুমানিক ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর এবং চাঁপাইনবাব গঞ্জের বারঘরিয়ায় অবস্থান নেন। ১১ ডিসেম্বর সেখানে ভারতীয় বাহিনীর আর্টিলারির গোলাবর্ষণ করার কথা ছিল। কিন্তু সেটি হয়নি। পরবর্তী দুই দিন ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর একাধিকবার ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে ব্যর্থ হন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর। পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় বাহিনীর সহযোগিতা ছাড়াই শত্রুদের অবস্তানে আক্রমণ করবেন এবং তিনি সেটিই করেন। স্বাধীনতার উষালগ্নে বিজয় সুনিশ্চিত করেই তিনি শহিদ হয়েছিলেন।

ক. সিরজাউদ্দৌলা নাটকে ফরাসি সেনাপতির নাম কি?

খ. মোহনলাল যুদ্ধ চলাকালীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে রাজধানীতে ফিরে যেতে বলেছিলেন কেন?

গ. উদ্দীপকের মহিউদ্দীন জাহঙ্গীর এবং সেনাপতি মিরমর্দান কিভাবে পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।

ঘ.উদ্দীপকটিতে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের মূল ট্র্যাজেডি ফুটে ওঠেনি- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

উত্তর:

ক. সিরাজউদ্দৌলা নাটকে ফরাসি সেনাপতির নাম সাঁফ্রে।

খ. নতুন করে শক্তি সঞ্চয়ের জন্য মোহনলাল পলাশীর প্রান্তর থেকে সিরাজউদ্দৌলাকে রাজধানীতে ফিরে যেতে বলেছিলেন। পলাশীর যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে নবাব নিজে যখন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত তখন মোহনলাল নবাব কে অবিলম্বে রাজধানীতে ফিরে যেতে বলেন। কারণ সেখানে গিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে আত্মরক্ষার চেষ্টা করতে হবে। যুদ্ধের বিধি অনুসারেই হাল ছেড়ে বিজয়ী শত্রুর কাছে আত্মসমর্পণ করা যাবে না। স্বাধীনতা বজায় রাখার শেষ চেষ্টা করতেই হবে। এসব কারণে মোহনলাল নবাবকে রাজধানীতে ফিরে যেতে বলেছিলেন।

গ.উদ্দীপকের মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর এবং সেনাপতি মীর মর্দান দেশপ্রেমের দিক থেকে পরস্পর সাদস্যপূর্ণ। দেশ প্রেম মানুষের এক অসামান্য মহৎ গুণ। দেশপ্রেম মানুষকে আত্মসচেতন ও অধিকার রক্ষার সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করে। এজন্যই মানুষ দেশকে বিপন্ন হতে দেখলে নিজের জীবন দিয়ে রক্ষা করতে সচেষ্ট হন। উদ্দীপকের মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দেশের জন্য অস্ত্র ধরেছিলেন। ১১ই ডিসেম্বর ভারতী বাহিনীর আর্টিলারির গোলাবর্ষণের কথা ছিল। 

পরের দুই দিনও সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়ে তিনি ভারতীয় বাহিনীর সাহায্য ছাড়াই শত্রুদের অবস্থান জেনে সেখানে আক্রমণ করেন এবং যুদ্ধের শহীদ হন। দেশের জন্য এমন অসাধারণ আত্মত্যাগ নাটকের নবাব সিরাজের অন্যতম সেনা নায়ক মিরমর্দানের মধ্যেও দেখা যায়। 

মীরজাফর,রায়দর্লভের মত সেনাপতিরা যুদ্ধে অংশ না নিলেও সেনাপতি মীর মর্দান তার সৈন্যদের নিয়ে প্রাণপণে যুদ্ধ করেন। এমনকি বারুদ বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ায় কামান ছাড়া যুদ্ধে অগ্রসর হন এবং বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে দেশের জন্য আত্মহুতি দেন। এই দেশপ্রেমেই উদ্দীপকের মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরের সঙ্গে মীরমর্দানকে একসুত্রে গ্রথিত করছে।

ঘ. উদ্দীপকটিতে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের মূল ট্র্যাজেডি ফুটে ওঠেনি। কেননা মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর জীবন দিয়ে হলেও দেশ স্বাধীন করেছিলেন। দেশপ্রেম মানুষের একটি আত্মিক অনুভূতি। দেশের স্বাধীনতার জন্য একজন দেশপ্রেমিক জীবন দেয়। দেশ স্বাধীন হলে তাদের জীবন দান সার্থক হয়। আর আত্মদানের পরেও যদি স্বাধীনতা হারিয়ে যায় তবে তার মতো ট্র্যাজেডি আর হয় না। উদ্দীপকে আমরা বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিনের বীরত্ব গাথার বর্ণনা পায়। 

তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অসীম বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। তিনি ভারতীয় বাহিনীর সহায়তা ছাড়াই শেষ পর্যন্ত সংগ্রামে লিপ্ত হন এবং স্বাধীনতার উষালিগ্নে এসে শহীদ হন। এই মৃত্যু মর্মান্তিক। সিরাজউদ্দৌলা নাটকেও তা দেখা যায়। কেননা সেখানেও দেশপ্রেমিক যোদ্ধারা আত্মহুতি দিয়েছেন। তা সত্বেও তারা স্বাধীনতা হারিয়েন কুচক্রীদের ষড়যন্ত্রে। সিরাজউদ্দৌলা নাটকে দেখা যায় নিজেদের শক্তি, সামর্থ্য, লোকবল, অস্ত্রবল সবকিছু থাকা সত্বেও দেশপ্রেমিক যোদ্ধারা পরাজিত হয়েছেন 

এবং দেশীয় কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে। দেশপ্রেমিক বীর শহীদরা দেশকে শত্রুমুক্ত করতে আত্মত্যাগ করেছেন বটে, কিন্তু তাদের স্বপ্ন পূরণ হয়নি যা গভীর ট্র্যাজেডির পরিচায়ক। অপরদিকে উদ্দীপকে আত্মত্যাগী বীর শহীদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে এজন্য এখানে ট্রাজিক রস ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এদিক বিচারে তাই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্তটি যথার্থ।

উদ্দীপক: ৪

দেখতে পেলেম প্রাচ্য জাতিরা নবযুগের দিকে যাত্রা করেছে। অনেকদিন আশা করেছিলুম, বিশ্ব-ইতিহাসের সঙ্গে আমাদের সামঞ্জস্য হবে, আমাদরেও রাষ্ট্রজাতির রথ চলবে সামনের দিকে, এবং এও মনে ছিল যে, এই চলার পথে টান দেবে স্বয়ং ইংরেজও। অনেকদিন তাকিয়ে থেকে অবশেষে দেখলুম চাকা বন্ধ। আজ ইংরেজ-শাসনের পধান গর্ব ল এবং অর্ডর, বিধি এবং ব্যবস্থা নিয়ে। এই সুবৃহৎ দেশে শিক্ষার বিধান, স্বাস্থ্যের বিধান অতি অকিঞ্চিৎকর, দেশের লোকের দ্বারা নব নব পথে ধন-উৎপাদনের সুযোগ-সাধন কিছুই নেই। অদূর ভবিষ্যতেও তার যে সম্ভাবনা আছে, তাও দেখতে পাই নে, কেননা দেশের সম্বল সমস্তই তলিয়ে গেল ল এবং অর্ডরের প্রকাণ্ড কবলের মধ্যে। য়ুরোপীয় নব-যুগের শ্রেষ্ঠ দানের থেকে ভারতবর্ষ বঞ্চিত হয়েছে য়ুরোপেরই সংস্রবে। নবযুগের সূর্য-মণ্ডলের মধ্যে কলঙ্কের মতো রয়ে গেল ভারতবর্ষ।

ক. ইংরেজরা সিরাজউদ্দৌলার নিষেধ অমান্য করে কাকে আশ্রয় দিয়েছিল?

খ. সিরাজউদ্দৌলা কেন ইংরেজদের বাণিজ্য করার অধিকার প্রত্যাহার করলেন?

গ. উদ্দীপকটিতে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের ইংরেজদের কোন বিষয়ের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকের লেখক সিরাজউদ্দৌলা নাটকে বর্ণিত ইংরেজ শাসনের ন্যক্কারজনক বৈশিষ্ট্যটি তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

উত্তর:

ক. ইংরেজরা সিরাজউদ্দৌলার নিষেধ অমান্য করে কৃষ্ণবল্লভকে আশ্রয় দিয়েছিলো।

খ. ইংরেজদের নানা ধরনের উসকানিমূলক কাজ এবং সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করায় তিনি তাদের বাণিজ্য করার অধিকার প্রত্যাহার করেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের ধৃষ্টতায় ক্ষিপ্ত হয়ে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণ করে ডাক্তার হলওয়েলকে বন্দি করেন। হলওয়েলের কাছে তিনি বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে বাঙালির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার সাহসের কৈফিয়ত চাইলেন। কামিশবাজারে গোলাবারুদ আমদানি করা, গ্রামের পর গ্রাম দখল করা, নবাবরে নির্দেশ অমান্য করে কৃষ্ণবল্লভকে আশ্রয় দেওয়া ইত্যাদি অপরাধে সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের সব ধরণের বাণিজ্য করার অধিকার প্রত্যাহার করেন।

গ. উদ্দীপকটিতে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের ইংরেজ চরিত্রের হঠকারিতা ও শোষণনীতির বিষয়ের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। আধুনিক সংস্কৃতির সূতিকাগার ভাবা হয় ইউরোপকে। জ্ঞান-বিজ্ঞান, কলা, দর্শন সব দিক দিয়ে তারা মানবজাতির পথপ্রদর্শক। কিন্তু বাঙালি তথা উপমহাদেশের জগগণের কাছে তাদের শোষণ-নির্যাতনের দিকটি প্রতিভাত। উদ্দীপকে ইংরেজ জাতির অগ্রযাত্রার কথা উল্লেখ করে লেখক বলেছেন, ইংরেজদের আগমনে আমাদের সংস্কৃতিতে 

আধুনিকতার পরম প্রথম অনুভূত হলেও ক্রমে তারা ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে, শোষণনীতিতে অগ্রসর হয়। এদেশের মানুষের ওপর জুলুম, নির্যাতন করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে প্রবৃত্ত হয়। সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রথম থেকেই ইংরেজদের হঠকারিতা চিত্র আমাদের চোখে ধরা পড়ে। তারা বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে উপমহাদেশে প্রবেশ করে এ দেশেরই মানুষের ওপর জুলুম করা শুরু করে এবং এ দেশের নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ইংরেজ চরিত্রের এসব বিষয়ের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় উদ্দীপকে।

ঘ. উদ্দীপকে সিরাজউদ্দৌলা নাটকে বর্ণিত ইংরেজ শাসনের ন্যক্কারজনক বৈশিষ্ট্যটি লেখক স্বল্পপরিসরে চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন। ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে দেখা যায় মানুষের প্রতি মানুষের অন্যায় দূর করার আগ্রহ রাষ্ট্রনীতিতে মানুষের শৃঙ্খল মোচনের ঘোষণা এবং মানুষকে ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত না করার প্রয়াস। কিন্তু এটা ছিল তাদের বহিরাবরণ। নিজেদের স্বার্থে এসব অনুষঙ্গ তারা অসত্য প্রমাণ করে। 

উদ্দীপকের লেখক ইংরেজ জাতি এবং তাদের শাসনব্যবস্থার চিত্র তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। প্রথমে তিনি ইংরেজ শাসনব্যবস্থাকে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখতেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি উপলদ্ধি করেন যে, যেখানে ইউরোপ জীবন ও সংস্কৃতির অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে সেই ইউরোপীয় ইংরেজরাই আমাদের জীবন ও সংস্কৃতির অগ্রযাত্রার পথে প্রধান অন্তরায়। 

সিরাজউদ্দৌলা নাটকটিতে দেখা যায়, বাণিজ্য করার উদ্দেশ্য ভারতবর্ষে পদাপর্পণ করা ইংরেজরা এদেশের সঙ্গে ষড়যন্ত্র, চাতুরী, বলপ্রয়োগ শুরু করে। ক্রমে সমগ্র ভারতবর্ষে তারা আধিপত্য বিস্তার করে এদেশের কিছু বিশ্বাসঘাতকের সহায়তা নিয়ে। যার ফলে বাংলা তথা ভারতবর্ষ দুইশ বছরের জন্য হারায় তার স্বাধীনতা। সিরাজউদ্দৌলা নাটকে বর্ণিত ইংরেজ শাসনের এই নীচ ও ঘৃণিত কর্মকাণ্ড উদ্দীপকের লেখক তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নের মন্তব্যটি যথার্থ।

উদ্দীপক: ৫

মারাঠা: আর আমার পরনে মারাঠা পোশাক, কারণ আমি মারাঠা শিবিরে ঢুকব পণ করে বেরিয়েছি। আমি তোমাদের গুপ্তচর। চলেছি ওদের খোঁজ নিতে। তোমার ঐ ঝোলা দাড়ি আর খোড়া পাগড়ি লাড়িয়ে রওনা হলে মাঝেপথেই অককা পেতে হোতো।

বশির: তুমি আমাদের গুপ্তচর?

মারাঠা: জি। আসল নাম আতা খাঁ। এখন অমরেন্দ্রনাথ বাপপাজী।

রহিম: প্রমাণ কি?

আতাঁ খা: একটু সরে দাঁড়াও। খুঁজে বের করছি। (বস্ত্রাবরণ থেকে কী একটা একটা বার করে দেখে, আবার তাড়াতাড়ি সরিয় রাখে)।

বশির: ওটা কী সরিয়ে রাখলে, দেখতে দাও।

আতা খাঁ: গুপ্তচর তার সবকিছু দেখাতে বাধ্য নয়। তোমাদের যাতে প্রয়োজন শুধু তাই দেখতে পাবে। নাও, এই দেখো, ভালো করে দেখো। সেনাপতির নিজ হাতের স্বাক্ষরযুক্ত ছাড়পত্র।

ক. ঘসেটি বেগম সম্পর্কে সিরাজের কে হন?

খ. উমিচাঁদ কেন নিজেকে দওলতের পূজারি হিসেবে জাহির করেন?

গ. উদ্দীপকের আতা খাঁ সিরাজউদ্দৌলা নাটকের কোন চরিত্রের প্রতিফলন ঘটেছে? আলোচনা কর।

ঘ. উদ্দীপকটি সিরাজউদ্দৌলা নাটকের সম্পূর্ণ ভাবটি ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে-মন্তব্যটি যাচাই কর।

উত্তর:

ক. ঘসেটি বেগম সম্পর্কে সিরাজের বড় খালা হন।

খ. উমিচাঁদ ছিলেন প্রচণ্ড অর্থলোভী। তাই তিনি নিজেকে দওলতের পূজারি হিসেবে জাহির করেন। লোভ মানুষকে পশুতে পরিণত করে। অর্থলোভী উমিচাঁদ অর্থের জন্য সমাজে যেকোনো ঘৃণ্য কাজ করতে পারেন। নবাব সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তিনি ঘসেটি বেগমের সঙ্গে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা শওকতজঙ্গকে ক্ষমতায় বসাতে চান। সেক্ষেত্রে তারা ব্যক্তিগত লাভ-লোকসানের হিসাব করতে প্রবৃত্ত হন। এমতাবস্থায় উমিচাঁদ উল্লিখিত বাক্যটির মাধ্যমে ঘসেটি বেগমের কাছে প্রকাশ করেন তার অর্থলোভী মনোভাব।

গ.উদ্দীপকের আতা খাঁ চরিত্রের মাঝে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের রাইসুল জুহালা ওরফে নারায়ন সিংহের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যর প্রতিফলন ঘটেছে। স্বদেশ প্রীতি বা স্বজাতিপ্রীতি একটি মহৎ গুণ। যার মাঝে এই গুনটি বিদ্যমান তিনি একজন খাঁটি মানুষ হিসেবে সবার কাছে শ্রদ্ধার পাত্র। তিনি নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও দেশ ও জাতির সম্মান রক্ষা করেন। উদ্দীপকের আতা খাঁ মাঝে স্বজাতিপ্রীতির মহত্তম গুণ পরিলক্ষিত হয়। 

পানিপথের যুদ্ধের সময় তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মারাঠা পোশাক পড়ে মারাটা শিবিরে রাতের অন্ধকারে যান গুপ্তচরবৃত্তির জন্য। তার এই দুঃসাহসিকতার পেছনে অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করে স্বজাতিপ্রেম । সিরাজউদ্দৌলা নাটকের রায়দুর্লভ, রাজবল্লভ, উমিচাঁদ, ঘসেটি বেগম যখন বাইজির জলসায় বসে সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তখন নারায়ণ সিংহ তথ্য সংগ্রহের জন্য সেখানে ছদ্মবেশে প্রবেশ করেন। এই নারায়ণ সিংস রাইসুল জুহালা ছদ্মনামে ইংরেজদের খবর নবাব সিরাজকে অবগত করেন। মূলত দেশপ্রেমবোধ থেকেই এ রকম দুঃসাহসিক কাজ করতেন। এখানেই উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য বিদ্যমান

ঘ.উদ্দীপকের সিরাজউদ্দৌলা নাটকের সম্পূর্ণ ভাব ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। কেননা উল্লিখিত বিষয়টি ছাড়াও নাটকটিতে আরও বহু বিষয় ও ভাবের উপস্থিতি ঘটেছে। বিষয়বস্তুর দিক দিয়ে সিরাজউদ্দৌলা একটি ঐতিহাসিক নাটক। বাংলার রাজনীতির পটপরিবর্তনের ক্ষেত্রে সিরাজউদ্দৌলার সিংহাসনে আরোহন, চক্রান্তজারে আবদ্ধ হওয়া এবং ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ ইত্যাদি নাটকের নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। 

উদ্দীপকটি সিরাজউদ্দৌলা নাটকের একটিমাত্র দিক উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। আর সেটা হল স্বদেশপ্রেম। নাটকের রাইসুল জুহালা চরিত্রের মাধ্যমে নাট্যকার ষড়যন্ত্রকারী এদেশীয় বিশ্বাসঘাতকের ভিড়ে একটু স্বদেশ প্রেমের ছোঁয়া দিয়েছেন। আমরা যখন দেখি রাইসুল জুহালা ছদ্মবেশ ধারণ করে ইংরেজদের সব গোপন খবর নবাবের কাছে পৌঁছে দেন, ঘসেটি বেগমের ষড়যন্ত্রের খবরও নবাবের কর্ণগোচর করেন তখন আমাদের মনটা একটু হলেও প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। 

নাটকের এই দিকটিই উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে। উদ্দীপকে আতা খাঁর কর্মকাণ্ডের মাঝে স্বজাতিপ্রীতির পরিচয় পাওয়া যায়। তার গুপ্তচর বৃত্তির মাঝে নাটকের দেশ প্রেমিক রাইসুল জুহালার দেশপ্রেমের বিষয়টি আমাদের চোখে পড়ে। শুধু এই দিকটি ছাড়া নাটকের অন্যান্য বিষয় যেমন উপমহাদেশে ইংরেজদের আগমন, সিরাজের ক্ষমতা গ্রহণ, এদেশীয় বিশ্বাসঘাতকের ষড়যন্ত্র, ইংরেজদের সঙ্গে নবাবের যুদ্ধ ইত্যাদি বিষয়ের কোনটিই উদ্দীপকে উপস্থিত হয়নি। তাই মন্তব্যটি যথার্থ ও ও যুক্তি সঙ্গত হয়েছে।

উদ্দীপক: ৬

সোনাপুরের দেওয়ান মামুন শেখ অন্যসব দেওয়ানদের থেকে ব্যতিক্রম। তাঁর কাছে প্রজাদের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। খাজনার জন্য জনসাধারণকে কখনো আঘাত করেননি তিনি। প্রজাদের সুখে-দুঃখে তিনি সবসময় পাশে থেকেছেন। তাই প্রজারাও তাঁকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে এবং ভালোবাসে। তাঁর মৃত্যেুর মধ্য দিয়ে সোনাপুরের মানুষের জীবনে নেমে আসে অবিরাম অশান্তি।

ক. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথমে কোথায় বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে?

খ. মিরজাফরের স্বপ্ন ব্যখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকের দেওয়ানের সাথে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের সিরাজউদ্দৌলার সাদৃশ্য নিরূপন কর।

ঘ. উদ্দীপকে মামুন শেখ এবং সিরাজউদ্দৌলা নাটকের সিরাজউদ্দৌলা উভয়েই প্রজাদরদি।–মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

উত্তর:

ক. ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথমে সুরাটে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে।

খ. মিরজাফরের স্বপ্ন ছিল বাংলার নবাব হওয়ার। মসনদল্যেভী প্রধান সেনাপতি মিরজাফরের বাংলার নবাবের প্রতি কোনো আনুগত্য ছিল না। তিনি স্বপ্ন দেখতেন বাংলার নবাব হওয়ার। এ লোভই তার মনুষ্যত্ব ধ্বংস করে দেয়। তিনি এই হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য হাত মেলান ইংরেজদের সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত ইংরেজদের হাতের পুতুল হয়ে থাকেন।

গ. উদ্দীপকের দেওয়ানের সঙ্গে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের সিরাজউদ্দৌলার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যর সাদৃশ্য রয়েছে। পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের শাসক এসেছেন। এই শাসকদের মধ্যে কেউ কেউ অত্যন্ত সজ্জন ও ন্যায়পরায়ণ ছিলেন। তারা দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। উদ্দীপকে সোনাপুরের দেওয়ান মামুন শেখ ঐ এলাকার অন্য দেওয়ানদের চেয়ে আলাদা। 

কারণ তিনি অত্যন্ত সজ্জন মানুষ। তিনি তাঁর এলাকার অধিবাসিদের মঙ্গল চিন্তা করেন এবং সেই অনুযায়ী কর্মকাণ্ড পরিচালিত করেন। সিরাজউদ্দৌলা নাটকের নবাব সিরাজউদ্দৌলা দেশের মানুষের কল্যাণ প্রত্যাশী। তিনি তাঁর রাজ্যের মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে তিনি ইংরেজদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ দিক দিয়ে একজন সৎ, নিষ্ঠাবান শাসক হিসেবে উদ্দীপকের দেওয়ান মামুন শেখ এবং সিরাজউদ্দৌলা নাটকের নবাব সিরাজউদ্দৌলা সাদৃশ্যপূর্ণ। 

ঘ. উদ্দীপকের মামুন শেখ এবং সিরাজউদ্দৌলা নাটকের সিরাজউদ্দৌলা নাটকের সিরাজউদ্দৌলার উভয়েই প্রজাদরদি-মন্তব্যটি সঠিক। প্রজা নিয়ে রাজ্য আর রাজ্য নিয়েই রাজা। একজন ন্যায় ও নিষ্ঠাবান সত্যিকারের রাজার বা শাসকের অন্যতম দায়িত্ব হলো তার প্রজার কল্যাণ ও মঙ্গল সাধন করা। উদ্দীপকে সোনাপুরের দেওয়ান মামুন শেখের কথা বলা হয়েছে। মামুন শেখ খাজনার জন্য কখনো জনসাধারণকে আঘাত করেননি। 

প্রজাদের সুখে-দুঃখে তিনি সব সময় পাশে থেকেছেন। একইভাবে সিরাজউদ্দৌলা নাটকে দেখা যায় সিরাজউদ্দৌলা এজজন প্রজাহিতৈষী নবাব। প্রজারা যাতে নিশ্চিন্তে জীবনযাপন করতে পারে, সে ব্যাপারে তিনি সবসময় চিন্তা করেন। ইংরেজরা তাঁর রাজ্যের প্রজাদের ওপর অত্যাচার করলে তিনি ইংরেজদের কুঠি আক্রমণ করেন এবং তাদের পরাজিত করে সেই কুঠি থেকে তাদের বিতাড়িতও করেন। এসব তিনি দেশ ও দেশের প্রজাদের নিরাপত্তার জন্যই করেছিলেন। 

উদ্দীপকে দেওয়ান মামুন শেখের কাছে প্রজাদের সুখ-দুঃখ ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে প্রজারা তাকে পছন্দ করত। একইভাবে নবাব সিরাজউদ্দৌলাও তেমনই প্রজাদরদি। মামুন শেখের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যেমন সোনাপুরের মানুষের ওপর নেমে আসে অশান্তি, তেমনি নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন অস্তমিত হয়ে ছিল বাংলার স্বাধীনতার সূর্য। এ কারণেই বলা যায়, উদ্দীপকের মামুন শেখ এবং সিরাজউদ্দৌলা নাটকের নবাব সিরাজউদ্দৌলা উভয়েই প্রজাদরদি।

হলওয়েল সাদা নিশান উড়াতে বলেছিলেন কেন?

নবাবের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করার জন্য হলওয়েল সাদা নিশান উড়াতে বলেছিলেন। কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে নবাবের সঙ্গে ইংরেজদের প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এতে নবাবের সৈন্যবাহিনী ইংরেজদের পরাজিত করে। এতে হলওয়েল বুঝতে পারেন যুদ্ধরত অবস্থায় ধরা পড়লে মৃত্যু অনিবার্য। তাই তিনি যুদ্ধে শান্তি চুক্তি করার জন্য সাদা নিশান উড়াতে বলেছিলেন।

সিরাজউদ্দৌলা ঘসেটি বেগমকে নিজ প্রাসাদে রাখতে চেয়েছিলেন কেন?

সিরাজউদ্দৌলা ষড়যন্ত্র থেকে দূরে রাখার জন্য ঘসেটি বেগমকে নিজ প্রাসাদে রাখতে চেয়েছিলেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলার বড় খেলা ঘসেটি বেগম। সিরাজ নবাব হওয়া সবচেয়ে বেশি ঘসেটি বেগমের স্বার্থে আঘাত লাগে। তাই তিনি ইংরেজ ও দেশীয় রাজকর্মীদের সঙ্গে সিরাজের পতনের জন্য গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন, যা সিরাজ গুপ্তচরের সংবাদ মারফতে জানতে পারেন। তাই তিনি ঘসিটি বেগমকে নিজ প্রাসাদে রেখে তার ওপর নজরদারি করতে চেয়েছিলেন।

ক্লাইভ উমিচাঁদকে যুগের সেরা বিশ্বাসঘাতক বলেছেন কেন?

উমিচাঁদ অর্থের মোহে যে কোন কাজ করতে পারেন বলে ক্লাইভ উমিচাঁদকে যুগের সেরা বিশ্বাসঘাতক বলেছেন। অর্থের প্রতি অপরিসীম লোভ উমিচাঁদের। অর্থের মোহে পড়ে যেকোনো ধরনের কাজ করতে পারেন তিনি। আজ তিনি অর্থের জন্য নবাব কে ছেড়ে ইংরেজদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন। কাল আবার অর্থের জন্য ইংরেজদের ছেড়ে নবাবের দলে যেতে পারে। এজন্যই ক্লাইভ তাকে যুগের সেরা বিশ্বাসঘাতক বলেছেন।

কেউ নেই, কেউ আমার সঙ্গে দাঁড়ালো না লুৎফা। উক্তিটি বুঝিয়ে লিখ।

প্রশ্নোক্ত উক্তিটির দ্বারা নবাব বিপদের সময় তার অসহায়ত্বকে বুঝিয়েছেন। পলাশীর যুদ্ধে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে পরাজিত হন নবাব। তাই তিনি রাজধানীতে ফিরে এসে সৈন্য জোগাড়ে ব্যস্ত হন রাজধানী সুরক্ষার জন্য। কিন্তু কেউ তার পাশে দাঁড়ালো না। তখন নবাব অসহায় অবস্থায় লুৎফার কাছে আলোচ্য কথাটি বলে মনবেদনা প্রকাশ করেছেন।

ইংরেজরা কলকাতার আশেপাশের গ্রামগুলো নিজেদের দখলে নিতে থাকে কেন?

ইংরেজরা এদেশে তাদের কর্তৃত্ব স্থাপন করার জন্য কলকাতার আশপাশের গ্রামগুলো নিজেদের দখলে নিতে থাকে। ইংরেজরা এদেশে এসেছিলো মূলত বাণিজ্য করতে। কিন্তু এদেশের সম্পদের মোহে পড়ে তারা এদেশ শাসনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। তাই তারা এদেশে তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অস্ত্র আমদানি শুরু করে। তাদের এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য প্রাথমিক পর্যায় হিসেবে তারা কলকাতার আশপাশের গ্রামগুলো দখলে নিতে থাকে।

লোকবল বাড়ুক আর না বাড়ুক, আহার্যের অংশীদার বাড়ল তা অবশ্য ঠিক। কথাটি বুঝিয়ে লেখ?

নবাব কর্তৃক তাড়া খেয়ে ভাগীরথী নদীর উপর ভাসমান জাহাজে বসে নিজের চরম দুরবস্থা প্রসঙ্গে মার্টিন ও ড্রেককে উদ্দেশ করে হ্যারি উক্তিটি করেছিলেন। ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে নবাবের আক্রমণ সহ্য করতে না পেরে ড্রেক তার সহযোগীদের নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর আশ্রয় নেন ফোর্ট উইলিয়াম জাহাজে। তখন তারা সাহায্যের জন্য মার্টিনের কাছে হাত বাড়ালে মার্টিন মাত্র ২৫০ জন সৈন্য দেন-যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য। তাই ব্যঙ্গ করে হ্যারি বলেন লোকবল বাড়ুক আর না বাড়ুক, আহার্যের অংশীদার বাড়ল তা অবশ্য ঠিক।

নবাব ওয়াটসকে দরবারে আশ্রয় দিয়েছিলো কেন?

আলিনগরের সন্ধি অনুযায়ী নবাব ওয়াটকে দরবারে আশ্রয় দিয়েছিলো। কতকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে
আক্রমণকালে নবাবের সঙ্গে ইংরেজদের একটি সন্ধি সাক্ষরিত হয়। সেই সন্ধি অনুযায়ী নবাব কোম্পানির সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে চেয়েছিলো। যার স্বীকৃতিস্বরূপ কোম্পানির একজন প্রতিনিধি ওয়াসকে তাঁর দরবারে আশ্রয় দিয়েছিলো।

নবাব সিরাজউদ্দৌলা কেন মিরজাফর চক্রকে বন্দি করেননি?

নবাব বিশ্বাস করতেন মিরজাফর চক্র আর যাই করুক দেশের স্বাধীনতা বিকিয়ে দেবে না। এ বিশ্বাসেই নবাব সিরাজউদ্দৌলা মিরজাফর চক্রকে বন্দি করেননি। নবাব সিরাজউদ্দৌলা আশা করতেন দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন দেখে মিরজাফর ও কুচক্রী দলের অন্তরে শেষ মুহূর্তে হলেও দেশপ্রেম জাগ্রত হবে। তারা দেশের সন্তান হিসেবে এর মান রাখবে। তা ছাড়া সবাই ছিল নবাবের একান্ত লোক, আত্মীয়-পরিজন। চরম বিপর্যয়ের মুহূর্তেও তাই তিনি আশা ছাড়েননি। তাই নবাব মিরজাফর চক্রকে বন্দি করেন নি। 

মিরজাফর চক্রকে বন্দি না করা সিরাজউদ্দৌলার ছিল একটি চরম ভুল সেই ভুলের মাসুল গুনতে হয়েছে বাঙ্গালিকে প্রায় ২০০ বছর। যদি সিরাজউদ্দৌলা সেইসময় মিরজাফর চক্রকে বন্দি করে হত্যা করতো তাহলে হয়তো বাংলার শাসন ভার ইংরেজদের কাছে প্রায় ২০০ বছরের জন্য চলে যেতে না। যাই হোক নবাব সিরাজউদ্দৌলা মিরজাফর চক্রকে হৃদয় থেকে বিশ্বাস করার জন্যই তাদেরকে বন্দি করেন নি। তিনি ভাবছিলেন শেষ সময়ে হয়তো এদের শুভ বুদ্ধি উদয় হবে।

ক্লাইভ সিরাজউদ্দৌলাকে দ্রুত হত্যা করতে চেয়েছিলো কেন?

গণবিক্ষোভের আশঙ্কায় ক্লাইভ সিরাজউদ্দৌলাকে দ্রুত হত্যা করতে চেয়েছিলো। পলাশির যুদ্ধে শোচনীয় পরাজয়ের পর স্ত্রী-কন্যাসহ নবাব পালোনোর উদ্দেশ্য যখন অবস্থান ত্যাগ করেছিলো তখন সেনাপতি মিরকাসেমের সৈন্যরা সহপরিবারে নবাবকে বন্দি করে রাজধানীতে নিয়ে আসে। নবাবরে বন্দি অবস্তায় গণবিক্ষোভ শুরু হতে পারে ভেবে ক্লাইভ দ্রুত নবাবকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন ও উত্তর গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url