লালসালু উপন্যাসের প্রশ্ন ও উত্তর বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে লালসালু উপন্যাসের প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে লালসালু উপন্যাসের প্রশ্ন ও উত্তর বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
লালসালু উপন্যাসের কাহিনী-সংক্ষেপ
লালসালু একটি সামাজিক সমস্যামূলক উপন্যাস। এর বিষয়: যুগ-যুগ ধরে শেকড়গাড়া কৃসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও ভীতির সঙ্গে সুস্থ জীবনাকাঙ্ক্ষার দ্বন্দ্ব। গ্রামবাসীর সরলতা ও ধর্ম বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ভন্ড ধর্ম ব্যবসায়ী মজিদ প্রতারণা জাল বিস্তারের মাধ্যমে কিভাবে নিজের শাসন ও শোষণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে তারই বিবরণে সমৃদ্ধ লালসালু উপন্যাস। কাহিনিটি ছোট, সাধারণ ও সামান্য কিন্তু এর গ্রন্থনা ও বিন্যাস অত্যন্ত মজবুত: লেখক সাধারন একটি ঘটনাকে অসামান্য নৈপুণ্য বিশ্লেষণী আলো ফেলে তাৎপর্যমন্ডিত করে তুলে ধরেছেন।
শ্রাবনের শেষে বাতাসহীন নিস্তব্ধ গুমোট আবহাওয়ার এক দুপুর একবেলা মহব্বতনগর গ্রামে মজিদের প্রবেশের নাটকীয় দৃশ্যটির মধ্যেই রয়েছে তার ভন্ডামি আর প্রতারণার পরিচয়। মাছ শিকারের সময় তাহের ও কাদের দেখে যে, মতিগঞ্জ সড়কের উপর একটি অপরিচিত লোক মোনাজাতের ভঙ্গিতে পাথরের মূর্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে। পরে দেখা যায়, ঐ লোকটি গ্রামের মাতব্বর খালেদ ব্যাপারীর বাড়িতে সমবেত গ্রামের মানুষকে তিরস্কার করেছে। গ্রামের মানুষকে বলেছে, আপনার জাহেল ,বেএলেম, আনপাড়হ।
মোদাচ্ছদের পীরের মাজারকে আপনারা এমন করি ফেলে রাখছেন? অলৌকিকতার অবতারণা করে মজিদ নামের ঐ ব্যক্তি জানায় যে, পীরের স্বপ্নাদেশে মাজার তদারকির জন্য তার এ গ্রামে আসা। তার তিরস্কার ও স্বপ্নাদেশের বিবরণ শুনে গ্রামের মানুষ ভয়ে ও শ্রদ্ধায় এমন বিগলিত হয় যে, তার প্রতিটি হুকুম তারা পালন করে গভীর আগ্রহে। গ্রামপ্রান্তের বাঁশঝাড়সংলগ্ন কবরটি দ্রুত পরিচ্ছন্ন করা হয়। ঝারলওয়ালা লাল কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হয় কবর। তারপর আর পিছু ফেরার অবকাশ থাকে না।
আরো পড়ুন: মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
কবরটি অচিরেই মাজারে এবং মজিদের শক্তির উৎসে পরিণত হয়। যথারীতি সেখানে আগরবাতি, মোমবাতি জ্বলে; ভক্ত আর কৃপা প্রার্থীরা সেখানে টাকা-পয়সা দিতে থাকে প্রতিদিন। কবরটি মোদাচ্ছের পীরের বলে শনাক্তকরণের, মধ্যেও থাকে মজিদের সুগভীর চাতুর্য। মোদাচ্ছের কথাটির অর্থ নাম-না জানা। মজিদের স্বগত সংলাপ থেকে জানা যায়, শস্যহীন নিজ অঞ্চল ভাগ্যন্বেষণে বেরিয়ে পড়া মজিদ নিজ অস্তিত্ব রক্ষারস্বার্থে এমন মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে।
গ্রামীন সমাজ এখানে অন্ধকারাচ্ছন্ন, স্থবির, যুগ যুগ ধরে এখানে সক্রিয় এই অদৃশ্য শৃংখল। এখানকার মানুষ ভাগ্য ও অলৌকিকত্ব গভীরভাবে বিশ্বাস করে। দৈবশক্তির লীলা দেখে ভয় পায়। নিজেকে লুকিয়ে রাখে, ভক্তিতে আল্পুত হয়। কাহিনীর উন্মোচন-মুহূর্তেই দেখা যায়, শস্যের চেয়ে টুপি বেশি। যেখানে ন্যাংটো থাকতেই বাচ্চাদের আমসিপারা শেখানো হয়। শস্য যা হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। সুতরাং ওই গ্রাম থেকে ভাগ্যের সন্ধানে উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদ মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে যে গ্রামে গিয়ে বসতি স্থাপন করতে চায় সেই গ্রামেও একইভাবে কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসের জয়-জয়কার।
এ এমনই এক সমাজ যার রন্ধে রন্ধে কেবলই শোষণ আর শোষণ, কখনো ধর্মীয় কখনো আবার অর্থনৈতিক। প্রতারণা, শঠতা আর শাসনের জটিল ও সংখ্যা বিহীন শিকড় জীবনের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পরতে পরতে ছড়ানো। আর ওইসব শেকড় দিয়ে প্রতিনিয়ত শোষণ করা হয় জীবনের প্রাণরস। আনন্দ, প্রেম, প্রতিবাদ, সততা এসব বোধ ও বুদ্ধি ওই অদৃশ্য দেওয়ালে ঘেরা সমাজের ভেতরে প্রায়শ ঢাকা পড়ে থাকে। এই কাজে ভূস্বামী, জোতদার ও ধর্মব্যবসায়ী একজন অন্যজনের সহযোগী। কারণ স্বার্থের ব্যাপারে তারা একাট্টা-পথ তাদের এক।
একজনের আছে মাজার, অন্যজনের আছে জমিজোত, প্রতিপত্তি। অন্য কোথাও নয়, আমাদের চারপাশে রয়েছে এরূপ সমাজের অবস্থান। বাংলাদেশের যে কোন প্রান্তের গ্রামাঞ্চলে সমাজের ভেতরকার ও বাহিরের চেহারা যেন এরূপ একই রকম। মাজারকে কেন্দ্র করে মজিদের ধর্ম ব্যবসায় জমজমাট হয়ে ওঠে। মাজারের আয় দিয়ে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মজিদ ঘরবাড়ি ও জমিজমার মালিক হয়ে বসে। তার মনভূমির এক অনিবার্য আকাঙ্ক্ষার শক্ত-সমর্থ, লম্বা চওড়া, বিধবা রহিমাকে বিয়ে করে। আসলে স্ত্রী হিসেবে রহিমা ঠান্ডা ভীতু মানুষ। তাকে অনুগত করে রাখতে কোন বেগ পেতে হয় না মজিদের। কারণ, রহিমার মনে রয়েছে গ্রামবাসীর মতো তীব্র খোদাভীতি। স্বামী যা বলে, রহিমা তাই মনে প্রানে বিশ্বাস করে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করে।
রহিমের বিশ্বাস তার স্বামী অলৌকিক শক্তির অধিকারী। প্রতিষ্ঠা লাভের সাথে সাথে মজিদ ধর্ম কর্মের পাশাপাশি সমাজেরও কর্তাব্যক্তি হয়ে ওঠে। গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে উপদেশ নিষেধ দেয় গ্রাম্য বিচার সালিশীতে সে-ই হয়ে ওঠে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী প্রধান ব্যক্তি। এক্ষেত্রে মাতব্বর খালেক ব্যাপারীও তার সহায়ক শক্তি। ধীরে ধীরে গ্রামবাসীর পারিবারিক জীবনেও নাক গলাতে থাকে সে। তাহেরের বাবা-মায়ের মধ্যকার একান্ত পারিবারিক বিবাদকে কেন্দ্র করে তাহেরের বাবার কর্তৃত্ব নিয়েও সে প্রশ্ন তুলে। নিস মেয়েকে পেটানোর অপরাধে হুকুম করে মেয়ের কাছে মাফ চাওয়ার এবং সেই সঙ্গে মাজারে ৫ পয়সার সিন্নি দেওয়ার। অপমান সহ্য করতে না পেরে তাহেরের বাবা শেষ পর্যন্ত নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।
খালেক ব্যাপারীর প্রথম স্ত্রী আমেনা বিবি সন্তান কামনায় অধীর হয়ে মজিদের প্রতিদ্বন্দ্বী পীরের আস্থাশীল হলে মজিদ তাকেও শাস্তি দিতে পিছপা হয় না। আমিনা চরিত্রে কলঙ্ক আরোপ করে খালেক ব্যাপারীকে দিয়ে তালাক দিতে বাধ্য করে মজিদ। কিন্তু তবু মাজার ও মাজারের পরিচালক ব্যক্তিটির প্রতি আমেনা বা তার স্বামী কারওই কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হয় না।
গ্রামবাসী যাতে শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়ে মজিদের মাজারকেন্দ্রিক পশ্চাৎপদ জীবনধরা থেকে সরে আসতে না পারে, সেজন্য সে শিক্ষিত যুবক আক্কাসের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে ওঠে। সে আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। মজিদ এমনই কূট-কৌশল প্রয়োগ করে যে, আক্কাস গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। এভাবে মজিদ গ্রামের একক সিদ্ধান্তদাতায় পরিণত হয়। সে হাসুনির মায়ের বাবার বিচার করে শাস্তি দিতেও টলেনি। সে পবিত্র কোরআন শরীফ থেকে তেলাওয়াত করে, ভুল ব্যাখ্যা করলেও কেউ প্রতিবাদ করে না।
হাসুনির মায়ের বাবা বুড়ো হয়েও মজিদের কৌশলে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে, কাঁদতে শুরু করে। মজিদ সিদ্ধান্ত দেয় তুমি তোমার মাইয়ার কাছে মাফ চাইবা আর মাজারে সিন্নি দিবা পাঁচ পইসার। বুড়ো বাড়ি গিয়ে সটান হয়ে শুয়ে পড়ে। মেয়ের কাছে চিড়া-পানি চায়। খাওয়া শেষ হলে মেয়ের কাছে মাফ চায়। সেদিন সন্ধ্যায় বুড়ো কোথায় যায় কেউ বলতে পারে না। মজিদের শিক্ষায় গ্রামবাসী ভালোভাবে বুঝেছে যে, পৃথিবীতে যাই ঘটুক, জন্ম-মৃত্যেু-শোক-দুঃখ, খোদা সবকিছু ভালোর জন্যই করেন। এবার যে সবার গোলা ভরা ধান উঠেছে, সেটাও খোদার রহমত। মজিদেরও মগরার পর মগরা ধানে ভরে গেছে। খোদার রহমত আর মাজারের তানার দোয়ায়ই তা হয়েছে বলে সে সবাইকে শোনায়। তার অন্তরে ক্রমশ ছড়িয়ে যায় যে আগুন তাতে বেগুনি রঙের শাড়ি পরা হাসুনির মাকে অস্পষ্ট দেখে।
আরো পড়ুন: রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
কিন্তু সেই স্বপ্ন গুঁড়িয়ে যায় তিন গ্রাম পরে এক পীর সাহেবের আগমন সংবাদ শুনে। পীরের রুহানি তাকত ও কাশফ নিয়ে খ্যাতির শেষ নেই। মজিদের সেই তাকত নেই। তাই সে শঙ্কিত হয়ে ওঠে। এদিকে মাজারে লোকজনের আগমনও কমে যায়। সে ভেবে নেয়, এবার কিছু একটা না করলেই নয়। মজিদ যখন আওয়ালপুর গ্রামে পৌঁছে চিৎকার করে গালাগাল শুরু করে-এ কেমন বেশরিয়তি কারবার, আছরের সময় জোহরের নামাজ পড়া? সাঙ্গোপাঙ্গোরা তাকে বোঝাতে চেষ্টা করে, ভ্রাদ্র মাসে দুকদমের উপর দুই লাঠি হিসাবে এখন সময় আছে। মজিদ মাপতে বললে তারা ছয় কদমের পর দুুই লাঠি যোগ করেও ছায়ার নাগাল পায় না। রাতে ব্যাপারীকে নিয়ে এক জরুরি বৈঠক বসে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় মহব্বতনগরের কোনো লোক আওয়ালপুরে আগত পীরের কাছে যাবে না।
নানা রকম কূট-কৌশলে মিথ্যা কথা বলে প্রতারণা করে, চিকিৎসার নামে অদ্ভুত শাস্তি বিধান ও ফতোয়া জারি করে মাজিদ বাহিরে তা আধিপত্য বিস্তার করেছিলো তা! তার বাইরের পরিচয়। ভিতরে সে ভীরু এবং নিঃসঙ্গ বোধ করে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে রহিমাকে বলে বিবি আমাগো যদি পোলাপাইন থাকতো! মসজিদ আবেগ শূন্য বিবেকবর্জিত নয়। কিন্তু সে চায় না তার আবেগে এবং সত্য প্রকাশের মধ্যে দিয়ে তিল তিল করে গড়ে তোলা, তার মিথ্যার সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাক। কিন্তু ধ্বংস মজিদ শেষ পর্যন্ত ঠেকাতে পারে না। প্রচণ্ড ঝড় এসে তার সবকিছু ধ্বংস করে দেয়। তার দুর্বল ও নিঃসঙ্গ অবস্থার ওপর থেকে আবরণ সরে যায়।
এই সত্যটি ধরা পড়ে রহিমার কাছে। ঝড়ের রাতে জমিলাকে শাসনে ব্যর্থ হয়ে মজিদ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। মাঠে মাঠে ধান নষ্ট হয়ে যাবে বলে মজিদ রহিমাকে ডাকলে স্বামীর দিকে তাকিয়ে রহিমা বলে-ধান দিয়া কী হইব মানুষের জান যদি না থাকে? আপনে ওয়ে নিয়া আসেন ভিতরে। মজিদ মাজারে যায়। পাঁজাকোলা করে নিয়ে আসে জমিলাকে।
রহিমা প্রবল আবেগে তার দেহ হাত বোলাতে থাকে। মজিদ বেরিয়ে মাঠের দিকে হাঁটতে শুরে করে। তাকে দেখে হাহাকার করে ওঠে সবাই। মজিদ কঠিনভাবে তাদের বলে নাফরমানি করিও না খোদার উপর তোয়াক্কল রাখ। কারণ মজিদ ভাবত অন্দরে-বাইরে সর্বত্র তাকে লালসালুর ঐশীশক্তির প্রভাব টিকেয়ে রাখতে হবে।
লালসালু নামকরণের স্বার্থকতা
স্বার্থ ও লোভের বশবতী হয়ে এক শ্রেণির মানুষ সমাজের অসচেতন সাধারণ মানুষের কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে পুজিঁ করে তাদের স্বার্থ উদ্ধার করে। বাঙালির সমাজব্যবস্থার সেই চিত্রটি লেখক তাঁর লালসালু উপন্যাসে উপস্থাপন করেছেন। গ্রামীণ মানুষের মনের চারদিক ঘিরে আছে খুব শক্ত ও অদৃশ্য একটি বেস্টনী, যেখানে ভাগ্যই সব কথার এক কথা। সেখানে মানুষ সমস্ত ঘটনার মধ্যেই দেখতে পায় দৈবশক্তির লীলা; তাকে সে ভয় পায়, শ্রদ্ধাভক্তিতে কখনো কখনো আপ্লুত হয়।
উপন্যাসের কাহিনী যতই উন্মোচিত হতে থাকে ততই দেখা যায়, শস্যের চাইতে চুপির সংখ্যা বেশি। এই কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসের অনিবার্য পরিণতি হয় ভীতি ও আত্মসমর্পণ। তাই মজিদের মিথ্যা স্বপ্নাদেশের বিরুদ্ধে কেউ যায় না; কেউ কোনো কথাও বলে না। মজিদই গালাগাল করে লোকদের, তাদের নিবুদ্ধিতা সম্পর্কে সচেতন করে দেয়, অনুশোচনায় জর্জরিত করে দেয় তাদের অন্তর। বলে আপনারা জাহেল, বে-এলেম, আনপাড়হ। মোদাচ্ছের পীরের মাজারকে আপনারা এমন করি ফেলি রাখছেন?
মাজারের ঐশীশক্তিকে অবলম্বন করে মজিদ গ্রামের ধনী ব্যক্তি মাতব্বর খালেক ব্যাপারীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। এভাবেই মজিদ তার প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করে। এক পর্যায়ে গ্রামবাসী তার ওপর অন্ধবিশ্বাস স্থাপন করেন। মজিদ শেষ পর্যন্ত তার পরিবারের সদস্যদের কাছেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। কিশোরী জমিলা তার স্ত্রী হয়েও বয়সের স্বভাবে তার সব আদেশ-নিষেধ মানতে নারাজ। জোর করলে সে তার মুখে থুথু ছিটিয়ে দেয়। এমনকি লালসালুতে ঢাকা মাজারের প্রতিও চরম অবজ্ঞা ও অবহেলা করে।
এতদিনের গড়ে তোলা শক্ত ভিত নড়বড়ে হওয়ার ভয়ে স্ত্রীকে জিনে ধরেছে বলে মজিদ তাকে মাজারে নিয়ে বেঁধে রাখে। এসব ঘটনা রহিমার কাছেও তাকে দুর্বল করে দেয় এবং সেও একসময় প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। তাই বলা যায় যে, লালসালু কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মবোধের প্রতীক। তারপরও অসহায় মানুষের মানসিক সান্ত্বনার শেষ আশ্রয়স্থল হলো মাজার।
তাই ভণ্ড, প্রতারক, ধর্মব্যবসায়ীরা এ সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রেখেছে। লালসালুর দৌরাত্ম্যে শোষিত ও নিঃশ্ব হচ্ছে সরল অন্ধবিশ্বাসী সাধারণ মানুষ। কারণ একটাই, তাদের সচেতনতার উৎস ঢাকা পড়ে আছে লালসালুর অলৌকিক শক্তির কাছে। এদিক বিবেচনায় উপন্যাসের নামকরণ লালসালু যথার্থ ও সার্থক হয়েছে।
লালসালু উপন্যাসের প্রশ্ন ও উত্তর
উদ্দীপক: ১
ওয়াসিকা গ্রামের এক দুরন্ত মেয়ে। বন্ধুদের সঙ্গে ছুটোছুটি করা, অবাধে সাঁতার কাটা তার আনন্দের কাজ। তার বাবা অভাবের তাড়নায় ওয়াসিকাকে পাশের গ্রামের এক বুড়ো লোকের সাথে বিয়ে দিলেন। লোকটি গ্রামের মাতব্বর। তাকে সবাই একাব্বর মুন্সি বলে ডাকে। মুন্সির কথা গ্রামের সবাই মানলেও চঞ্চল ও স্বাধীনচেতা ওয়াসিকা তার কথা মানে না।
ক. ধলা মিয়া কেমন ধরনের মানুষ ছিল?
খ. সজোরে নড়তে থাকা পাখাটার পানে তাকিয়ে সে মূর্তিবৎ বসে থাকে বলতে কি বোঝানো হয়েছে?
গ. ওয়াসিকা লালসালু উপন্যাসের জমিলার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ-ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের একাব্বর মুন্সি লালসালু উপন্যাসের মজিদ চরিত্রের সামগ্রিক দিক ধারণ করেনি-মূল্যায়ন কর।
উত্তর:
ক.ধলা মিয়া নির্বোধ ও অলস প্রকৃতির মানুষ।
খ. সজোরে নড়তে থাকা পাখাটার পানে তাকিয়ে যে মূর্তিবৎ বসে থাকে বলতে লেখক অপমানিত, ঈর্ষাকাতর মজিদের নিলিপ্ত ভাবকে বুঝিয়েছেন। আওয়ালপুর গ্রামে এক পীরের আবির্ভাব ঘটে। সেই গ্রাম তখন লোকে লোকারণ্য। পীরের কীর্তিকলাপ দেখতে মজিদও সেখানে যায়। কিন্তু বেটে হওয়ার কারণে সে পীরের মুখ দেখতে পায় না, শুধু পাখা নাড়ানো দেখে।
সবাই পীরকে নিয়ে ব্যস্ত, মজিদকে কেউ সমীহ করে না; এমনকি যারা তাকে চেনে তারাও না। এতে মজিদ অপমান বোধ করে। উপরন্তু যখন মতলুব খাঁ পীরের গুণাগুণ ব্যাখ্যা করে এবং তা শুনে লোকজন ডুকরে কেঁদে ওঠে তখন মজিদ সাজোরে থাকা পাখাটার পানে তাকিয়ে মূর্তিবৎ হয়ে বসে থাকে।
গ.ওয়াসিকা স্বভাবধর্মের দিক দিয়ে লালসালু উপন্যাসের জমিলা চরিত্রের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। আমাদের সমাজ নানা রকম কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের গাগপাশে আবদ্ধ হয়ে অন্ধকারে তলিয়ে যেতে বসেছে। মানুষকে অবমূল্যায়ন, প্রগতিশীল চেতনার অভাব, অশিক্ষা, দারিদ্র্য ইত্যাদি সমাজের এই অসংগতির জন্য দায়ী, যা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।
উদ্দীপকে দেখা যায় ওয়াসিকা নামের দুরন্ত এক কিশোরীর স্বপ্নমুখর জীবনকে দারিদ্র্য এবং নারীর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা কিভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। ওয়াসিকা বন্ধুদের সাথে ছোটাছুটি করত, অথচ তাকে বিয়ে দেওয়া হয় এক বৃদ্ধের সাথে। গ্রামের লোকজন তার স্বামীকে মানলেও ওয়াসিকা তার কথা মানে না। এমনই একটি চরিত্র লালসালু উপন্যাসের জমিলা।
সেও দুরন্ত কিশোরী। ভণ্ডপীর মজিদের লালসার শিকার হয়ে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয় সে। গ্রামের সবাই মজিদকে ভয়-ভক্তি করলেও জমিলা তাকে একটুও ভয় পায় না। প্রায়ই সে মজিদের কথার অবাধ্য হয়। এখানেই উভয় চরিত্রের সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।
ঘ. উদ্দীপকের একাব্বর মুন্সি লালসালু উপন্যাসের মজিদ চরিত্রের সামগ্রিক দিক ধারণ করেনি। মন্তব্যটি সঠিক। সমাজে এমন কিছু মানুষ বাস করে যারা তাদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য যেকোনো হীন কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না। প্রয়োজনে তারা ধর্মকেউ নিজের কাজে ব্যবহার করে। এ ধরনের মানুষের উপস্থিতি এবং কর্মকাণ্ডের জন্য আমাদের সমাজ এতটা পিছিয়ে আছে।
লালসালু উপন্যাসে মজিদ চরিত্রটির মাধ্যমে সমাজের মুখোশধারী এবং ধর্মের নামে ব্যবসায় করা মানুষের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। মজিদ একজন ভণ্ড, মিথ্যাবাদী, হীনচেতনা মানুষের প্রতিমূর্তি। সে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ধর্ম এবং মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে ব্যবাহার করে। অপরদিকে উদ্দীপকটিতে একাব্বর মুন্সি শুধু মজিদ চরিত্রের নারীর দুর্বলতা ও ক্ষমতাশালী ভাবটি তুলে ধরা হয়েছে।
উদ্দীপকের একাব্বর মুন্সি গ্রামের মাতব্বর। সবাই তাকে মান্য করে। কিন্তু সে বিয়ে করে তার মেয়ের বয়সী ওয়াসিকাকে, যা লালসালু উপন্যাসে মজিদের জমিলাকে বিয়ে করার বিষয়টি মনে করিয়ে দেয়। এ বৈশিষ্ট্য ছাড়া একাব্বর মুন্সি চরিত্র উপন্যাসের মজিদ চরিত্রের অন্য কোনো বৈশিষ্ট্য ধারণ করেনি। তাই বলা যায় যে, প্রশ্নের মন্তব্যটি সঠিক।
উদ্দীপক:২
সুপ্রভা প্রভুত্ব করার চেয়ে নির্ভর করিতেই ভালোবাসে বেশি, আদর পাওয়াটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্য। মন্দার গৃহিণী-পনার ভিত্তিও ওইখানেই-সুপ্রভাকে সে নয়নের মনি করিয়া রাখিয়াছে। কে বলিবে সুপ্রভা তাহার সতীন? স্নেহে যত্নে সুপ্রভার দিনগুলিকে সে ভরাট করিয়া রাখে। সতীনের সংসারেও তাই এখানে কলহ-বিবাদ মান-অভিমান মন-কষাকষি নাই।
ক. সময়ে-অসময়ে মিথ্যা কথা না বললে নয়-কে ভাবে?
খ. খিটখিটে বুড়িটি যৌবনে কেমন ছিল?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে লালসালু উপন্যাসের কিসে সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মন্দার চেয়ে রহিমা চরিত্রটি আরও অনেক বিস্তৃত-উক্তিটির যথার্থতা প্রমাণ কর।
উত্তর:
ক. সময়ে-অসময়ে মিথ্যা কথা না বললে নয়-এ ভাবনা মজিদ ভাবে।
খ. খিটখিটে বুড়িটি যৌবনে হাসিখুশি ছিল। বার্ধক্যে ঝগড়াটে ও খিটখিটে মেজাজের হলেও যৌবনে বুড়ি ছিল হাসিখুশি। এক মুহূর্তও স্থির থাকত না। সারা বাড়ি নেচে বেড়াত। মুখে তার কথার খই ফুটত। ধীরে ধীরে তার সংসারে অভাব ও শরীরে অসুখ বাসা বাঁধে। সেই সঙ্গে তার মেজাজ খিটখিটে হতে থাকে। ধীরে ধীরে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করতে আরম্ভ করে।
গ.উদ্দীপকের সঙ্গে লালসালু উপন্যাসের রহিমার সন্তানস্নেহে সতীন জমিলাকে বরণ করে নেওয়ায় সাদৃশ্য রয়েছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা সবসময় অবহেলার শিকার। বেশিরভাগ সময় অনেক নারীকে স্বামীর একাধিক বিয়ে মেনে নিতে হয়। কারণ পুরুষরা নারীর উপর আধিপত্য বিস্তার করে। বাধ্য হয়েই তাকে সতীনের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে সংসার করতে হয়। লালসালু উপন্যাসের রহিমা সতীন জমিলাকে আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করে।
সম্পর্কে রহিমা জমিলার সতীন হলেও জমিদার বয়স রহিমার অর্ধেক। তাই নিঃসন্তান রহিমা সতীন জমিলাকে সন্তানের মত স্নেহ করে। রহিমার অন্তরে শাশুড়ির ভাব জাগে। তাকে আদর যত্ন করে খাওয়ায়-দাওয়ায়। উদ্দীপকের মন্দা রহিমারই প্রতিবিম্ব। সুপ্রভা মন্দার সতিন হলেও সু প্রভাকে সে নয়নের মণি করে রাখে। সুপ্রভাও মন্দার আদরকে বড় পাপ্য বলে মনে করে। স্নেহে-যত্নে তার দিনগুলো মন্দা ভরিয়ে দেয়। তাই সতিনকে সন্তানস্নেহে বরণ করে নেওয়ার দিক থেকে উদ্দীপকের সঙ্গে লালসালু উপন্যাসের সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. মন্দার চেয়ে রহিমা চরিত্রটি আরও অনেক বিস্তৃত-উক্তিটি যথার্থ। একজন নারী নানাভাবে সংসারের হাল ধরলেও পুরুষশাসিত সমাজে তাকে নানা দিক দিয়ে অপ্রাপ্তি নিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হয়। তারা পুরুষের কাছে সংসারে প্রতিনিত বঞ্চনার শিকার হয়, তবুও সংসারটাকে সুন্দর করে টিকে রাখে। উদ্দীপকের মন্দা ও লালসালু উপন্যাসের রহিমা উভয়ই নারীর শাশ্বত মাতৃত্বের প্রতীক।
তাই তারা সতীনকে সন্তান স্নেহে গ্রহণ করেছে। সতীন হলেও তাদেরকে আদর যত্নে সন্তানের মত রেখেছে। ফলে সংসারে কলহ-বিবাদ ও মনোমালিন্য নেই। উদ্দীপকে মন্দার শুধু এই বৈশিষ্ট্যরই প্রকাশ রয়েছে আর লালসালু উপন্যাসের রহিমা আরও বিস্তৃত চরিত্র। স্বামীর কাছে অসহায় হলেও তার চারিত্রিক মাধুর্য আছে। নরম-শান্ত-কোমল সে। মজিদ ও মাজারের উপর তার অন্ধবিশ্বাস ভক্তি। মজিদও সাধারণ গ্রামের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের সেতু হিসেবে রহিমাকে ব্যবহার করে।
শেষ পর্যন্ত সতিনের প্রতি সন্তান স্নেহের কারণে স্বামীর মত ও কর্মের বিরুদ্ধে রহিমা প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। সমস্ত উপন্যাস জুড়ে তার বিস্তৃতি। উদ্দীপকের মন্দার মধ্যে কেবলমাত্র মাতৃ স্নেহের প্রকাশ ঘটেছে। আর রহিমা যেমন শান্ত তেমনি ধৈর্যশীল,পরিশ্রমী, ধর্মভীরু, আবার সংকটের মুহূর্তে প্রতিবাদী। তাই বলা হয়েছে মন্দার সঙ্গে রহিমা চরিত্রটি আরো বেশি বিস্তৃত।
উদ্দীপক: ৩
মকবুল তিনি বিয়ে করেছে। তিন বউই বেঁচে আছে ওর। সবার ছোট টুনি।গায়ের রং কালো। ছিপ ছিপে দেহ। আয়ত চোখ। বয়স তার ১৩-১৪ মাঝামাঝি। সংসার কাকে বলে সে বোঝেনা। সমবয়সী কারো সঙ্গে দেখা হলে সবকিছু ভুলে গিয়ে মনের সুখে গল্প জুড়ে দেয়। আর হাসে। হাসতে হাসতে মেঝেতে গড়াগড়ি দেয় টুনি।
ক. মজিদের বড় বউয়ের নাম কি?
খ. দিন কয়েকের মধ্যে জমিলার আসল চরিত্র প্রকাশ পেতে থাকে- কথাটি দ্বারা কি বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে টুনির সঙ্গে লালসালু উপন্যাসের জমিলা চরিত্রটির সাদৃশ্য কোথায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের টুনির চরিত্রে লালসাল উপন্যাসের জমিলার সামগ্রিক দিক উন্মোচিত হয়নি- কথাটি মূল্যায়ন কর।
উত্তর:
ক. মজিদের বড় বউ এর নাম হচ্ছে রহিমা।
খ. দিন কয়েকের মধ্যে জমিলার আসল চরিত্র প্রকাশ পেতে থাকে কথাটি দ্বারা জমিদার হাসিখুশি, সজীবতা ও প্রাণ ধর্মের দিকটি বোঝানো হয়েছে। মজিদ জমিলাকে বিয়ে করে আনার পর ভেবেছিল জমিলা বিড়াল ছানার মত ভীতু, সবকিছুতেই সে ভয় করবে। কিন্তু অচিরেই মজিদের এ ধারণাটি ভুল প্রমাণিত হয়। কারণ দিন কয়েকের মধ্যে জমিলার আসল চরিত্র প্রকাশ পেতে থাকে।
প্রথমে সেই ঘোমটা খুলে, তারপর সে মুখ আড়াল করে হাসে এবং অবশেষে তার মুখে কথার খই ফোটে। সে কাউকে ভয় পায় না। এতে বোঝা যায় যে,জমিলা মোটেও ভীতু নয়, বরং সে সাহসী এবং কথার পৃষ্ঠে কথা বলতে জানে। সে হাসিখুশি, সজীবতা ও প্রাণ ধর্মের প্রতীক।
গ.উদ্দীপকের টুনির সঙ্গে লালসালু উপন্যাসের জমিলা চরিত্রটির সাদৃশ্য সহজ প্রানোচ্ছলতায়। কৈশোর ও যৌবনের সন্ধিক্ষণে নারীরা স্বতঃস্ফূর্ত ও প্রাণময়ী হয়ে ওঠে। তখন তারা নারী ধর্মে, যৌবন ধর্মে সজিবতার প্রতীক হিসেবে প্রকাশিত হয়। তাই তো তারা কথায় কথায় হাসে। সবার প্রাণে প্রাণে আনন্দ সঞ্চার করে। উদ্দীপকের টুনি মকবুলের তিন বউয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট।
তার বয়স ১৩-১৪ মাঝামাঝি। কৈশোর যৌবনের সন্ধিক্ষণে, সে ঘর সংসার কাকে বলে বোঝেনা। সমবয়সীদের সঙ্গে সে মনের সুখে গল্প করে, হেসে খেলে সময় কাটায়। লালসালু উপন্যাসের সংসার-অনভিজ্ঞ জমিলারও হাসি থামেনা, হাসতে হাসতে সে মাটিতে লুটিয়া পড়ে। জমিদার এই হাসির সঙ্গে টুনির প্রাণ ময় হাসির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের টুনির সঙ্গে লালসালু উপন্যাসের জমিলাস চরিত্রটির সাদৃশ্য মূলত সাবলীল প্রানোচ্ছলতায়।
ঘ. উদ্দীপকর টনির চরিত্রে লালসালু উপন্যাসের জমিলার সামগ্রিক দিক উন্মোচিত হয়নি। কারণ বয়ঃসন্ধিকালীন সাবলীল উচ্ছলতায় মিল থাকলেও অন্তর ধর্মে, অনুভবে জমিলা টুনির তুলনায় অনেক বেশি সচেতন ও প্রতিবাদী। সব মানুষ নিজের মত। নির্দিষ্ট কিছু বয়সের তাৎপর্যে অনেকে একরকম আচরণ করলেও অন্তরের অনুভবে, চিন্তার গভীরতায়,মননে তাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য দেখা যায়। যা একজন থেকে অন্যজনকে ভিন্নতার রেখায় বিভক্ত করে। উদ্দীপকের মকবুলের তিন স্ত্রীর মধ্যে টুনি সবার ছোট। টুনির কৈশোর-যৌবনের বয়সন্ধিক্ষণের এক নারী হিসেবে সাবলীল প্রাণোচ্ছল।
সংসার সে বোঝে না। সমবয়সীদের সঙ্গে গল্পে-হাসিতে মেতে থাকে। এই একই রকম বয়ঃসন্ধির স্বভাবজাত উচ্ছলতা উপন্যাসের জমিলার মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়। তা সত্বেও জমিলাকে উপন্যাসের বৃহৎ পরিসরে প্রাণধর্মের প্রতীক হিসেবেই চিহ্নিত করা যায়। উদ্দীপকের টুনির মতো জমিলার কৈশোরিক চপলতা লক্ষ করা গেলেও ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায়, এই ধর্মীয় আদেশ-নির্দেশের প্রাবল্য পুরো মহব্বতনগরে যে প্রাণময়তা ছিল রুদ্ধ, জমিলা যেন সেখানে এক মুক্তির সুবাতাস। জমিলা ধর্মতন্ত্র ও পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে নারীধর্ম ও হৃদয়ধর্মের যোগ্য প্রতিনিধিত্ব করেছে। এই দিক বিচারে তাই বলা যায়, টুনির মতো জমিলার চরিত্রে কৈশোরিক চপলতা প্রধান হলেও জমিলা চরিত্রটির ব্যঞ্জনা আরও গভীরে নিহিত।
উদ্দীপক: ৪
যে কথা সেই কাজ মোতালেফের, দু মাসের বেশি সবুর করতে হলো না ফুলবানুকে। গুড় বেচে আরও পঞ্চাশ টাকার জোগাড় হতেই মোতালেফ মাজু খাতুনকে তালাক দিল। কারণটাও সঙ্গে সঙ্গে পাড়াপড়শিকে সাড়ম্বরে জানিয়ে দিল। মাজুবিবির স্বভাব চরিত্র খারাপ। রাজেকের দাদা ওয়াজেদ মৃধার সঙ্গে তার আচার-ব্যবহার ভারী আপত্তিকর। মাজু খাতুন জিভ কেটে বলল আউ আউ, ছি ছি! তোমার গতরই কেবল সোন্দর মোতি মেঞা, ভিতর সোন্দর না। এত শয়তানি, এত ছল-চাতুরী তোমার মনে?
ক. মজিদকে প্রথম কারা দেখেছিল?
খ. আমেনা বিবির মনে আশার সঞ্চার হয় কেন?
গ. মাজুবিবির স্বভাবচরিত্র খারাপ-উক্তিটি লালসালু উপন্যাসের কোন দিকটিকে ইঙ্গিত করে?
ঘ. উদ্দেশ্য সাধনে মোতালেফ ও মজিদ সমান নিষ্ঠুর হলেও মজিদের কর্মসম্পাদন রহস্যময় ও ভণ্ডামিপূর্ণ ব্যাখ্যা কর।
উত্তর:
ক. মজিদকে প্রথম তাহের ও কাদের দেখেছিল।
খ. সন্তানলোভের ক্ষীণ সম্ভাবনায় আমেনা বিবির মনে আশার সঞ্চার হয়। সন্তানলাভের তদবিরে আমেনা বিবি প্রথমে নিরাশ হয়েছিলো। কারণ আওয়াপুরে আগত পীর সাহেবের পানিপড়া সে পায়নি। তাই সে ধরেই নিয়েছিলো তার আর সন্তান হবে না। কিন্তু মজিদ যখন পেটের বেড়ির কথা বলে এবং সাতের বেশি বেড়ি না থাকলে তা খোলার ব্যবস্থার কথা জানায় তখন তার মনে আশার সঞ্চার হয়।
গ. মাজুবিবির স্বাভাবচরিত্র খারাপ-উক্তিটি লালসালু উপন্যাসের মজিদের আমেনা বিবি সম্পর্কিত অবিশ্বাস কৌশলে খালেক ব্যাপারীর মনে প্রতিষ্ঠা করাকে ইঙ্গিত করে। নারীরা লক্ষ্য অর্জনে তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার পথের যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা দূর করে। পুরুষশাসিত সমাজে তাদের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে নানা সমস্যা-সংকট মোকাবেলা করতে হয়। উদ্দীপকের মোতালেফ ফুলবানুকে দেওয়া কথা রাখতে দু মাসের মাথায় গুড় বিক্রি করে আরও পঞ্চাশ টাকার জোগাড় হতেই মাজু খাতুনকে তালাক দেয়।
তার এ অপকর্মকে আড়াল করতে সে মাজু খাতুনের নামে ঘটা করে অপবাদ ছড়ায়। লালসালু উপন্যাসেও ভণ্ড মজিদ আমেনা বিবির নামে ছড়ানো অপবাদকে প্রমাণ করতে, আমেনা বিবির মূর্ছা যাওয়ার কারণ শরীরের দুর্বলতা নয়, আমেনা বিবির পাপ। আমেনা বিবি যেহেতু সাত পাক দিতে ব্যর্থ হয়েছে, সেহেতু সন্দেহ নেই তার ভিতরে পাপ আছে। সূর্যের আলোর মতো তা স্পষ্ট। ধর্মের লেবাসে এসব কথা বলে মজিদ খালেক ব্যাপারীর মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয় এবং আমেনা বিবিকে তালাক দেওয়ায়।
ঘ. উদ্দেশ্য সাধনে মোতালেফ ও মজিদ সমান নিষ্ঠুর হলেও মজিদের কর্মসম্পাদন রহস্যময় ও ভণ্ডামিপূর্ণ। প্রশ্নোক্ত এ মন্তব্যটি আমি যথার্থ মনে করি। নিষ্ঠুরতা, ভণ্ডামী এবং ধর্মের নামে প্রতারণাই ধর্মব্যবসায়ীদের আসল উদ্দেশ্য। তারা ধর্মের লেবাসে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করার মানসেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিষ্ঠুর খেলায় মেতে ওঠে। উদ্দীপকে মোতালেফ ফুলবানুকে দেওয়া কথা রাখতে মাত্র দু মাসের মধ্যেই স্ত্রী মাজু খাতুনকে দুশ্চরিত্রের অপবাদ দিয়ে তালাক দেয়। নিজ স্বার্থ হাসিলে উদ্দীপকের মোতালেফ মিঞার যাবতীয় নিষ্ঠুরতা লালসালু উপন্যাসের মজিদের মধ্যেও লক্ষ করা যায়।
মজিদ তার অপকর্মকে আড়াল করতে রহস্যময় ও ভণ্ডামিপূর্ণ আচরণেও সিদ্ধহস্ত। লালসালু উপন্যাসের মজিদ অত্যান্ত চতুর। আমেনা বিবি আওয়ালপুরে আগত পীরের পানিপড়া থেতে চাওয়ায় সে এটিকে তার প্রতি অবহেলা, অপমানজনক মনে করেছে। এ কারণে সে রেগে গিয়ে আমেনা বিবিকে চূড়ান্ত শাস্তি দিয়েছে। সে ধর্মের নামে চাতুরি করে ব্যাপারীর মনে সন্দেহ ঢুকিয়েছে। এভাবে মজিদ তার হীনবাসনা চরিতার্থ করার জন্য নিষ্ঠুরতার সঙ্গে ধর্ম নিয়ে রহস্যময় ও ভণ্ডামি পূর্ণ আচরণ করতেও কুণ্ঠিত হয়নি।
উদ্দীপক: ৫
আয়নার হুজুর কেবলা গল্পটি এক ভন্ড পীরের কাহিনী। এ ভন্ড পীরের পাল্লায় পড়েছে আধুনিক শিক্ষিত যুবক এমদাদ। এমদাদ অনেকটা কৌতূহল বসে, অনেকটা ভক্তি ভরে পীরের মুরিদ হয়েছে। কিন্তু ভন্ড পীরের চালাকি, তার লোলুপ দৃষ্টি একসময় এমদাদ এর কাছে ধরা পড়ে গেলে পীরকে সে আক্রমণ করতেও কসুর করেননি। এর ফলে সুস্থ বুদ্ধির এমদাদ কে পাগল আখ্যা দিয়ে গ্রাম থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আর হুজুর কেবলা মুরিদের সুন্দরী বিবিকে তালাক পড়িয়ে নিজে বিয়ে করে যে লালসাবৃত্তি চরিতার্থ করেছে-তার মুখোশ উন্মোচিত হলো না অন্ধভক্তের কাছে। ধর্মের নামে এই অন্ধত্বের জন্য সত্যিই দুঃখ জাগে।
ক. মজিদ জমিলাকে কোথায় বেঁধে রাখে ?
খ. হঠাৎ সিধা হয়ে মজিদের বুকের কাছে এসে পিচ করে তার মুখে থুথু নিক্ষেপ করল-কে বা কেন?
গ. উদ্দীপকের এমদাদ লালসালু উপন্যাসের কোন চরিত্রের সঙ্গে তুলনীয়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. স্বীয় স্বার্থোদ্ধারে ধর্মকে ব্যবহার করার দিক থেকে উদ্দীপকের পীর ও লালসালু উপন্যাসের মজিদ সমান। মূল্যায়ন কর।
উত্তর:
ক. মজিদ জমিলাকে মাজারের পাশে একটি খুঁটিতে বেঁধে রাখে।
খ. হঠাৎ সিধা হয়ে মজিদের বুকের কাছে এসে পিচ করে তার মুখে থুথু নিক্ষেপ করল জমিলা। লালসালু উপন্যাসে মজিদের বিপরীতে প্রবাহিত একমাত্র সক্রিয় চরিত্র হলো জমিলা। মহব্বতনগরের সবাই মজিদকে ভয় পেলেও জমিলা ভয় পায় না। তাই মজিদ মজিলার অন্তরে ভীতি সঞ্চার করার জন্য তাকে মাজারে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু জমিলা তাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মজিদের কঠিন হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু ছাড়াতে পারে না তখন মজিদের এহেন অন্যায় কাজের প্রতিবাদস্বরুপ সে মজিদের মুখে থুথু নিক্ষেপ করে।
গ.উদ্দীপকের এমদাদ লালসালু উপন্যাসের জমিলা চরিত্রের সঙ্গে তুলনীয়। ধর্মব্যবসায়ীরা নানাভাবে আমাদের সমাজকে শাসন-শোষণ করে বেড়ায়। এ শাসন-শোষণের চিত্র কোনো প্রগতিশীল স্বাধীনচেতা মানুষের কাছে ধরা পড়লে সে প্রতিবাদ জানায়। অনন্যোপায় হয়ে আক্রমণ করে। উদ্দীপকের এমদাদ একজন প্রগতিশীল শিক্ষিত যুবক। সে অনেকটা কৌতুহলের বশে পীরের মুরিদ হয়। কিন্তু যখন সে জানতে পারে পীর একজন নারীলোভী, ভণ্ড, প্রতারক, তখন সে পীরকে আক্রমণ করে।
লালসালু উপন্যাসে জমিলা এক স্বাধীনচেতা নারী। সে স্বাধীনভাবে চলতে চায়, যা মজিদের অস্তিত্বে আঘাত হানে। মজিদ তাকে ধর্মভীরু করে তুলতে চায়। মজিদ তাকে বারবার মাজারে যেতে বলে। কিন্তু জমিলা তা করেননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে যখন তাকে জোরপূর্বক মাজারে নিতে চায় তখন সে মজিদের মুখে থুথু নিক্ষেপ করে। এভাবে উদ্দীপকের এমদাদ চরিত্রটি লালসালু উপন্যাসের জমিলার সঙ্গে তুলনীয়।
ঘ. উদ্দীপকের পীর ও লালসালু উপন্যাসের মজিদ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় ধর্মকে ব্যবহার করেছে। ধর্মের মুখোশ পরে সাধারণ মানুষের সরল ধর্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। যারা নিজ স্বার্থোদ্ধারে ধর্মকে ব্যবহার করে তারা ধর্মব্যবসায়ী। এসব ভণ্ড-প্রতারক সমাজে ধর্মের নামে অধর্মের বেসাতি গড়ে। ধর্মের দোহাই দিয়ে তারা নিজেদের মনোবাসনা পূরণে তৎপর হয়।
উদ্দীপকের পীর হুজুর কেবলা একজন মিথ্যাবাদী, ভণ্ড, প্রতারক। কারণ নিজ স্বার্থোদ্ধারে ধর্মকে ব্যবহার করায় সারক্ষণ সচেষ্ট থাকে সে। তার চরিত্রে লাম্পট্যের নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত বিদ্যমান। লালসালু উপন্যাসে মজিদ একজন ভণ্ড, প্রতারক। তাই তো সে পুরনো কবরকে মোদাচ্ছের পীরের কবর বলে চালিয়ে দিয়েছে। গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে শোষণ করেছে ধর্মের ভয় দেখিয়ে।
এছাড়া গ্রামের প্রগতিশীল যুবক আক্কাসকে ধর্মের দোহাই দিয়ে স্কুল প্রতিষ্ঠিা থেকে বিরত রাখে এবং খালেক ব্যাপারীকে দিয়ে আমেনাকে তালাক দিতে বাধ্য করে- এ সবকিছুর মূলে ছিল তার ব্যক্তিগত স্বার্থ। লালসালু উপন্যাসে মজিদ শুধু একজন ভণ্ড, প্রতারক, ধর্মব্যবষায়ীই নয়, লস্পটও। মজিদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো উদ্দীপকের পীরের মধ্যেও বিদ্যমান। তারা উভয়েই স্বার্থসিদ্ধির জন্য ধর্মকে ব্যবহার করেছে। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
শস্যের চেয়ে টুপি বেশি বলতে কি বুঝায়?
শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি বলতে বোঝানো হয়েছে খাদ্য না থাকলেও লোকদেখানো ধর্মচর্চায় কেউ কার্পণ্য করে না। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ লালসালু উপন্যাসে যে এলাকার বর্ণনা দিয়েছেন সেখানে মানুষের মাঝে প্রচণ্ড অভাব। তবে এই অভাবের মাঝেও গ্রামের মানুষ ধর্মচর্চা করে। ঘরে-খাদ্য না থাকলেও মানুষের মাঝে ধর্মচর্চার কার্পণ্য নেই। তবে সবাই খোদার ভয়ে ধর্মচর্চা করে না। কেউ কেউ ধর্মের নামে ভণ্ডামিও করে। তাই লেখক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন যে, শস্যের চেয়ে চুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি।
মজিদ কিভাবে দিনের পর দিন তার আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়?
মজিদ দিনের পর দিন গ্রামবাসীর বিশ্বাস অর্জন করে তাদের মনে ভয় সৃষ্টি করতে পারায় আত্মবিশ্বাস ফিরে পায়। বতোরের দিন যায়, আবার আসে। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে মজিদের জমি-ঘরবাড়ি। সেই সঙ্গে সম্মানও। মজিদ যা বলে গাঁয়ের মাতব্বর তা-ই করে। শলাপরামর্শ, আদেশ, উপদেশের জন্য মজিদের কাছেই আসে। খরা পড়লে তার কাছে খতম পড়াতে আসে। মজিদ সবাইকে বোঝায় রিজিক দেওয়ার মালিক খোদা। মাঠের বুকে গান গেয়ে গজব কাটানো যায় না। মজিদ লালসালু আবৃত মাজারের একনিষ্ঠ সেবক। তাই সবাই তাকে ভয় করে, সাগ্রহে তার কথা শোনে। গ্রামবাসীর এমন অন্ধ অনুকরণ ও বিশ্বাসের কারণে মজিদও প্রতারণা করার আত্মবিশ্বাস ফিলে পায়।
মজিদ পীর সাহেবকে শয়তান আখ্যা দিল কেন?
মানুষকে প্রলুব্ধ করে বলে মজিদ খালেক ব্যাপারী ও গ্রামবাসীকে নিয়ে এক জরুরি বৈঠক করে সেখানে আওয়ালপুরে আসা পীর সাহেবকে শয়তান বলে আখ্যায়িত করে। মজিদ মহব্বতনগর গ্রামে বৈঠকে সবাইকে বলে শয়তান মানুষকে প্রলুব্ধ করার জন্য মনোমুগ্ধকর রূপ ধারণ করে সামনে উপস্থিত হয়। আর অত্যান্ত কৌশলে মানুষকে বিপথে চালিত করার চেষ্টা করে। আওয়ালপুরে আগত পীর সাহেবের উদ্দেশ্যও তাই মানুষকে বিপথে নেওয়া, খোদার পথ থেকে সরিয়ে নেওয়া। সেই উদ্দেশ্যেই তথাকথিত পীর কৌশল চরিতার্থ করার চেষ্টায় রত। এসব যুক্তির মাধ্যমে মজিদ পীর সাহেবকে শয়তান বলে আখ্যা দেয়।
মজিদ কিভাবে মহব্বতনগর গ্রামে শিকড় গেড়েছিলো?
মজিদ অত্যান্ত নাটকীয়ভাবে গ্রামের মানুষদের মধ্যে খোদাভীতি জাগিয়ে মহব্বতনগরে শিকড় গেড়েছিলো। মজিদ কথিত মোদাচ্ছের পীরের মাজারকে কেন্দ্র করে মহব্বতনগর গ্রামবাসীকে ধর্মের ভয় দেখিয়ে শোষণের জাল বিস্তার করে। ঐ গ্রামে যে তার বিরোধিতা করতে গেছে তাকে সে কঠোরভাবে অপমান করেছে, শাস্তি দিয়ে দমন করেছে। শঠতা, প্রতারণা ও মিথ্যার মাধ্যমে সে তার প্রভুত্ব টিকিয়ে রেখেছে। গ্রামের প্রতাপশালী কর্তাব্যক্তিদের সে হাত করেছে, সাধারণ মানুষকে ধর্ম পালনের নানা রকম অপব্যাখ্যা দিয়ে তা পালনের জন্য নানাভাবে ভয় দেখিয়ে সেখানে গ্রামে স্থায়ী শিকড় গেড়েছিল।
মতিগঞ্জ সড়কের দিকে তাকিয়ে তাহের বিস্মিত হলো কেন?
মতিগঞ্জের সড়কের উপরে একজন অপরিচিত লোককে মোনাজাতের ভঙ্গিতে দাঁড়ানো দেখে তাহের বিস্মিত হল। শ্রাবণের শেষা শেষী নিরাকের দিনে আমনের ধান ক্ষেতে মাছ ধরতে যায় তাহের ও কাদের। একসময় তাহেরের নৌকা মতিগঞ্জ সড়কটার কাছে এসে পড়ে। তখন তাহের দেখে মতিগঞ্জ সড়কের উপরেই একটি অপরিচিত লোক আকাশ পানে হাত তুলে মোনাজাতের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। শীর্ণ মুখে ক গাছি দাড়ি চোখ নিমিলিত। সময় বয়ে চলে কিন্তু লোকটির চেতনা নেই। নিরাক পড়া আকাশ যেন তাকে পাথরের মূর্তিতে রূপান্তরিত করেছে। লোকটি এরূপ দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গিই তাহেরকে বিস্মিত করেছে।
খালেক ব্যাপারীর আর মজিদের শক্তির পার্থক্য কোথায়?
খালেক ব্যাপারীর শক্তি হচ্ছে তার ভূ-সম্পত্তি, আর মজিদের শক্তি হচ্ছে মাজার এবং তার কূট-কৌশল। খালেক ব্যাপারীর সঙ্গে মজিদের শক্তির পার্থক্য রয়েছে। খালেক ব্যাপারী গ্রামের মাতব্বর ও ধনী ব্যক্তি। গ্রামবাসী কূট বুদ্ধির জোরে নানাভাবেই খালেক ব্যাপারীর ওপর নির্ভরশীল। মজিদের শক্তি গ্রোথিত হয়েছে মানুষের মগজে, বিশ্বাসে। সে মানুষের মজগকে নিয়ন্ত্রণ করে সালু আবৃত মজারকে অপব্যবহার করে। মানুষকে ধর্মের দোহাই দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেত পারে, এ শক্তিই মজিদের শক্তি।
মজিদ আওয়ালপুর গেল কেন?
আওয়ালপুরে আগত পীরের কারসাজি ধরিয়ে দিয়ে নিজের অবস্থান পাকা পোক্ত করার জন্যই মজিদ আওয়ালপুর গেল। মহব্বতনগরের লোকেরা মজিদকে মান্য করে। আওয়ালপুরে আগত পীরের কাছে তাদের যাতায়াত ধর্মব্যবসায়ী মজিদকে ব্যবসায়ের ধস সম্পর্কে শঙ্কিত করে তোলে। সবচেয়ে বড় কথা, একবার তার প্রতি কারও অবিশ্বাস বা সন্দেহ দেখা দিলে তা ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। মজিদ তাই নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য আওয়ালপুরে যায়।
জমিলার মনে কেন বিদ্রোহ জাগে?
মজিদের নিষ্ঠুরতা জমিলাকে বিদ্রোহী করে তোলে। আগ্রাসী মানসিকতার চরিত্র মজিদ। জমিলার নামাজ পড়ার কড়া হুকুম জারি করে মজিদ। জমিলা নামাজ পড়েও, কিন্তু ক্লান্তিতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমন্ত জমিলাকে দেখে মজিদ ভাবে যে সে নামাজ পড়েনি। তাই কোনোকিছু জিজ্ঞেস না করেই জমিলাকে আক্রমণ করে বসে মজিদ। আর মজিদের এমন আচরণে রুষ্ট জমিলার মনেও বিদ্রোহী চেতনা জেগে ওঠে।
লালসালু উপন্যাসের লেখক কে?
লালসালু উপন্যাসের লেখক হলো সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক,আজকে আমি আপনাদের সাথে লালসালু উপন্যাসের প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই লেখাগুলো পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url