অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহাকারে পড়েন তাহলে অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর গুলো বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর বিস্তারিত জেনে নিন
অপরিচিতা গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত মাসিক সবুজপত্র পত্রিকার ১৩২১ বঙ্গাব্দের (১৯১৪) কার্তিক সংখ্যায়। এটি প্রথম গ্রন্থভুক্ত হয় রবীন্দ্রগল্পের সংকলন গল্পসপ্তক এ এবং পরে গল্পগুচ্ছ তৃতীয় খণ্ডে (১৯৭২)। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ছোটগল্পের প্রাণপুরুষ, সমগ্র বাংলা সাহিত্যের একজন সার্থক স্রষ্টা। তিনি বাংলা সাহিত্যে অসংখ্য কবিতা, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ প্রভৃতি সংযোজন করেছেন। অপরিচিতা তাঁর একটি অন্যতম গল্প। এ গল্পে তিনি প্রথমত নায়ক অনুপমেররূপ মাধুর্যের বর্ণনা দিয়েছেন। 

বয়স ও যোগ্যতার বিচারেও সে পরিণত ছিল। পিতার মৃত্যুর পর সে মায়ের কাছেই মানুষ হয়। তার মামা ছিলেন পরিবারের কর্তা। সঙ্গত কারণেই পারিবারিক কোনো বিষয়ে তাকে মাথা ঘামাতে হয়নি। সে ছিল মায়ের অনুগত সন্তান। তাছাড়া সে নিজেকে একজন ভালোমানুষ বা সৎ পাত্র হিসেবে দাবি করে। তার বন্ধু হরিশ কানপুরে কাজ করতো। ছুটিতে এসে সে-ই প্রথম অনুপমকে বিয়ের কথা বলে। বন্ধুর এ কথা শুনে তার মনের বাগিচায় বসন্তের কোকিল কুহু স্বরে ডেকে ওঠে। নিয়মানুসারে বিয়ের কাজ ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হতে থাকে। কন্যা (কল্যাণী) ছিল বেশ সুন্দরী ও প্রাণচঞ্চলা। 
আর কন্যার পিতা শম্ভুনাথ সেন ছিলেন স্পষ্টভাষী ও সুপুরুষ। অন্যদিকে অনুপমের মামা বিয়ের পণের ব্যাপারে কোনো প্রকার ছাড় দিতে রাজি নন। এখানেই গল্পের কাহিনী জটিলতায় রূপ নেয়। বেশ আয়োজনের মধ্যে দিয়ে বিয়ের কাজ শুরু হলেও এক পর্যায়ে দেনা-পাওনার কারণে সব আনন্দ-আয়োজন নষ্ট হয়ে যায়। বিয়ে ভেঙে যায়। এতে অনুপমের কোনো দোষ না থাকলেও তাকে ব্যক্তিত্বহীনের মতো নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। এ কারণে সে-ই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেননা তার মনোরাজ্যের প্রেয়সীকে পাওয়া হলো না। 

এরপর যদিও পুনরায় তাদের বিয়ে হতে পারত বা ট্রেনভ্রমণে ইতিবাচক কিছু ঘটতে পারত, কিন্তু কল্যাণী বিয়ে না করার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় তা আর সম্ভব হয়নি। তবু আশা ছাড়েনি অনুপম। কল্যাণীর প্রতি অনুরাগ তার মনে-বাইরে নিত্য জেগে থাকে। সর্বনাশা গণপ্রথার কারণে হৃদয় ভেঙে যায়, ব্যক্তিত্ব ধস নামে, অভিমানক্ষুব্ধ জীবনে ফুলে-ফলে পরিপূর্ণ হতে পারেনা। কেননা কল্যাণী চিরকালের জন্য তার কাছে অপরিচিতা থেকে যায়। তবু আশা জেগে থাকে, ভালোবাসা অটুট থাকে।

অনুপম নামকরণের সার্থকতা

অপরিচিতা গল্পের নামকরণ গল্পের নায়ক অনুপমের একটি উক্তির উপর নির্ভর করে করা হয়েছে। উক্তিটি হলো-ওগো অপরিচিতা, তোমার পরিচয়ের শেষ হইল না. শেষ হইবে না; কিন্তু ভাগ্য আমার ভালো, এই তো আমি জায়গা পাইয়াছি। গল্পের বিষয়বস্তু বিশ্লেষণে অনুপমের কাছে কল্যাণী অপরিচিতাই রয়ে গেল, এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। অনুপম এম এ পাস করেছে কিন্তু মা আর মামার আদেশ-নির্দেশ না মানার মতো মানসিক শক্তির তার তৈরি হয়নি। তার বিয়ের ব্যাপারে দেখাশুনা, কথাবার্তা সব তাঁরাই করেছেন অনুপমের কোনো ভূমিকা নেই। যথা সময়ে সে বরবেশে কানপুর যায়। 

সেখানে মামার আচরণে অপমানিত বোধ করে কনের বাবা বরপক্ষকে খাবার খাইয়ে বিদায় করে দেন। বিয়ে ভেঙে যায়। কনে অপরিচিতাই রয়ে যায় অনুপমের কাছে। বছর খানেক পর মাকে নিয়ে ট্রেনে তীর্থে যাওয়ার সময় একজন বাঙালি মেয়ের মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠে এখানে জায়গা আছে এ কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে গেল অনুপম। গাড়ি বদলের সময় আবার সেই কণ্ঠের আহব্বানে সাড়া দিয়ে মাকে নিয়ে কামরায় উঠে যায় অনুপম। সহজ স্বচ্ছন্দ হাসি-খুশি সুন্দর মেয়েটিকে দেখে তার মা মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকেন। কানপুরে নেমে যাওয়ার আগে মা তাকে প্রশ্ন করে জানতে পারেন সে-ই ডাক্তার শম্ভুনাথ সেনের মেয়ে কল্যাণী, যার সাথে বিয়ে হতে গিয়েও হয়নি অনুপমের। 
কল্যাণী ও শম্ভুনাথ বাবুর কাছে অনুপম বিগত ঘটনার জন্য হাত জোড় করে ক্ষমা চাইল। শম্ভুনাথ সেনের মন নরম হলেও কল্যাণী স্পষ্ট জানিয়ে দিল সে প্রতিজ্ঞা করেছে যে, সে আর বিয়ে করবে না। অনুপম কল্যাণীকে ছাড়েনি, সে কানপুরে চলে এসেছে, কল্যাণীর সাথে দেখা হয়, কথা হয় এটা ওটা কাজও সে করে দেয়। কল্যাণীর বাবা তাকে ক্ষমা করেছেন। কিন্তু কল্যাণী প্রতিজ্ঞা করেছে সে বিয়ে করবে না। অনুপম চার বছর ধরে কল্যাণীর বিশ্বাস অর্জনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যায়। 

কারণ ট্রেনের কামরা থেকে শোনা মিষ্টি সুরেলা কণ্ঠ এখানে জায়গা আছে এ কথাটি আজও তার হৃদয়ে আম্লান। অপরিচিতার সেই কণ্ঠই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। যদিও কল্যাণী তার কাছে অপরিচিতাই রয়ে যায়। কাজেই বিষয়বস্তুর আলোকে অন্তর্নিহিত ইঙ্গিতপূর্ণ অপরিচিতা নামটিই গল্পের নামকরণ হিসেবে যথার্থ হয়েছে।

অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

উদ্দীপক: ১

মা মরা ছোট লাবনী আজ শ্বশুর বাড়ি যাবে। সুখে থাকবে এই আশায় দরিদ্র কৃষক লতিফ মিয়া আবাদের সামান্য জমিটুকু বন্ধক রেখে পনের টাকা জোগাড় করলেন। কিন্তু তাতেও কিছু টাকার ঘাটতে রয়ে গেল। এদিকে বর পারভেজের বাবা হারুন মিয়ার এক কথা, সম্পূর্ণ টাকা না পেলে তিনি ছেলেকে নিয়ে চলে যাবেন। বিষয়টি পারভেজের কানে গেলে সে বাপকে সাব জানিয়ে দেয় সে দরদাম বা কেনা বেচার পণ্য নয়। সে একজন মানুষকে জীবনসঙ্গী করতে এসেছে, অপমান করতে নয়। ফিরতে হলে লাবনিকে সঙ্গে নিয়েই বাড়ি ফিরবে।

ক. শম্ভুনাথ সেকরার হাতে কে পরখ করতে দিয়েছিলেন?

খ. বাংলাদেশের মধ্যে আমিই একমাত্র পুরুষ যাহাকে কন্যার বাপ বিবাহ আসর হইতে ফিরাইয়া দিয়েছে। কথাটি বলতে কি বোঝানো হয়েছে?

গ. অনুপম ও পারভেজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বৈসাদৃশ্য ব্যখ্যা কর।

ঘ. অনুপমের মামা ও হারুন মিয়ার মত মানুষের কারণে আজও কল্যাণী ও লাবনিরা অপমানের শিকার হয়- বিশ্লেষণ কর।

উত্তর:

ক. শম্ভুনাথ সেকরার হাতে একজোড়া এয়ারিং বা কানের দুল পরখ করতে দিয়েছিলো।

খ. বাংলাদেশের মধ্যে আমিই একমাত্র পুরুষ যাহাকে কন্যার বাপ বিবাহ আসর হইতে ফিরাইয়া দিয়েছে বলতে অনুপমের আক্ষেপ ও অসহায়ত্বকে বুঝানো হয়েছে। বাংলাদেশের বিয়েতে প্রায়শই দেখা যায় যে, প্রতিশ্রুত ও প্রদত্ত যৌতুকের অসংগতির কারণে বরের বাবা বিয়েতে অসম্মতি জানায়। কিন্তু অনুপমের ক্ষেত্রে এর বিপরীত ঘটনা ঘটেছে। 

যৌতুক গ্রহণের প্রবণতা, লোভ এবং হীন মানসিকতার পরিচয় পেয়ে শম্ভুনাথ সেন বরের মামাকে আশীর্বাদের এয়ারিং ফিরিয়ে দেন। তারপর বরযাত্রীদের খাইয়ে বিয়ের ব্যবস্থা না করে তাদের গাড়ি ডেকে দিতে চাইলেন। এতে অনুপমের মনে হয়েছে শম্ভুনাথ সেন যেন বর অনুপমকেই বিয়ের আসর থেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আলোচ্য অংশে অনুপমের এই অসহায় অবস্থাকেই তুলে ধরা হয়েছে।

গ. অপরিচিতা গল্পের অনুপম ও উদ্দীপকের পারভেজের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বৈসাদৃশ্য রয়েছে। অনেক যুবক আছে যারা উচ্চশিক্ষিত হলেও তাদের মানস সুগঠিত নয়। নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে না, পরিবারতন্ত্রের চাপে সিদ্ধান্তের জন্য পরিবারের কর্তাব্যক্তিদের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই বিয়ের মতো জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও তারা পরিবারের পছন্দ-অপছন্দের ওপর নির্ভর করে। উদ্দীপকের পারভেজ স্পষ্টবাদী ও ব্যক্তিত্ববান। 

সে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে। এ কারণেই সে যৌতুকলোভী বাবার কথার বাইরে গিয়ে বিয়ের কথা বলেছে। পাত্রী কোনো দরদাম বা বেচাকেনার পণ্য নয় তা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। তার সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে বলেছে যে, সে একজনকে জীবনসঙ্গী করতে এসেছে, অপমান করতে নয়। অপরিচিতা গল্পের অনুপম শিক্ষিত, মার্জিত। কিন্তু স্পষ্ট কথা বলার মতো সাহস তার নেই। নিজের সিদ্ধান্ত সে নিজে নিতে পারে না। বিয়ের আসলে তার মামা সেকরা নিয়ে গিয়ে কনের গহনা যাচাই করেন। 

এতে যে কনে পক্ষের অপমান হয় তা অনুপম বুঝতে পারে না। মেয়ের বাবার এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সে নীরব থাকে। এতে তার ব্যক্তিত্বহীনতার চরম প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। এসব দিক বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, উদ্দীপকের পারভেজ এবং অনুপমের পরস্পরের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. অনুপমের মামা ও হারুন মিয়ার মতো মানুষের কারণে আজও কল্যাণী ও লাবনিরা অপমানের শিকার হয়। মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করা হলো। যৌতুকপ্রথা একটি সামাজিক ব্যাধি। বর্তমানে এটি আমাদের সমাজে ভয়াল রুপ ধারণ করেছে। বরপক্ষের দাবি পূরণ করতে কন্যার পিতাকে কখনো কখনো সর্বস্বান্ত হতে হয়। বিয়েতে যারা যৌতুক দাবি করে তারা আত্মসম্মানবোধহীন ও অমানবিক। উদ্দীপকে কন্যাদায়গ্রস্ত এক পিতা যৌতুক লোভী এক পিতা এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন যুবকের সিদ্ধান্তের উপর বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। এখানে যৌতুক লোভী ব্যক্তিটি হারুন মিয়া। 

আর কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা লতিফ মিয়া, যিনি মেয়ে লাবনীকে পাত্রস্থ করতে নিজের সামান্য আবাদি জমি বিক্রি করে পণের টাকা জোগাড় করেছেন। তাতে সামান্য টাকা বাকি থাকায় হারুন মিয়া ছেলেকে এ বিয়ে করাতে নারাজ হয়। পিতার এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে পারভেজ নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। কেনা বেচার পণ্য না বানিয়ে সে লাবনিকে বিয়ে করে ঘরে ফিরতে চায়। উদ্দীপকের এই তিনজনের মধ্যে হারুন মিয়া যৌতুক লোভী। তার সাথে অপরিচিতা গল্পের অনুপমের মামার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সাদৃশ্যপূর্ণ। অপরিচিতা গল্পের মামা অনুপমের বিয়েতে নগদ টাকা ও গহনা পন হিসেবে দাবি করেন। পিতা শম্ভুনাথ সেন এতে সম্মত হন। 

বিয়ের অনুষ্ঠানের কিছুক্ষণ আগে অনুপমের মামা কন্যার বাবাকে তার মেয়ের গা থেকে গহনা গুলো খুলে আনতে বলেন সেকরা দিয়ে সেগুলো যাচাই করে দেখার জন্য। অনুপমের মামার এ ধরনের আচরণ ও কথা বার্তায় তার হীনতা, লোভ ও অমানবিকতা প্রকাশ পায়। উদ্দীপকের হার মিয়াওও অনুপমের মামার মত লোভী। যৌতুকের সম্পূর্ণ টাকা ছাড়া ছেলেকে বিয়ে করাবেন না বলে জানিয়ে দেন। এরা দুজনেই সমাজে যৌতুকপ্রথা টিকিয়ে রাখতে চান। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

উদ্দীপক: ২

তুমি ভাবছ আমি মরতে যাচ্ছি-ভয় নেই, অমন পুরোনো ঠাট্টা তোমাদের সঙ্গে আমি করব না। মীরবাঈও তো আমারই মতো মেয়ে মানুষ ছিল-তার শিকলও তো কম ভারী ছিল না, তাকে তোঁ বাঁচবার জন্য মরতে হয়নি। মীরাবাঈ তার গানে বলেছিল, ছাড়ুক বাপ, ছাড়ুক মা, ছাড়ুক যে যেখানে আছে, মীরা কিন্তু লেগেই রইল, প্রভু তাতে যা হবার তা হোক।

ক. বিয়ে ভাঙার পর থেকে কল্যাণী কিসের ব্রত গ্রহণ করেছে?

খ. তার পরে বুঝিলাম, মাতৃভূমি আছে। কে, কেন এ কথা বলেছে?

গ. অপরিচিতা গল্পের কোন বিষয়টি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. নারীর স্বীয় স্বাধীন সত্তার প্রকাশই উদ্দীপক এবং অপরিচিতা গল্পের প্রধান দিক-মূল্যায়ন কর।

উত্তর:

ক. বিয়ে ভাঙার পর থেকে কল্যাণী মেয়েদের শিক্ষা দিয়ে দেশসেবার ব্রত গ্রহণ করেছে।

খ. অনুপম কল্যাণীর স্বদেশপ্রেম সম্পর্কে আলোচ্য কথাটি বলেছে। বিয়ে ভাঙার পর থেকে কল্যাণী পণ করেছে কোনোদিন বিয়ে করবে না। তার এই প্রতিজ্ঞা থেকে কেউ তাকে এক বিন্দু টলাতে পারেনি। দেশের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার ব্রতে কল্যাণী ত্যাগ করেছে জাগতিক মোহ। মাতৃভূমিই তার কাছে সবকিছুর উর্ধ্বে। সেই লক্ষ্যে সে মেয়েদের শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। মাতৃভূমির সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতেই সে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ প্রসঙ্গে অনুপম প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি করেছে।

গ. উদ্দীপকে অপরিচিতা গল্পের নারীর ব্যক্তিত্বের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে। মানুষ হিসেবে নারীরও রয়েছে নিজস্ব ইচ্ছা, ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশের অধিকার। কিন্তু সমাজে তারা প্রায়ই উপেক্ষিত হয়। তবুও সামজিক বাধাসমূহ ঠেলে কোনো নারী কখনো কখনো স্বাধীন ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটায়। অপরিচিতা গল্পে কল্যাণী চরিত্রে ব্যক্তিসত্তার স্বাধীন প্রকাশ লক্ষ করা যায়। কল্যাণী বিয়ের পূর্ব মুহূর্তে পিতার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে বরপক্ষকে বিয়ে বাড়ি থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার মতো সাহসের কাজে সমর্থন দিয়েছে। 

পরবর্তীতে সমাজে তার অবস্থান কি হবে তা নিয়ে কল্যাণী একবারও ভাবেনি। বরং এই সমাজের প্রতি প্রবল ঘৃণা থেকে সে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং দেশসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছে। কল্যাণীর এই স্বাধীনচেতা মনোভাব, ব্যক্তিবোধ উদ্দীপকের নারী চরিত্রেও লক্ষ করা যায়। সমাজের সংকীর্ণতার গণ্ডি অতিক্রম করে নিজ সত্তাকে তারা এমন এক স্তরে নিয়ে গিয়েছে যেখানে নারী নয়, মানুষ পরিচয়ই প্রধান। কল্যাণীও এই বোধেই উদ্দীপ্ত। তাই বলা যায় যে, অপরিচিতা গল্পের নারীর ব্যক্তিত্বের বিষয়টি উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. নারীর স্বীয় স্বাধীণ সত্তার প্রকাশই উদ্দীপক এবং অপরিচিতা গল্পের প্রধান দিক-মন্তব্যটি যথার্থ। নারী-পুরুষ উভয়ের মর্যাদা ও অধিকার সমান হলেও নারী সেই স্বীকৃতি থেকে অনেক সময় বঞ্চিত হয়। তখন তাকে মানুষ বলে গণ্য করতেও অনেকে কুণ্ঠিত হয়। কিন্তু যথার্থ শিক্ষায় শিক্ষিত ও ব্যক্তিত্বের আলোয় উদ্ভাসিত নারীসত্তা সমাজের হীনতা, পশ্চাৎপদতা অকিক্রম করে নিজ স্বাধীন সত্তার প্রকাশ ঘটায়। অপরিচিতা গল্পে কল্যাণী সমাজের বাধা উপেক্ষা করে নিজ মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। 

কল্যাণী নিজেকে দেশসেবায় সমর্পিত করেছে। সমাজ তাকে নিয়ে কি ভাববে, কী বলবে সেসবের পরোয়া সে করেনি। কল্যাণীর ব্যক্তিত্বের কাছে ম্লান হয়ে গেছে কলকাতার শিক্ষিত যুবক অনুপম। উদ্দীপকের স্ত্রী চরিত্রটিও কল্যাণীর সমধর্মী। এ কারণে সেও পরিবার ও সমাজকে উপক্ষা করেছে। যেখানে সে মূল্যহীন, অস্তিত্বহীন সেখান থেকে নিজেকে সে বিচ্ছিন্ন করেছে, ঠিক যেমনটি করেছে কল্যাণী। 

কল্যাণী এবং স্ত্রীর পত্র গল্পের গৃহবধু উভয়েই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তাই সামজিক নীচতা, সংকীর্ণতা তাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। তারা সমাজের সব বাধা অতিক্রম করে আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেছে। ব্যক্তিস্বাধীনতাকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করেছে। আর এসব কারণেই মন্তব্যটি যথার্থ।

উদ্দীপক: ৩

মাদার তেরেসা ছিলেন একজন আলবেনীয় বংশোদ্ভুত ভারতীয় ক্যাথলিক সন্নাসিনী। তিনি ১৯০৫ সালে কলকাতায় মিশনারিজ অব চ্যারিটি নামে একটি সেবা প্রতিষ্ঠা করেন। সুদীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তিনি দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ ও মৃত্যেুপথযাত্রী মানুষের সেবা করেছেন। সেই সঙ্গে মিশনারিজ অব চ্যারিটির বিকাশ ও উন্নয়নেও অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।

ক. মানুষের সঙ্গে দূরে দূরে থাকাই কার অভ্যাস?

খ. কল্যাণী কেন বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে?

গ. মাদার তেরেসার কোন দিকটি অপরিচিতা গল্পের কল্যাণীর মধ্যে লক্ষনীয়? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. সমাজ পরিস্থিতিই উদ্দীপকের মাদার তেরেসা এবং অপরিচিতা গল্পের কল্যাণীকে মহান ব্রতে নিয়োজিত করেছে-বিশ্লেষণ কর।

উত্তর:

ক. মানুষের সঙ্গে দূরে দূরে থাকাই অনুপমের মায়ের অভ্যাস।

খ. সমাজ ও সমাজের মানুষের যে হীনতার পরিচয় কল্যাণী পেয়েছে তা তাকে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য করেছে। বরপক্ষের হীনম্মন্যতার কারণে কল্যাণীর বাবা বিয়েবাড়ি থেকে বরপক্ষকে বিদায় করে দেয়। আত্মমর্যাদার দিক বিবেচনায় এতে কল্যাণীরও সম্মতি ছিল। কারণ হীনতা দিয়ে যে সম্পর্ক শুরু হচ্ছে তার শেষটাও যে শুভ হবে না তা কল্যাণী বুঝেছিলো। আর বরপক্ষের আচরণে সেদিন সে গোটা সমাজটাকেই চিনে নেয় যার প্রতি তার প্রবল ঘৃণা জন্মে। এ কারণেই কল্যাণী বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

গ. মাদার তেরেসার মানবসেবার মহান ব্রত অপরিচিতা গল্পের কল্যাণীর মধ্যে লক্ষণীয়। মানুষ পৃথিবীতে কেবল নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকার জন্যেই জন্মগ্রহণ করে না। অন্যের কল্যাণের জন্য কাজ করাও তার অন্যতম লক্ষ্য। মহৎ মানুষেরা তাই আত্মস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে মানবসেবায় নিজেদের উৎসর্গ করেন। আর এতেই তারা জীবনের সার্থকতা খুঁজে পান। উদ্দীপকের মাদার তেরেসা মানবসেবার মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। 

অসুস্থ, অনাথ মানুষের জন্য তাঁর প্রাণ সর্বদা কেঁদে উঠেছে। আর তাই এদের সেবায় তিনি জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। অপরিচিতা গল্পের কল্যাণীও মানবসেবার অনুরূপ কাজে নিজেকে যুক্ত করেছে। বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর কল্যাণী নারীশিক্ষার ব্রত গ্রহণ করেছে। সে বুঝতে পেরেছে মানবসেবার এই পথেই তার শান্তি, তার মুক্তি।

ঘ. সমাজ পরিস্থিতিই উদ্দীপকের মাদার তেরেসা এবং অপরিচিতা গল্পের কল্যাণীকে মহান ব্রতে নিয়োজিত করেছে-মন্তব্যটি যথার্থ। মানবসেবার মতো এমন মহৎ কাজ আর দ্বিতীয়টি নেই। এ পথে যারা নিজেদের উৎসর্গ করেন তাঁরাই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা খুঁজে পান। যুগে যুগে মহানুভব ব্যক্তিরা এই পৃথিবীতে মানবসেবার মহান দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। উদ্দীপকের মাদার তেরেসা সেবার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। অসহায় মানুষদের বুকে টেনে নিয়ে তিনি সারাজীবন তাদের সেবা করেছেন। কেবল তাই নয়, এর জন্য তিনি কলকাতায় সেবা প্রতিষ্ঠানও স্থাপন করেছেন। মাদার তেরেসা নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে মানুষের সেবা করেছেন। 
অপরিচিতা গল্পের কল্যাণীও সুখের সংসারের স্বপ্ন ত্যাগ করে নারীশিক্ষায় নিজেকে নিয়োজিত করেছে। মানবসেবার পথেই সে প্রকৃত সুখের সন্ধান করেছে। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার শিকার মানুষের হাহাকার মাদার তেরেসার মনে সেবাব্রতে অনুপ্রাণিত করে। আবার সমাজের যে রূঢ়তার পরিচয় কল্যাণী কয়েক মুহূর্তে পেয়েছে তা তাকে সামাজিক সম্পর্ক থেকে বিমুখ করেছে। সে কারণে কল্যাণী কোনোদিন বিয়ে করবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয় এবং মানবসেবায় যুক্ত হয়। অতএব, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

উদ্দীপক: ৪

মল্লিকা ফুলের বিবাহ বৈকাল-শৈশব অবসানপ্রায়, কলিকা-কন্যা বিবাহযোগ্য হইয়া আসিল। কন্যার পিতা বড়লোক নহে, ক্ষুদ্র বৃক্ষ, তা হাতে আবার অনেকগুলো কন্যা ভারগ্রস্ত। সমন্ধের অনেক কথা হইতেছিল, কিন্তু কোনটা স্থির হয় নাই। উদ্যানের রাজা স্থলপদ্ম নির্দোষ পাত্র বটে, কিন্তু ঘর বড় উঁচু, স্থলপদ্ম অতদূর নামিল না। জবা এ বিবাহে অসম্মত ছিল না, কিন্তু জবা বড় রাগী, কন্যাকর্তা পিছাইলেন। গন্ধরাজ পাত্র ভালো, কিন্তু, বড় দেমাগ, প্রায় তাঁহার বার পাওয়া যায় না।

ক. অনুপমের আসল অভিভাবক কে?

খ. ধনীর কন্যা অনুপমের মামার পছন্দ নয় কেন? বুঝিয়ে দাও।

গ. উদ্দীপকটি অপরিচিতা গল্পের কোন বিষয়টির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. অপরিচিতা গল্পের মূল চিত্রটি উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়নি-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

উত্তর:

ক. অনুপমের আসল অভিভাবক তার মামা।

খ. ধনীর কন্যা অনুপমের মামার পছন্দ নয়। কারণ ধনীর মেয়েরা মাথা হেঁট করে স্বামীর সংসারে থাকতে নারাজ এবং কন্যা পক্ষ পন দিতে আগ্রহ না। মামা অনুপমের জন্য এমন পাত্রী খুঁজছেন যার বাবা ধনী নয়। কারণ ধনীর কন্যা সংসারের সব যন্ত্রনা, অপমান নীরবে সহ্য করবে না। আর দরিদ্রের কন্যা এসবই মাথা পেতে নীরবে সহ্য করে যাবে, প্রতিবাদ করবে না। অনুপমের ঘরে যে মেয়ে আসবে সে অবশ্যই মাথা হেঁট করে আসবে-এটিই হলো মামার প্রত্যাশা।

গ. উদ্দীপকটি অপরিচিতা গল্পে নির্দেশিত বাল্যবিয়ে এবং কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার অবস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। একটি নির্দিষ্ট বয়সের মধ্যে কন্যার বিয়ে দেওয়া এবং বরপক্ষের দাবিকৃত যৌতুক এ দুইয়ের চাপে কন্যার পিতা পিষ্ট হন। কারণ নির্দিষ্ট সময়ে কন্যার বিয়ে দিতে না পারলে সমাজে তিনি অপমানিত হবেন এবং বরপক্ষকে যৌতুক দিতে না পারলে তার কন্যা সুখী হবে না। এভাবে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। অপরিচিতা গল্পের নায়িকা কল্যানীকে পনেরো বছর বয়সে বিয়ে পিঁড়িতে বসতে হয়। 

কন্যার বিয়ে দিতে গিয়ে শম্ভুনাথ সেনকে একদিকে যৌতুকের টাকা জোগাড় করতে হয়, অন্যদিকে বরের মামার কাছে নানাভাবে অপমানিত হতে হয়। উদ্দীপকে বাল্যবিয়ে এবং কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার অবস্থাও তাই। কন্যার পিতা ভালো পাত্র খুঁজে পাচ্ছেন না। কারণ, কন্যার পিতা বড়লোক নন, তাই তিনি বেশি যৌতুক দিতে পারবেন না। আর বয়স বেশি হলে যৌতুক বেশি লাগবে। এখানেই উভয় রচনার সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. অপরিচিতা গল্পের যৌতুক প্রথা বা অমানবিকতার বিরুদ্ধে কন্যার পিতার অবস্থান উদ্দীপকে উপস্থাপিত হয়নি-মন্তব্যটি যথার্থ। পণ বা যৌতুকপ্রথা একটি সামাজিক ব্যাধি। কন্যার বিয়েতে বরপক্ষের চাহিদার সীমা থাকে না। আর সেটি মেটাতে গিয়ে কন্যার পিতাকে কখনো কখনো সর্বস্বান্ত হতে হয়। যারা যৌতুক দাবি করে তারা অমানবিক, আত্মসম্মানবোধহীন। অপরিচিতা গল্পে কল্যাণীর পিতা নিজের সর্বস্ব দিয়ে বরপক্ষের দাবি পূরণ করতে সম্মত হন। যখন দেখেন যে বরের মামা কন্যার গহনা যাচাই করার জন্য স্যাকরা নিয়ে এসেছেন তখন তিনি বুঝতে পারেন বরপক্ষ কতটা অমানবিক ও ছোটলোক। 

সে জন্যেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, এমন ঘরে তিনি মেয়ের বিয়ে দেবেন না। উদ্দীপকেও অনুরুপ কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার পরিচয় পাওয়া যায়। তবে তার কন্যার জন্য ভালো পাত্র পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ কন্যার পিতা ধনী নন। তিনি বরপক্ষের যৌতুকের চাহিদা মেটাতে পারবেন না। যৌতুকপ্রথা এবং কন্যা দায়গ্রস্ত পিতার পরিচয় উদ্দীপক ও অপরিচিতা গল্প উভয় স্থানেই উপস্থাপিত হয়েছে। তবে অপরিচিতা গল্পের মূল চিত্রটি হলো যৌতুকপ্রথা ও অমানবিকতার বিরুদ্ধে কন্যার পিতার অবস্থান, যা উদ্দীপকে নেই। এ কারণেই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

উদ্দীপক: ৫

রিপা ও নাবিল দুজনে উচ্চশিক্ষিত। রিপার সঙ্গে নাবিলের বিয়ের কথা ঠিক হয়। হঠাৎ করে নাবিলের মামা রিপার বাবার কাছে যৌতুক দাবি করে। নাবিলের মামা বলে পড়াশুনা করতে গিয়ে রিপার বয়সটা একটু বেশি হয়ে গেছে বলে তার এই দাবি। তখন নাবিল তার মামাকে চুপ করতে বলে। সে রিপার বাবার কাছ থেকে ক্ষমাও চেয়ে নেয়।

ক. রস দিয়ে বর্ণনা করার শক্তি ছিল কার?

খ. মামা, যিনি পৃথিবীতে আমার ভাগ্যদেবতার প্রধান এজেন্ট-ব্যাখ্যা কর।

গ. উদ্দীপকের নাবিলের সঙ্গে অপরিচিতা গল্পের কার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য রয়েছে? ব্যাখ্যা কর।

ঘ. উদ্দীপকের নাবিলের মতো অপরিচিতা গল্পের অনুপম একটু সাহসী হলে গল্পের পরিণতি অন্যরকম হতে-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

উত্তর:

ক. রস দিয়ে বর্ণনা করার শক্তি ছিল হরিশের।

খ. অনুপমের ভালো-মন্দ সবকিছুর নির্ধারক তার মামা। তাই অনুপম প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছে। অনুপমের মামাই তার অভিভাবক এবং সব বিষয়ে মামার মতামতই প্রধান। এমনকি তার বিয়ের ব্যাপারেও মামার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। অনুপমের মামা চান না ধনীর মেয়ের সঙ্গে অনুপমের বিয়ে হোক। তিনি চান কোনো গরিব ঘরে অনুপমের সম্বন্ধ হোক। এতে মেয়ে ও তার পিতার কোনো নালিশ থাকবে না। যা চাইবে তা পাবে। মামা যা কিছু ভাবেন তাতে অনুপমের স্বার্থ জড়িয়ে থাকে। তিনি কখনো কারও কাছে ঠকেন না। তাই অনুপম মামা সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছে, মামাই পৃথিবীতে তার ভাগ্যদেবতার প্রধান এজেন্ট।

গ. ব্যক্তিত্বের দিক থেকে উদ্দীপকের নাবিলের সঙ্গে অপরিচিতা গল্পের অনুপমের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য রয়েছে। চেতনার পূর্ণ বিকাশই মানুষের সুন্দর ব্যক্তিত্ব গঠন করে। চেতনাহীন মানুষ কখনো ব্যক্তিত্ববান হতে পারে না। প্রত্যেক মানুষের তাই চেতনার জাগরণ ঘটা একান্ত আবশ্যক। উদ্দীপকের নাবিল ও রিপা দুজনেই উচ্চশিক্ষিত। পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে ঠিক হয়। কিন্তু রিপার বয়স বেশি হওয়ার কথা বলে নাবিলের মামা রিপার বাবার কাছে যৌতুক দাবি করলে সচেতন নাবিল তার প্রতিবাদ করে। 

নাবিলের এই ব্যক্তিত্ব ও চেতনার বিকাশ অপরিচিতা গল্পের নায়ক অনুপমের ঠিক বিপরীত। অনুপম শিক্ষিত যুবক। মা ও মামার প্রতি অতিমাত্রায় আনুগত্যের কারণে সে ভালো-মন্দ বিচারবোধ হারিয়ে ফেলে। তার চেতনার জাগরণ ঘটে না। মামার মতামত সে নির্বিকার চিত্তে মেনে নেয়, এতে তার ব্যক্তিত্বহীনতা প্রখরভাবে ধরা পড়ে। এমনকি গহনা যাচাইয়েও সে কোনো প্রতিবাদ করে না। তাই বলা যায় যে, ব্যক্তিত্বের দিক থেকে উদ্দীপকের নাবিলের সঙ্গে অপরিচিতা গল্পের অনুপমের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের নাবিলের মতো অপরিচিতা গল্পের অনুপম একটু সাহসী হলে গল্পের পরিণতি অন্যরকম হতো-মন্তব্যটি যথার্থ। সমাজে একটা সময় ছিল যখন সন্তানরা পিতা-মাতার মুখের ওপর কথা বলতে পারতো না। এমনকি তারা অন্যায় করলেও না। কিন্তু আধুনিক শিক্ষা মানুষের চেতনার বিকাশ ঘটাচ্ছে। মানুষ তাই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখেছে। এখন তারা স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশ করতে পারে। অপরিচিতা গল্পের অনুপম শিক্ষিত। নানা গুনে তার চরিত্র গুণান্বিত। 

কিন্তু অতিমাত্রায় পরিবারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের ফলে সংসারের ভালো-মন্দ বিচারবোধ সে হারিয়ে ফেলেছে। মা ও মামা যেটা তার জন্য ভালো বিবেচনা করেন সে ব্যক্তিত্বহীনের মতো তাই মেনে নেয়। যৌতুকের গহনা নিয়ে কল্যাণীর ওপর তার মামার করা সমস্ত অন্যায় ও অমানবিক আচরণ সে নীরবে সহ্য করে, কোনো প্রতিবাদ করে না। কিন্তু যখন তার চেতনার জাগরণ ঘটে তখন আর কিছুই করার থাকে না। 

অন্যদিকে উদ্দীপকের নাবিলের সঙ্গে রিপার বিয়ে ঠিক হয় এবং বিয়েতে নাবিলের মামা যৌতুক দাবি করলে নাবিল তার প্রতিবাদ করে ও রিপার বাবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। অপরিচিতা গল্পের অনুপম যা করতে পারেনি উদ্দীপকের নাবিল তা করেছে। যদি নাবিলের মতো অনুপম মামার অন্যায়ের প্রতিবাদ করত এবং কল্যাণীর পিতার কাছে মামার আচরণের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করত তাহলে অনুপম ও কল্যাণী এক হতে পারত। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের নাবিলের মতো অপরিচিতা গল্পের অনুপম একটু সাহসী হলে গল্পের পরিণিতি অন্যরকম হতো।

উদ্দীপক: ৬

বরযাত্রীর আগমনে বিয়েবাড়ি আনন্দ কোলাহল মুখর। বর অতনু, কনে অধরা। তারা উভয়ই তাদের ভবিষ্যৎ সংসারজীবনের আনন্দ-মধুর দিনগুলোর কথা ভাবছে। কিন্তু তাদের সেই ভাবনায় ছেদ পড়ল। বিয়ে ভেঙে গেল। কারণ বরের বাবা বিয়ের আগেই যৌতুকের সমস্ত টাকা হাতে পেতে চাইলেন। কনের পিতা বিমলবাবু বরপক্ষের সেই শর্তে রাজি হলেও কনে তা মানল না, অতনু ও তার বাবাকে সে অপমান করে তাড়িয়ে দিল।

ক. কলিকাতার বাইরের বাকি জগৎটাকে মামা কি বলে জানেন?

খ. কল্যাণীর পিতার আর্থিক অবস্থা কেমন ছিল?

গ. উদ্দীপকের বিমলবাবু চরিত্রটির সাথে অপরিচিতা গল্পের শম্ভুনাথ বাবু চরিত্রটি কোন দিক থেকে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ?

ঘ. ‍উদ্দীপকের অধরা অপরিচিতা গল্পের কল্যাণীর চেয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদে বেশি সক্রিয়-মন্তব্যটির গ্রহণযোগ্যতা বিশ্লেষণ কর।

উত্তর:

ক. কলিকাতার বাইরের বাকি জগৎটাকে মামা আন্দামান দ্বীপের অন্তর্গত বলে জানেন।

খ. কল্যাণীর পিতার আর্থিক অবস্থা নিতান্তই অপ্রতুল ছিল। কল্যানীর পিতার পূর্ব পুরুষদের আমলে বংশে লক্ষ্মীর মঙ্গলঘট ভরা ছিল। এখন তা শূণ্য বললেই হয়, যদিও তলায় সামান্য কিছু বাকি আছে। দেশে বংশ মর্যাদা রক্ষা করে চলা সহজ নয় বলে তিনি পশ্চিমে গিয়ে বাস করছেন। সেখানে তিনি গরিব গৃহস্থের মতোই থাকেন।

গ. উদ্দীপকের বিমলবাবু চরিত্রটির সাথে অপরিচিতা গল্পের শম্ভুনাথ চরিত্রটি অন্যায়-অনৈতিকতার প্রতিবাদ করার ক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। যৌতুকপ্রথা বা পণপ্রথা একটি সামাজিক ব্যাধি। যৌতুকের কারণে নারীরা চরমভাবে অবমূল্যায়িত হচ্ছে। এই ব্যাধি থেকে মুক্তির জন্য সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে এ সমাজের ধ্বংস অনিবার্য। অপরিচিতা গল্পের কনের পিতা শম্ভুনাথ পণপ্রথার বিরোধিতা করে কন্যার বিয়ে ভেঙে দেন। 

আর যৌতুকলোভী বরপক্ষকে আপ্যায়ন শেষে বিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন। তার এই প্রতিবাদী চেতনার কোনো প্রতিফলন উদ্দীপকের অধরার বাবা বিমলবাবুর মাঝে দেখা যায় না। তিনি বরপক্ষের অন্যায় দাবি মেনে নিয়ে মেয়ের বিয়ে দিতে চেয়ছেন, যা শম্ভুনাথ বাবু তা করেননি। এখানেই চরিত্র দুটির মধ্যে বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।

ঘ. উদ্দীপকের অধরা অপরিচিতা গল্পের কল্যাণীর চেয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদে বেশি সক্রিয়। কারণ অধরা সরাসরি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে, যা কল্যাণী করতে পারেনি। তৎকালীন সমাজে নারীরা চরমভাবে অবহেলিত ছিল। পুরুষশাষিত সেই সমাজে নারীকে অথ-কড়ির মানদণ্ডে বিচার করা হতো। বর্তমানে নারীরা সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ও বিদ্রোহী। উদ্দীপকের অধরা এক বিদ্রোহী নারী। সে যৌতুকলোভীদের অপমান করে বিয়েবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। 
নতুন জীবনের স্বপ্নিল আবেগের বশবর্তী হয়ে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়নি। আলোচ্য অপরিচিতা গল্পের কল্যাণীর এ ধরনের প্রতিবাদী ভূমিকায় দেখা যায় না। অপরিচিতা গল্পে কল্যাণীকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না। বরের মামা বিয়ের আগে গয়না যাচাই করে তার বাবাকে অপমান করে কখনও সে নীরব থেকেছে। উদ্দীপকের অধরা নীরব থাকেনি, প্রতিবাদ করেছে। এ জন্যই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি আমার কাছে গ্রহণযোগ্য।

উদ্দীপক: ৭

সেই শৈশবের সুরবালা তোমার যত কাছেই থাকুক, তাহার চুড়ির শব্দ শুনতে পাও, তাহার মাথা ঘষার গন্ধ অনুভব কর, কিন্তু মাঝখানে বরাবর এখখানি করিয়া দেয়াল থাকিবে। আমি বলিলাম, তা থাক-না, সুরবালা আমার কে? উত্তর শুনিলাম, সুরবালা আজ তোমার কেহই নয়, কিন্তু সুরবালা তোমার কী না হইতে পারিত। সে কথা সত্য। সুরবালা আমার কি না হইতে পারিত। আমার সবচেয়ে অন্তরঙ্গ, আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী, আমার জীবনের সমস্ত সুখ-দুঃখভাগিনী হইতে পারিত-সে আজ এত দূর, এত পর, আজ তাহাকে দেখা নিষেধ, তাহার সঙ্গে কথা কওয়া দোষ, তাহার বিষয়ে চিন্তা করা পাপ।

ক. অপরিচিতা গল্পের গল্পকথকের বয়স কত?

খ. আমি চমকিয়া উঠিলাম-কথাটির অর্থ বুঝিয়ে লেখ।

গ. উদ্দীপকের সাথে অপরিচিতা গল্পের সাদৃশ্য কোথায়?

ঘ. প্রিয়জনকে না পাওয়ার হাহাকারই উদ্দীপকের কথক ও অপরিচিতা গল্পের অনুপমকে অকসূত্রে গাঁথা-মন্তব্যটি ব্যাখ্যা কর।

উত্তর:

ক.অপরিচিতা গল্পের গল্পকথকের বয়স সাতাশ বছর।

খ. আমিতো চমকিয়া উঠিলাম বলতে গাড়িতে ওঠার জন্য কল্যাণীর আহ্বানে অনুপমের চমকে ওঠাকে বোঝানো হয়েছে। অনুপম মাকে নিয়ে তীর্থে যাওয়ার পথে অপরিচিত এক মেয়ের কণ্ঠস্বর শুনে মুগ্ধ হয়। অনুপম মেয়েটিকে দেখার চেষ্টা করে কিন্তু দেখতে পায় না। বাঙালি সেই মেয়ের কণ্ঠস্বর অনুপমের হৃদয়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পরদিন বড় স্টেশনে গাড়ি বদল করার সময় একটি মেয়ে তাদের গাড়িতে ওঠার জন্য আহ্বান করে। কখন ঐ মেয়েটির কণ্ঠস্বর শুনে অনুপম চমকে ওঠে। কারণ এটি তার পূর্বে শোনা সেই কণ্ঠস্বর।

গ. উদ্দীপকের নায়ক ও সুরবালার সঙ্গে অপরিচিতা গল্পের অনুপম ও কল্যাণীর সাদৃশ্য রয়েছে। দুটি মনের মিল হতে হলে একজনের ওপর অন্যজনের সম্মান ও ভালোবাসা থাকতে হয়। আবার অনেক সময় তা থাকলেও পারিপাশ্বিক ঘটনার কারণে মানুষ যোজন যোজন দূরে সরে যায়। সেখান থেকে চাইলেও হয়তো সে আর ফিরতে পারে না। অপরিচিতা গল্পে অনুপমের সঙ্গে কল্যাণীর বিয়ে ঠিক হয়। কল্যাণীকে নিয়ে অনুপম সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে। 

কিন্তু যৌতুক নিয়ে অনুপমের মামার মানসিকতা দেখে কল্যাণীর বাবা বিয়ে ভেঙে দিলে তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। ফলে কাছে এসেও তারা একজন অন্যজনের আপন হতে পারেনি। যেমন করে কাছে থেকেও আপন হতে পারেনি উদ্দীপকের নায়ক ও সুরবালা। উভয় জায়গাতেই ধ্বনিত হয়েছে বিচ্ছেদের সুর। কাছে এসেও দূরে চলে যাওয়ার যন্ত্রনা। এ বিষয়টি উদ্দীপকের নায়ক ও সুরবালার সঙ্গে অপরিচিতা গল্পের অনুপম ও কল্যাণীর মানসিক অবস্থা সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. প্রিয়জনকে না পাওয়ার হাহাকারই উদ্দীপকের কথক ও অপরিচিতা গল্পের অনুপমকে একসূত্রে গেঁথেছে। এ মন্তব্যটির সঙ্গে আমি একমত। প্রিয়জনকে হারিয়ে মানুষ নিঃস্ব ও অসহায় হয়ে পড়ে। তার হৃদয় শূণ্যতায় ছেয়ে যায়। তবে হৃদয় জুড়ে অসীম এক হাহাকার ঘুরপাক খায়। অপরিচিতা গল্পের কথক অনুপমই গল্পের নায়ক। অনুপম বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকের যুবক। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর উপাধি অর্জন করেও পরিবারতন্ত্রের কাছে অসহায়। যৌতুক নিয়ে তার মামা হীনম্মন্যতার পরিচয় দিলে কল্যাণীর বাবা বিয়ে ভেঙে দেন। 

পূর্বে তার পিসতুতো দাদার বর্ণনা শুনে অনুপম কল্যাণীকে তার হৃদয়ে গ্রহন করেছিলো। তাই বিয়ে ভেঙে গেল অল্পের জন্য কল্যানী চিরদিনের মতো পর হয়ে যায়। কল্যাণীকে না পাওয়ায় অনুুপমের মনের মধ্যে একটা হাহাকার তৈরি হয়। অথচ তারা একজন অন্যজনের সুখ-দুঃখে সাথি হয়ে সুখে বসবাস করতে পারত, যদি বিয়ে ভেঙে না যেত। পরবর্তী সময়ে ঘটনাচক্রে পুনরায় দুজনের দেখা হয়, পরিচয় হয়। কিন্তু এবার আর অনুপম ভুল করে না। সে তার অপরাধ স্বীকার করে। শম্ভুনাথ বাবু তাকে ক্ষমা করলেও কল্যাণী ক্ষমা করে না। 

পুনরায় কল্যাণীকে না পাওয়ার বেদনায় তার হৃদয় ছেয়ে যায়। উদ্দীপকের নায়কও সুবালাকে না পেয়ে বেদনাহত হয়, শূণ্যতায় ভোগে। চাইলেই যে সুরবালা তার শৈশবের সাথি, তার জীবনসঙ্গিনী হতে পারত, আজ সে পর। আজ সে দূরের। কাছ থেকেও আজ সে অনেক দূরে। অপরিচিতা গল্পের ও উদ্দীপকের নায়ক উভয়ই তাদের প্রিয়জনকে না পাওয়ার বেদনায় কাতর। তাদের হৃদয়ে না পাওয়ার হাহাকার। এই শূন্যতায় থাকা তাদের হৃদয়বেদনা একসূত্রে গাঁথা।

অন্নপূর্ণার কোলে গজাননের ছোট ভাইটি বলতে কি বুঝানো হয়েছে?

অন্নপূর্ণার কোলে গজাননের ছোট ভাইটি-এ কথার মধ্যে দিয়ে মূলত অনুপমকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। দেবী দুর্গার দুই পুত্র গণেশ ও কার্তিকেয়। কার্তিকেয় ছোট বিধায় সে সব সময় মাতৃস্নেহে লালিত এবং মায়ের কোলই যেন তার একমাত্র আশ্রয়। অনুপম শিক্ষিত হলেও ব্যক্তিত্বরহিত পরিবারতন্ত্রের কাছে অসহায় পুতুল মাত্র, তার নিজস্বতা বলতে কিছু নেই। তাকে দেখলে মনে হয় আজও সে যেন মায়ের কোলসংলগ্ন শিশুমাত্র। তাই লেখক ব্যঙ্গার্থে অনুপমকে কার্তিকেয়র সাথে তুলনা করে বলেছেন অন্নপূর্ণার কোলে গজাননের ছোট ভাইটি।

ঠাট্টা তো আপনিই করিয়া সারিয়াছেন কথাটির অর্থ কি?

শম্ভুনাথ সেন অনুপমের মামাকে আলোচ্য কথাটি বলেন। কল্যাণীর বাবা শম্ভুনাথ সেন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন মানুষ। তিনি কন্যার বিয়েতে বরপক্ষের চাহিদার অতিরিক্ত গহনা কন্যাকে দিয়েছিলেন। কিন্তু অনুপমের মামা কন্যার সমস্ত গয়না সেকরা দ্বারা পরিক্ষা করান এবং গয়নার তালিকা প্রস্তুত করেন যাতে করে পরবর্তী সময়ে গয়নার কোনো হেরফের না হয়। অনুপমের মামার এ ধরনের আচরনে শম্ভুনাথ সেনের ব্যক্তিত্বে তীব্র আঘাত লাগে। তাই কৌশলে তিনি সবাইকে রাতের খাবার খাইয়ে দেন এবং বরপক্ষকে গাড়ি ডাকার কথা বলেন। এমন আচরণ দেখে অনুপমের মামা শম্ভুনাথ সেনকে বলেন, ঠাট্টা করিতেছেন নাকি? অনুপমের মামার প্রশ্নের প্রতিউত্তরে শম্ভুনাথ সেন প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেন।

গায়ে হলুদে কন্যাপক্ষকে নাকাল করা হয় কিভাবে?

মাত্রাতিরিক্ত লোকজন বা বাহক পাঠিয়ে কন্যাপক্ষের ওপর বোঝা চাপিয়ে অনুপমের মামা ও মা কন্যাপক্ষকে নাকাল করার বন্দোবস্ত করেন। গায়ে হলুদ অসম্ভব রাম ধুমধাম করে হয়েছিলো। কন্যার বাড়িতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বাহক পাঠানো হয়েছিলো। এত লোককে আপ্যায়ন করতে হলে কন্যাপক্ষকে যে নাকাল হতে হবে তা ভেবেই অনুপমের মা ও মামা অনুরূপ রসিকতা করেছেন।

অনুপমকে পণ্ডিড মশায়েরা বিদ্রুপ করতেন কেন?

অনুপমকে পণ্ডিত মশায়েরা বিদ্রুপ করতেন সুন্দর চেহারা অথচ গুনহীনতার কারণে। ছোটবেলায় অনুপমের চেহারা অত্যান্ত সুন্দর ছিল। অথচ সে পড়াশোনায় সন্তোষজনক পারদর্শিতা প্রদর্শন করতে পারত না। অন্যদিকে শিমুল ফুল সুবাস ছড়ায় না, সুন্দর দেখায় আর মাকাল ফল বাইরে দেখতে সুন্দর অথচ ভেতরে দুর্গন্ধ ও শাঁসযুক্ত হওয়ায় খাওয়ার যোগ্য নয়। তাই পণ্ডিত মশায়েরা তাকে শিমুল ফুল ও মাকাল ফলের সাথে তুলনা করতেন।

অনুপমের মামার মন কীভাবে নরম হয়েছিলো?

হরিশের সরস রসনার গুণে মামার মন নরম হয়েছিলো। অনুপমের আসল অভিভাবক তথা ভাগ্যদেবতার প্রধান প্রতিনিধি তার মামা। অনুপমের বন্ধু হরিশ। হরিশ ও মামার বৈঠকে অনুপমের বিয়ের প্রসঙ্গে কথা উঠল। মেয়ের তুলনায় মেয়ের বাবার আর্থিক খবর মামার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আর্থিক সংগতি এবং বংশমর্যাদা অনুকূল হলেও মেয়ের বয়স নিয়ে সমস্যা দেখা দিল। অবশেষে হরিশের মন ভোলোনো কথার জোরে এবং ধনুক-ভাঙা পণের কামনায় মামার মন নরম হলো।

কিন্তু মেয়ের বিয়ে হইবে না এই ভয় যার মনে নাই তার শাস্তির উপায় কি?

এখানে শম্ভুনাথ সেনের আত্মসম্মানবোধ ও গৌরববোধকে বড় করে দেখানো হয়েছে। মেয়ের গহনা পরখ করায় অপমানিত বোধ করেন কল্যাণীর বাবা শম্ভুনাথ সেন। বরযাত্রীদের ফিরিয়ে দেওয়ায় অনুপমের মামা রেগে যান। কীভাবে শম্ভুনাথ তার মেয়েকে বিয়ে দেন তা দেখে নিবেন বলে হুমকি দেন। কিন্তু তার সেই কথায় মেয়েকে বিয়েকে বিয়ে দিতেই হবে বা হবে না এ ভাবনা শম্ভুনাথ বাবুর মনে দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করে না। তাই তাকে সহজে শাস্তি দেওয়া সম্ভব নয়। তাই অনুপমের বাবা বলেন মেয়ের বিয়ে ইইবে না এই ভয় যার মনে নেই তার শাস্তির উপায় কি?।

কল্যাণী অনুপমের ফটোগ্রাফটিকে কি করে বলে সে মনে করেন?

অনুপমের ধারণা তার ফটোগ্রাফ দেখে কল্যাণী তাকে অবশ্যই পছন্দ করেছে। অনুপমের ছবিটি কল্যাণী নিশ্চয় কোনো বাক্সের মধ্যে লুকিয়ে রেখে একলা ঘরে নিরালা দুপুরবেলায় তা খুলে দেখে। যখন ঝুঁকে পড়ে দেখে তখন ছবিটির উপর তার মুখের দুই ধার দিয়ে এলো চুল এসে পড়ে কিনা তা ভাবে অনুপম। আবার হঠাৎ বাইরের কারও পায়ের শব্দ গেলে সে তাড়াতাড়ি তার সুগন্ধ আঁচলের মধ্যে ছবিটিকে লুকিয়ে ফেলে কিনা তাও অনুমন মনে করতে থাকে।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে অপরিচিতা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url