রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
রেইনকোট গল্পটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৫ সালে। পরে এটি লেখকের সর্বশেষ গল্পগ্রন্থ জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল (১৯৯৭) গ্রন্থে সংকলিত হয়। এ গল্পের পাঠ গ্রহণ করা হয়েছে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচনা সমগ্র এক থেকে। রেইনকোট গল্পটি বাংলা কথাসাহিত্যর অনন্য সাধারণ প্রতিভার অধিকারী আখতারুজ্জামান ইলিয়াস স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার ঢাকার পরিস্থিতি নিয়ে রচনা করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ঢাকার যুদ্ধাবস্থা,পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের মধ্যে ঢাকা শহরের মানুষের আতঙ্কগ্রস্থ জীবনচিত্র, মুক্তিযোদ্ধাদের তৎপরতা এবং এদেশীয় রাজাকারদের সঙ্গে নিয়ে ভয়াবহ অবস্থাকে তুলে ধরা হয়েছে। রেইনকোট-এর প্রতীকী তাৎপর্য অসাধারণ। রেইনকোটটি নুরুল হুদার শ্যালক মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুর। বর্ষার দিনে সেই রেইকোট গায়ে দিয়ে সাধারণ ভিতু প্রকৃতির নুরুল হুদার মধ্যে সঞ্চারিত হয় উষ্ণতা, সাহস ও দেশপ্রেম। গল্পটিতে মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনাকে ধারণ করা হয়েছে। পোস্ট সূচিপত্র
নামকরণের সার্থকতা
বিষয়বস্তু অনুসরণে প্রতিকী তাৎপর্যের উপর ভিত্তি করে আলোচ্য গল্পের নামকরণ করা হয়েছে রেইনকোট। মুক্তিযোদ্ধা শ্যালকের রেইনকোট গায়ে দিয়ে সাধারণ ভীতু প্রকৃতির নুরুল হুদার মধ্যে যে সাহস, উষ্ণতা ও দেশপ্রেম সঞ্চারিত হয় তারই ব্যঞ্জনাময় প্রকাশ ঘটেছে রেইনকোট গল্পে। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণ চলছে। গেরিলা বাহিনী ঢাকা কলেজের সামনের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফর্মার ধ্বংস করে দিয়েছে এবং ফিরে যাওয়ার সময় প্রিন্সিপাল সাহেবের বাড়িতে গ্রেনেড ছুড়েছে।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কলেজের শিক্ষকদের প্রিন্সিপালের মাধ্যমে তলব করে। পিয়ন ইসহাক নুরুল হুদাকে সেই খবরটাই দিতে আসে। বারবার বাসা বদল করেও নুরুল হুদার মনে স্বস্তি নেই। তার শ্যালক মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে। তাই যেকোনো সময় মিলিটারি আসতে পারে। তার স্ত্রী বাহিরে বের হতে বাধা দেন। মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। সব সময় তিনি ভয়ে ভয়ে থাকেন। এ বৃষ্টিতে ছাতায় কাজ হবে না বলে মিন্টুর রেইনকোট টা বের করে দেন তার স্ত্রী।
আরো পড়ুন: মাসি-পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
রাস্তায় রিকশা নেই। হাঁটতে হাঁটতে বাসস্ট্যান্ডে যান তিনি। বাসে যাত্রী কম। তারা যেন কেউ কিছু বলতে সাহস পাচ্ছে না রেইনকোটটার জন্য। বাসে উঠতে যাওয়া লোকজনের মনে হচ্ছে মিলিটারির দালাল। পথিমধ্যে মিলিটারিরা ঐই গাড়ি থামিয়ে ভেতরে করা নজর দিয়ে ছেড়ে দেয়। কলেজে আসার পর শিক্ষকদের ভেতর থেকে নুরুল হুদা ও আব্দুস ছাত্তার মৃধাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। চোখ বাধা অবস্থায় তাদের উপর চলে নির্মম নির্যাতন।
পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান জানার চেষ্টা করে। কলেজের আলমারি বয়ে নিয়ে এসেছিল যারা, ধারণা করা হয় সেই কুলিরাই বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। নুরুল হুদা তাদের ঠিকানা দিলেই তারা তাকে ছেড়ে দিবে। ছাদের আংটার সঙ্গে ঝুলানো অবস্থায় তাকে চাবুক মারা হয়। এক সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধা কুলিদের ঠিকানা জানার কথা স্বীকার করেন।
তারপর তার আর হুঁশ থাকে না। মুক্তিযোদ্ধার রেইনকোটটাই তাকে নতুন এক বোধে, চেতনায় নিয়ে যায়। ছদ্মবেশী মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে তার আঁতাত রাখার উত্তেজনায় পিঠে একের পর এক চাবুকের আঘাতে রক্ত ঝরে পড়ার দিকে তার আর মনোযোগ দেওয়া হয়ে ওঠে না। স্মৃতিতে ঝুলে থাকে শুধু একটি রেইনকোট। এ দিক বিবেচনায় গল্পের নাম রেনকোট যথার্থ ও সার্থক হয়েছে।
রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর
উদ্দীপক:১
১৭ ই আগস্ট থেকে মুক্তিযোদ্ধা শিবলী সারারাতে বেশ কয়েকটি দুঃসাহসিক অভিযান পরিচালনা করেন। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণীর ছাত্র মুক্তিযোদ্ধা শিবলী মাত্র ৬ জন গেরিলা নিয়ে ওই তারিখে সারারাতে পাক সেনাদের ওপর আক্রমণ চালান। পাক সেনাদের গুলিতে দুজন মুক্তিযোদ্ধা ঘটনাস্থলেই শহীদ হন। লিডার শিবলী গুরুতর আহত অবস্থায় পাক সেনাদের হাতে বন্দি হন।
ক.মিসক্রিয়ান্ট শব্দটির অর্থ কী?
খ. পাকিস্থানি সেনারা বাঙ্গালির ওপর বর্বর অত্যাচার চালিয়েছিল কেন?
গ. উদ্দীপকে রেইনকোট গল্পের যে দিকটি ফুটে উঠেছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে রেইকোট গল্পের খণ্ডাংশ মাত্র-মূল্যায়ন কর।
উত্তর:
ক. মিসক্রিয়ান্ট শব্দের অর্থ দুস্কৃতিকারী।
খ. বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে চিরতরে মুছে দিতে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালির উপর বর্বর অত্যাচার চালিয়েছিল। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি জাতিকে দমিয়ে রাখতে এদেশের বুকে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড শুরু করে। তারা নির্বিচারে বাঙালি হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট চালিয়ে এদেশের জনমনে ভীতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল,যাতে চিরকাল বাঙালিকে শাসন-শোষণ করা যায়। বাঙালি যেন স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে ভুলে যায়। এ জন্যই তারা বাঙালির উপর বর্বর অত্যাচার চালিয়েছিল।
গ. উদ্দীপকে রেইনকোট গল্পের মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও সাহসিকতার দিকটি ফুটে উঠেছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহস ও অসামান্য বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে। অত্যাধুনিক অস্ত্রে সুসজ্জিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের হাতে পরাজিত হয়েছে। কোনভাবেই দমিয়ে রাখা যায়নি অকুতোভয় বীর বাঙালিকে। তারা জীবন দিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে। রেইনকোট গল্পে বাঙালির সাহসিকতা ও ত্যাগের পরিচয় পাওয়া যায়।
কলেজ শিক্ষক নুরুল হুদার শ্যালক মন্টু একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকায় গেরিলা আক্রমণের মাধ্যমে মিলিটারি ক্যাম্পের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ধ্বংস করে দিয়েছে। কেবল মন্টুু ও অন্য যোদ্ধারাই নন, কলেজ শিক্ষক নুরুল হুদাও দেশপ্রেমিক, সাহসী যা গল্পের শেষে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। উদ্দীপকেও মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী ভূমিকার পরিচয় পাওয়া যায়। মন্টুর মতো শিবলীও একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। ১৭ই আগস্ট ৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে তিনি সারারাত গেরিলা আক্রমণ চালান। তাই বলা যায় যে, রেইনকোট গল্পের মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ ও সাহসিকতার দিকটি উদ্দীপকে ফুটে উঠেছে।
ঘ. উদ্দীপকটি রেইনকোট গল্পের খণ্ডাংশমাত্র-মন্তব্যটি যথার্থ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জীবনের এক গৌরবজ্জল অধ্যায়। সব শ্রেণীর মানুষ এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। তাদের সাহসিকতা, আত্মত্যাগ আর বীরত্বের মধ্যে দিয়ে শত্রু পরাজিত হয় এবং দেশ স্বাধীন হয়। রেইনকোট গল্পে বাঙালির সাহসী জীবনের পরিচয় স্পষ্ট। মুক্তিযোদ্ধা মন্টু এবং গেরিলা যোদ্ধারা পাকিস্তানী সেনাদের আক্রমণ করে। তারা ক্যাম্পের ট্রান্সফর্মার অকেজো করে দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ প্রেমের পাশাপাশি কলেজ শিক্ষক নুরুল হুদার দেশপ্রেমও এই গল্পে প্রকাশিত হয়েছে।
অন্যদিকে উদ্দীপকে মুক্তিযোদ্ধা শিবলীর বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় লক্ষ্য করা যায়। গেরিলা যোদ্ধাদের নিয়ে পাকিস্তানের সেনাদের উপর আক্রমণ চালান। এ বিষয়গুলিতে উদ্দীপকের সঙ্গে রেইনকোট গল্পের মিল আছে। তবে এ গল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো প্রকৃতির নুরুল হুদার সাহসী ও দেশপ্রেমিক হয়ে ওঠা। মুক্তিযোদ্ধা শ্যালক মিন্টুর রেইনকোট গায়ে দিয়ে তার মধ্যে এক বোধ সঞ্চারিত হয়। এ বিষয়টি উদ্দীপকে নেই বলে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
উদ্দীপক: ২
হত্যাকে উৎসব ভেবে যারা পার্কে মাঠে ক্যাম্পাসে বাজারে বিষাক্ত গ্যাসের মত মৃত্যুর বীভৎস গন্ধ দিয়েছে ছড়িয়ে আমি তো তাদের জন্য অমন সহজ মৃত্যু করি না কামনা।
ক. রেইনকোটটা কার ছিল?
খ. ক্রাক-ডাউনের রাত বলতে কি বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকে রেইনকোট গল্পের যে দিকটি চিত্রিত হয়েছে তা ব্যখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে হানাদার বাহিনীর যে নির্মমতা ফুটে উঠেছে সেটিই রেইনকোট গল্পের মূল উপজীব্য-মূল্যায়ন কর।
উত্তর:
ক. রেইনকোটটি ছিল নুরুল হুদার শ্যালক মিন্টুর।
খ. ক্রাক-ডাউনের রাত বলতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকায় যে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় সেই রাতকে বোঝানো হয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা নির্মম ভাবে হত্যা করে বাঙালিদের। শিশু, বৃদ্ধ কেউ তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। ক্রাক-ডাউনের রাত বলতে সেই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের রাতকে বোঝানো হয়েছে।
গ. উদ্দীপকে রেইনকোট গল্পে উল্লিখিত পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর বর্বর নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের দিকটি চিত্রিত হয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে শুরু হয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতা। এদেশে তাদের এ নির্মম হত্যাযজ্ঞ চলে দীর্ঘ নয় মাস ধরে। গোটা দেশ তারা ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে। রেইনকোট গল্পে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন ঢাকার আঙ্কগ্রস্ত মানুষের জীবন চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে।
পাকিস্তানি মিলিটারির আক্রমণে ঢাকা শহর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। দীর্ঘ নয় মাস তাদের বর্বর নিপীড়ন আর হত্যাযজ্ঞ চলতে থাকে। উদ্দীপকেও এ বিষয়টি লক্ষ করা যায়। পাকিস্তানি নরপশুরা সে সময় হত্যার উৎসবে মেতে উঠেছিল। যেখানে যাকে পেয়েছে তাকেই হত্যা করেছে। তাই বলা যায় যে, রেইনকোট গল্পে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ড এবং ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা রয়েছে। উদ্দীপকেও এ বিষয়টি চিত্রিত হয়েছে।
গ. উদ্দীপকের হানাদার বাহিনীর যে নির্মমতা ফুটে উঠেছে সেটিই রেইনকোট গল্পের মূল উপজীব্য-মন্তব্যটি যথার্থ নয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে বাঙালির স্বাধীনতার স্বপ্নকে চিরতরে মুছে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বাঙালি হার না মানা জাতি। তারা এই অত্যাচার নিপীড়নের যথোপযুক্ত জবাব দিতে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। রেইনকোট গল্পে মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের গিরিল আক্রমণ শুরু হয়েছে। গল্পের কথক নুরুল হুদার জবানিতে বিকৃত হয়েছে হানাদার বাহিনীর অত্যাচার, নির্যাতন এবং বাঙালির প্রতিরোধের কথা। অন্যদিকে উদ্দীপকেও আমরা হানাদার বাহিনীর অত্যাচার ও নির্যাতনের ঘটনার পরিচয় পায়। হত্যাকে তারা উৎসব ভেবেছে। আর তাই চারিদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে মৃত্যুর বীভৎস গন্ধ।
রেইনকোট গল্পের মূল বিষয় হলো হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং নুরুল হুদার মত ভীতু প্রকৃতির মানুষের মধ্যে সাহস ও দেশপ্রেমের প্রকাশ। উদ্দীপকে বর্ণিত হানাদার বাহিনী নির্মমতার বিষয়টি এ গল্পে থাকলেও তা এ গল্পের মূল উপজীব্য নয়। আর এ কারণেই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ নয়।
উদ্দীপক: ৩
এক রাস্তা থেকে অন্য রাস্তায় পা দিয়ে থমকে দাঁড়ায়। কাছাকাছি একটা প্রাণীও দেখছি না যে! বুকের ভিতরটা দুলে ওঠে। সমুখের একটা দোতলা বাড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখি, জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে কয়েজন কি যেন দেখছে রাস্তার দিকে। ওপর থেকে নিচের দিকে চোখ নামাতেই চোখ ফিরে আসে, পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়। গায়ের রোম কাঁটা দিয়ে ওঠে। চিনতে ভুল হয় না। মানুষ! হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে রক্তাত্ত মানুষ। রক্তের রাঙা স্রোত ড্রেনে গিয়ে মিশেছে।
ক. কে রিকশার পরোয়া করে না?
খ. রাস্তায় একটা রিকশা নাই কেন?
গ. উদ্দীপকের রাস্তার সঙ্গে রেইনকোট গল্পের বর্ণিত রাস্তার সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. মানুষ! হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে রক্তাত্ত মানুষ। উদ্দীপকের উক্তিটি যেন রেইনকোট গল্পের পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতাকেই তুলে ধরে-বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:
ক. লেকচারার নুরুল হুদা রিকশার পরোয়া করে না।
খ. প্রচণ্ড বৃষ্টি এবং পাকিস্তানি সেনাদের আগ্রাসনের ভয়ে রাস্তায় রিকশা ছিল না। যুদ্ধাবস্থায় যেকোনো দেশেই জনমনে বিরাজ করে চরম আতঙ্ক। ফলে সাধারণ মানুষ বেশি প্রয়োজন না হলে রাস্তায় বের হয় না। এছাড়া গল্পের বর্ণনা অনুযায়ী রাস্তায় প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। এজন্যই রাস্তায় কোনো রিকশা ছিল না।
গ. নিস্তব্ধ জনহীন আবহের দিক দিয়ে উদ্দীপকের রাস্তার সঙ্গে রেইনকোট গল্পে বর্ণিত রাস্তার সাদৃশ্য রয়েছে। যুদ্ধের সময় যেকোনো দেশেই জনমনে বিরাজ করে চরম আতঙ্ক। এজন্য যুদ্ধাবস্থার যেকোনো দেশের পথঘাটে লোকজন কিংবা সাধারণ যানবাহনের স্বাভাবিক চলাচল দেখা যায় না। উদ্দীপকে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জনমনে আতঙ্কের বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে।
এখানে জনমানবশূণ্য রাস্তার নিস্তব্ধতার চিত্র ফুটে উঠেছে। রেইনকোট গল্পে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের যুদ্ধাবস্থার পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। সেসময় পাকিস্তানি সেনাদের আগ্রাসনে বাঙালি জনমনে সৃষ্টি হয়েছিল চরম আতঙ্ক। তখন মানুষের রাস্তায় বের হতে ভয় পেত। ফলে রাস্তা-ঘাটে, পাবলিক বাসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান জনশূন্য থাকত। এ বিষয়টিতেই উদ্দীপকের রাস্তার সঙ্গে রেইনকোট গল্পে বর্ণিত রাস্তার সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. মানুষ! হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে রক্তাত্ত মানুষ। উদ্দীপকের উক্তিটি যেন রেইনকোট গল্পের পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতাকেই তুলে ধরে কারণ রেইনকোট গল্পেও একই ধরণের বর্বরতার চিত্র উপস্থাপিত হয়েছে। সাধারণ মানুষের ওপর শাসক- শোষকদের বর্বর অত্যাচার এ দেশের নিরীহ মানুষের জীবনকে করে তোলে অতিষ্ঠ। তারা নির্বিচারে এ দেশের মানুষ হত্যা করে ও ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
উদ্দীপকের প্রশ্নোক্ত উক্তিতে মানুষের বর্বরতার শিকার হওয়ার বিষয়টি বিদ্যমান। এখানে শোষকশ্রেণির অত্যাচারে রাস্তা-ঘাটে অসংখ্য লাশ রক্তাত্ত অবস্থায় পড়ে আছে। মানুষের রক্তস্রোতে লাল হয়েছে ড্রেণের পানি। আর রেইনকোট গল্পে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর অত্যাচার চালানোর বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের নিরীহ মানুষের ওপর নির্মম অত্যাচার চালিয়েছিলো।
উদ্দীপকে শাসন-শোষণের জাঁতাকলে অতিষ্ঠ বর্বরতার শিকার রক্তাত্ত মানুষের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আর রেইনকোট গল্পে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক বাঙালির ওপর ১৯৭১ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করা হয়েছে যা সোনার বাংলাকে শ্মশানে পরিণত করেছিল। ওসব দিক বিচারে বিচারে বলা যায়, উদ্দীপকের প্রশ্নোক্ত উক্তিটি পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতাকেই তুলে ধরে।
উদ্দীপক: ৪
জানেআলমের মা দুমাস আগেও মহল্লার এর-ওর বাসায় চলেছে ঝি এর কাজ করে চলেছে আর জানেআলম সরকার মঞ্জিলের বিড়ির কারখানায় বিড়ি বাধার কাজ করেছে। পঁচিশে মার্চের কালো রাতের পর শহরে আর্মি নামায় সবকিছু পাল্টে গেছে। বিহারী জানেআলম এখন মোগলটুলীর ইজারাদার না হলেও ফৌজদার বনে গেছে। এদেশের মাটিতে জন্ম হলেও তার মুখে এখন বাংলা কথা শোনায় যায় না। তার উর্দুর তোরে কুমিল্লা হাই স্কুলের উর্দু শিক্ষক ইদ্রিস খান পর্যন্ত হিমশিম খান। এ মাটির কুলাঙ্গার জানে আলম মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করে সার্কিট হাউজের আর্মি ক্যাম্পে পৌঁছে দিতে বড় তৎপর।
ক. এই কয়েক মাসে নুরুল হুদা কি মুখস্ত করেছেন?
খ. পিয়নকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছে করেছিল কেন?
গ. উদ্দীপকের জানেআলম রেইনকোট গল্পের কোন চরিত্রে প্রতিচ্ছ?
ঘ. উদ্দীপকের জানেআলমরাই ৭১ এর দেশের লাখো জনতা হত্যায় ইন্ধন যুগিয়েছিল- বক্তব্য বিষয়ের যথার্থতা বর্ণনা কর?
উত্তর:
ক. এই কয়েক মাসে নুরুল হুদা অনেক সূরা মুখস্ত করেছেন।
খ. পিয়নের মুখ দর্শনে পাকিস্তানি মিলিটারির ভয় কেটে যাওয়ায় তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে ইচ্ছে করেছিল। দরজায় প্রবল কড়া নাড়ার শব্দে নুরুল হুদা হানাদার ঘাতক পাকিস্তানি মিলিটারির হানা দেওয়ার আতঙ্কে শিউরে উঠলেন। মুসলমান রীতি অনুসারে দুয়া মনে মনে জপ করে ভয়ে দরজা খুললেন। দেখলেন, দাঁড়িয়ে আছে প্রিন্সিপালের পিয়ন ইসাহাক। এমন পরিস্থিতিতে নুরুল হুদার ইচ্ছে হলো পিয়নকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে।
গ. উদ্দীপকের জানে আলম রেইনকোট গল্পের প্রিন্সিপালের পিয়ন ইসাহাক চরিত্রের প্রতিচ্ছবি। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বর্বর হানাদার বাহিনী এ দেশে ধ্বংসলীলা শুরু করে, নিরস্ত্র,নিরীহ বাঙালির ওপর গুলি চালায়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণ্যতম হত্যাকাণ্ড। উদ্দীপকের জানেআলম এমনই এক দুরাচারীর জীবন্ত প্রতিমূর্তি যে এ দেশে বাস করে এদেশের মানুষের উপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহায়তাকারী হিসেবে মহল্লার সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি বনে যায়।
যে এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করে মিলিটারির হাতে তুলে দেয়। রেইনকোট গল্পের প্রিন্সিপালের পিয়ন ইসহাক মিয়াও ২৫শে মার্চের পর থেকে বাংলা জবান একেবারে ভুলে যায়। কথকের বর্ণনায় ইসহাক নিজেই এখন মিলিটারির কর্নেল বললেও চলে। মিলিটারির প্রাদুর্ভাবের পর থেকে তাকে দেখে কলেজের সবাই তটস্থ। উদ্দীপকের জানেআলম রেইনকোট গল্পের প্রিন্সিপালের পিয়ন ইসহাক চরিত্রের প্রতিচ্ছবি।
ঘ. উদ্দীপকের জানেআলমরাই ৭১ এর দেশের লাখো জনতা হত্যার ইন্ধন যুগে ছিল-প্রশ্নোক্ত এ মন্তব্যটি যথার্থ। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের গভীর রাতে পাকিস্তানে হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর কাপুরুষের মত ঝাঁপিয়ে পড়ে। নারী নির্যাতন, শিশু হত্যার মতো চরম অমানবিক কাজ করতেও তারা পিছপা হয়নি।তাদের এই ঘৃণ্য কাজের দোসর ছিল এদেশেরই কতিপয় দালাল, রাজাকার। উদ্দীপকের জানেআলম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কর্মকাণ্ডের সহযোগিতা করে অনেক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠে। সে হঠাৎ বাংলা ছেড়ে উর্দুতে কথা বলতে থাকে।
এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিতে সে সদা সচেষ্ট। এমনই এক চরিত্র হলো রেইনকোট গল্পের প্রিন্সিপালের পিয়ন ইসহাক মিয়া। মিলিটারি আসার পর থেকে সে নিজেই একজন কর্নেল হয়ে গেছে। উর্দু ছাড়া বাংলায় সে এখন আর কথা বলে না। তাকে দেখে কলেজের সবাই তটস্থ। উদ্দীপকের জানেআলম এবং রেইনকোট গল্পের ইসহাক মিয়ারা দেশ জাতির শত্রু।
স্বাধীনতা বিরোধী লোকদের সহযোগিতা পেয়েই পাকিস্তানি হানার বাহিনী এ দেশের প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। উদ্দীপকের জানেআলম এবং রেইনকোট গল্পের ইসহাক মিয়াদের মতো গাদ্দারদের কারণেই কলেজ শিক্ষক নুরুল হুদা, কলেজ শিক্ষক আবদুস সাত্তার মৃধার মতো শত-সহস্র দেশপ্রেমিক বুদ্ধিজীবি নির্মম নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি তাই যথার্থ।
উদ্দীপক: ৫
কীসে কি হইল, পশ্চিম হতে নরঘাতকেরা আসি সারা গাঁও ভরি আগুন জ্বালায়ে হাসিল অট্টহাসি। মার কোল হতে শিশুরে কাড়িয়া কাটি সে খান খান পিতার সামনে মেয়েরে কাটিয়া করিল রক্তস্নান।
ক. প্রিন্সিপাল কাকে তোয়াজ করতেন?
খ. রেইনকোটের ওপর চাবুকের বাড়ি নুরুল হুদার কাছে কেমন মনে হয়েছিলো?
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে রেইনকোট গল্পটি কোন দিক দিয়ে সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপক রেইনকোট গল্পটির আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:
ক. উর্দুর প্রফেসর আকবর সাজিদকে প্রিন্সিপাল তোয়াজ করতেন।
খ. রেইনকোটের ওপর চাবুকের বাড়ি নুরুল হুদার কাছে বৃষ্টির ফোঁটার মতো মনে হয়েছিলো। মুক্তিযোদ্ধাদের ঠিকানা নুরুল হুদা বলে দিলেই তাকে সসম্মানে ছেড়ে দেওয়া হবে এই নিশ্চয়তা দিয়ে তাঁকে পাকিস্তানি সেনারা পাউরুটি ও দুধ খাওয়ায়। কিন্তু নুরুল হুদা মুক্তিযোদ্ধাদের ঠিকানা জানাতে অসম্মতি জানালে পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে ছাদে লাগানো একটা আংটার সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয়। তাঁকে চাবুক মারতে থাকে। অবিরাম চাবুকের বাড়ি নুরুল হুদার কাছে স্রেফ উৎপাত বলে মনে হয়। তার মনে হয় যেন বৃষ্টি পড়ছে তাঁর গায়ে জড়ানো মিন্টুর রেইনকোটের ওপর।
গ. উদ্দীপকের সঙ্গে রেইনকোট গল্পে বর্ণিত পাকিস্তানি বাহিনীর বাঙালির ওপর ঘৃণ্য অত্যাচারের বিষয়টি সাদৃশ্যপূর্ণ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে পাকিস্তানি বাহিনী এদেশের সাধারণ মানুষের ওপর নির্মম অত্যাচার চালায়। অকথ্য নির্যাতন চালায় নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সব স্তরের মানুষের ওপর। রেইনকোট গল্পে আমরা নুরুল হুদার দৃষ্টি দিয়ে বিধ্বস্ত ঢাকার চিত্র দেখতে পাই।
আরো পড়ুন: লালসালু উপন্যাসের প্রশ্ন ও উত্তর
পাকিস্তানি বাহিনী শহিদ মিনার ভাঙছে, গুলি করে মানুষ হত্যা করেছে, বাড়ি-ঘর আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। উদ্দীপকেও এ চিত্র ফুটে উঠেছে। সারা গ্রাম আগুনে জ্বলছে; মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে হত্যা করেছে। পিতার সামনে মেয়েকে কেটে করেছে রক্তস্নান। অর্থাৎ রেইনকোট গল্পে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্যাতনের যে বহুমুখী চিত্র প্রকাশ পেয়েছে তার সঙ্গে উদ্দীপকের সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ.উদ্দীপকে রেইনকোট গল্পটির আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে-মন্তব্যটি যথার্থ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত থেকে পাকিস্তানি বাহিনী অগ্নিসংযোগ, লুট, হত্যা ছাড়াও সুদৃরপ্রসারী ক্ষতিসাধন করে। তারা এদেশের অসংখ্য স্থাপত্য ধ্বংস করে। বুদ্ধিজীবি হত্যার মধ্য দিয়ে এ দেশের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে চেয়েছিলো। উদ্দীপকে পশ্চিম থেকে আসা নরঘাতক অর্থাৎ পাকিস্তানি বাহিনীর অগ্নিসংযোগ ও নরহত্যার বিষয়টি স্পষ্টভাবে ব্যক্ত হয়েছে। এ দেশকে ধ্বংস করে তারা অট্টহাসিতে মেতে উঠেছিলো।
অন্যদিকে রেইনকোট গল্পে নুরুল হুদার চিন্তা ও কথোপকথনের মাধ্যমে আমরা মুক্তিযুদ্ধের একটি সামগ্রিক চিত্র দেখতে পাই। একজন শিক্ষক হিসেবে তাঁর চোখ দিয়ে দেখি বিধ্বস্ত বাংলাদেশের চিত্র। মুক্তিযুদ্ধের বহু বিচিত্র বিষয় উঠে আসে তাঁর ভাবনায়। কারণ উদ্দীপকে শুধু রেইনকোট গল্পে বর্ণিত অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ডের কথা বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অন্যান্য বিষয় সেখানে অনুপস্থিত। ফলে উদ্দীপক রেইনকোট গল্পটির আংশিক প্রতিনিধিত্ব করে-মন্তব্যটিকে যথার্থ বলা যায়।
উদ্দীপক ৬:
মুক্তিযোদ্ধারা নানাভাবে পাকিস্তানি বাহিনীকে আটক করতে সদা সচেষ্ট। এরকম একজন মুক্তিযোদ্ধা ফরিদ মিয়া। তিনি সবসময় দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা এবং কিভাবে মিলিটারের হাত থেকে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে শান্তিতে রাখা যায় সেসব ভাবেন। তিনি সৈনিকের পোশাক পড়ে মিলিটারিদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাদের অনেক গোলাবারুদ ধ্বংস করতে সক্ষম হন।
ক. নুরুল হুদা কোন বিষয়ের প্রভাষক?
খ., রেইনকোট বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের বর্ণিত বিষয়টি রেনকোট গল্পের কোন বিষয়কে প্রতিনিধিত্ব করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের ফরিদ মিয়া এবং রেইনকোট গল্পের মিন্টু একই উদ্দেশ্যে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছে। মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:
ক. নুরুল হুদা রসায়ন বিভাগের প্রভাষক।
খ. রেইনকোট এক ধরনের পোশাক যা বৃষ্টি থেকে শরীরকে রক্ষা করার জন্য প্রদান করা হয়। রেইনকোট অনেকটা মিলিটারির পোশাকের মত। বিশেষ করে বৃষ্টি ভেজা রেইনকোট অবিকল যেন মিলিটারির পোশাক। একাত্তরে এদেশে মিলিটারি তথা হানাদার বাহিনীর অত্যাচার ছিল, তাই এ পোশাক পরিহিত অবস্থায় কাউকে দেখলে মিলিটারি মনে করে ভয়ে সাধারণ মানুষ পালিয়ে যেত।
গ.উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি রেনকোট গল্পের নুরুল হুদার বিষয়টিকে প্রতিনিধিত্ব করেন। রেনকোট গল্পে নুরুল হুদা ছিলেন রসায়ন বিভাগের একজন প্রভাষক। তার শ্যালক ছিল একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা আক্রমণ চালায়। নুরুল হুদার শ্যালক বর্বর হানাদার বাহিনীকে নিশ্চহ্ন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেছিলো।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মুক্তিবাহনীতে যোগদান করেছিলো তাদের পরিবার আত্মীয় স্বজনকে যদি খুজে পেতে পাকিস্তানি হানারদার বাহিনী তাহলে তাদের সবাইকে মেরে ফেলত। তাই সবসময় নুরুল হুদা ভয়ে ভয়ে ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে রেইনকোট তাকে সাহস যুগিয়েছে, দেশের জন্য যুদ্ধ করার মনোবল বাড়িয়েছে। তাই বলা যায় যে উদ্দীপকের বর্ণিত বিষয়টি নুরুল হুদার রেইনকোট বিষয়টিকে প্রতিনিধিত্ব করে।
ঘ. উদ্দীপকের ফরিদ মিয়া এবং রেইনকোট গল্পের মিন্টু একই উদ্দেশ্য মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছে। উদ্দীপকের ফরিদ মিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা তিনি নানাভাবে পাকিস্তানি হানার বাহিনীকে আটক করতে সদা সচেষ্ট। তিনি সবসময় দেশের কথা, দেশের মানুষের কথা ভাবেন যে কিভাবে মিলিটারির হাত থেকে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে শান্তিতে রাখা যায়। তিনি সৈনিকের পোশাক পরে মিলিটারির ওপর অতর্কি হামলা চালিয়ে তাদের অনেক গোলাবারুদ ধ্বংস করে দিয়েছেন।
আরো পড়ুন: সিরাজউদ্দৌলা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
তেমনি রেইনকোট গল্পে মিন্টু মিয়া একজন মুক্তিযোদ্ধা তিনি যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগ দেন। মু্ক্তিযোদ্ধারা গেরিলা আক্রমণ করে পাক বাহিনীর ক্যাম্পের বৈদ্যুতিক টান্সফরমা ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আরও রেগে যায় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান করেতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের না পেলে তাদের আত্মীয় স্বজনকে গুলি করে হত্যা করত।
সে সময় যেসব মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেছিলো তাদের সবার একটাই লক্ষ্য ছিল কিভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করা যায়। এবং দেশের মানুষকে শান্তিতে রাখা যায়। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের ফরিদ মিয়া এবং রেইনকোট গল্পের মিন্টু একই উদ্দেশ্য মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছে। মন্তব্যটি যথার্থ।
উদ্দীপক: ৭
সন্তানকে রক্ষা করতে নিজের বুকে গুলি পর্যন্ত ফেলেন লিপি মন্ডল। এরপরও শেষ রক্ষা হলো না। ছয় বছরের শিশু পুত্র পরাগ মন্ডলকে দিন দুপুরে অপহরণ করে নিয়ে গেল দুর্বৃত্তরা। শিশুদের এখনো কোন খোঁজ খবর নাই। এ ধরনের একটি ঘটনা তখনই ঘটে যখন আইন-শৃংখলার চরম অবনতি ঘটে। আইন শৃংখলার অবনতিতে জনমনে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে।
ক. কার জবানিতে রেইনকোট গল্পের অধিকাংশ ঘটনা বিকৃত হয়েছে?
খ. নুরুল হুদার স্ত্রী কেন বাড়ি পাল্টানোর জন্য হন্যে হয়ে লেগে গেলন?
গ. উদ্দীপকের লিপি মন্ডলের সাথে রেইনকোট গল্পের কোন চরিত্রের সাদৃশ্য রয়েছে? আলোচনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সন্তানহারা লিপি মন্ডল যেন রেইনকোট গল্পের নুরুল হুদারই প্রতিনিধিত্ব করে। উক্তিটি ব্যখ্যা কর।
উত্তর:
ক. নুরুল হুদার জবানিতে রেইনকোট গল্পের অধিকাংশ ঘটনা বিকৃত হয়েছে।
খ. পাশের ফ্ল্যাটের এক মহিলা নুরুল হুদার স্ত্রীর কাছে মিন্টুর খোঁজ করলে তিনি বাড়ি পাল্টানোর জন্য হন্যে হয়ে লেগে যান। কলেজ শিক্ষক নুরুল হুদার শ্যালক মিন্টু একজন মুক্তিযোদ্ধা। এ কারণে তার বোন- ভগ্নিপতির দুশ্চিন্তার অস্ত নেই। আবার কেউ এসে মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুর কথা জিজ্ঞাসা করতে পারে এ ভেবে তারা বাসা পাল্টান। তারই সূত্র ধরে পাশের ফ্ল্যাটের এক মহিলা তার স্ত্রীর কাছে মিন্টুর কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বাড়ি পাল্টানোর জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন।
গ. উদ্দীপকের লিপি মন্ডলের সঙ্গে রেইনকোট গল্পের নুরুল হুদার সাদৃশ্য রয়েছে। ১৯৭১ সালে বর্বর হানাদাররা এদেশের সাধারণ মানুষের ওপর নির্মম অত্যাচার চালায়। তাদের কোন মানবতাবোধ ছিল না। উদ্দীপকে লিপি মন্ডল সন্তানকে রক্ষা করতে গুলিবিদ্ধ হন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি তার সন্তানকে রক্ষা করতে পারেননি। দিন দুপুরে অপহৃত হয় পরাগ। দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন লিপি মন্ডল।
উদ্দীপকের লিপি মন্ডলের সঙ্গে রেইনকোট গল্পের নুরুল হুদার সাদৃশ্য রয়েছে। সাধারণ একজন কলেজ শিক্ষক নুরুল হুদা। দেশে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পাঁচ কালেমা রেডি রাখেন ঠোটের উপর। মিন্টু যুদ্ধে যাওয়ার পর থেকে তটস্থ থাকতে হয়। বাড়িও বদলাতে হয়। কিন্তু তারপরও শেষ রক্ষা হয় না।
মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে সন্দেহে কলেজে ডেকে পাঠানো হয় এবং নির্যাতন চালানো হয় নুরুল হুদার উপর। তাই বলা যায় যে অন্যায় ভাবে নির্যাতিত হওয়ার দিক থেকে উদ্দীপকের লিপি মন্ডলের সঙ্গে নুরুল হুদার সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. উদ্দীপকের সন্তানহারা লিপি মন্ডল যেন রেইনকোট গল্পের নুরুল হুদারই প্রতিনিধিত্ব করে মন্তব্যটি যথার্থ। যখন শোষকরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তখন সমাজে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। সাধারণ মানুষগণ নিরাপদে থাকতে পারে না। দিন দুপুরে তখন অবলীলায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চলতে থাকে। উদ্দীপকে সন্তানকে রক্ষা করতে গিয়ে লিপি মন্ডলকে দুর্বৃত্তদের হাতে গুলিবিদ্ধ হতে দেখা যায়।
তারপরও সন্তানের শেষ রক্ষা হয় না। ছয় বছরের শিশু সন্তান পরাগ দিন দুপুরে অপহৃত হয়। অসহায় মা শিশু সন্তানের কোন খোঁজ পায় না। আইন-শৃঙ্খলার অবনতিই এর জন্য দায়ী। রেইনকোট গল্পেও ১৯৭১ সালে দেশে মুক্তিযুদ্ধের অনুরূপ ঘটনা দেখা যায়। আইন-শৃঙ্খলা বলে দেশে তখন কিছুই ছিল না। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে। গল্পে নুরুল হুদা একজন সাধারন কলেজ শিক্ষক।
ভয়ে ভয়ে তার দিন কাটে। শ্যালক যুদ্ধে গেলে তার ভয় আরো বেড়ে যায়। পরিবার নিয়ে সে খুব সাবধান, তবুও তার শেষ রক্ষা হয় না। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে বলে কিংবা মুক্তিযোদ্ধাদের ঠিকানা জানেন বলে তার ওপর নির্মম অত্যাচার চালানো হয়। তাই বলা যায় যে উদ্দীপকের প্রশ্নটি যথার্থ।
উদ্দীপক: ৮
তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা সাকিনা বিবির কপাল ভাঙল, সিঁথির সিঁদুর মুছে গেল হরিদাসীর। তুমি আসিবে বলে, হে স্বাধীনতা, শহরের বুকে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক এলো দানবের মতো চিৎকার করতে করতে। তুমি আসিবে বলে হে, স্বাধীনতা ছাত্রাবাস, বস্তি উজাড় হলো। রিকিয়েললেস রাইফেল আর মেশিনগান খই ফোটাল যত্রতত্র। তুমি আসিবে বলে হে, স্বাধীনতা।
ক, রেইনকোট গল্পেটি কোন গল্পগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত?
খ. এগুলো হলো পাকিস্তানের শরীরের কাঁটা-উক্তিটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের বর্ণিত বিশেষ সময়ের ভয়াবহতা রেইনকোট গল্পের সাথে সাদৃশ্যযুক্ত। ব্যাখ্যা কর।
ঘ. রেইকোট গল্পে নুরুল হুদার শারীরিক ও মানসিক পরিণতির যে চিত্র বর্ণিত হয়েছে তার প্রতিকী ব্যঞ্জনা উদ্দীপকে নেই। মন্তব্যট তোমার যুক্তিসহ বিশ্লেষণ কর।
উত্তর:
ক. রেইকোট গল্পটি জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল গল্পগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।
খ. শহীদ মিনার সম্পর্কে পাকিস্তানী মিলিটারির বড় কর্তাদের ধারণা দিতে গিয়ে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেন প্রিন্সিপাল সাহেব। প্রিন্সিপাল ডঃ আফাজ আহমেদ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দোসর হিসেবে কাজ করতেন। নানা বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে তিনি তাদের সাহায্য করার চেষ্টা করতেন। তিনি জানতেন দেশে শহীদ মিনার গুলো বাঙালির জাতীয় চেতনার প্রতীক।
তাই তিনি পাকিস্তানি মিলিটারির বড় কর্তাদের কাছে সবিনয়ে বলেন, পাকিস্তান যদি বাঁচাতে হয় তো সব স্কুল কলেজ থেকে শহীদ মিনার হটাও। এগুলো হল পাকিস্তানের শরীরে কাঁটা। উক্ত কথার মাধ্যমে তার দেশ ও জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার ঘৃণ্য দিকটি প্রকাশিত হয়েছে।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিশেষ সময়ের ভয়াবহতা রেইনকোট গল্পের সঙ্গে সাদৃশ্য যুক্ত। মন্তব্যটির সততা আছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এদেশের মানুষের উপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। এদেশের মানুষকে তারা নির্বিচারে হত্যা করে। তাদের অত্যাচার থেকে এদেশের নারী এদেশের নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ- শিশু কেউই রেহাই পায়নি। উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি বিশেষ সময়টি হল ১৯৭১ সাল।
উদ্দীপকের কবিতাংশে সে সময়ের ভয়াবহতা তুলে ধরা হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য সাকিনা বিবির কপাল ভাঙছে, হরিদাসী বিধবা হয়েছে। শহরে নেমেছে ট্যাংক যার গোলার আঘাতে ছাত্রাবাস বস্তি সব উজাড় হয়ে গেছে। এ এক নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ। যার বলি হয়েছে এদেশের সাধারণ মানুষ। রেইনকোট গল্পে নুরুল হুদার চোখ দিয়ে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর এরূপ ধ্বংস লীলার ছবি দেখা যায়।
তারা বাঙ্গালীদের হত্যা করে এ দেশকে শাসনের পায়তারা করে। রাস্তাঘাটে লোকজনকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে, সন্দেহ হলে ধরে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার চালায়। বাজার পুড়িয়ে দেয়, বস্তিতে আগুন লাগিয়ে দেয়, ঢাকা শহরকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকে বর্ণিত বিশেষ সময়ের ভয়াবহতা রেইনকোট গল্পের সঙ্গে সাদৃশ্য যুক্ত।
ঘ. রেইনকোট গল্পে শিক্ষক নুরুল হুদার শারীরিক ও মানসিক পরিণতির যে চিত্র বর্ণিত হয়েছে তার প্রতীকী ব্যঞ্জনা উদ্দীপকে নেই। মন্তব্যটি যথার্থ। আমরা আজ স্বাধীন বাংলাদেশের বাস করি। এ স্বাধীনতা অতি সহজে হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে লুকিয়ে রয়েছে এ দেশের মানুষের অনেক ত্যাগ ও রক্তের ইতিহাস। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির সীমাহীন আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই এ স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। রেইনকোট গল্পটির কথক নুরুল হুদা।
তার জবানিতেই বিকৃত হয়েছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞের মধ্যে আতঙ্কগ্রস্ত ঢাকা শহরের অবস্থা। শাসকগোষ্ঠীর বর্বরতার প্রতিশোধ নিতে শুরু করেছে বাঙালি জায়গায় জায়গায় ঘটেছে গেরিলা আক্রমণ। তেমনি গেরিলা আক্রমণ হয় নুরুল হুদার কলেজে। প্রিন্সিপালের তলব পেয়ে বৃষ্টির মধ্যে শ্যালক মুক্তিযোদ্ধা মিন্টুর রেইকোট পরে কলেজ অভিমুখে যাত্রা করেন নুরুল হুদা।
রেইনকোটের উষ্ণতা সাধারণ ভীতু প্রকৃতির নুরুল হুদার মধ্যে সঞ্চারিত হয় সাহস, শক্তি ও দেশপ্রেম। অপরদিকে উদ্দীপকে কেবল যুদ্ধে ধ্বংস ও বিভীষিকার রূপটি তুরে ধরা হয়েছে। সেখানে কোনো প্রতীকী ব্যঞ্জনা সৃষ্টি হয়নি। উদ্দীপক ও রেইনকোট গল্পে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের চিত্র ফুটে উঠেছে। সেই সঙ্গে রেইনকোট গল্পে মুক্তিযোদ্ধার রেইনকোট পরে শিক্ষক নুরুল হুদার শারীরিক ও মানসিক পরিণতির দিকটি গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে প্রতিকী ব্যঞ্জনা। কিন্তু উদ্দীপকে এ ধরনের কোনো ব্যঞ্জনার প্রকাশ না থাকায় বলা যায় যে, আলোচ্য মন্তব্যটি যথার্থ।
এখন ইসহাককে কেন মিলিটারির কর্নেল বললেও চলে?
উর্দুতে কথা বলা এবং পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতা করার কারণে ইসহাককে কর্ণেল বললেও চলে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের ভয়ে বাঙালিরা সব সময় তটস্থ থাকত। পাকিস্তানের সমর্থক হলেই সে যে শ্রেণি-পেশারই হোক না কেন, বাঙালির ওপর তার ক্ষমতার অপব্যবহার শুরু করেছে এবং সেই অপকর্মের সমর্থন দিয়েছে পাকিস্তান সরকার। রেইনকোট গল্পের প্রিন্সিপালের সামান্য পিয়ন ইসহাক উর্দু বলতে পারায় এবং পাকিস্তানের ঘোর সমর্থক হওয়ায় তার ভয়েও সবাই ভীত থাকত। ইসহাকের ভাব সাব ছিল অন্য রকম। তার ভাব সাব দেখে মতো হতো সে পাকিস্তানি মিটিটারির কর্ণেল। তাই বলা হয়েছে ইসহাককে মিলিটারির কর্ণেল বললেও চলে।
রাস্তায় বেরুলে পাঁচ কালেমা সব সময় রেডি রাখে ঠোঁটের ওপর-ব্যাখ্যা কর।
জীবননাশের ভয়ে কলেজ শিক্ষক নুরুল হুদা সবসময় পাঁচ কালিমা রেডি রাখেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি মিলিটারি নিরীহ বাঙালির ওপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায়। তাদের ভয়ে পথে-ঘাটে কেউ বের হতে পারে না। যেকোনো সময়ই তাদের হাতে মারা পড়তে পারে। এ জন্য গল্পের কলেজ শিক্ষক নুরুল হুদাও সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকেন আর পাঁচ কালিমা রেডি রাখেন। তাই বলা যায় নিজের জীবনকে বাঁচানোর জন্য ভয়ে নুরুল হুদা সবসময় পাঁচ কালিমা সব সময় রেডি রাখে।
প্রিন্সিপাল কেন আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করেন?
পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষার জন্য এবং বাঙালিদের পরিকল্পনা নৎসাত করার জন্য প্রন্সিপাল আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করেন। এ দেশের দালালদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি সেনারা হত্যাযজ্ঞ চালানোর অধিক সুযোগ পায়। প্রিন্সিপাল একজন দালাল শ্রেণির লোক। তিনি বাঙালি হয়েও পাকিস্তানের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করেন। অখণ্ডতা রক্ষার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া দরুদ পড়েন, কান্নাকাটি করেন।
প্রভাষক নুরুল হুদাকে তটস্থ হয়ে থাকতে হয় কেন?
শ্যালক মিন্টু মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ায় প্রভাষক নুরুল হুদাকে তটস্থ হয়ে থাকতে হয়। প্রভাষক নুরুল হুদার শ্যালক মিন্টু একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে এজন্য তারা মুক্তিযোদ্ধাদের নিশ্চিহ্ন করতে চায়। মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো আত্মীয়-পরিজনের খোঁজ পেলেই পাকিস্তানি সেনারা তাদের হত্যা করে। এ কারণে প্রভাষক নুরুল হুদাকে সবসময় তটস্থ থাকতে হয়।
উর্দুর প্রফেসর আকবর সাজিদকে প্রিন্সিপাল কেন তোয়াজ করেছিলেন?
উর্দুর প্রফেসর আকবর সাজিদ জাতিতে পাকিস্তানি এবং উর্দুভাষী। তাই জীবন রক্ষার্থে তার সঙ্গে সখ্য রাখতে প্রিন্সিপাল তাকে তোয়াজ করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের কাছে বাঙালি হওয়াই ছিল অপরাধ। তাই কোনো কারণ ছাড়াই বাঙালিরা হত্যার শিকার হচ্ছিল। উর্দুর প্রফেসর আকবর সাজিদ ছিলেন উর্দুভাষী এবং জাতিতে পাকিস্তানি। তাই প্রিন্সিপাল তার সঙ্গে খাতির জমানোর চেষ্টা করেন নিজের জীবনের নিরাপত্তার জন্য।
মিলিটারি এখন যাবতীয় গাড়ি থামাচ্ছে কেন? এই কথাটির অর্থ
সারাদেশে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতায় ভীত হয়ে পাকিস্তানি সেনারা রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে তল্লাশি করতে সব গাড়ি থামাচ্ছে। এক সময় সারাদেশে যুদ্ধের ভয়াবহতা তীব্র আকার ধারণ করে। প্রতিনিয়ত মুক্তিযোদ্ধদের হাতে পাকিস্তানি সেনারা খতম হতে থাকে। তাই সব জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে ফিরছে। এর সুত্র ধরে রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে তারা তল্লাশি করত। গাড়িতে কোনো জোয়ান ছেলে থাকলে তাদের নামিয়ে এনে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করতো তারা মুক্তিবাহিনীর লোক এটা সন্দেহ করে।
মিন্টুর রেইনকোট বাসের সব যাত্রীকে ঘাবড়ে দেয় কেন?
বৃষ্টিভেজা রেইনকোটটি মিলিটারির পোশাকের মতো মনে হওয়ায় বাসের সবাই ঘাবড়ে যায়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশজুড়ে তুমুল উত্তেজনা ও ভয় বিরাজমান ছিল। পাকিস্তানি মিলিটারি এ দেশে বাঙালির উপর জুলুম শুরে করে। তখন নুরুল হুদা বৃষ্টিভেজা রেইনকোটটি পড়ে গাড়িতে ওঠায় মিলিটারির পোশাকের মতো মনে হলো অন্য সব যাত্রীর কাছে। তাই সাধারণ মানুষকে এই পোশাক ঘাবড়ে দেয়।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে রেইকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পরেছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url