মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
মাসি-পিসি গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয় কলকাতার পূর্বাশা পত্রিকায় ১৩৫২ বঙ্গাব্দের চৈত্র সংখ্যায় (মার্চ-এপ্রিল ১৯৬৪)। পরে এটি সংকলিত হয় পরিস্থিতি (অক্টোবর ১৯৬৪) নামক গল্পগ্রন্থে। বর্তমান পাঠ গ্রহণ করা হয়েছে ঐতিহ্য প্রকাশিত মানিক-রচনাবলি পঞ্চম খণ্ড থেকে। পোস্ট সূচিপত্র
মাসি পিসি গল্পের মূল বক্তব্য
বাংলা সাহিত্যের কল্লোল যুগের আদর্শে অনুপ্রাণিত, মার্কসীয় ও ফ্রয়েডীয় তত্বে আলোড়িত বাস্তব জীবনদৃষ্টি সম্পন্ন লেখক মানিক-বন্দ্যেপাধ্যায়ের একটি বিখ্যাত ছোটগল্প মাসি-পিসি। লেখক তাঁর বিশ্লেষণী দৃষ্টির মাধ্যমে জীবনের ক্লেদ-গ্লানি-নিষ্ঠুরতার অন্তরালবর্তী সত্য সন্ধান করেছেন আজীবন। তাঁর মাসি-পিসি গল্পে দেখা যায়, অকল্পনীয় দক্ষতায় এ গল্পের ছোট পরিসরে বাস্তব জীবনের নানা অসংগতি পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। পল্লী বাংলার সাধারণ মানুষের জীবনাচরণ ও জীবন দৃষ্টিকে উপজীব্য করে তিনি এই গল্পটি রচনা করেছেন।
দারিদ্র্যর কষাঘাতে বিপর্যস্ত মানুষের জীবনালেখ্য মাসি পিসি গল্পটি। বিধবা মাসি- পিসি ও তাদের কাছে আশ্রিতা স্বামী পরিত্যক্তা আহ্লাদী দুর্ভিক্ষ- কবলিত কঠিন জীবনে কি ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় গল্পকার তা গভীর নিষ্ঠার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। মাসি পিসি আহ্লাদী কে বুক দিয়ে আগলে রেখেছে। এই পুরুষ শাসিত সমাজের লালসায় কোন আঁচ তার ওপর লাগতে দেয়নি। তারা তাই সদা সতর্ক থাকে। দুর্ভিক্ষের সময় নিজেরা পথে নামে রোজগারের আশায়,, কিন্তু যুবতী আল্লাহ দিকে একলা ঘরে রেখে যায় না।
আরো পড়ুন: রেইনকোট গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
ছোট ভিঙ্গিতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রি করতে যাওয়ার সময়ও সঙ্গে নিয়ে যায়। এই বর্ণনার মাধ্যমে লেখক সেকালের সমাজের নিষ্ঠুর বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরেছেন, যেখানে দুষ্ট লোকেরা হতদরিদ্রের ওপর নানা নির্যাতনের সুযোগ খোঁজে। তাদের চোখ থেকে মাসে পিসি আহ্লাদিকে রক্ষা করে। এভাবে গল্পটিতে জীবনবাদী লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সমকালীন সমাজ বাস্তবতার সঠিক চিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কথা সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মাসি পিসি ছোট গল্পটিতে সমাজের নানা অসংগতি তুলে ধরেছেন। স্বামীর নির্মম নির্যাতনের শিকার পিতৃ মাতৃহীন এক তরুণীর করুন জীবন কাহিনী এ গল্পের অন্তর্গত বিষয়। আহ্লাদী নামক এই তরুণীর মাসি ও পিসি দুজনেই বিধবা ও নিঃস্ব। তারা তাদের অস্তিত্ব রক্ষার পাশাপাশি বিরূপ সমাজ ব্যবস্থা থেকে আহ্লাদিকে রক্ষা করার জন্য যে বুদ্ধি দীপ্ত ও সাহসী ভূমিকা পালন করেছে তা এ গল্পের তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়।
অত্যাচারী স্বামী এবং লালসায় উন্মত্ত জোতদার, দারোগা ও গুন্ডা বদমাশদের আক্রমণ থেকে আহ্লাদীকে নিরাপদে রাখার ক্ষেত্রে অসহায় ২ বিধবার মানবিক জীবনযুদ্ধ নিয়েই এই গল্পটি রচিত হয়েছে। তাদের মর্মস্পশী স্মৃতি, জীবিকা নির্বাহের কঠিন সংগ্রাম গল্পটিকে আরো প্রাণবন্ত করেছে। এদিক বিচারে নামকরণ মাসি পিসি যথার্থ ও সার্থক হয়েছে।
মাসি পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
উদ্দীপক ১.
ষাটোর্ধ্ব বিধবা ফাতেমা বেগম। নিঃসন্তান এ বৃদ্ধার আপন বলতে কেউ নেই। একদিন সকালে হাটতে বেরিয়ে হঠাৎ তিনি একটি মেয়েকে রাস্তায় কাঁদতে দেখেন। বৃত্তান্ত শুনে তিনি মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ মেয়েটিকে মাতৃ স্নেহে আশ্রয় দেন। স্বামী পক্ষ খবর পেয়ে তাকে নিয়ে যেতে চান। মেয়েটি কোনভাবেই যেতে ইচ্ছুক নয়। বৃদ্ধাও মেয়েটিকে যেতে দেননি। এতে তাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। মৃত্যুর পূর্বে বৃদ্ধা মেয়েটিকে সমুদয় সম্পত্তি দান করে যান।
ক. ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয় উক্তিটি কার?
খ. যুদ্ধের আয়োজন করে তৈরি হয়ে থাকে মাসি পিসি- উক্তিটিতে কি বোঝানো হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের মেয়েটি মাসি পিসি গল্পের আহ্লাদীর সাথে কিভাবে সঙ্গতিপন্ন তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মাসি পিসি গল্পের মাসি পিসি ও উদ্দীপকের বৃদ্ধা এক সূত্রে গাথা মন্তব্যটি যাচাই কর।
উত্তর:
ক.ছেলের মুখ দেখে পাষাণ নরম হয় উক্তিটি পিসির।
খ. যুদ্ধের আয়োজন করে তৈরি হয়ে থাকে মাসি পিসি কথাটি দ্বারা সমাজ পতিদের অত্যাচার থেকে আহ্লাদীকে রক্ষার জন্য মাসি পিসির তৎপরতাকে বোঝানো হয়েছে। মাসি পিসি গল্পের স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে আহ্লাদী আশ্রয় নেন মাসি পিসির কাছে। তাইতো তারা গুন্ডা বদমাশদের পাঠিয়ে মাসি পেশির কাছ থেকে আহ্লাদীকে ছিনিয়ে নিতে চাই। মাসি পিসি তাদেরকে প্রতিরোধ করে। আবার আক্রমণের ভয়ে কাথা কম্বল চুবিয়ে রাখে এবং হাড়ি কলসিতে জল ভরে রাখে। বঁটি আর দা রাখে হাতের কাছেই। যুদ্ধের আয়োজন করে তৈরি হয়ে থাকে মাসি পিসি।
গ. উদ্দীপকের মেয়েটি মাসি পিসি গল্পের আহ্লাদীর স্বামীর সংসারে অত্যাচারের শিকার হওয়ার দিকটির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এদেশের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা নানাভাবে অবহেলার শিকার হয়। এক্ষেত্রে অসহায় নারী সব নির্যাতন নিরবে সহ্য করে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্বামীর অত্যাচারে অকালে ঝরে পড়ে স্ত্রীর জীবন। উদ্দীপকের মেয়েটি স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে ঘর ছেড়েছে।
স্বামীর ঘরে আদর স্নেহের পরিবর্তে পেয়েছে শুধু বঞ্চনা। সে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ঘর থেকে বেড়িয়ে এসেছে। মাসি পিসি গল্পের আহ্লাদীও একই পরিণীতীর শিকার। স্বামীর ঘরে থাকা অবস্থায় স্বামী তাকে নির্যাতন করেছে। এ নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে সে আশ্রয় নেয় মাসি পিসির কাছে। এভাবে উদ্দীপকের মেয়েটি কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হওয়ার দিক দিয়ে মাসি পিসি গল্পের আহ্লাদীর সঙ্গে সংহতিপূর্ণ।
ঘ. মাসি পিসি গল্পের মাসি পিসি ও উদ্দীপকের বৃদ্ধা এক সূত্রে গাথা। মন্তব্যটি যথার্থ।
মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। তাই মানুষ সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায় নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। মাসি পিসি গল্পের মাসি পিসির মধ্যে মানবতা বোধের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আর এ কারণেই তারা স্বামী গৃহে নির্যাতিত নিপীড়িত আহ্লাদীকে মাতৃ স্নেহে আশ্রয় দিয়েছেন, অত্যাচারী স্বামীর হাত থেকে মেয়েটিকে রক্ষা করেছেন।
মাসি পিসি গল্পের মাসি পেশির মধ্যে শুধু মানবতা বোধহয় নয়, তারা সন্তান তুল্য স্নেহ দিয়ে আগলে রেখেছে আহ্লাদীকে। এছাড়া সমাজপতিদের দৃষ্টি থেকেও তারা আহ্লাদীকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। এই একই স্নেহ মমতা ও দায়িত্ববোধের প্রতিফলন ঘটেছে উদ্দীপকের বৃদ্ধার মধ্যে। তাই সঙ্গত কারণেই বলা যায় উদ্দীপ বৃদ্ধা ও মাসি পিসি এক সূত্রে গাথা।
উদ্দীপক: ২
আলেয়া বেগম দিনমজুর শ্রমজীবী নারি। বাড়ির প্রতিটি কাজ করে বের হয়ে পড়ে সেই সাতসকালে বাইরের কাজে। কাজ করেন দৈনিক মজুরি হিসেবে। মজুরি ১০০ টাকা। ঝুট বাছার কাজ করেন আলেয়া। এমনি আরও শত শত নারী ঝুট বাছার কাজ করেন জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য।
ক. হাতে দুটো পয়সা এলে কার স্বাভাব বিগড়ে যায়?
খ. মাসি-পিসি আহ্লাদিকে স্বামীর বাড়ি পাঠাতে চায় না কেন?
গ. উদ্দীপকের আলেয়া বেগম মাসি-পিসি গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে?
ঘ. উদ্দীপক এবং মাসি-পিসি গল্প একসূত্রে গাঁথা। মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।
উত্তর:
ক. হাতে দুটো পয়সা এলে কৈলাশের স্বভাব বিগড়ে যায়।
খ. স্বামীর বাড়িতে আহ্লাদিকে অত্যাচারিত হতে হয়। তাই মাসি-পিসি আহ্লাদিকে স্বামীর বাড়িতে পাঠাতে চায় না। স্বামীর বাড়িতে আহ্লাদিকে অত্যান্ত কষ্টে দিন কাটাতে হয়। স্বামী তাকে ঠিকমহতো খেতে দেয় না। তার উপরে লাথি, ঝাঁটার বাড়ি তো আছেই। কখনো কখনো কলকেপোড়ার ছ্যাঁকাও খেতে হয়। তাই এই ভয়ে মাসি-পিসি তাকে স্বামীর বাড়িতে পাঠাতে চায় না।
গ. উদ্দীপরেক আলেয়া বেগম মাসি-পিসি গল্পের মাসি-পিসি চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করে। নারীরা এখন আর ঘরে বসে থাকে না। পুরুষের মতো তারাও জীবিকা অর্জনের জন্য কঠোর প্ররিশ্রম করে। বর্তমানে কৃষিকাজ থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজে নারীর অংশগ্রহণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, নারীরা আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি আত্মনির্ভরশীল। মাসি-পিসি গল্পে মাসি-পিসি আত্মনির্ভরশীল নারী।
জীবিকার জন্য গ্রাম থেকে সবজি কিনে তারা শহরের বাজারে নিয়ে যায় বিক্রির জন্য। প্রতিদিন গৃহস্থের বাড়ি থেকে শাকসবজি, ফলমূল নিয়ে নৌকা বেয়ে শহরে গিয়ে বিক্রি করে আসে। এতে যে আয় হয় তা দিয়ে আহ্লাদিকে নিয়ে কোনোমতে তাদের দিন চলে যায়। উদ্দীপকের আলেয়া বেগমও মাসি-পিসির মতোই আত্মনির্ভরশীল। জীবিকার জন্য সাতসকালে বাইরের কাজরে উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে এবং তাতে যে আয় হয় তা দিয়েই তার সংসার চলে।
ঘ. উদ্দীপক এবং মাসি-পিসি গল্প একসূত্রে গাঁথা। মন্তব্যটি সর্বাংশে সত্য নয়। প্রতিবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া অনেক ক্ষেত্রেই নারীদের জন্য অপরিহার্য। কারণ বাইরে কাজ করতে গেলে তাকে নানা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। এসব ক্ষেত্রে যদি তারা প্রতিবাদ না করে তবে তাদের পক্ষে বাইরে কাজ করাটা অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। শুধু তাই নয়, সমাজের লোভী ও নিষ্ঠুর মানুষদের হাত থেকে বাঁচতে হলেও তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে।
মাসি-পিসি গল্পে মাসি-পিসি আত্মনির্ভরশীল দুই নারী। আত্মনির্ভরশীলতার পাশাপাশি তারা সাহসী ও প্রতিবাদী। তারা আহ্লাদিকে অত্যাচারী স্বামী, লোলুপ জোতদার এবং গুন্ডা-বদমাশদের হাত থেকে রক্ষা করে নারীর প্রতিবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। অন্যদিকে উদ্দীপকের আলেয়া বেগমের মধ্যে আমরা কেবল মাসি-পিসির জীবন সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি পাই। প্রতিবাদী দিকটি তার মধ্যে অনুপস্থিত। আত্মনির্ভরশীল হলেও আলেয়া বেগম প্রতিবাদী নয়। মাসি-পিসির একটি বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। এ কারণে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি সর্বাংশে সত্য নয়।
উদ্দীপক: ৩
যেখানে নারী নির্যাতন সেখানেই ফাতিমা পারভীন। রাত নয়, দিন নয়, কোনো বিশ্রাম নয় খবর পাওয়া মাত্রই সে হাজির। সঙ্গে থাকতেন নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছোট এক সাংবাদিক।
ক. আহ্লাদির স্বামীর নাম কি?
খ. আহ্লাদিকে মাঝখানে নিয়ে শুয়েও মাসি-পিসির চোখে ঘুম আসে না কেন?
গ. উদ্দীপকটি মাসি-পিসি গল্পের কোন বিষয়টির ইঙ্গিত দেয়? ব্যাখা কর।
ঘ. ফাতিমা পারভীন মাসি-পিসির পরিপূরক। সত্যতা যাচাই কর।
উত্তর:
ক. আহ্লাদির স্বামীর নাম জগু।
খ. আহ্লাদিকে মাঝখানে নিয়ে শুয়েও তাকে নিরাপদে রাখার চিন্তায় মাসি-পিসির চোখে ঘুম আসে না। স্বামীর বাড়িতে চরম অবহেলা ও নির্যাতেনের শিকার আহ্লাদির একমাত্র আশ্রয় মাসি-পিসি। তারা দুজনে মিলে আহ্লাদিকে আগলে রাখে। গ্রামের লোলুপ কিছু লোকের দৃষ্টি পড়েছে তার ওপর। তাদের আক্রমণ থেকে যেকোনো মূল্যে তারা আহ্লাদিকে রক্ষা করতে চায়। তাই সেই দুশ্চিন্তায় আহ্লাদিকে মাঝখানে নিয়ে শুয়েও মাসি-পিসির চোখে ঘুম আসে না।
গ. উদ্দীপকটি মাসি-পিসি গল্পে মাসি-পিসির সাহসিকতার ইঙ্গিত দেয়। পুরুষ শাসিত সমাজে নারীরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার। তবে তারা ভিতু কিংবা অবলা নয়। বর্তমানে সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা ক্ষেত্রে তারা সাহসিকতার প্রমাণ দিচ্ছে। এখন আর কোনো অন্যায়-অবিচার তারা মাথা পেতে গ্রহণ করে না। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সর্বশক্তি দিয়ে তারা এর প্রতিবাদ করে মোকাবেলা করে।
মাসি-পিসি গল্পে মাসি-পিসি এমনই সাহসী। সাহসী বলেই তারা দুজনে মিলে জীবিকার জন্য বাহিরে যায়। শুধু তাই নয়, তারা আহ্লাদির ওপর লোলুপদের আক্রমণ বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতা দিয়ে প্রতিহত করেছে। অন্যদিকে উদ্দীপকের ফাতিমা পারভীনও সাহসী ও প্রতিবাদী। নারী নির্যাতনের খবর পেলেই দিন-রাত উপেক্ষা করে তিনি ছুটে যান।
ঘ. ফাতিমা পারভীন মাসি-পিসির পরিপূরক। মন্তব্যটি আংশিক সত্য। বেঁচে থাকার জন্য নারীকেও প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়। সমাজের কিছু বিকৃত রুচির মানুষকে মোকাবেলা করার জন্য তাকে প্রতিবাদী হতে হয়। সাহস না থাকলে এসব হীন চরিত্রের মানুষদের হাত থেকে বাঁচা সহজ নয়। পথ চলতে গেলে নারীকে সাহসী ও প্রতিবাদী হতে হয়, তা না হলে তাকে থেমে যেতে হয় বারবার। মাসি-পিসি গল্পে মাসি-পিসি প্রচন্ড সাহসী। তাই তারা একা থাকতে ভয় করেনা। কোনো পুরুষের সাহায্য ছাড়াই তাদের জীবন অতিবাহিত হয়।
আহ্লাদিকে দুশ্চরিত্র লোকদের হাত থেকে তারা রক্ষা করার জন্য যে সাহস দেখিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। উদ্দীপকের ফাতিমা পারভীনও কাউকে পরোয়া করেন না। দিন-রাত উপেক্ষা করে নারী নির্যাতনের খবর পেলেই তিনি ছুটে যান। মাসি-পিসি এবং উদ্দীপকের ফাতিমা পারভীন প্রত্যেকেই সাহসী ও প্রতিবাদী। তবে মাসি-পিসির জীবনব্যবস্থা বা বাস্তবতা আর ফাতিমা পারভীনের জীবন বাস্তবতা এক নয়। তাদের জীবন বাস্তবতা পরস্পর থেকে ভিন্ন। মাসি-পিসি প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে। এ কারণে ফাতিমা পারভীন মাসি-পিসির পরিপূরক এটি সম্পূর্ণ সত্য নয়, আংশিক সত্যমাত্র।
উদ্দীপক: ৪
সাহসী নাীদের কথা বলতে গেলে জোয়ান অব আর্কের কথা বলতেই হবে। এই সাহসী নারী বীরসৈনিক শতবর্ষব্যাপি ইংল্যান্ড-ফ্রান্স যুদ্ধে ফ্রান্সের পক্ষে ছিলেন। কৃষক পিতার ঘরে জন্ম নেওয়া জোয়ান অব আর্ক ইংল্যান্ডের কবল থেকে ফ্রান্সকে রক্ষা করার জন্য মাত্র ১৩ বছর বয়সেই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাঁর অসামন্য নৈপুণ্য আর সাহসিকতায় ফ্রান্সের সৈন্যরা অরলেন্সের যুদ্ধে জয়লাভ করে।
ক. বেমক্কা অর্থ কি?
খ. শোনো কানাই, এ কিন্তু এর্কি নয় মোটে। মাসি কেন এ কথা বলেছে?
গ. উদ্দীপকে মাসি-পিসি গল্পের কোন দিকটি উদ্ভাসিত? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকের জোয়ান অব আর্ক এবং মাসি-পিসি গল্পের মাসি-পিসি এক নয়। সত্যতা যাচাই কর।
উত্তর:
ক. বেমক্কা শব্দেরর অর্থ হলো স্থান বহির্ভূত।
খ. আহ্লাদির মাসি কানাইকে উদ্দেশ করে আলোচ্য কথাটি বলেছে। কানাই রাতের বেলা মাসি-পিসিকে ডাকতে আসে। সে জানায়, দারোগাবাবু তাদের দুইজনকেই দেখা করতে বলেছেন। তারা চলে গেলে ঘরে একা হয়ে যাবে আহ্লাদি। মাসি-পিসি কানাইয়ের মতলব বুঝতে পারে। তাই তারা ঘরে গিয়ে বঁটি ও রামদার মতো বড় কাটারি নিয়ে বের হয়। কানাই তাদের এমন অবস্থাকে ইয়ারকি মনে করে হালকাভাবে যেন না নেয় সেটা বোঝাতেই মাসি আলোচ্য কথাটি বলেছে।
গ. উদ্দীপকে মাসি-পিসি গল্পে নির্দেশিত নারীর সাহসিকতার দিকটি উদ্ভাসিত। নারীরা ভীরু নয়, অবল্য নয়। রূঢ় বাস্তবতাই তাদের জীবনের সহজ-সরল রূপটি বদলে দেয়। নিজেকে বা অসহায় অন্য কাউকে রক্ষা করতে তখন তারা হয়ে ওঠে সাহসী। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেয়। মাসি-পিসি গল্পে আহ্লাদির মাসি ও পিসি দুজনই বিধবা ও নিঃস্ব। অত্যাচারী স্বামী এবং লালসায় উন্মত্ত জোতদার, দারোগা ও গুণ্ডা-বদমাশদের হাত থেকে আহ্লাদিকে তারা রক্ষা করে।
আর এ জন্য তারা এক সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কানাইয়ের কুপ্রবৃত্তি বুঝতে পেরে তারা ঘরে গিয়ে বঁটি ও রামদার মতো মস্ত একটি কাটারি নিয়ে প্রতিরোধ করতে তৈরি থাকে। উদ্দীপকের জোয়ান অব আর্কও একজন সাহসী নারী। ইংল্যান্ড-ফ্রান্স যুদ্ধে ফ্রান্সের পক্ষে মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার অসামান্য নৈপুণ্য আর সাহসিকতায় ফ্রান্সের সৈন্যরা অরলেন্সের যুদ্ধে জয়লাভ করেছিল।
ঘ. সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকের জোয়ান অব আর্ক এবং মাসি-পিসি গল্পের মাসি-পিসি এক নয়। মন্তব্যটি সত্য। নারী তার সামাজিক সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক কাজেই অংশগ্রহণ করতে পারে না। কিন্তু দেয়ালে যাদের পিঠ ঠেকে যায় তারা সব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে সাহসিকতার পরিচয় দেয়। কখনো কখনো তারা পুরুষের মতো গুরুদায়িত্বও গ্রহণ করে অবলীলায়। মাসি-পিসি গল্পে আহ্লাদির মাসি ও পিসি সংগ্রামী দুই নারী। এক আহ্লাদি ছাড়া তাদের তিন কুলে আর কেউ নেই।
আহ্লাদিকে লোলুপ চক্ষুর হাত থেকে তারা অত্যান্ত বুদ্ধিদীপ্ত ও সাহসী পদক্ষেপে রক্ষা করেছে। ক্ষমতা, হুমকি-ধমকি আর লোকলজ্জাকে তারা ভয় করেনি। উদ্দীপকের জোয়ান অব আর্কও একজন সাহসী নারী। একজ পুরুষের মতোই বীরদর্পে তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এবং তাতে তিনি অসামান্য নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। তার অসামান্য নৈপুণ্য আর সাহসিকতায় ফ্রান্সের সৈন্যরা অরলেন্সের যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলো। মাসি পিসি গল্পের মাসি-পিসি এবং জোয়ান অব আর্ক উভয়েই সাহসী। তবে তাদের জীবনের পরিস্থিতি ভিন্ন। আর এ কারণেই সাদৃশ্য থাকলেও তারা এক নয়।
উদ্দীপক: ৫
দেশের সর্বত্র নারী নির্যাতনের ছড়াছড়ি থাকলেও গারো পাহাড়ের আদিবাসী নারীরা পুরুষতান্ত্রিক অত্যাচার থেকে মুক্ত রয়েছেন। স্বামীরা যখন-তখন স্ত্রীর গায়ে হাত তোলেন না। ঘর থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে স্ত্রীকে বের করে দেওয়ার কোনো নজির নেই। স্ত্রীর মতে বা অমতে গারো পুরষদের দ্বীতীয় বিয়ে করারও কোনো উদাহারণ নেই। ফলে নানা কারণে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী পিছিয়ে থাকলেও সে সমাজের নারীরা প্রগতির নানা ধাপে এগিয়ে রয়েছে।
ক. বেলা আর নেই কৈলাশ কথাটি কে বলেছিলো?
খ. মাসি-পিসি বঁটি আর কাটারি হাতে ঘঁর থেকে বের হয়ে আসে কেন?
গ. উদ্দীপকটি মাসি-পিসি গল্পের কোন বিশেষ দিকটির সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে গারো নারীদের জীবন আর মাসি-পিসি গল্পের আহ্লাদির জীবন একই সুতোয় বাাঁধা। মন্তব্যটি বিচার কর।
উত্তর:
ক. বেলা আর নেই কৈলাশ কথাটি মাসি বলেছিল।
খ. কানাই চৌকিদার, গোকুল আর তাদের দলবলকে বাড়ি থেকে তাড়াতে মাসি-পিসি বঁটি আর কাটারি হাতে ঘর থেকে বের হয়ে আসে। গোকুলের হুকুমে কানাই চৌকিদার মাসি-পিসিকে কাছারিবাড়িতে নিতে আসে। মাসি-পিসি বুঝতে পারে তারা কাছারিবাড়িতে গেলেই ওতপেতে থাকা দুর্বৃত্তরা আহ্লাদিকে ধরে নিয়ে যাবে। তাদের এই বাসনাকে মাসি-পিসি সফল হতে দেবে না বলে পরিকল্পনা করে। আর এ কারণে গোকুলের লোকদেরকে ভয় দেখিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে তারা বঁটি আর কাটারি হাতে ঘর থেকে বের হয়ে আসে।
গ. উদ্দীপকটি মাসি-পিসি গল্পে উল্লিখিত নারী নির্যাতনের বিষয়টির সঙ্গে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। পৃথিবীর অনেক সমাজে এখনও নারীকে মানুষ বলে ভাবা হয় না। শারীরিক-মানসিক নানাভাবে অত্যাচারিত হয় নারীরা। এই অত্যাচার নির্যাতনের মাত্রা কখনো কখনো হয় খুব ভয়াবহ। মাসি-পিসি গল্পে আহ্লাদির স্বামী জগু আহ্লাদিকে মানুষ বলেই মনে করতো না। নানাভাবে তাকে অত্যাচার-নির্যাতন করতো। উদ্দীপকে এর বিপরীত চিত্র লক্ষ করা যায়। উদ্দীপকের গারো নারীদের কখনো স্বামী বা স্বামীর পরিবারের কারও দ্বারা অত্যাচারিত নির্যাতিত হতে হয় না। এ কারণে এ সমাজের নারীরা প্রগতির নানা ধাপে এগিয়ে আছে।
ঘ. উদ্দীপকে গারো নারীদের জীবন আর মাসি-পিসি গল্পের আহ্লাদির জীবন একই সুতোয় বাাঁধা এই মন্তব্যটি সত্য নয়। নারী নির্যাতন বর্তমান সমাজে সবচেয়ে আলোচিত একটি বিষয়। পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থায়। নারীকে তার উপযুক্ত মর্যাদা দেওয়া হয় না। অন্যদিকে কারণে অকারণে তার ওপর নেমে আসে অমানবিক অত্যাচার। মাসি পিসি গল্পে আহ্লাদি তার স্বামীর দ্বারা নানাভাবে নির্যাতিত হয়। স্বামীর আচরণ অত্যন্ত পাশবিক হওয়ার কারণে তার মাসি-পিসি তাকে স্বামীর বাড়িতে যেতে দেয় না।
আরো পড়ুন: লালসালু উপন্যাসের প্রশ্ন ও উত্তর
অপরদিকে উদ্দীপকের গারো পরিবারে ও সমাজে নারীদের যথেষ্ট মর্যাদা রয়েছে। স্বামীরা কখনো তাদের নির্যাতন করে না। পরিবারের অন্য সদস্যরাও তাদের প্রতি মর্যাদাশীল। স্বামীর কাছে আহ্লাদির কোনো মূল্যে নেয়, মর্যাদো নেই। কিন্তু উদ্দীপকের গারো নারীদের স্বামীর কাছ থেকে মূল্য ও মর্যাদা দুটোই পায়। তাই বলা যায় যে, মাসি-পিসি গল্পের আহ্লাদি ও উদ্দীপকের নারীদের জীবন েএকই সুতোয় বাঁধা এই কথাটি সত্য নয়।
উদ্দীপক: ৬
মকবুল হাতের ব্যাথায় মৃদু কাতরাচ্ছিল আর পিটপিট চোখে তাকাচ্ছিল ওদের দিকে। হঠাৎ দাওয়া থেকে ছুটে এসে মুহূর্তে হালিমার চুলের গোছাটা ধরল আবুল। তারপর কোনো চিন্তা না করে সজোরে একটি লাথি বসিয়ে দিল ওর তলপেটে। উঃ মাগো বলো পেটটা দুহাতে চেপে ধরে মাটিতে বসে পড়ল হালিমা। রাগে তখন ফোঁপাচ্ছে আবুল। জানে খতম কইরা দিমু না তোরে, কাইটা রাস্তায় ভাসায় দিমু না বলে আবার ওর চুলের গোছাতে হাত দিতে যাচ্ছিল আবুল। বুড়ো মকবুল চিৎকার দিয়ে উঠল, খবরদার আবুইল্যা তুই যদি বউয়ের গায়ে আরেকবার হাত তুলছস তাইলে ভালো হইবো না কিন্তুক।
ক. কার বাপ-মা বেঁচে নেই?
খ. মাসি-পিসি ঘড়ায় আর হাঁড়ি-কলসিতে আরও জল এনে রাখে কেন?
গ. উদ্দীপকের আবুল মাসি-পিসি গল্পের কোন চরিত্রর প্রতিচ্ছবি? ব্যক্ত কর।
ঘ. মাসি-পিসি গল্পের মাসি-পিসির বৈশিষ্ট্যই যেন উদ্দীপকের মকবুলের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে-মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।
উত্তর:
ক. আহ্লাদির বাপ-মা বেঁচে নেই।
খ. আগুনের হাত থেকে বাঁচার জন্য মাসি-পিসি ঘড়ায় আর হাঁড়ি-কলসিতে আরও জল এনে রাখে। সমাজপতিরা সমাজে তাদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে অসহায়, দুর্বল সাধারণ মানুষগুলোর ওপর নানা প্রকার অত্যাচার চালায়। মাসি-পিসি গল্পে সমাজে মানুষরূপী হিঃস্র হায়েনা সামাজপতিদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে আহ্লাদির ওপর। তারা লোক দিয়ে তাকে তুল নিত চায়। এ সময় মাসি-পিসি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুললে তারা পালিয়া যায়। কিন্তু তারা যে এত সহজে হার মানবে না, এমনকি আহ্লাদিদের ঘরের চালায় আগুনও দিতে পারে, এজন্যই মাসি-পিসি অধিক সতর্কতা হিসেবে ঘড়ায় আর হাঁড়ি-কলসিতে জল এনে রাখে।
গ. উদ্দীপকের আবুল মাসি-পিসি গল্পের অত্যাচারি পাষণ্ড জগু চরিত্রের প্রতিচ্ছবি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বিয়ের পর নারীরা নানাভাবে স্বামীর ঘরে নির্যাতনের শিকার হয়। কিছু পুরুষেরা তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য কারণে-অকারণে স্ত্রীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। উদ্দীপকের আবুল একজন অত্যাচারী স্বামী, যে তার স্ত্রী হালিমার ওপর নির্মম নির্যাতন করেছে। সামান্য ব্যাপারে যে পশুর মতো স্ত্রীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
তার হাত-পা আর মুখের যেন বিরাম নেই। মাসি-পিসি গল্পের জগুও অত্যাচারী, লোভী, পাষাণ চরিত্রের অধিকারী। সেও তার স্ত্রী আহ্লাদির ওপর কারণে-অকারণে অত্যাচার করে। এলাপাতাড়ি লাথি-ঝাঁটার আঘাতে তাকে আধমরা করে, অনাহারে রাখে। এভাবে স্ত্রীর ওপর নির্মম নির্যাতন করার দিক থেকে আবুল মাসি-পিসি গল্পের জগু চরিত্রর প্রতিচ্ছবি।
ঘ. মাসি-পিসি গল্পের মাসি-পিসির চরিত্রের বৈশিষ্ট্যিই যেন উদ্দীপকের মকবুলের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে-মন্তব্যটি যথার্থ। সমাজে নানা রকম অন্যায়-অত্যাচার, বিশৃঙ্খলা বিদ্যমান। এসবের বিরুদ্ধে অনেকেই প্রতিবাদ করে এবং সমাধানে এগিয়ে আসে। সমাজের সাহসী ও নীতিবান মানুষই নানা অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসেন। মাসি-পিসি গল্পে মাসি-পিসিকে আমরা এই ঘুণে ধরা সমাজরে অত্যাচারীদের এবং দারিদ্রোর বিরুদ্ধে সংগ্রামী ভূমিকায় দেখতে পাই। তারা মানবিক বোধসম্পন্ন ও সাহসী। এ কারণেই তারা বিতাড়িত আহ্লাদিকে আশ্রয় দিয়েছে ও রক্ষা করেছে।
সমাজপতিদের অন্যায়-অত্যাচার থেকে রক্ষার জন্য একাট্টা হয়েছে। সমাজের মানুষরুপী হায়েনারা মূলত মাসি-পিসির প্রতিবাদের কারণেই আহ্লাদিকে স্পর্শ করতে পারেনি। উদ্দীপকের মকবুলও আবুলের অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। তার সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে রুখ দাঁড়িয়েছে আবুলের বিরুদ্ধে। মাসি-পিসি গল্পের মাসি-পিসি হত দরিদ্র নারী হলেও প্রতিবাদী মানসিকরার অধিকারনী। কারণ তারা সমাজপতিদের হিংস্র থাবা থেকে অসহায় আহ্লাদিকে বাঁচিয়েছে। উদ্দীপকের মকবুল যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে অত্যাচারি আবুলকে দমানোর, যা তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার দিকটিকে প্রকাশ করে। তাই সংগত কারণেই বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
উদ্দীপক: ৭
দিন কাটিয়া যায়। জীবন অতিবাহিত হয়। ঋতু চক্রে সময় পাক খায়, পদ্মার ভাঙ্গন ধরা তীরে মাটি ধসিতে থাকে, পদ্মার বুকে জল ভেদ করিয়া জাগিয়া উঠে চর, অর্ধ শতাব্দীর বিস্তীর্ণ চর পদ্মার জলে আবার বিলীন হইয়া যায়। জেলেপাড়ার ঘরে শিশুর ক্রন্দন কোনদিন বন্ধ হয় না। ক্ষুধাতৃষ্ণার দেবতা, হাসি কান্নার দেবতা, অন্ধকার আক্তার দেবতা, ইহাদের পূজা কোনদিন সাঙ্গো হয় না।
এদিকে গ্রামের ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মণেতর ভদ্র মানুষগুলি তাহাদের দূরে ঠেলিয়া রাখে, ওদিকে প্রকৃতির কালবৈশাখী তাহাদের ধ্বংস করিতে চায়, বর্ষার জল ঘরে ঢুকে, শীতের আঘাত হাড়ে গিয়া বাজে। আসে রোগ, আসে শোক। টিকিয়া থাকার নির্মম অনমনীয় প্রয়োজনে নিজেদের মধ্যে রেষারেষি করিয়া তাহারা হয়রান হয়। জন্মের অভ্যর্থনা এখানে গম্ভীর, নিরুৎসব, বিষণ্ণ।
ক. শকুনরা উড়ে এসে কোথায় বসল?
খ. মাসি-পিসি শাকসবজি ব্যবসায় শুরু করে কেন?
গ. উদ্দীপকটি মাসি-পিসি গল্পের কোন দিকটিকে ইঙ্গিত করে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. মাসি-পিসি গল্পের মানুষগুলোর হাহাকার, দরিদ্রতা, সমাজপতিদের অত্যাচার, সামাজিক বৈষম্যর চিত্র সামান্যই প্রতিফলিত হয়েছে উদ্দীপকে মন্তব্যটির যথার্থতা মূল্যায়ন কর।
উত্তর:
ক. শকুনরা উড়ে এসে পাতশূন্য গাছটায় বসল।
খ. মাসি-পিসি রোজগারের একটা নতুন উপায় হিসেবে শাকসবজির ব্যবসায় শুরু করে। মাসি-পিসির জীবন দারিদ্যের কশাঘাতে জর্জরিত। প্রতিনিয়ত তাদেরকে জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করতে হয়। অভাব-অনটন, দুঃখ-কান্না যেন তাদের পিছু ছাড়ে না। অভাবের সংসারে তারা আবার আহ্লাদির ভার গ্রহণ করেছে। তাই এ বাড়তি খরচ মেটানোর জন্য বাড়তি আয়ের আশায় মাসি-পিসি শাকসবজির ব্যবসায় শুরু করে।
গ. উদ্দীপকটি মাসি-পিসি গল্পের সাধারণ মানুষের দরিদ্রতা, হাহাকার ও দুর্দশার দিকটির প্রতি ইঙ্গিত করে। সুখ-দুঃখ মিলেই জীবন। তবে অযাচিত কষ্টে মানুষের জীবন বিষময় হয়ে ওঠে। পরিবেশ, প্রকৃতি ও সমাজব্যবস্থা দ্বারা মানুষ পদদলিত হয়। উদ্দীপকে পদ্মাপাড়ের হতদরিদ্র, অসহায় জীবনের সঙ্গে সংগ্রামী মানুষের জীবনচিত্র তুলে ধরা হয়েছে, যারা প্রতিনিয়ত নানা প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে টিকে থাকার জন্য। যাদের দুর্যোগের কথা স্বয়ং ঈশ্বরও কর্ণপাত করেন না।
যাদের নিত্যদিনের সঙ্গী ক্ষুধা, কান্না, সংগ্রাম, বিষণ্ণতা। মাসি-পিসি গল্পেও হতদরিদ্র মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম ও কান্নার কথা আছে। প্রকৃতির কাছে তারাও অসহায়। প্রতিনিয়ত নানা ধরনের প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে তাদেরও সংগ্রাম করতে হয়। নানা প্রকার ঝড়-ঝাপটা, সমাজপতিদের অত্যাচার সহ্য করতে হয় তাদের। এ দিক থেকে বলা যায়, উদ্দীপকটি মাসি-পিসি গল্পের হতদরিদ্র, বঞ্চিত মানুষের হাহাকার ও দুর্দশার দিকটি ইঙ্গিত করে।
ঘ. মাসি-পিসি গল্পের মানুষগুলোর হাহাকার, দরিদ্রতা, সমাজপতিদের অত্যাচার, সামাজিক বৈষম্যর চিত্র সামন্যই প্রতিফলিত হয়েছে উদ্দীপকে মন্তব্যটি যথার্থ। সমাজের ধনী ও প্রভাবশালীদের অন্যায়-অত্যাচার মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তোলে। প্রতিনিয়তই হতদরিদ্ররা অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়ে হতাশ ও বিপর্যস্ত জীবনযাপন করে। মাসি-পিসি গল্পের মানুষগুলো একদিকে যেমন দরিদ্র, অসহায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে জর্জরিত অন্যদিকে সমাজপতিদের দ্বারা শোষিত।
প্রতিনিয়তই তারা দারিদ্র্য ও সামাজিক বৈষম্যে শোষিত হচ্ছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে অবস্থানের শক্তি মাসি-পিসির নেই। তবুও জীবনের তাগিদে তারা সমাজপতিদের নির্যাতন মোকাবেলা করতে চায়। আর উদ্দীপকে শুধু দরিদ্রতা, কান্না ও অসহায়ত্বের কথা বর্ণিত হয়েছে। পদ্মাপাড়ের মানুষগুলোকে প্রতিনিয়ত নিয়তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হয়। প্রকৃতি তাদের সঙ্গে যে বিরূপ আচরণ করে তা দেখানো হয়েছে।
কিন্তু উদ্দীপকে সমাজপতিদের শোষণের কথা বলা হয়নি। মাসি-পিসি গল্পের মানুষগুলো ভাগ্যের সাথে সাথে শোষকদের দ্বারা অত্যাচারিত। কিন্তু উদ্দীপকে শুধু পদ্মাপাড়ের মানুষের হাহাকার ধ্বনিত হয়েছে, যা প্রকৃতির বৈরি আচরণের সাথে সম্পর্কযুক্ত। উদ্দীপকের এ বিষয়টি আলোচ্য মাসি-পিসি গল্পের বর্ণনায় দেখা যায় না। এসব দিক বিচারে প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
উদ্দীপক: ৮
স্বামীর মৃত্যেুর পর পাঁচ বছরের কন্যা রিমাকে নিয়ে মহাবিপদে পড়ে রহিমা। গ্রামের মহাজন কু নজরে তাকায়। কারও বাড়িতে কাজ করতে গেলে গৃহকর্তা আজেবাজে কথা বলে। কিন্তু রহিমা হার মানে না, সে এক সময় পোশাক কারখানায় কাজ নেয় এবং মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করে দেয়। এভাবেই সে জীবনের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকে।
ক. খালে ভাটা থাকে কোন বেলায়?
খ. বজ্জাত হোক, খুনে হোক, জামাই তো। ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের রহিমার সঙ্গে মাসি-পিসি গল্পের মাসি-পিসির কোন দিক দিয়ে সাদৃশ্য রয়েছে?
ঘ. জীবনযুদ্ধের সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকটি মাসি-পিসি গল্পের সম্পূর্ণ রূপ প্রকাশে ব্যর্থ। মন্তব্যটি আলোচনা কর।
উত্তর
ক. খালে ভাটা থাকে শেষ বেলায়।
খ. বাঙ্গালি সমাজে জামাই যেমনই হোক না কেন, জামাইকে আদর করতে কমতি রাখে না-প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মধ্যে দিয়ে এ কথায় প্রকাশিত হয়েছে। আহ্লাদির স্বামী সবসময় আহ্লাদিকে নির্যাতন করত। তাই স্বামীর ওপর অতিষ্ঠ হয়ে সে বাবার বাড়ি চলে আসে। কিন্তু এত কিছুর পরও যখন জগু শ্বশুরবাড়ি আসে তখন মাসি-পিসি জামাইয়ের আদরে কমতি রাখে না। তারা ছাগল বিক্রি করে জামাইকে ভালো-মন্দ দশটা জিনিস খাইয়ে আদর-যত্ন করে। তাই কৈলাশ যখন মাসি-পিসিকে আহ্লাদিকে ফেরত পাঠাতে বলে তখন মাসি-পিসি বলে, মেয়ে না পাঠালেও জামাই এলে তার আদর যত্নের কমতি হবে না।
গ. উদ্দীপকে রহিমার সঙ্গে মাসি-পিসি গল্পের মাসি-পিসির জীবনসংগ্রামের দিক দিয়ে সাদৃশ্য রয়েছে। আমাদের সমাজে বিধবা নারীদের অবস্থা খুব করুণ। এই নির্দয় সমাজ-সংসারে তাদের সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয় শত শত প্রতিকূলতার মধ্যে। তবুও তারা জীবনের কাছে হার মানে না। মাসি-পিসি গল্পে দেখা যায়, নিঃস্ব অসহায় বিধবা মাসি-পিসি জীবন বাঁচাতে ধান ভানে, কাঁথা সেলাই করে, ডালের বড়ি বিক্রয় করে, শহরে গিয়ে তরিতরকারি বিক্রয় করে।
এত কিছুর মধ্যেও তারা স্বামীর নির্যাতনের শিকার পিতৃ-মাতৃহীন তরুণী আহ্লাদিকে আগলে রাখে। তারা অত্যাচারী স্বামী, লোভী জোতদার, গুণ্ডা-বদমাশদের কাছ থেকে আহ্লাদিকে নিরাপদ রাখার দায়ত্ব পালন করে। তাদের টিকে থাকার এ কঠিন সংগ্রাম উদ্দীপওে লক্ষ করা যায়। স্বামীর মৃত্যেুর পর অসহায় রহিমা পাঁচ বছরের কন্যাশিশুকে নিয়ে বিপদে পড়ে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও রহিমা বেঁচে থাকার স্বপ্ন হারিয়ে ফেলে না। পোশাক কারখানায় কাজ নিয়ে টিকে থাকে বৈরী সমাজের বুকে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের রহিমার সঙ্গে মাসি-পিসি গল্পের মাসি-পিসির জীবনসংগ্রামের সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. জীবনযুদ্ধের সাদৃশ্য থাকলেও উদ্দীপকটি মাসি-পিসি গল্পের সম্পূর্ণ প্রকাশে ব্যর্থ-মন্তব্যটি যথার্থ। জীবনেরর রয়েছে নানা বাঁক। প্রতিনিয়ত মানুষকে সেসব বাঁক পেরুতে হয়। তবুও বাঁচার স্বপ্ন দেখে মানুষ বাঁচে। শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, শ্রম দিয়ে মানুষ টিকে থাকে এই হিংস্র সমাজে হায়েনার মতো মানুষগুলোর ভিড়ে। মাসি-পিসি গল্পে দেখা যায়, মাসি-পিসি খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য কঠোর পরিশ্রম করে। পিতৃ-মাতৃহীন আহ্লাদিকে অত্যাচারী স্বামী, লালসায় উন্মত্ত জোতদার, গুন্ডাদের হাত থেকে বাঁচাতে তাদের সংগ্রামী হতে হয়েছে।
শ্বশুরের ঘরদুয়ার ও সামান্য জমিজমার লোভে আহ্লাদিকে জগুর বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়ার আগ্রহের বিষয় গল্পে বর্ণনা করা হয়েছে। এ ছাড়া কলেরার ছোবলে আগ্লাদি কীভাবে তার পিতামাতাকে হারিয়ে এতিম হয়েছে তার মর্মান্তিক বর্ণনা এবং দুর্ভিক্ষের কথাও গল্পে উল্লেখ রয়েছে। অন্যদিকে উদ্দীপকে কেবল বিধবা রহিমার জীবন সংগ্রামের কথা আর সমাজের হিঃস্রতার কথা বর্ণিত হয়েছে। মাসি-পিসি গল্পে একাধিক বিষয়ের প্রতিফলন লক্ষ করা যায়।
কিন্তু উদ্দীপকে কেবল রহিমার কন্যাসন্তানকে নিয়ে অসহায় অবস্থায় পতিত হওয়া ও পরিশ্রম করে তা থেকে উত্তরনের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। তাই আমরা বলতে পারি যেখানে গল্পে দুজন বিধবার মানবিক জীবনযুদ্ধ, অন্যায়ের প্রতিবাদ, দায়িত্বশীলতা, পরিশ্রম প্রকাশ পেয়েছে সেখানে উদ্দীপকে কেবল রহিমার অসহায়ত্ব ও জীবনসংগ্রাম ফুটে ওঠায় তা গল্পের সম্পূর্ণ রূপ প্রকাশে ব্যর্থ। অতএব আলোচ্য মন্তব্যটি যথার্থ।
উদ্দীপক: ৯
পাকিস্থানি হানাদারদের গণহত্যায় পাড়ার সব পুরুষ শহিদ হলে শহিদনগরের মহিলারা নিত্যন্ত অসহায় হয়ে পড়েছিলো। কখনো ঘরের বাহির যারা হয়নি, বেঁচে থাকার প্রয়োজনে তারাই খেতে, মাঠে, রাস্তায় আর হাট-বাজারে এসে দাঁড়ায়। সাজেদা, মাজেদা দুবোন বাপের ভ্যানগাড়িটি নিয়ে গাঁয়ের কাঁচামাল সংগ্রহ করে গঞ্জের বাজারে বিক্রির কাজে লেগে যায়। প্রথম প্রথম আশপাশের গাঁয়ের পুরুষেরা ব্যাপারটি নিয়ে আপত্তি জানালেও দুবোনের দৃঢ়তা, কর্তব্যকর্ম ও সততায় এখন আর তারা খুব একটা উচ্চবাক্য করে না।
ক. কানাই মাসি-পিসিকে কোথায় যেতে বলল?
খ. গলা কেটে রক্ত দিয়ে সে ধার শোধ করা যদি-বা সম্ভব, অন্ন দেওয়ার ক্ষমতা কোথায় পাবে। কথাটি কেন বলা হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের পুরুষদের শহিদ হওয়া মাসি-পিসি গল্পের কোন দিকটিকে ইঙ্গিত করে?
ঘ. উদ্দীপকের সাজেদা-মাজেদার দৃঢ়তা ও কর্তব্যকর্মকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায় মাসি-পিসি গল্পে। মূল্যায়ন কর।
উত্তর:
ক. কানাই মাসি-পিসিকে কাছারিবাড়ি যেতে বলল।
খ. আলোচ্য বক্তব্যে দুর্ভিক্ষের সময়ে আহ্লাদির বাবার অন্ন সংস্থানের শোচনীয় অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। দুর্ভিক্ষের সময় আহ্লাদির বাবা আহ্লাদির মাসি-পিসির থাকাটা শুধু বরাদ্দ রেখে খাওয়াটা ছাঁটাই করে দিয়েছিলো। তার পরও তার অবস্থা মোটেও ভালো ছিল না। অন্যদিকে জগুর নির্মম অত্যাচারে মরমর অবস্থায় আহ্লাদি এসে হাজির। মাসি-পিসির সেবাযত্নেই আহ্লাদি সেবার বেঁচে গিয়েছিলো। আহ্লাদির বাবা-মাও সেটা স্বীকার করছে, কিন্তু অন্নসংস্থানের ক্ষমতা তো তার নেই। এই অবস্থার কথা বিবেচনা করে তাই বলা হয়েছে গলা কেট রক্ত দিয়ে সে ধার শোধ করা যদি বা সম্ভব, অন্ন দেওয়ার ক্ষমতা কোথায় পাবে।
গ. উদ্দীপকের পুরুষদের শহিদ হওয়া মাসি-পিসি গল্পের আহ্লাদির বাবা-মা ও ভাইয়ের কলেরার মহামারীতে মারা যাওয়া এবং আহ্লাদি ও মাসি-পিসির অসহায় হয়ে যাওয়ার দিকটিকে ইঙ্গিত করে। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। মানুষ মানুষকে আশ্রয় করেই বেঁচে থাকে। সেই প্রাণের দোসর মানুষ যদি শিকার হয় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মানুষরূপী আসুরিক কোনো হ্যাযজ্ঞের, তখন তার আশ্রয় হারায়।
উদ্দীপকে দেকা যায়, পাকিস্থানি হানাদারদের গণহ্যায় পাড়ার সব পুরুষ শহিদ হলে শহিদনগরের মহিলারা নিতান্ত অসহায় হয়ে পড়ে। উদ্দীপকের অনুরূপ মাসি-পিসি গল্পে মাসি-পিসি ছাড়া কেউ নেই আহ্লাদির। দুর্ভিক্ষ কোনোমতে ঠেকিয়েছিল তার বাবা। মহামারীর একটা রোগে, কলেরায়, তার বাব, মা ও ভাই মারা যায়। নিত্যন্ত অসহায় অবস্থায় পড়ে যায় আহ্লাদি ও তার মাসি-পিসি। এই অসহায়ত্বের দিকটি উদ্দীপক ও গল্পে পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ।
ঘ. উদ্দীপকের সাজেদা-মাজেদার দৃঢ়তা ও কর্তব্যকর্মকে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায় মাসি-পিসি গল্পে-মন্তব্যটি যথার্থ। উদ্দীপকে পাকিস্থানি হানাদারদের গণহত্যার শিকার হয়ে পাড়ার সব পুরুষ শহিদ হলে অন্য সব মহিলার মতো সাজেদা-মাজেদাও অসহায় হয়ে পড়ে। বেঁচে থাকার তাগিদে তারা দুবোন বাপের ভ্যানগাড়িটি নিয়ে গাঁয়ের কাঁচামাল কাঁচামাল সংগ্রহ করে গঞ্জের বাজারে বিক্রির কাজে লেগে যায়। গাঁয়ের পুরুষরা প্রথম প্রথম ব্যাপারটা নিয়ে আপত্তি জানালেও দুবোনের দৃঢ়তা ও কর্তব্যকর্মের সততায় এখন আর তারা খুব একটা উচ্চবাক্য করে না।
উদ্দীপকের সাজেদা-মাজেদার এ দৃঢ়তা ও কর্মতৎপরতাকে মাসি-পিসি গল্পে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়। মাসি-পিসি গল্পের শুরুতে ভাটার টান ঠেলে মাসি-পিসির সালতি যখন ঘাটে ভিড়ে, তখন ঘাটে কর্মরত কোনো পুরুষকে উদ্দীপকের মতো বিরুপ মন্তব্য করতে দেখা যায়। বরং বুড়ো লোকটি কৈলাশের কাছে মাসি-পিসি ফিরছে কিনা সেই খবর নিয়েছে। এসব দিক বিচারে তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
জগু মামলা করতে চাইল কেন?
জগু আহ্লাদিকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্যই মামলা করতে চাইল। আহ্লাদি তার স্বামী জগুর ঘর ছেড়ে চলে এলে সে অনেকবার তাকে ফিরিয়ে নিতে আসে। কিন্তু আহ্লাদি স্বামীর ঘরে ফিরে যেতে চায়না। মাসি পিসিও তাকে যেতে দেয় না। তাই জগু কৈলাশের মাধ্যমে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে, সে বউকে নেওয়ার জন্য মামলা করবে।
মাসির উপর পিসির একটা অবজ্ঞা, অবহেলার ভাব ছিল কেন?
আলোচ্য উক্তিটির দ্বারা লেখক আহ্লাদির মাসি ও পিসির মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও হীন মনমানসিকতার দিকটিকে নির্দেশ করেছেন। উত্তরাধিকার বা জন্মসূত্রে পিসি ছিল এ বাড়িরই মেয়ে। আর মাসি বাইরের। তাই মাসির ওপর পিসির অহংকার ছিল এবং খোঁচা দেওয়াটা মাসির কাছে খুবই অসহ্য মনে হতো। এ কারণেই লেখক বলেছেন, মাসির উপর পিসির একটা অবজ্ঞা, অবহেলার ভাব ছিল। কিন্তু যখন আহ্লাদী স্বামীর ঘর থেকে চলে আসে তখন মাসি ও পিসি নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ভুলে একসাথে সকল সংগ্রাম চালিয়ে যায়।
মাসি-পিসি কানাইকে কিভাবে প্রতিহত করেছিলো?
বঁটি ও কাটারি হাতে নিয়ে এবং প্রতিবেশীদের ডেকে এনে মাসি-পিসি কানাইকে প্রতিহত করেছিলো। রাতের বেলায় তাদের কাছারিতে নিয়ে যাওয়াটা মাসি-পিসির কাছে সন্দেহজনক মনে হয়। তাছাড়া তারা ঝোপের আড়ালে লুকানো সাধু বৈদ্য-ওসমানদের দেখে ফেলে। তাই তারা ঘরে গিয়ে বঁটি আর কাটারি নিয়ে বেরিয়ে আসে। তারপর প্রতিবেশীদের জোরে জোরে ডাকতে থাকে। মূলত অদম্য সাহস আর আহ্লাদির প্রতি মমত্ববোধই মাসি-পিসিকে অনুপেরণা জুগিয়েছে কানাইকে প্রতিহত করতে।
গ্রামবাসি মাসি-পিসিকে কিভাবে সাহায্য করেছিলো?
মাসি-পিসির হাঁক শুনে প্রতিবেশীরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসে। প্রথমে বিনা পরামর্শেই মাসি-পিসি গলা ছেড়ে ডাকাডাকি শুরু করে দেয়। আশে পাশের বাসিন্দাদের নাম ধরে ও বাবা ঠাকুর! ও ঘোষ মহাশয়! ও জনাদ্দন! ওগো কানুর মা, বিপিন, বংশী...বলে ডাকাডাকি শুরু করলে গ্রামবাসী এগিয়ে আসে। তাদের এ চরম বিপদের কথা জানতে পেরে গ্রামবাসী অনেকে ছুটে আসে, আবার কেউ জানালা খুলে বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করে। গ্রামবাসী আসার সাথে সাথে ভয় পেয়ে কানাই তার দলবলসহ পালিয়ে যায়।
বাকি রাতটুকু মাসি-পিসি কিভাবে সতর্কতা অবলম্বন করে?
বাকি রাতটুকু মাসি-পিসি আহ্লাদিকে না জাগিয়েই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে বিভিন্ন সতর্কতা অবলম্বন করে। মাসি-পিসি রাতের বেলা চুপিচুপি কথা বলে। মাসি সজাগ থাকার কথা বলে। পিসি কাঁথা-কম্বল ভিজিয়ে রাখে যাতে আগুন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। হাঁড়ি-কলসে আরও জল এনে রাখে। বঁটি আর রামদা হাতের কাছেই রাখে। এভাবে যেকোনো বিপদকে প্রতিহত করার সাহস আর মনোবল নিয়ে প্রস্তুত থাকে।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে মাসি-পিসি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url