গণতন্ত্র কি? বিস্তারিত জেনে নিন
দেশের জনগণের সুখময় জীবনযাপনের জন্য সুশীল রাষ্ট্রব্যবস্থা ও নিরাপত্তার অনুকূল পরিবেশ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। আর সেই রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ সঞ্চারিত থাকে এবং সমাজে যদি মানুষের অবস্থান নিরাপদ হয়, তবে নাগরিক জীবনে স্বস্তি নেমে আসে।
কল্যাণমুখী রাষ্ট্রের লক্ষ্যই হলো জনগণের সুখ-শান্তির নিশ্চয়তা প্রদান করা। আর তা একমাত্র গণতন্ত্রের মাধ্যমেই সম্ভব। Lord Bryce বলেন, ‘‘ Democratic values are the tempo of democratic procedure without its proper implementation, there shall not democratic development.’’
গণতন্ত্র কি?
গণতন্ত্র হলো এমন একটি শাসন ব্যবস্থা যেখানে রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষমতা জনগনের হাতে থাকে। এই ব্যবস্থায় একটি রাষ্ট্রের জনগন সরাসরি বা পরোক্ষভাবে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় অংশগ্রহন করে। মতামত গ্রহন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও যৌক্তিকতা গণতন্ত্রের অনন্য বৈশিষ্ট্য।
মানুষ তার অভিজ্ঞতা এবং প্রজ্ঞার মধ্য দিয়ে আজ পর্যন্ত যতগুলো শাসন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে তার মধ্যে গণতন্ত্রই শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত। তবে গণতন্ত্রের উদ্ভব আধুনিককালে হয় নি। প্রাচীনকালে গ্রিসে গণতন্ত্র ছিল এবং গ্রিকরাই গণতন্ত্র উদ্ভাবন করেছিল। অবশ্য গ্রিসে প্রচলিত গণতন্ত্র এবং বর্তমানের গণতন্ত্রের অন্তর্নিহিত মুখ্য বিষয় এক হলেও দুই গণতন্ত্রের মধ্যে বিরাট পার্থক্য দেখা যায়।
আরো পড়ুন: দ্বৈত শাসন বলতে কি বুঝায়
যদিও বাস্তবে এ পদ্ধতির সরকার Government by the representatives of the people. তবু একেই বলা হয় Government by the people. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন বলেছেন, Government of the people, by the people and for the people. অধিকাংশ ভোটাধিাকার প্রাপ্ত নর-নারীর ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত সরকারকে জনগণের সরকার বলা হয়। গণতন্ত্র হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সবচেয়ে আধুনিক ও সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য জনপ্রিয় পদ্ধতি।
গণতন্ত্রের গুণাবলি
১। এই শাসনব্যবস্থায় ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে একই দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করা হয়।
২। এক্ষেত্রে সবার সমানাধিকার সুনিশ্চিত করা হয়।
৩। এতে সরকার জনগণের কাছে জবাবদিহিতায় বাধ্য থাকে।
৪। লুটপাট ও স্বেচ্ছাচারিতা থাকে না বলে রাজতন্ত্রের মতো কেউ সীমাহীন কর্তৃত্ব ও সম্পদের মালিক হতে পারে না।
৫। আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
৬। মানুষ হিসেবে জনসাধারণ তাদের স্বীয় ও প্রকৃত মর্যাদা লাভ করে।
৭। এতে জনগণ ও সরকারের মধ্যে সুসম্পর্ক বিরাজ করে।
৮। এ অবস্থায় জনগণ চাইলে অপছন্দের সরকারকে বাদ দিয়ে নতুন সরকার নির্বাচিত করতে পারে।
৯। এতে আলোচনা, সমালোচনা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে বলে রাষ্ট্রীয় কৌশল ও সিদ্ধান্তে জনমত প্রতিফলিত হয়।
১০। এতে নাগরিকের প্রতিভা ও ব্যক্তিত্ব বিকাশের সুযোগ বিদ্যমান।
নাগরিকের কর্তব্য
জাতীয় জীবনে গণতন্ত্রের সুফল প্রতিফলনে প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য রয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিপালন করতে হবে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে। যে বলিষ্ঠ সংগ্রামের মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা টিকিয়ে রাখা এবং তার ফল ভোগ করার জন্য ত্যাগের মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। সহনশীল মনোভাব না থাকলে গণতন্ত্রের বিকাশ ব্যাহত হবে। জাতির বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সহযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
আরো পড়ুন: সামরিক শাসন বলতে কি বুঝায়?
গণতন্ত্রের ফলাফল যথাযথ আস্বাদনে সন্ত্রাসমুক্ত সমাজের বিধান করতে হবে। সন্ত্রাসের প্রকৃত কারন দূর করে সামাজকে নিরাপদ রাখা আবশ্যক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাস না থাকলে শিক্ষার পরিবেশ সুন্দর হবে। শিল্পকারখানায় সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ বজায় রেখে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করতে হবে।
উপসংহার
একটি দেশে গণতন্ত্র আসে অনেক সংগ্রামের পর। এর সুফল অবশ্যই জাতীয় জীবনে পৌঁছাতে হবে। সেজন্য সমাজকে সন্ত্রাসমুক্ত রাখতে হবে যাতে নিরাপদ পরিবেশে গণতন্ত্রের চর্চা হতে পারে। গণতন্ত্রের মূল চেতনাটি দেশের প্রতিটি নাগরিককেই ধারণ করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর। তাদের কাছ থেকে আমরা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রত্যাশা করি।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url