দ্বৈত শাসন বলতে কি বুঝায়? বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে দ্বৈত শাসন বলতে কি বুঝায় এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে দ্বৈত শাসন কাকে বলে তা বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।রবার্ট ক্লাইভ দেওয়ানি সনদের নামে বাংলার সম্পদ লুণ্ঠনের একচেটিয়া ক্ষমতা লাভ করে। দিল্লি কর্তৃক বিদেশি বণিক কোম্পানিকে এই অভাবিত ক্ষমতা প্রদানে সৃষ্টি হয় দ্বৈত শাসনের। অর্থাৎ কোম্পানি লাভ করে দায়িত্বহীন ক্ষমতা, নবাব পরিণত হন ক্ষমতাহীন শাসকে। অথচ নবাবের দায়িত্ব থেকে যায় ষোলোআনা। ফলে বাংলায় এক অভূতপূর্ব প্রশাসনিক জটিলতার সৃষ্টি হয়, যার চরম মাসুল দিতে হয় এদেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীকে। 
১৭৭০ সালে গ্রীষ্মকালে দেখা দেয় ভয়াবহ দুভিক্ষ, যা ইতিহাসে ছিয়াত্তরের মন্বন্তর নামে পরিচিত। কোম্পানি মুর্শিদাবাদ প্রতিনিধি রিচার্ড বেচারের ভাষায় দেশের কয়েকটি অংশে যে জীবত মানুষ মৃত মানুষকে ভক্ষণ করিতেছে তাহা গুজব নয় অতি সত্য। এই দুর্ভিক্ষে বাংলার জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ মৃত্যুমুখে পতিত হয়। ১৭৬৫-৭০ সালে বার্ষিক রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ যা ছিল, দুভিক্ষের বছরও আদায় প্রায় তার কাছাকাছি ছিল। 
ফলে চরম শোষণ-নির্যাতনে বাংলার মানুষ হতদরিদ্র ও অসহায় হয়ে পড়ে। দ্বৈতশাসন ব্যবস্থায় নবাবের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় প্রশাসন পরিচালনায় তিনি সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হন। সারাদেশে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। এই পরিস্থিতিতে ১৭৭২ সালে ওয়ারেন হেস্টিংস দ্বৈত শাসন ব্যবস্থার অবসান ঘটান। তিনি হন প্রথম গভর্নর জেনারেল।
দ্বৈত শাসন বলতে কি বুঝায়?
দ্বৈত শাসন বলতে এমন একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা বোঝায় যেখানে দুটি ভিন্ন ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠান একই অঞ্চল বা জনগণের উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করে। এটি মূলত রাজনৈতিক ক্ষমতার দ্বন্দ্বের একটি রূপ, যেখানে দুটি পক্ষের মধ্যে দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব ভাগ করা হয়। দ্বৈত শাসনের ধারণাটি ইতিহাসে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বিভিন্ন সময়ে একাধিক অঞ্চলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অস্থিতিশীলতার জন্ম দিয়েছে।
দ্বৈত শাসনের উদাহরণ হিসেবে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের সময় ১৭৬৫ সালে শুরু হওয়া দ্বৈত শাসন পদ্ধতিকে (Dual Government System) উল্লেখ করা যায়। এটি বাংলার নবাব এবং ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে ক্ষমতার বিভাজনের ফল ছিল। ব্রিটিশরা দেওয়ানি বা রাজস্ব ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পরিচালনা করত, আর বাংলার নবাবরা ফৌজদারি বিচার ও আভ্যন্তরীণ বিষয় পরিচালনা করত। 
আরো পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
তবে কার্যত নবাবরা পুরোপুরি ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছিলেন এবং ব্রিটিশরা প্রকৃত শাসনভার পরিচালনা করত। ফলে সাধারণ জনগণের উপর দ্বৈত শাসনের চাপ সৃষ্টি হয়, যেখানে তারা দুই পক্ষের শাসনের অধীনে অবর্ণনীয় শোষণের শিকার হয়।
দ্বৈত শাসনের একটি বড় সমস্যা হলো দায়িত্ববোধের অভাব। যেহেতু ক্ষমতা দুই ভাগে বিভক্ত, তাই জনগণের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে একটি পক্ষ অন্য পক্ষের ওপর দোষ চাপিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে। এ ধরনের শাসন পদ্ধতি প্রশাসনিক জটিলতা এবং শোষণের মাধ্যমে জনগণের জীবনে চরম দুর্দশা ডেকে আনে। ভারতবর্ষে এই শাসনব্যবস্থা জনগণের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক প্রমাণিত হয়েছিল এবং এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারেনি। ১৭৭২ সালে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংসের মাধ্যমে এই পদ্ধতির অবসান ঘটে।
সুতরাং, দ্বৈত শাসন বলতে বোঝায় এমন একটি প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা, যা সাধারণত দুই পক্ষের মধ্যে ক্ষমতার বিভাজন ও দ্বন্দ্বের মাধ্যমে শাসনের জটিলতা সৃষ্টি করে। এটি ইতিহাসে প্রায়ই শাসন কাঠামোর অস্থিতিশীলতার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
কোম্পানির দেওয়ানি লাভ
১৭৬৫ সালে মীর জাফরের মৃত্যেুর পর তার পুত্র নাজিম-উদ দৌলাকে শর্ত সাপেক্ষে বাংলার সিংহাসনে বসানো হয়। শর্ত থাকে যে, তিনি তার পিতার মতো ইংরেজদের নিজস্ব পুরাতন দস্তক অনুযায়ী বিনা শুল্কে অবাধ বাণিজ্য করতে দেবেন এবং দেশীয় বণিকদের অবাধ বাণিজ্যের সুবিধা বাতিল করবেন। এ সময়ে ইংরেজ কোম্পানি মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে বাংলার রাজস্ব আদায়ের সম্পূর্ণ দায়িত্ব অর্থাৎ দেওয়ানি লাভ করে। 
১৭৬৫ সালে দেওয়ানি লাভের পর ইংরেজরাই বাংলার সত্যিকার শাসকরুপে আত্মপ্রকাশ করে। মুর্শিদ কুলি খানের পূর্ব পর্যন্ত দেওয়ান এবং সুবেদার পদে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হতো। মুর্শিদ কুলি খান এই প্রথা ভঙ্গ করে দুইটি পদ একাই দখল করে নেন। তাঁর সময় কেন্দ্রে নিয়মিত রাজস্ব পাঠানো হলেও পরবর্তীকালে অনেকেই তা বন্ধ করে দেয়। আলিবর্দি খানের সময় থেকে একেবারেই তা বন্ধ হয়ে যায়। 
এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সম্রাট কোম্পানিকে বার্ষিক উপঢৌকনের বদলে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার দেওয়ানি গ্রহণের অনুরোধ করেন। কিন্তু এই অনুরোধ কোম্পানি তখন গ্রাহ্য করেননি। বক্সারের যুদ্ধের পর ১৭৭৫ সালে ক্লাইড দ্বিতীয়বার ভারতবর্ষে এলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। ক্লাইড দেশ থেকে ফিরে প্রথমেই পরাজিত অযোধ্যার নবাব ও দিল্লির সম্রাটের দিকে নজর দেন। তিনি অযোধ্যার পরাজিত নবাবের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন করেন। বিনিময়ে আদায় করে নেন কারা ও এলাহাবাদ জেলা দুইটি। 
যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ বাবদ আদায় করেন পঞ্চাশ লক্ষ টাকা। অপরদিকে তিন দেওয়ানি শর্ত সংবলিত দুইটি চুক্তি করেন। একটি দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের সঙ্গে। এতে কোম্পানিকে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার দেওয়ানি দান করা হয়। এর বিনিময়ে ছাব্বিশ লক্ষ টাকা নবাব প্রতিবছর সম্রাটকে পাঠাবেন। এই টাকা নিয়মিত পাঠানোর জমিদার হবে কোম্পানি। অপর চুক্তি হয় মীর জাফরের নাবালক পুত্র নবাব নাজিম-উদ-দ্দৌলার সঙ্গে। 
বার্ষিক ৫৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নবাব কোম্পানির দেওয়ানি লাভের সকল শর্ত মেনে নেন। এই চুক্তির ফলে কোম্পানির ক্ষমতা একচেটিয়া বৃদ্ধি পায়। নবাব তখন বস্তুত কোম্পানির পেনশনার মাত্র। সম্রাটও তাই। সমস্ত ক্ষমতা কোম্পানির হাতে। দেওয়ানি থেকে যে আয় হবে তা দিয়ে কোম্পানির যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে দ্বৈত শাসন বলতে কি বুঝায় এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টট পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই  থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

 
 
 
%20%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%A4%20%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%87%20%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%A8.jpg) 
.jpg) 
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url