পদার্থ কি? কত প্রকার ও কি কি? জেনে নিন
পদার্থ কি? কত প্রকার ও কি কি?
এ বিশ্বে আমরা যা কিছু দেখতে পাই বা যা কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করি, সব কিছুকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, পদার্থ ও শক্তি। যার ভর আছে, যা কোনো স্থান দখল করে অবস্থান করে এবং যা তার স্থিতিশীল বা গতিশীল অবস্থার পরিবর্তনে বাধা প্রদান করে, তাকে পদার্থ বলা হয়।
অন্যকথায় বলা যায়, যার জড়তা (inertia) আছে, তাই পদার্থ। আমাদের চারদিকে যত বস্তু আছে, সবই পদার্থ। টেবিল, চেয়ার, মাটি, পানি, বাতাস ইত্যাদি। আমরা খালি চোখে বাতাস দেখতে পাই না, কিন্তু তার অস্তিত্ব অনুভব করি, তার ভর আছে এবং তা স্থান দখল করে আছে। সুতরাং বাতাস পদার্থ। তাপ, আলোক প্রভৃতি হচ্ছে শক্তি। এগুলো কোনো স্থান দখল করে না। এগুলোর ভর নেই। সুতরাং এগুলো পদার্থ নয়।
পদার্থের অবস্থাভেদ
পদার্থ তিন অবস্থায় থাকতে পারে: (ক) কঠিন, (খ) তরল (গ) গ্যাসীয়।
(ক) কঠিন পদার্থ: কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন, নির্দিষ্ট আকার এবং কমবেশি দৃঢ়তা আছে। খুব সহজে কঠিন পদার্থের আকার বা আয়তনের পরিবর্তন হয় না। বল প্রয়োগ করেলেই কঠিন পদার্থ সাধারণত ভেঙে যায় না। অর্থাৎ কঠিন পদার্থের দৃঢ়তা আছে। এ দৃঢ়তা বস্তুভেদে বিভিন্ন পরিমাণের হয়। বিভিন্ন ধাতু, পাথর, লবণ, বালু প্রভৃতি কঠিন পদার্থের উদাহারণ। কঠিন পদার্থের অণুসমূহ পরস্পরের অতি সন্নিকেটে থাকে এবং নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থিত থাকে।
(খ) তরল পদার্থ: তরল পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন আছে কিন্তু নির্দিষ্ট আকার নেই। যখন যে পাত্রে রাখা হয়, সে পাত্রের আকার ধারণ করে। কিন্তু পাত্রভেদে ভর বা আয়তনের কোনো পরিবর্তন হয় না। তরল পদার্থের অণুসমূহ পরস্পরের সন্নিকেটে থাকে, তবে তাদের মধ্যকার আকর্ষণ কঠিন পদার্থের মতো প্রবল নয়। অণুসমূহ স্থান পরিবর্তন করতে পারে বলে তরল পদার্থের কোনো নির্দিষ্ট আকার নেই। পানি, পেট্রল, কেরোসিন, ভোজ্য তেল তরল পদার্থের উদাহারণ।
আরো পড়ুন: পরমাণু কাকে বলে?
(গ) গ্যাসীয় পদার্থ: গ্যাসীয় পদার্থের নির্দিষ্ট কোনো আকার বা আয়তন নেই। কোনো নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাসীয় পদার্থ, তা যত অল্প হোক না কেন, কোনো বড় বা ছোট পাত্রে রাখা হলে, তার সকল স্থান দখল করে এবং সেই পাত্রের আকার ধারণ করে। কিন্তু পাত্রের আকার বা আকৃতিভেদে ভরের কোনো তারতম্য হয় না। গ্যাসীয় পদার্থের অণুসমূহের মধ্যে দূরত্ব অনেক বেশি, তাই আাকর্ষণ শক্তি অনেক কম, ফলে তারা প্রায় সম্পূর্ণ মুক্তভাবে চলাচল করে। নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন-ডাইঅক্সাইড প্রভৃতি গ্যাসীয় পদার্থের উদাহারণ।
পদার্থের রূপান্তর বা অবস্থার পরিবর্তন
সাধারণত একই পদার্থ তিনটি ভিন্ন অবস্থাতেই বিরাজ করতে পারে। যেমন বরফ, পানি ও জলীয় বাষ্প একই পদার্থ। সাধারণ তাপমাত্রায় পানি একটি তরল পদার্থ। তাকে ঠান্ডা করলে 0°C তাপমাত্রায় তা কঠিন পানি বা বরফে রূপান্তরিত হয়। এ বরফকে তাপ দিলে তা আবার পানিতে পরিণত হয়। পানিকে তাপ দিলে 100°C তাপমাত্রায় ফুটে বাষ্পে রূপান্তরিত হয়। বাষ্পকে ঠান্ডা করলে তা পানিতে পরিণত হয়। তাকে ঠান্ডা করে 0°C এ নিয়ে গেলে বরফে পরিণত হয়। এরূপভাবে প্রায় সকল কঠিন পদার্থকে তাপ দিলে তারা গলে তরলে রূপান্তরিত হয়।
যে তাপমাত্রায় কোনো পদার্থ কঠিন অবস্থা হতে তরলে পরিণত হয়, তাকে সে পদার্থের গলনাঙ্ক বলা হয়। তরলকে আরো উত্তপ্ত করলে তা বাষ্পে পরিণত হতে থাকে এবং এক সময় ফুটতে আরম্ভ করে। যে তাপমাত্রায় কোনো তরল পদার্থ ফুটতে থাকে তাকে সে পদার্থের স্ফুটনাঙ্ক বলা হয়। স্ফুটনাঙ্ক বাইরের চাপের উপর নির্ভরশীল। সাধারণত খোলা পাত্রে স্ফুটনাঙ্ক মাপা হয়। তখল তরলের উপরের বায়ুচাপ 1 atm থাকে।
সাধারণত বাষ্পকে ঠান্ডা করলে তরল এবং তরলকে ঠান্ডা করলে কঠিন পদার্থের সৃষ্টি হয়। অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে কঠিন পদার্থ উত্তপ্ত করলে সরাসরি বাষ্পে রূপান্তরিত হয়, তাকে ঊর্ধ্বপাতন বলা হয়। যেমন, আয়োডিন এবং ন্যাপথালিন। অপরদিকে অনেক পদার্থ উত্তাপে তরল বা গ্যাস হওয়ার পূর্বেই বিযোজিত বা বিয়োজিত হয়ে যায়।
আন্তঃআণবিক শক্তি
প্রশ্ন উঠে, একই পদার্থ তিন অবস্থায় থাকে কেন? এবং তাপমাত্রার উপরে এ অবস্থাসমূহ নির্ভরশীল কেন? যে কোনো বস্তু অতি ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত, তাদেরকে সে বস্তুর অণু বলা হয়। অণুসমূহ পরস্পরকে আকর্ষন করে। যেমন, বরফে বা পানিতে অণুগুলো পরস্পরকে আকর্ষণ করে বলেই এরা একত্রে থাকে। এ আকর্ষণ শক্তিকে আন্তঃআণবিক শক্তি বলা হয়। আকর্ষণের পরিমাণ বস্তুর প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।
আন্তঃআণবিক শক্তির কারণে অনুসমূহ পরস্পরের সন্নিকেটে থাকতে চায়। অপরদিকে অণুসমূহ সর্বদা কম্পমান থাকে। তাপমাত্রা যত বাড়ে, কম্পনও তত বাড়ে। তাপশক্তির কারণে তাদের মধ্যে গতির সঞ্চার হয়। যার ফলে অণুসমূহ পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন হতে চায়। আন্তঃআণবিক শক্তির তুলনায় অণুসমূহের গতিশক্তি অনেক কম হলে অণুসমূহ নির্দিষ্ট অবস্থানে বিরাজ করে।
তখন কঠিন অবস্থার সৃষ্টি হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধি করলে কম্পন শক্তি বৃদ্ধি পেয়ে এমন অবস্থায় পৌঁছে যে অণুসমূহ আর নির্দিষ্ট স্থানে বিরাজ করে না। চলাচল করে। তখন তরল অবস্থার সৃষ্টি হয়। তাপমাত্রা আরো বাড়লে অণুসমূহের গতিশক্তি এত বৃদ্ধি পায় যে তারা পরস্পর হতে অনেক দূরে সরে যায় এবং প্রায় মুক্তভাবে চলাচল করে। তখন গ্যাসীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়।
পদার্থের শ্রেণিবিভাগ
মিশ্রণঃ দুই বা ততোধিক পদার্থকে যে কোনো অনুপাতে একত্রে মিশালে যদি তারা নিজ নিজ ধর্ম বজায় রেখে পাশাপাশি অবস্থান করে, তবে উক্ত সমাবেশকে মিশ্রণ বলা হয়। মিশ্রণ দুই প্রকারের হতে পারে। যেমন, অসমসত্ব মিশ্রণ ও সমসত্ব মিশ্রণ।
অসমসত্ব মিশ্রণঃ যে মিশ্রণের বিভিন্ন অংশে তার উপাদানসমূহ বিভিন্ন অনুপাতে থাকে, তাদের পৃথক অস্তিত্ব লক্ষ করা যায় এবং যার বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন ধর্ম প্রদর্শন করে, তাকে অসমসত্ব মিশ্রণ বলা হয়। যেমন, বালি ও চিনির মিশ্রণ একটি অসমসত্ব মিশ্রণ। এ মিশ্রণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে পরীক্ষা করলে দেখা যাবে, কোনো অংশে বালির পরিমাণ বেশি, অন্যত্র কম। এছাড়া খালি চোখে অথবা অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে বালি ও চিনির দানা পৃথকভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব। পানি যোগ করলে চিনি দ্রবীভূত হবে, বালি হবে না। অর্থাৎ দুইটি অংশ ভিন্ন ধর্ম প্রদর্শন করে।
সমসত্ব মিশ্রণঃ যে মিশ্রণের সকল অংশে তার উপাদানসমূহ একই অণুপাতে বিদ্যমান এবং যাতে একাধিক বস্তুর অস্তিত্ব সহজে বুঝা যায় না, তাকে সমসত্ব মিশ্রণ বলা হয়। পানিতে চিনির দ্রবণ বা শরবত একটি সমসত্ব মিশ্রণ। তার বিভিন্ন অংশে পানি ও চিনির অনুপাত একই। অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারাও চিনির অস্তিত্ব পৃথকভাবে বুঝা যায় না। সাগরের পানি নানা প্রকার লবনের সমসত্ব মিশ্রণ। রোদের তাপে পানি শুকিয়ে সাগর পাড়ের লবণ-খামারিরা লবণ সংগ্রহ করে। সাগরের কিছু পরিমাণ পরিষ্কার পানি ফুটিয়ে তুমিও পরীক্ষা করে দেখতে পারো।
আরো পড়ুন: কোষ বিভাজন কাকে বলে?
খাঁটি বস্তুঃ নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয় রাসায়নিক সংযুক্তি ও ধর্ম বিশিষ্ট পদার্থকে খাঁটি বস্তু বলা হয়। যেমন, বিশুদ্ধ সোনা, বিশুদ্ধ পানি প্রত্যেকটি খাঁটি বস্তু। খাঁটি বস্তুকে দুইটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়; (১) মৌল বা মৌলিক পদার্থ এবং (২) যৌগ বা যৌগিক পদার্থ।
মৌল বা মৌলিক পদার্থঃ যে বস্তুকে রাসায়নিকভাবে বিশ্লেষণ করে অন্য কোনো সহজ বস্তুতে রূপান্তরিত করা যায় না, তাকে মৌল বা মৌলিক পদার্থ বলা হয়। সোনা, তামা, লোহা, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন প্রত্যেকে এক একটি মৌল। এদের যে কোনো একটিকে বিশ্লেষণ করে অন্য বস্তু পাওয়া যাবে না।
মৌলিক পদার্থকে গুণের ক্রমানুসারে দুইটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়: ধাতু এবং অধাতু।
ধাতুঃ চকচকে এবং তাপ বিদ্যুৎ সুপরিবাহী মৌলকে ধাতু বলা হয়। যেমন - তামা, লোহা, স্বর্ণ ইত্যাদি।
অধাতুঃ প্রধানত তাপ ও বিদ্যুৎ অপরিবাহী মৌলসমূহকে অধাতু বলে। যেমন - নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ক্লোরিন ইত্যাদি।
যৌগ বা যৌগিক পদার্থঃ যে বস্তুকে রাসায়নিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দুই বা ততোধিক মৌলিক পদার্থ পাওয়া যায়, তাকে যৌগ বা যৌগিক পদার্থ বলা হয়। যেমন - হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন এ দুইটি মৌল নির্দিষ্ট ভর অনুপাতে পরস্পর যুক্ত হয়ে পানি উৎপন্ন করে। অতএব, পানি একটি যৌগিক পদার্থ।
পদার্থের পরিবর্তন
পদার্থের পরিবর্তন দুই ধরনের: ভৌত বা অবস্থানগত পরিবর্তন এবং রাসায়নিক পরিবর্তন।
(ক) ভৌত বা অবস্থানগত পরিবর্তনঃ যে পরিবর্তনের ফলে পদার্থের শুধু বাহ্যিক আকার বা অবস্থার পরিবর্তন হয় কিন্তু তা কোনো নতুন পদার্থে পরিণত হয় না, তাকে ভৌত বা অবস্থানগত পরিবর্তন বলা হয়।
উদাহারণ: ১। পানিকে ঠাণ্ডা করলে তা বরফে এবং তাপ দিলে জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। আবার বরফকে তাপ দিলে বা বাষ্পকে শীতল করলে পানি পাওয়া যায়। বরফ, পানি ও জলীয় বাষ্প একই পদার্থের বিভিন্ন অবস্থা মাত্র। সুতরাং পানি হতে বরফ বা জলীয় বাষ্প তৈরি হওয়া বা তার বিপরীত ঘটনা ভৌত পরিবর্তন।
২। চিনির দানাকে গুঁড়া করলে বড় দানা হতে ক্ষুদ্র দানার সৃষ্টি হয়। কিন্তু চিনি হতে অন্য পদার্থ উৎপন্ন হয় না। মুখে দিলে দেখা যায়, টুকরা ছোট কী বড় উভয় প্রকার টুকরাই সমান মিষ্টি। সুতরাং বড় দানাকে গুঁড়া করে ছোট দানা তৈরি করা একটি ভৌত পরিবর্তন।
৩। একটি লোহার টুকরাকে চুম্বক দ্বারা ঘর্ষণ করলে তা চুম্বকত্ব প্রাপ্ত হয়। কিন্তু এ সময় লোহা হতে অন্য কোনো পদার্থের সৃষ্টি হয় না। সুতরাং এ পরিবর্তনও একটি ভৌত পরিবর্তন। চুম্বকত্ব প্রাপ্ত লোহার টুকরাকে উত্তপ্ত করলে তা চুম্বকত্ব হারিয়ে সাধারণ লোহায় রূপান্তরিত হয়।
(খ) রাসায়নিক পরিবর্তনঃ যে পরিবর্তনের ফলে এক বা একাধিক বস্তু প্রত্যেকে তার নিজস্ব সত্তা হারিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধর্ম বিশিষ্ট এক বা একাধিক বস্তুতে পরিণত হয়, তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলা হয়। অন্য কথায়, যে পরিবর্তনে বস্তুর রাসায়নিক গঠনের পরিবর্তন হয়, তাকে রাসায়নিক পরিবর্তন বলা হয়।
উদাহারণ: ১। এক টুকরো লোহাকে বহুদিন আর্দ্র বাতাসে রেখে দিলে তার উপর বাতাসের অক্সিজেন ও জলীয় বাষ্পের বিক্রিয়ায় পানিযুক্ত ফেরিক অক্সাইড উৎপন্ন হয়, যা মরিচা নামে পরিচিত। মরিচার ধর্ম লোহা, অক্সিজেন ও পানি হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন। অর্থাৎ এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন যৌগ উৎপন্ন হয়েছে। সুতরাং লোহার উপর মরিচা পড়া একটি রাসায়নিক পরিবর্তন।
২। একটি মোমবাতি জ্বলার সময় উত্তাপে মোমের কিছু অংশ গলে যায়। এটি ভৌত পরিবর্তন। কিন্তু অধিকাংশ মোম বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও জলীয় বাষ্প তৈরি করে। শেষোক্ত দুইটি বস্তু মোম ও অক্সিজেন হতে সম্পূর্ণ পৃথক। সুতরাং মোমবাতির দহন একটি রাসায়নিক পরিবর্তন। প্রকৃতপক্ষে সকল দহন রাসায়নিক পরিবর্তন। উল্লেখ্য যে, বাতাসের অক্সিজেনের সাথে কোনো কিছুর বিক্রিয়াকে দহন বলে।
(গ) ভৌত ও রাসায়নিক পরিবর্তনের পার্থক্যঃ ভৌত পরিবর্তন: ১। কোনো নতুন ধরনের বস্তু সৃষ্টি হয় না। ২। বস্তুর ভৌত ধর্মের পরিবর্তন হয়। ৩। বস্তুর অণুর গঠনের পরিবর্তন হয় না। ৪। বস্তুর রাসায়নিক সংযুতির পরিবর্তন হয় না। ৫। এ পরিবর্তন অস্থায়ী। সাধারণ পরিবর্তনের কারণ (যেমন, তাপ ও চাপ) সরিয়ে নিলে বস্তু পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। ৬। তাপশক্তির শোষণ বা উদগিরণ ঘটতে পারে, নাও ঘটতে পারে।
রাসায়নিক পরিবর্তন: ১। সম্পূর্ণ নতুন ধরনের এক বা একাধিক বস্তু সৃষ্টি হয়। ২। বস্তুর ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের পরিবর্তন হয়। ৩। বস্তুর অণুর গঠনের পরিবর্তন হয়ে সম্পূর্ণ নতুন অণুর সৃষ্টি হয়। ৪। রাসায়নিক সংযুতির পরিবর্তন হয়। ৫। এ পরিবর্তন স্থায়ী। বস্তুকে পূর্বের অবস্থায় সহজে ফিরিয়ে আনা যায় না। ৬। তাপশক্তির শোষণ বা উদগিরণ অবশ্যই ঘটবে।
পদার্থের গঠন
ডাল্টনের পরমাণুবাদঃ সকল পদার্থ ক্ষুদ্রতম কণা দ্বার গঠিত, এ মতবাদ বহু পুরাতন। গ্রিক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস খ্রিষ্টপূর্ব ৫ম শতাব্দিতে এ অভিমত প্রকাশ করেন যে, সকল পার্থিব পদার্থ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অবিভাজ্য কণা দ্বারা গঠিত। ডেমোক্রিটাস এ অভিভাজ্য ক্ষুদ্রতম কণার নাম দেন atomos।
এ শব্দটি গ্রিক শব্দ হতে উদ্ভুত: a (অর্থাৎ না) tomos শব্দের অর্থ যা আর ভাগ করা যায় না। কিন্তু বিখ্যাত দার্শনিক অ্যারিস্টটল এর প্রভাবে মতবাদ চাপা পড়ে যায়। অ্যারিস্টটলের মতে পদার্থ নিরবচ্ছিন্ন, তাকে যত ইচ্ছা ক্ষুদ্রতম অংশে ভাগ করা যায়। দীর্ঘদিন পরে ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দিতে পরমাণু মতবাদ আবার বৈজ্ঞানিক ও দার্শনিকগণের সমর্থন লাভ করে।
অবশেষে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন ডাল্টন ১৮০৩ সালে এ মতবাদকে বৈজ্ঞানিক মতবাদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। আধুনিক রসায়নের ভিত্তি হচ্ছে এ পরমাণুবাদ; এ কারণে জন ডাল্টনকে আধুনিক রসায়নের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অভিহিত করা হয়। তিনি ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক।
ডাল্টনের পরমাণুবাদের স্বীকার্যসমূহ
১। প্রত্যেক পদার্থ পরমাণু নামক অসংখ্য অতি ক্ষুদ্র কণা দ্বারা গঠিত। ডাল্টন যৌগের ক্ষুদ্রতম কণিকার নাম দেন যৌগ পরমাণু এবং মৌলের ক্ষুদ্রতম কণিকার নাম দেন সরল পরমাণু।
২। একই পদার্থের সকল পরমাণুর ধর্ম ও ভর অভিন্ন।
৩। ভিন্ন ভিন্ন পরমাণুর ধর্ম ও ভর বিভিন্ন।
৪। পরমাণুসহ অবিভাজ্য, তাদের সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই।
৫। দুই বা ততোধিক পদার্থের সংযোগে নতুন পদার্থের সৃষ্টি হয়। এ সংযোগ পূর্ণ সংখ্যার নির্দিষ্ট সরল অনুপাতে হয়।
৬। পরমাণুসহ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহন করে।
৭। রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে কোনো পরমাণু ধ্বংস বা কোনো নতুন পরমাণু সৃষ্টি হয় না; শুধু তাদের মধ্যকার সংযোগ প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটে।
ডাল্টনের পরমাণুবাদের ক্রটি বা সীমাবদ্ধতাসমূহ
১। ডাল্টনের মতবাদে মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণাসমূহের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখানো হয়নি। শুধু মৌলিক পদার্থের ক্ষেত্রে সরল পরমাণু এবং যৌগিক পদার্থের ক্ষেত্রে যৌগিক পরমাণুর কথা বলা হয়েছে।
২। ডাল্টনের মতে পরমাণু ক্ষুদ্রতম কণিকা এবং অবিভাজ্য। কিন্তু আধুনিক গবেষণায় জানা যায় যে, পরমাণুও বিভাজ্য এবং সকল পরমাণু মূলত ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন দ্বারা গঠিত।
৩। ডাল্টনের মতে একই মৌলের পরমাণুসমূহ ভর ও ধর্মে অভিন্ন। কিন্তু বর্তমানে জানা গেছে যে একটি মৌলের বিভিন্ন ভরের পরমাণু রয়েছে। তাদেরকে আইসোটোপ বলা হয়।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে পদার্থ কি? কত প্রকার ও কি কি? এই টপিক সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। প্রিয় পাঠক, এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url