যোজনী কাকে বলে? জেনে নিন

দুই বা ততোধিক ভিন্ন মৌলের পরমাণু পরস্পরের সাথে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়ে যৌগের অণু সৃষ্টি করে। এ সংযোগ কিছু নির্দিষ্ট নিয়মের ভিত্তিতে হয়। যেমন - ১। ক্লোরিনের একটি পরমাণু হাইড্রোজেনের একটি পরমাণুর সাথে সংযুক্ত হয়ে এক অণু হাইড্রোজেন ক্লোরাইড সৃষ্টি করে। ২। অক্সিজেনের একটি পরমাণু হাইড্রোজেনের দুইটি পরমাণুর সাথে সংযুক্ত হয়ে এক অণু পানি সৃষ্টি করে।
যোজনী কাকে বলে? জেনে নিন
নাইট্রোজনের একটি পরমাণু হাইড্রোজেনের তিনটি পরমাণুর সাথে সংযুক্ত হয়ে এক অণু অ্যামোনিয়া সৃষ্টি করে। কার্বনের একটি পরমাণু হাইড্রোজেনের চারটি পরমাণুর সাথে সংযুক্ত হয়ে এক অণু মিথেন সৃষ্টি হয়। এ সকল উদাহারণ হতে এটা স্পষ্ট যে, বিভিন্ন মৌলের একটি পরমাণু হাইড্রোজেনের বিভিন্ন সংখ্যক পরমাণুর সাথে সংযুক্ত হয়। অর্থাৎ বিভিন্ন মৌলের পরমাণুর হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে সংযুক্ত হওয়ার ক্ষমতা এক নয়, বিভিন্ন

যোজনী কাকে বলে?

কোনো মৌলের একটি পরমাণু হাইড্রোজেন অথবা তার সমতুল্য অন্য মৌলের যত সংখ্যক পরমাণুর সাথে সংযুক্ত হয় অথবা কোনো যৌগ হতে হাইড্রোজেনের যত সংখ্যক পরমাণু প্রতিস্থাপিত করতে পারে সেই সংখ্যাকে মৌলের যোজনী বলে। যে সকল মৌলের যোজনী এক, সে সকল মৌলকে একযোজী মৌল বলা হয়। যেমন: হাইড্রোজেন, ক্লোরিন, ফ্লোরিন, সোডিয়াম প্রভৃতি। যে সকল মৌলের যোজনী দুই, তাদেরকে দ্বিযোজী মৌল বলা হয়। যেমন: অক্সিজেন, সালফার, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম। একইভাবে ত্রিযোজী, চতুর্যোজী মৌলসমূহ সংজ্ঞায়িত করা হয়।

পরিবর্তনশীল যোজনী কাকে বলে

কোনো কোনো মৌলের যোজনী অবস্থাভেদে বিভিন্ন হয়। যে মৌলের একাধিক যোজনী আছে, তার যোজনীকে পরিবর্তনশীল যোজনী বলা হয়। যেমন: (১) আয়রনের দুই ধরনের যৌগ আছে। এক ধরনের যৌগে আয়রনের যোজনী 2, এ যৌগসমূহকে ফেরাস যৌগ বলা হয়। অন্য ধরনের যৌগে আয়রনের যোজনী 3, এ যৌগসমূহকে ফেরিক যৌগ বলা হয়।

সক্রিয় যোজনী ও সুপ্ত যোজনী

কোনো যৌগে মৌলের কার্যকরী যোজনীকে সক্রিয় যোজনী বলা হয়। যেমন: CO2- এ কার্বনের সক্রিয় যোজনী 4। কোনো মৌলের সর্বোচ্চ যোজনী ও কোনো যৌগে মৌলটির সক্রিয় যোজনীর মধ্যে পার্থক্যকে সেই যৌগে সেই মৌলের সুপ্ত যোজনী বলা হয়। যেমন: কার্বনের সর্বোচ্চ যোজনী 4; কার্বন মনোক্সাইড (CO) কার্বনের সক্রিয় যোজনী 2। সর্বোচ্চ যোজনী এবং সক্রিয় যোজনীর পার্থক্য 4 - 2 = 2। 2 কে এ যৌগে কার্বনের সুপ্ত যোজনী বলা হয়। ফসফরাসের সর্বোচ্চ যোজনী 5; ফসফরাস ট্রাইক্লোরাইডে (PCI3) ফসফরাসের যোজনী 3। সর্বোচ্চ যোজনী ও সক্রিয় যোজনীর পার্থক্য 5 - 3 = 2; 2 তে PCI3 যৌগে ফসফরাসের সুপ্ত যোজনী বলা হয়।

বিভিন্ন মৌলের যোজনী

একযোজীঃ হাইড্রোজেন, ফ্লোরিন, ক্লোরিন, ব্রোমিন, আয়োডিন, সোডিয়াম, পটাসিয়াম, কপার (আস), ও সিলভার। দ্বিযোজী মৌলের যোজনী, অক্সিজেন, সালফার, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক, কপার (ইক), আয়রন (আস), টিন (আস), লেড (আস) ও বেরিয়াম। ত্রিযোজী মৌলের যোজনী, বোরন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, অ্যালুমিনিয়াম, ক্রোমিয়াম ও আয়রন (ইক)। চতুর্যোজী মৌলের যোজনী, কার্বন, সিলিকন, সালফার, টিন (ইক), ও লেড (ইক)। পঞ্চযোজী মৌলের যোজনী, নাইট্রোজেন ও ফসফরাস। এবং ষড়যোজী মৌলের যোজনী সালফার।

বিভিন্ন যৌগমূলকসমূহের যোজনী

একযোজী যৌগমূলকসমূহের যোজনী, অ্যামোনিয়াম, নাইট্রেট, হাইড্রোক্সাইড, নাইট্রাইড, হাইড্রোজেন সালফেট ও সায়ানাইড। দ্বিযোজী যৌগমূলকসমূহের যোজনী, সালফাইট, সালফেট, থায়োসালফেট, ক্রোমেট, ডাইক্রোমেট ও সিলিকেট। ত্রি যোজী যৌগমূলকসমূহের যোজনী হলো ফসফেট।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে যোজনী কাকে বলে এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url