বায়ু দূষণের ১০টি কারণ ও বায়ু দূষণ প্রতিরোধের উপায়

রাসায়নিক, ভৌত ও জৈবিক কারণে পরিবেশের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যের যে কোনো পরিবর্তনই হলো দূষণ। দূষণকারী উপাদানকে বলা হয় দূষক (Pollutant)। দূষণকে প্রধানত বায়ু, পানি ও শব্দ দূষণ এ তিন ভাগে বর্ণনা করা যেতে পারে। বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন ভূপৃষ্ঠস্থ বায়ুস্তর শতকরা ২১ ভাগ অক্সিজেন ও ৭৮ ভাগ নাইট্রোজেন, ০.০৩ ভাগ
বায়ু দূষণের ১০টি কারণ ও বায়ু দূষণ প্রতিরোধের উপায়
কার্বন ডাইঅক্সাইড, একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে ওজোন, হাইড্রোজেন ইত্যাদি দ্বারা গঠিত। যদি কোনো কারণে এ বায়ুতে অক্সিজেন ছাড়া অন্যান্য গ্যাসের ঘনত্বের পরিবর্তন অথবা ধুলিকণার পরিমাণ বৃদ্ধি পায় তখনই বায়ু দূষিত হয়। মূলত বায়ুতে এক বা একাধিক দূষকের উপস্থিতি ও স্থায়িত্ব সেখানকার জীব, উদ্ভিদ ও অন্যান্য সম্পদের জন্য ক্ষতিকর হলে তাকে বায়ু দূষণ বলে

বায়ু দূষণের ১০টি কারণ

বায়ুতে দূষক পদার্থের উপস্থিতি বায়ু দূষণের কারণ। যেসব দূষক পদার্থের উপস্থিতি বায়ু দূষণ ঘটায় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১০টি হলোঃ

১। কার্বন ডাইঅক্সাইডঃ এটি একটি গ্রিন হাউস গ্যাস। বাতাসে এর পরিমাণ ০.০৩ ভাগ। সকল জীব শ্বসন ক্রিয়াকালে কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে এবং সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের সময় এ গ্যাস গ্রহণ করে। ফলে বায়ুমণ্ডলে এ গ্যাসের ভারসাম্য বজায় থাকে। বনভূমি ধ্বংস ও নির্বিচারে গাছপালা কাটার ফলে জীবকূলের ত্যাগ করা সবটুকু কার্বন ডাইঅক্সাইড সবুজ উদ্ভিদ গ্রহণ করতে পারে না। কলকারখানার চিমনি ও যানবাহন হতেও কার্বনডাইঅক্সাইড বাতাসে যোগ হয়। তাই বাতাসে এর পরিমাণ প্রতিনিয়ত বেড়ে যাচ্ছে।

২। ধোঁয়াঃ এটি এক ধরনের এরোসল। দহনকৃত বস্তু নির্গত ও বাতাসে ভাসমান কলয়ডাল কণা এবং বাষ্পীভূত গ্যাস নিয়ে গঠিত হয় ধোঁয়া। ধোঁয়ার প্রকোপ মূলত শহর ও শিল্প এলাকাতেই বেশি দেখা যায়।

৩। ধোঁয়াশাঃ মোটরযান নির্গত নাইট্রোজেন অক্সাইডসমূহ ও বিভিন্ন হাইড্রোকার্বন সূর্যালোকের উপস্থিতিতে বিক্রিয়া করে ওজোন ও পরঅক্সি অ্যাসিটাইল নাইট্রেট নামের জৈব যৌগ উৎপন্ন করে। আর্দ্র পরিবেশে এগুলো বায়ুমণ্ডলে ভাসমান থেকে ঝাপসা অবস্থার সৃষ্টি করলে তাকে ধোঁয়াশা বা স্মগ বলে।

৪। এগজস্ট গ্যাসঃ এগুলো তেল জাতীয় জ্বালানিসমূহের দহন ক্রিয়ার ফল এবং সাধারণত অদৃশ্যমান। এ জাতীয় গ্যাস ধোঁয়ার সাথে কারখানা চিমনি ও অটোরিকশা, বাস, ট্রাক হতে নির্গত হয়। এ গ্যাসে হাইড্রোজেন সালফাইড, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড ও নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ ইত্যাদি থাকে। দিন দিন শহরাঞ্চলে বায়ুতে এ গ্যাসের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৫। সালফার ডাইঅক্সাইডঃ সাধারণত শিল্পকারখানার ধোঁয়া হতে এই গ্যাস বায়ুতে মিশে। বিভিন্ন জ্বালানি দহনের ফলেই সৃষ্টি হয়। বায়ুর সাথে মিশে এই গ্যাস সালফিউরিক এসিড সৃষ্টি করে এবং এসিড বৃষ্টির মাধ্যমে জীবকুলের ক্ষতি করে।
৬। ক্লোরোফ্লুরো কার্বনঃ CFC হচ্ছে ক্লোরিন, ফ্লোরিন ও কার্বনের একটি উদ্বায়ী যৌগ। এটি একটি গ্যাস। এটি রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, প্লাস্টিক ও রং তৈরির কারখানা হতে নির্গত হয়। CFC বায়ুমন্ডলের ওজোন স্তরকে ক্রমশ ধ্বংস করেছে। এক অণু CFC গ্যাস অবস্থাভেদে ২০০০ ওজোন অণুকে ধ্বংস করতে পারে। ইতোমধ্যেই ওজোনস্তর অনেক জায়গায় পাতলা হয়ে পড়েছে এবং কোথাও কোথাও ছিদ্র হয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। ওজোনস্তর ছিদ্র হলে সূর্যের অতিবেগুনি ও কসমিক রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে এসে ফাইটোপ্লাঙ্কটন ও পরে অন্যান্য গাছপালাকে ধ্বংস করে দিবে। সেই সাথে প্রানিকূলেরও প্রচুর ক্ষতি হবে। ক্যানসার ও অন্যান্য রোগের প্রকোপও বেড়ে যাবে।

৭। পরাগরেণুঃ অনেক পরাগরেণু বায়ু দূষণের জন্য দায়ী। উদ্ভিদের পরাগরেণু বায়ুতে ভেসে বেড়াতে পারে। এসব পরাগরেণু জ্বর, সর্দি, কাশি এমনকি আরও মারাত্মক রোগের সৃষ্টি করতে পারে।

৮। ফসলের অবশিষ্ট অংশ পোড়ানোঃ অনেক কৃষক ফসল কাটার পর মাঠে অবশিষ্ট অংশ জ্বালিয়ে দেন। এতে তাত্ক্ষণিকভাবে প্রচুর ধোঁয়া উৎপন্ন হয়। এই ধোঁয়া বাতাসকে অস্বাভাবিকভাবে দূষিত করে। অনেক সময় দূরদূরান্তের শহরও এই ধোঁয়ার কবলে পড়ে।

৯। কৃষিতে কীটনাশক এবং সার ব্যবহারঃ কৃষি আমাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলেও দূষণের ক্ষেত্রে এটিও একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। চাষাবাদের সময় যে পরিমাণ কীটনাশক, রাসায়নিক সার, হার্বিসাইড ব্যবহার হয়, তার অনেকাংশই বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে মিশে যায়। বিশেষ করে স্প্রে করার সময় বাতাসে ভেসে চলে যায় বিষাক্ত রাসায়নিক, যা আশেপাশের মানুষের শ্বাসের সাথে ফুসফুসে জমে।

অনেক কৃষক অনিয়ন্ত্রিতভাবে কীটনাশক ব্যবহার করেন, যা শুধু ফসল নয়, মাটি আর বাতাসেরও ক্ষতি করে। অর্গানিক চাষাবাদ এবং প্রাকৃতিক সার ব্যবহারের মাধ্যমে এই দূষণ অনেকটা কমানো সম্ভব। কিন্তু সচেতনতার অভাব আর দ্রুত ফলন পেতে রাসায়নিকের উপর নির্ভরশীলতা বায়ু দূষণকে দিন দিন বাড়িয়ে দিচ্ছে।

১০। ইটভাটাঃ ইটভাটায় যে কয়লা ও কাঠ পোড়ানো হয় তা প্রচুর ধোঁয়ার সৃষ্টি করে, যা বায়ুর সাথে মিশে বায়ু দূষণ ঘটায়। বাংলাদেশের অধিকাংশ স্থানে ইটভাটাগুলোতে জ্বালানি হিসেবে বিপুল পরিমাণে কাঠ এবং নিম্নমানের কয়লা ব্যবহৃত হয়। এর ফলে প্রচুর পরিমাণে কার্বনডাইঅক্সাইড সমৃদ্ধ কালো ধোয়া উৎপন্ন হয় এবং বায়ু দূষণ ঘটে থাকে। নতুন চিমনিগুলোতে যেসব জ্বালানি ব্যবহৃত হয় তা থেকেই শুধু যে বায়ু দূষণ ঘটে তা নয়, 

পুরোনো চিমনি ও ইটভাটায় নিষ্ফল তাপীয় অবস্থার জন্যও বায়ু দূষণ ঘটে। সালফার অক্সাইড, কার্বন উপাদান, বিভিন্ন জৈব উপাদান বায়ুর গুনকে ধ্বংস করে। বর্তমানে বড় বড় শহরগুলোর চারপাশে পুঞ্জীভূতভাবে ইটভাটা গড়ে উঠছে, যা শহরগুলোর বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ।যেমন: সাভারের আমিনবাজারে ইটভাটার কারণে সাভার এলাকাসহ রাজধানী ঢাকা বায়ু দূষণের শিকার হচ্ছে।

১১। নগরায়ণঃ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় একটি অন্যতম হচ্ছে নগরায়ন। নগর বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের নগরাঞ্চলে জনসংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের বৃহৎ নগর কেন্দ্র যেমন: ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ইত্যাদি শহরগুলোতে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। এর সাথে মোটরযানের সংখ্যাও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ধোঁয়া, অধিক ধুলাবালি বায়ুকে দূষিত করছে। বিমানবন্দরে বিমান উঠানামা, রেলওয়ে ইঞ্জিন, পাওয়ার প্লান্ট, খোলা স্থানে আর্বজনা পোড়ানো, ধুলাবালি ইত্যাদি কারণে এসব নগরে বায়ু দূষিত হচ্ছেভ

১২। শিল্পাঞ্চলের দূষণঃ শিল্পকারখানা অধিক গড়ে ওঠার কারণে বায়ু দূষিত হয়। কারণ শিল্প কারখানাগুলো জ্বালানি ও কাঁচামাল হিসাবে যে জীবাশ্ম (কয়লা, গ্যাস) ব্যবহার করে তা বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। এ কারখানাগুলো সাধারণত বড় বড় শহরে (যেমন: ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী অঞ্চলে) গড়ে উঠেছে। তাই এসব শহরে বায়ু দূষণের মাত্রাও বেশি। বাংলাদেশের ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানা ৪ বছরের মধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে ১১%। টেক্সটাইল এবং ডায়িং, ট্যানারি ও কাগজ শিল্প, সিমেন্ট, মেটাল সার এবং রাসায়নিক কারখানা বিশেষ করে সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড ও অ্যামোনিয়া ইত্যাদি বায়ু দূষণের জন্য দায়ী।
১৩। বহুতল ভবন নির্মাণঃ বহুতলভবন নির্মাণের সময় শহর এলাকায় যে পরিমাণ ধুলা বাতাসে ওড়ে তাতে শ্বাসপ্রশ্বাস কষ্ট হয়। উপরন্তু নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির কালো ধোঁয়া বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমনের অন্যতম উৎস। বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে নির্মিত ইটের বাড়িঘরও এরূপ বায়ু দূষণ ঘটাচ্ছে।

১৪। খোলা অবস্থানে আবর্জনা নিক্ষেপঃ শহর এলাকায় যত্রতত্র আবর্জনা নিক্ষেপ করার ফলে দুর্গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। এছাড়া এসব আবর্জনা পচে মিথেন গ্যাসের সৃষ্টি হয় যা বায়ু দূষণ ঘটায়। বিশেষ করে বদ্ধ জলাশয় বায়ু দূষণের অন্যতম উৎস।

১৫। তেজস্ক্রিয় বস্তুঃ তেজস্ক্রিয় বস্তু বাতাসে ভেসে বেড়ালে তা মারাত্মক দূষণ ঘটায় এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়। পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্র ( যেমন পারমাণবিক বিদ্যুৎ) এরূপ বায়ুদূষণের উৎস।

জীবজগৎ ও বায়ু দূষণ

প্রতিটি জীব তথা মানুষের জীবন ধারণ ও বেঁচে থাকার জন্য বায়ু সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান। কিন্তু মানুষের কার্যকলাপ ও প্রাকৃতিক কিছু কারণে প্রতিনিয়ত বায়ু দূষণ সংঘটিত হচ্ছে, যার ফলে আমাদের জীবন আজ হুমকির মুখে। বায়ু দূষণের ফলে মানব স্বাস্থ্য বিভিন্ন ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

মানব স্বাস্থ্যের ওপর বায়ু দূষণের প্রভাব

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্বাস্থ্য শুধু অসুখের অনুপস্থিতিই নয় বরং সম্পূর্ণ দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতাও। বায়ু শুধু আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসই নয় বরং এর মাধ্যমে জীবনও বিপন্ন করতে পারে। মূলত বায়ুর উপাদানগুলো যখন নিজেদের মধ্যে সমতা আনতে ব্যর্থ হয় তখনই বায়ু দূষণ ঘটে। দূষকের প্রকৃতি মানব স্বাস্থ্য তথা সমগ্র জীবকুলের ক্ষতির প্রধান নিয়ামক। বায়ু দূষণের ফলে মানব স্বাস্থ্যের ওপর স্বল্প ও দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে।

স্বল্পস্থায়ী প্রভাবঃ বায়ু দূষণের ফলে মানুষ চলার পথে হঠাৎ মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, চোখ জ্বালাপোড়া ইত্যাদি অবস্থার সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে নগর অঞ্চলে যেখানে যানবাহনের আধিক্য রয়েছে সেখানে এ অবস্থা বেশি দেখা যায়।

দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবঃ মানব স্বাস্থ্যের উপর বায়ু দূষণের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। এর প্রভাবে নানা ধরনের রোগ ব্যাধি হয়ে থাকে। যেমন:

  • যানবাহন হতে নির্গত নানা ধরনের গ্যাসীয় পদার্থের মধ্যে কার্বন ডাইঅক্সাইড উল্লেখযোগ্য। এ গ্যাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে রক্তের অক্সিজেন গ্রহন ক্ষমতা হ্রাস পায়।
  • তেল ও কয়লা দহনের ফলে সালফার ডাইঅক্সাইড উৎপন্ন হয়। এতে শ্বাসকষ্ট, মাথাধরা, বমি বমি ভাব হয়ে থাকে।
  • রাসায়নিক ও পেট্রোকেমিক্যাল কারখানায় উৎপন্ন হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস চোখ ও গলার বিশেষ ক্ষতি করে।
  • তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে নির্গত সূক্ষ্ম ধুলিকণা ক্যান্সার রোগ সৃ্ষ্টি করে।
  • বিস্ফোরক দ্রব্য, রঙ, সার প্রভৃতি উৎপাদনের সময় যে অ্যামোনিয়া নির্গত হয় তা মানুষের শ্বাসনালীর ক্ষতি করে।

উদ্ভিদের উপর প্রভাব

বায়ু দূষণ দীর্ঘসময় ধরে উদ্ভিদের ক্ষতি করে থাকে। বেশ কিছু বায়ু দূষক উদ্ভিদের ক্ষতি করে। এগুলোর মধ্যে কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, এবং অ্যামোনিয়া দূষণের জন্য দায়ী। কার্বন মনোক্সাইড উদ্ভিদের নাইট্রোজেন সংবন্ধন প্রক্রিয়া বিঘ্ন ঘটায়। সালফার ডাইঅক্সাইড সালোকসংশ্লেষণে বাঁধা প্রদান করে। নাইট্রোজেন অক্সাইড ফসল উৎপাদন হ্রাস করে থাকে। তাপমাত্রা, শিকড়ের আর্দ্রতা ও আলোর ওপর নির্ভর করে দূষক উদ্ভিদকে ক্ষতি করে।

বাস্তুসংস্থানের ওপর প্রভাব

বায়ু দূষন বাস্তুসংস্থানের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। যেমন: এসিড বৃষ্টির ফলে যেকোনো বাস্তুতন্ত্র হুমকির মুখে পড়তে পারে। বায়ু দূষণ শুধু স্থলজ বাস্তুসংস্থানকেই প্রভাবিত করে না জলজ বাস্তুসংস্থান এমনকি পানি প্রবাহের ওপরও প্রভাব ফেলে।

পশুপাখির ওপর প্রভাব

বায়ু দূষণ মানব স্বাস্থ্যের মতোই পশুপাখিরও ক্ষতি করে। পশুপাখি দুটি প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। প্রথমত, বায়ুর পুঞ্জীভূত দূষিত পদার্থ উদ্ভিদ ও গৃহপালিত পশুপাখির খাদ্যকে দূষিত করে। দ্বিতীয়ত, যখন তারা এই দূষিত উদ্ভিদ ও খাদ্য গ্রহণ করে তখন বিভিন্ন জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে।

বায়ু দূষণ প্রতিরোধের উপায়

বায়ু দূষণ জীবজন্তু ও মানুষের মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। তাই বিভিন্ন সময়ে বায়ু দূষণ প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। বায়ু দূষণ প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকার পরিবেশ আইন, ১৯৯৫; পরিবেশ সংরক্ষণ নীতি; ১৯৭১ এবং পরিবেশ পরিষদ আইন, ২০০০ ইত্যাদি আইন করেছে। বায়ু দূষণ প্রতিরোধে করনীসমূহ

১। যানবাহনে জ্বালানি পরিবর্তন/রূপান্তরঃ বাংলাদেশ প্রেট্রোলিয়াম ১৯৮৫-৮৬ সালে প্রথম যানবাহনে গ্যাসোলিনের পরিবর্তে কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) ব্যবহার করে। ব্যবহারের পর দেখা গেছে গ্যাসোলিনের চেয়ে সিএনজিতে বায়ু দূষণের পরিমাণ অনেক কম। বায়ু দূষণ রোধে ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে বিভিন্ন যানবাহন সিএনজিতে রূপান্তর করা হয়েছে।

২। বায়ুর গুণগত মান পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নঃ বায়ু দূষণ প্রতিরোধে সরকার বায়ুর গুনগত মান মনিটরিং ও মূল্যায়ন করতে পারে। পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নে সরকার কার্যকারী কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে, যা বায়ু দূষণ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে।
৩। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাঃ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সরকারিভাবে বায়ু দূষণ প্রতিরোধ করা যায়। ট্রাফিক জ্যাম প্রতিরোধ ও নির্দিষ্ট রাস্তায় যানবাহন চলাচল করলে যানবাহন নির্গত জ্বালানি দূষণ কমানো সম্ভব, যা বায়ু দূষণ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত তা হচ্ছে ট্রাফিক সিগন্যাল, একমুখী সড়ক তৈরি, পার্কিং সুবিধার উন্নতি, বিভিন্ন গতির গাড়ির জন্য ভিন্ন ভিন্ন সড়ক বা লেন তৈরি ও ব্যবহার। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বায়ু দূষণ প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি যানবাহন মালিকদেরও সচেতন হতে হবে।

৪। নির্দিষ্ট স্থানে শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলাঃ যত্রতত্র শিল্পকারখানা গড়ে তুললে বায়ু দূষণ বৃদ্ধি পায়। যেখানে শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে সেখানে আবাসিক ভবন থাকবে না। তাহলে বায়ু দূষণ অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

৫। বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারঃ জ্বালানি হিসেবে কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে সৌরশক্তি, বায়ু ও তাপশক্তি, জৈব জ্বালানি প্রভৃতির ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা অনেকাংশে সম্ভব।

৬। কলকারখানার চিমনি উঁচু করে তৈরি করা এবং কারখানার চারদিকে প্রচুর বৃক্ষরোপণ করা।

৭। আবাদী জমিতে সীমিত পরিমাণে কীটনাশক ব্যবহার করা।

৮। রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র প্রভৃতি মাধ্যমে জনগণকে বায়ু দূষণের কুফল সম্পর্কে সচেতন করা।

৯। পারমাণবিক বিস্ফোরণ ও এসবের পরীক্ষা-নিরিক্ষা নিয়ন্ত্রণ করা।

১০। সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগনের সচেতন হওয়া।

বায়ুমন্ডলে অক্সিজেন গ্যাসের গুরুত্ব

বায়ুমন্ডলে গ্যাসগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা গ্যাস হলো অক্সিজেন। অক্সিজেন জীবের শ্বাস গ্রহণে ও প্রাণিদেহের উত্তাপ বৃদ্ধির কাজে লাগে। অক্সিজেন ছাড়া বায়ুমন্ডলীয় ক্রিয়াকলাপ সম্ভব নয়। অক্সিজেনের উপস্থিতি পৃথিবীতে প্রাণের সঞ্চারে সহায়তা করে।

বাতাসে কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে কেন?

সকল জীব শ্বসন ক্রিয়াকালে কার্বনডাইঅক্সাইড গ্যাস বাতাসে ত্যাগ করে এবং সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় কার্বনডাইঅক্সাইড গ্যাস গ্রহণ করে। বনভূমি ধ্বংস ও গাছপালা নির্বিচারে কাটার ফলে জীবকুলের ত্যাগ করা সবটুকু কার্বডাইঅক্সাইড গ্যাস সবুজ উদ্ভিদ গ্রহণ করতে পারে না। এ জন্য বাতাসে কার্বনডাইঅক্সাইড গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে বায়ু দূষণের ১০টি কারণ ও বায়ু দুষণ প্রতিরোধের উপায় সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই আর্টিকেলটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট প্রকাশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url