জলবায়ু কাকে বলে? বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে জলবায়ু কাকে বলে এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে জলবায়ু কাকে বলে তা বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।বাংলাদেশের জলবায় সাধারণত সমভাবাপন্ন। দেশের মাঝামাঝি স্থান দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা অতিক্রম করায় এখানে ক্লান্তি জলবায়ু বিরাজ করে। কিন্তু মৌসুমী বায়ুর প্রভাব এ দেশের জলবায়ুর উপর এত বেশি যে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের জলবায়ু ক্লান্তি ও মৌসুমি জলবায়ু নামে পরিচিত। মৌসুমী জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য হলো বছরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঋতুর আবির্ভাব।
আরো পড়ুন: বৈশ্বিক উষ্ণায়ন কাকে বলে
এ বিভিন্ন ঋতুতে জলবায়ুর কিছুটা তারতম্য হয়। কিন্তু কোন সময়ই শীত প্রধান ও গ্রীষ্মপ্রধান দেশের মতো চরমভাবাপন্ন হয় না। উষ্ণ ও আর্দ্র গ্রীষ্মকাল এবং শুষ্ক শীতকাল বাংলাদেশের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। বাংলাদেশের জলবায়ুকে মৌসুমী বায়ু প্রবাহ, বৃষ্টিপাত ও বার্ষিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভাগ করা হয়েছে। যথা গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল ও শীতকাল।
জলবায়ু কাকে বলে?
কোনো নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত ৩০-৩৫ বছরের আবহাওয়ার গড় তাপমাত্রাকে জলবায়ু বলে। জলবায়ু হলো একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলের দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার গড় অবস্থা, যা সাধারণত ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এটি মূলত তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত, বায়ুর গতি ও দিক, বায়ুচাপ এবং অন্যান্য আবহাওয়াগত উপাদানের উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়।
জলবায়ু বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক কারণের ওপর নির্ভরশীল, যেমন সূর্যের অবস্থান, পৃথিবীর অক্ষীয় ঢাল, সমুদ্রপ্রবাহ, পর্বতশ্রেণী, বনভূমি, এবং মানবসৃষ্ট কার্যকলাপ। এই উপাদানগুলোর পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের জলবায়ুকে নির্ধারণ করে।
বিশ্বকে সাধারণত কয়েকটি প্রধান জলবায়ু অঞ্চলে ভাগ করা হয়, যেমন উষ্ণমণ্ডলীয় (Tropical), শীতলমণ্ডলীয় (Polar), মরুভূমি (Arid), নাতিশীতোষ্ণ (Temperate) ও মহাদেশীয় (Continental) জলবায়ু। প্রতিটি অঞ্চলের জলবায়ু তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বহন করে, যা স্থানীয় জীববৈচিত্র্য, কৃষি, মানব বসতি ও অর্থনীতির উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক ইস্যু হয়ে উঠেছে, যা প্রধানত গ্রিনহাউস গ্যাসের বৃদ্ধি, বন উজাড়, এবং শিল্প বিপ্লব পরবর্তী মানবসৃষ্ট দূষণের কারণে হচ্ছে। এর ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বরফ গলার হার ত্বরান্বিত করছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়াচ্ছে এবং চরম আবহাওয়াগত ঘটনাগুলোর সংখ্যা বাড়িয়ে তুলছে। পোস্ট সূচিপত্র
আবহাওয়া কাকে বলে
কোনো নির্দিষ্ট স্থানের নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুর উষ্ণতা, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি উপাদানের দৈনন্দিন অবস্থাকে আবহাওয়া বলে। আবহাওয়া হলো কোনো নির্দিষ্ট স্থানের স্বল্পকালীন পরিবেশগত অবস্থা, যা মূলত তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুচাপ, বাতাসের গতি ও দিক, মেঘের পরিমাণ এবং বৃষ্টিপাতের মতো উপাদান দ্বারা নির্ধারিত হয়। এটি দিনের বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে এবং সাধারণত কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যে বদলায়। উদাহরণস্বরূপ, সকালে রোদ থাকতে পারে, দুপুরে বৃষ্টি হতে পারে, আবার সন্ধ্যায় ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে।
আবহাওয়া এবং জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। জলবায়ু হলো দীর্ঘ সময়ের (কমপক্ষে ৩০ বছর) গড় আবহাওয়া, যা কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের সার্বিক আবহাওয়াগত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে। অন্যদিকে, আবহাওয়া তাৎক্ষণিক ও পরিবর্তনশীল। এটি বিভিন্ন ভৌগোলিক ও প্রকৃতিগত কারণের ওপর নির্ভরশীল, যেমন সমুদ্র, পাহাড়, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকা এবং বায়ুপ্রবাহের ধরণ।
আবহাওয়া মানুষের দৈনন্দিন জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কৃষিকাজ, যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড আবহাওয়ার পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল। আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির ফলে এখন আমরা আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানতে পারি, যা আমাদের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।
আবহাওয়া ও জলবায়ুর মধ্যে পার্থক্য
আবহাওয়া এবং জলবায়ু একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত হলেও এদের মধ্যে মূলগত পার্থক্য রয়েছে। আবহাওয়া হলো স্বল্পকালীন পরিবেশগত পরিবর্তন, যা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যে পরিবর্তিত হতে পারে। এটি মূলত তাপমাত্রা, বাতাসের গতি ও দিক, বৃষ্টিপাত, মেঘের পরিমাণ এবং আর্দ্রতার মতো উপাদানের ওপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, সকালে রোদ থাকতে পারে, দুপুরে ঝড় হতে পারে, আবার রাতে ঠান্ডা অনুভূত হতে পারে—এগুলোই আবহাওয়ার পরিবর্তনের উদাহরণ।
অন্যদিকে, জলবায়ু হলো দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়াগত গড় অবস্থা, যা সাধারণত ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে নির্ধারিত হয়। কোনো নির্দিষ্ট অঞ্চলের তাপমাত্রার গড়, মৌসুমী বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, বাতাসের চলাচলের ধরণ এবং সার্বিক আবহাওয়ার প্রকৃতি জলবায়ুর অন্তর্ভুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, সাহারা মরুভূমির জলবায়ু শুষ্ক ও গরম, আবার বাংলাদেশে উষ্ণ-নম্নোন্নত জলবায়ু বিদ্যমান, যেখানে গরম ও বর্ষার আধিক্য থাকে।
মূলত, আবহাওয়া হলো তাৎক্ষণিক এবং পরিবর্তনশীল, যা অল্প সময়ের মধ্যে বদলায়, আর জলবায়ু হলো দীর্ঘমেয়াদি একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের আবহাওয়ার গড় চিত্র। জলবায়ু পরিবর্তনশীল হলেও এটি দীর্ঘ সময় ধরে পরিবর্তিত হয়, যেমন বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর জলবায়ু ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে। তাই, আবহাওয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলে, আর জলবায়ু নির্ধারণ করে একটি অঞ্চলের সামগ্রিক পরিবেশগত অবস্থা।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ গুলো কি কি
১. জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার
প্রধান কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো জীবাশ্ম জ্বালানির (কয়লা, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস) ব্যাপক ব্যবহার। শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও যানবাহনে এসব জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইড (CO₂) ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী।
২. বন উজাড়করণ
বনভূমি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। কিন্তু অতিরিক্ত বৃক্ষনিধন ও বন উজাড়ের কারণে বাতাসে CO₂ এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি গ্রীনহাউস প্রভাব বাড়িয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
৩. শিল্প ও কারখানার দূষণ
শিল্প কারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া, রাসায়নিক পদার্থ ও অন্যান্য বর্জ্য বায়ু ও পানিদূষণের পাশাপাশি পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। এসব দূষিত পদার্থ ও গ্রিনহাউস গ্যাসের অতিরিক্ত নিঃসরণ জলবায়ুর স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে।
৪. কৃষিখাতে মিথেন গ্যাসের নিঃসরণ
গবাদি পশুর হজম প্রক্রিয়া এবং ধান চাষের সময় উৎপন্ন মিথেন গ্যাস (CH₄) জলবায়ু পরিবর্তনের আরেকটি কারণ। মিথেনের উষ্ণতা বৃদ্ধির ক্ষমতা CO₂-এর তুলনায় অনেক বেশি, যা জলবায়ু পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫. অতিরিক্ত নগরায়ণ ও কংক্রিটকরণ
শহরায়ণের ফলে সবুজায়ন কমে যাচ্ছে এবং ভবন, রাস্তা, কারখানার সংখ্যা বাড়ছে। এতে তাপমাত্রা বেড়ে ‘তাপদ্বীপ প্রভাব’ সৃষ্টি হয়, যা জলবায়ুর স্বাভাবিক কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে জলবায়ু কাকে বলে এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url