পরমাণু কাকে বলে? বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে পরমাণু কাকে বলে এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে পরমাণু কাকে বলে তা বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পরমাণু কাকে বলে? বিস্তারিত জেনে নিন
পৃথিবীর সকল পদার্থই কতগুলি ক্ষুদ্র কণার সমষ্টি মাত্র। এক কণার নামই অনু। মৌলিক বা যৌগিক পদার্থের যে ক্ষুদ্রতম কণা ওই পদার্থের ধর্মাবলী অক্ষুণ্ণ রেখে স্বাধীনভাবে বিরাজ করতে পারে, তাকে ওই পদার্থের অণু বলা হয়। অণুসমূহ খালি চোখে দেখা যায় না। পদার্থের অণুতে ঐ পদার্থের গুণাবলী বিদ্যমান থাকে। বিভিন্ন পদার্থের অণুতে পরমাণুর সংখ্যাও বিভিন্ন হয়। পানির অণুতে পানির সকল গুণ বিদ্যমান থাকে। যেমন দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং একটি অক্সিজেন পরমাণু দ্বারা পানির একটি অণু গঠিত হয়। অনুরূপভাবে, একটি নাইট্রোজেন পরমাণু এবং তিনটি হাইড্রোজেন পরমাণু যুক্ত হয়ে একটি অ্যামোনিয়ার অণু গঠন করে।

পরমাণু কাকে বলে?

অণুর ক্ষুদ্রতম কণাই পরমাণু। কোন মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম অংশ যার মধ্যে ঐ মৌলের বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন থাকে, যা স্বাধীনভাবে অবস্থান করতে পারে না কিন্তু রাসানিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে তাকে ঐ মৌলের পরমাণু বলা হয়। সাধারণত একটি মৌলিক পদার্থ একই ধরনের অসংখ্য পরমাণু দিয়ে গঠিত। তবে, ভিন্ন ভিন্ন মৌলিক পদার্থ ভিন্ন ভিন্ন পরমাণু দিয়ে গঠিত। হাইড্রোজেনের একটি অণুতে হাইড্রোজেনের দুইটি পরমাণু এবং অক্সিজেনের একটি অণুতে অক্সিজেনের দুইটি পরমাণু থাকে। পরমাণুকে ভাঙলে ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন নামক অতি ক্ষুদ্র কণিকা পাওয়া যায়।

পরমাণুর গঠন

প্রাচীনকালে ধারনা ছিল পরমাণু অবিভাজ্য। কিন্তু কালক্রমে এটি প্রমাণিত হয়েছে যে পরমাণু বিভাজ্য। এটি সূক্ষ্ম কণিকার সমষ্টি। পদার্থের তিনটি ক্ষুদ্র কণিকা হচ্ছে ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন। সৌরজগতের সাথে পরমাণুর গঠন তুলনা করা যায়। সৌরজগতের কেন্দ্র যেমন সূর্য, তেমনি পরমাণুর কেন্দ্রকে নিউক্লিয়াসে বলা হয়। নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রন থাকে। ইলেকট্রন বাহিরের কক্ষপথে অবস্থান করে। প্রতিটি পরমাণুতে ইলেকট্রন ও প্রোট্রনের সংখ্যা সমান থাকে। ইলেকট্রন বা প্রোটনের সংখ্যাই পারমাণবিক সংখ্যা। প্রোটনের সংখ্যা ও নিউট্রনের সংখ্যার সমষ্টি দ্বারা পারমাণবিক ওজন নির্ণয় করা হয়। কোন কক্ষপথে পরমাণুর কয়েকটি ইলেকট্রন থাকবে তা নির্ণয় করার জন্য সূত্র প্রয়োগ করা হয়।

ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের বৈশিষ্ট্য

ইলেকট্রনের বৈশিষ্ট্য: ইলেকট্রন হলো একটি ঋণাত্মক চার্জযুক্ত উপমাণুক কণা, যা পরমাণুর নিউক্লিয়াসের চারপাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান থাকে। এর ভর অত্যন্ত কম, যা প্রোটনের ভরের তুলনায় প্রায় ১/১৮৩৬ অংশ মাত্র। ইলেকট্রন পরমাণুর রাসায়নিক ধর্ম নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং পরমাণুর বাইরের কক্ষপথে অবস্থিত থাকার কারণে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। ইলেকট্রন বিদ্যুৎ পরিবহণে বিশেষ ভূমিকা রাখে এবং আধুনিক ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ভিত্তি গঠন করে। এটি একটি মৌলিক কণা, যা কোনো ক্ষুদ্রতর কণায় বিভক্ত করা যায় না।
প্রোটনের বৈশিষ্ট্য: প্রোটন হলো একটি ধনাত্মক চার্জযুক্ত উপমাণুক কণা, যা পরমাণুর নিউক্লিয়াসে থাকে। এর ভর প্রায় ১.৬৭ × ১০⁻²⁷ কিলোগ্রাম এবং এটি নিউট্রনের সমান ওজনের হয়ে থাকে। প্রোটন পরমাণুর পারমাণবিক সংখ্যা নির্ধারণ করে এবং এটি পরমাণুর পরিচয় নির্ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একই মৌলিক পদার্থের সকল পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা একই থাকে, যা তাদের মৌলিক পরিচিতি নিশ্চিত করে। প্রোটন শক্তিশালী পারমাণবিক বল দ্বারা নিউট্রনের সঙ্গে নিউক্লিয়াসে আবদ্ধ থাকে এবং এটি মৌলিক কণা হলেও কোয়ার্ক দ্বারা গঠিত।

নিউট্রনের বৈশিষ্ট্য: নিউট্রন হলো একটি নিরপেক্ষ (চার্জবিহীন) উপমাণুক কণা, যা পরমাণুর নিউক্লিয়াসে অবস্থান করে। এর ভর প্রোটনের সমান, তবে এটি কোনো বৈদ্যুতিক চার্জ বহন করে না। নিউট্রনের উপস্থিতি পরমাণুর ভর বৃদ্ধি করে এবং নিউক্লিয়াসকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। নিউট্রন ক্ষতিকর বিকিরণ ও নিউক্লিয়ার বিক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং এটি পারমাণবিক বিভাজন ও সংযোজনে অংশ নেয়। নিউট্রনও কোয়ার্ক দ্বারা গঠিত এবং এটি শক্তিশালী পারমাণবিক বল দ্বারা প্রোটনের সঙ্গে আবদ্ধ থাকে।

পরমাণুর কেন্দ্রে কি থাকে

পরমাণুর কেন্দ্রে একটি ক্ষুদ্র কিন্তু ঘনত্বযুক্ত অংশ থাকে, যাকে নিউক্লিয়াস বা নाभিক বলা হয়। এটি মূলত প্রোটন ও নিউট্রন দ্বারা গঠিত এবং পরমাণুর মোট ভরের প্রায় সম্পূর্ণ অংশই এতে সংরক্ষিত থাকে। যেহেতু প্রোটন ধনাত্মক চার্জযুক্ত এবং নিউট্রন নিরপেক্ষ, তাই নিউক্লিয়াসের চার্জ সর্বদা ধনাত্মক হয়। নিউক্লিয়াস অত্যন্ত শক্তিশালী পারমাণবিক বল দ্বারা আবদ্ধ থাকে, যা এটিকে স্থিতিশীল রাখে এবং একে বিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে রক্ষা করে। 

পরমাণুর চারপাশে ইলেকট্রন ঘূর্ণায়মান থাকলেও, নিউক্লিয়াস স্থির থাকে এবং এর ভিত্তিতেই পরমাণুর পরিচয় নির্ধারিত হয়। নিউক্লিয়াসের ভেতরের নিউট্রনের সংখ্যা পরিবর্তিত হলে আইসোটোপ তৈরি হয়, যা পরমাণুর ভর পরিবর্তন করলেও তার মৌলিক ধর্ম অপরিবর্তিত রাখে। সুতরাং, পরমাণুর নিউক্লিয়াসই তার প্রকৃত শক্তি ও গঠনের মূল কেন্দ্রবিন্দু।

পরমাণু আবিষ্কার করেন কে

পরমাণুর ধারণা সর্বপ্রথম প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক ডেমোক্রিটাস (Democritus) খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেছিলেন যে প্রতিটি বস্তু ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অবিভাজ্য কণিকা দ্বারা গঠিত, যাকে তিনি "অ্যাটমোস" (Atomos) নামে অভিহিত করেন, যার অর্থ "অবিভাজ্য"। তবে এটি ছিল একটি দার্শনিক ধারণা, যা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়নি।


পরবর্তীতে, ১৮০৩ সালে জন ডাল্টন (John Dalton) তার পরমাণু তত্ত্ব উপস্থাপন করেন, যেখানে তিনি পরমাণুকে একটি কঠিন গোলকের মতো কণা হিসেবে ব্যাখ্যা করেন এবং বলেন যে প্রতিটি মৌলের পরমাণু আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে পরমাণু কাকে বলে? এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url