ভাইরাস কাকে বলে? বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে ভাইরাস কাকে বলে এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে ভাইরাস কাকে বলে তা বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কোষ জীবনের ক্ষুদ্রতম একক। ভাইরা ছাড়া সকল সজীব বস্তু একটি বা অনেকগুলো কোষ নিয়ে গঠিত। কোষগুলো প্রধানত দুই ধরনের, যথা-প্রোক্যারিওটিক এবং ইউক্যারিওটিক। ভাইরাস সুনির্দিষ্ট গঠন বিশিষ্ট এবং জেনেটিক বস্তু সহ বিশেষ ধরনের বংশগতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ। এজন্য ভাইরাসের যথেষ্ট জেনেটিক তাৎপর্য রয়েছে। এখানে ভাইরাসের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরা হলোঃ
ভাইরাস কাকে বলে?
ভাইরাস হলো অতি ক্ষুদ্র ও সংক্রামক অণুজীব, যা জীবিত কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তাদের ব্যবহার করে নিজেদের সংখ্যা বাড়ায়। এটি জীব এবং অজীবের মধ্যবর্তী অবস্থানে রয়েছে। ভাইরাস নিজে থেকে কোনো জৈবিক কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারে না; এটি বেঁচে থাকার জন্য অন্য জীবন্ত কোষের ওপর নির্ভরশীল। ভাইরাসকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে ‘অন্তঃকোষীয় পরজীবী’ (Obligate Intracellular Parasite) বলা হয়। এটি প্রাণী, উদ্ভিদ, ফাঙ্গি, এমনকি ব্যাকটেরিয়ার কোষেও সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম।
ভাইরাসের গঠন
আরো পড়ুন: এইডস রোগের লক্ষণ
ভাইরাসের গঠন অত্যন্ত সহজ। এটি মূলত দুটি অংশ নিয়ে গঠিত—জিনোম এবং ক্যাপসিড।জিনোম (Genetic Material): এটি ভাইরাসের জেনেটিক উপাদান, যা ডিএনএ (DNA) অথবা আরএনএ (RNA) আকারে থাকে। এটি ভাইরাসের প্রজননের জন্য দায়ী।
ক্যাপসিড (Capsid): এটি একটি প্রোটিনের আবরণ, যা ভাইরাসের জিনোমকে ঘিরে রাখে এবং সুরক্ষা প্রদান করে। কিছু ভাইরাসের ক্ষেত্রে ক্যাপসিডের বাইরেও লিপিড মেমব্রেন বা আবরণ থাকে, যা তাদের আরও সুরক্ষিত করে তোলে।
ভাইরাস কীভাবে কাজ করে?
ভাইরাস সংক্রমণের জন্য প্রথমে একটি নির্দিষ্ট জীবন্ত কোষ খুঁজে বের করে। এটি সাধারণত জীবের কোষের পৃষ্ঠের উপর সংযুক্ত হয় এবং তারপর তার জিনোমকে কোষের ভেতরে প্রবেশ করায়। একবার ভাইরাসের জিনোম কোষের ভেতরে প্রবেশ করলে, এটি কোষের মেশিনারিকে হাইজ্যাক করে নিজের সংখ্যা বাড়াতে থাকে। ভাইরাস কোষের ভেতরে প্রচুর পরিমাণে কপি তৈরি করে এবং কোষকে ধ্বংস করে বাইরে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং নানা রোগ সৃষ্টি করে।
ভাইরাসের প্রকারভেদ
- ভাইরাসকে তাদের জিনোমের ধরণ, আকৃতি ও সংক্রমণের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়।
- ডিএনএ ভাইরাস: এদের জিনোম ডিএনএ আকারে থাকে। যেমন—হেপাটাইটিস বি ভাইরাস।
- আরএনএ ভাইরাস: এদের জিনোম আরএনএ আকারে থাকে। যেমন—ইবোলা ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস।
- বাইরাল এনভেলপ (Enveloped Virus): এদের ক্যাপসিডের বাইরেও লিপিড আবরণ থাকে। যেমন—এইচআইভি।
- নন-এনভেলপড ভাইরাস: এদের কোনো লিপিড আবরণ নেই। যেমন—রাইনোভাইরাস।
ভাইরাসজনিত রোগ
- ভাইরাসের মাধ্যমে সৃষ্ট রোগ বিশ্বব্যাপী একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। কিছু ভাইরাস মৃদু অসুস্থতা সৃষ্টি করলেও অনেক ভাইরাস মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ:ইনফ্লুয়েঞ্জা: সাধারণ ঠান্ডা ও ফ্লু।
- হেপাটাইটিস: লিভারের রোগ।
- এইচআইভি/এইডস: মানব দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করে।
- করোনা ভাইরাস: শ্বাসতন্ত্রের জটিল সংক্রমণ।
ভাইরাসের ইতিবাচক দিক
ভাইরাস যদিও প্রধানত ক্ষতিকর, কিন্তু এটি গবেষণার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভাইরাস ব্যবহার করে জিন থেরাপি এবং ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, করোনা ভাইরাসের জন্য এমআরএনএ ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে, যা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে।
ব্যাকটেরিয়া কাকে বলে
ব্যাকটেরিয়া হলো এককোষী অণুজীব, যা পৃথিবীর প্রায় সব পরিবেশে বিদ্যমান। এটি প্রাণী, উদ্ভিদ, মাটি, পানি, এমনকি মানুষের শরীরেও অবস্থান করে। ব্যাকটেরিয়া প্রোক্যারিয়োটিক কোষের অন্তর্ভুক্ত, যার অর্থ এদের কোষে কোনো সুগঠিত নিউক্লিয়াস বা ঝিল্লিবেষ্টিত কোষাঙ্গ নেই। ব্যাকটেরিয়ার আকার সাধারণত গোলাকার (Cocci), দণ্ডাকার (Bacilli) বা সর্পিল (Spirilla) হতে পারে। এরা অতি ক্ষুদ্র, যা সাধারণত মাইক্রোমিটারের মধ্যে পরিমাপ করা হয়।
ব্যাকটেরিয়ার গঠন
- ব্যাকটেরিয়ার গঠন খুবই সরল। এটি প্রধানত নিচের অংশগুলো নিয়ে গঠিত:সেল মেমব্রেন ও সেল ওয়াল: সেল মেমব্রেন কোষকে ঘিরে রাখে এবং কোষের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। সেল ওয়াল ব্যাকটেরিয়ার রূপ ও সুরক্ষা প্রদান করে।
- নিউক্লিয়য়েড অঞ্চল: ব্যাকটেরিয়ার ডিএনএ কোষের ভেতরে নিউক্লিয়য়েড অঞ্চলে থাকে। এটি নিউক্লিয়াসের মতো হলেও ঝিল্লিবেষ্টিত নয়।
- সাইটোপ্লাজম: কোষের অভ্যন্তরে সাইটোপ্লাজম থাকে, যা কোষের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন অণু এবং অঙ্গাণু ধারণ করে।
- ফ্ল্যাজেলা ও পিলি: ফ্ল্যাজেলা ব্যাকটেরিয়াকে চলাচল করতে সাহায্য করে এবং পিলি কোষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে।
ব্যাকটেরিয়ার জীবনচক্র
ব্যাকটেরিয়া সাধারণত দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। এটি বাইনারি ফিশন নামে পরিচিত একটি পদ্ধতির মাধ্যমে বিভাজিত হয়। এই পদ্ধতিতে একটি ব্যাকটেরিয়া কোষ দুটি সমান অংশে ভাগ হয়ে নতুন ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে। কিছু ব্যাকটেরিয়া প্রতিকূল পরিবেশে স্পোর তৈরি করে বেঁচে থাকে এবং পরিবেশ অনুকূল হলে আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে।
ব্যাকটেরিয়ার প্রকারভেদ
- ব্যাকটেরিয়াকে তাদের গঠন, মেটাবলিজম এবং রোগ সৃষ্টির ক্ষমতার ভিত্তিতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়।গ্রাম-পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া: এদের সেল ওয়ালে পুরু পেপটিডোগ্লাইকান স্তর থাকে।
- গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া: এদের সেল ওয়াল পাতলা এবং বাইরের স্তর থাকে লিপোপলিস্যাকারাইড।
- অটোট্রফ ব্যাকটেরিয়া: এরা নিজে থেকে খাদ্য তৈরি করতে পারে।
- হেটেরোট্রফ ব্যাকটেরিয়া: এরা পরিবেশ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে।
ব্যাকটেরিয়ার উপকারিতা
- ব্যাকটেরিয়ার অনেক ইতিবাচক দিক রয়েছে।পরিবেশে ভূমিকা: ব্যাকটেরিয়া মৃতদেহ পচনে এবং পুষ্টি চক্র বজায় রাখতে সাহায্য করে।
- খাদ্য উৎপাদনে: দই, চিজ, পিকল ইত্যাদি তৈরিতে ব্যাকটেরিয়া ব্যবহৃত হয়।
- চিকিৎসায়: অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনে ব্যাকটেরিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- জৈব সার উৎপাদনে: নাইট্রোজেন স্থিরীকরণে সহায়ক ব্যাকটেরিয়া মাটির উর্বরতা বাড়ায়।
ব্যাকটেরিয়ার ক্ষতিকারক দিক
- যদিও ব্যাকটেরিয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উপকারী, কিছু ব্যাকটেরিয়া রোগ সৃষ্টি করতে পারে।যক্ষ্মা (টিবি): মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস দ্বারা হয়।
- কলেরা: ভাইব্রিও কলেরি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ঘটে।
- টাইটেনাস: ক্লস্ট্রিডিয়াম টেটানি ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়।
- ফুড পয়জনিং: সালমোনেলা এবং ই.কোলাই ব্যাকটেরিয়া খাবারে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করে।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে ভাইরাস কাকে বলে এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url