নামাজ ভঙ্গের কারণ বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে নামাজ ভঙ্গের কারণসমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে নামাজ ভঙ্গের কারণ গুলো বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
নামাজ ভঙ্গ বলতে এমন কোনো কার্যকলাপ বোঝায়, যা নামাজের শৃঙ্খলাকে নষ্ট করে এবং নামাজ বাতিল করে দেয়। ইসলামী শরীয়তে নামাজের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন আছে, যা মেনে চলতে হয়। যদি কেউ এসব বিধান ভঙ্গ করে, তাহলে তার নামাজ বাতিল হয়ে যায় এবং তাকে পুনরায় নামাজ আদায় করতে হয়।
নামাজ ভঙ্গের কারণ
১. অজু ভঙ্গ হলে: অজু ভঙ্গ হলে স্বাভাবিকভাবেই নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। যেমন—বায়ু নির্গত হওয়া
পায়খানা বা প্রস্রাব বের হওয়া, বমি হওয়া (যদি এক মুখ পরিমাণ হয়), ঘুমিয়ে পড়া (যদি মেরুদণ্ড বাঁকা হয়ে যায়), নাক বা শরীর থেকে প্রবাহিত রক্ত বের হওয়া।
২. ইচ্ছাকৃতভাবে কথা বলা: নামাজে ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ধরনের কথা বলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। একবার কথা বললে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়।
৩. হাসি বা উচ্চস্বরে শব্দ করা: আস্তে হাসলে নামাজ নষ্ট হবে। উচ্চস্বরে হাসলে নামাজ ও অজু দুটোই ভেঙে যাবে।
৪. নামাজে কান্না বা আর্তনাদ করা: কোনো দুনিয়াবি কারণে (ব্যথা, দুঃখ, কষ্ট) কান্না করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে, যদি আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসার জন্য কান্না আসে, তাহলে নামাজ নষ্ট হবে না।
৫. কিবলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া: নামাজে অবশ্যই কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াতে হবে। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কিবলা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে।
৬. ইচ্ছাকৃতভাবে বড় নড়াচড়া করা: যদি কেউ টানা তিনবার বড় ধরনের নড়াচড়া করে, তাহলে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে।
৭. খাওয়া বা পান করা: নামাজের মধ্যে কিছু খেলে বা পান করলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে, এমনকি তা সামান্য পরিমাণ হলেও।
৮. অজান্তে কিছু চিবানো: নামাজে যদি কেউ অনিচ্ছাকৃতভাবে মুখে থাকা কোনো বস্তু চিবায় বা গিলে ফেলে, তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে।
আরো পড়ুন: তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
৯. নামাজে খেলাধুলা বা অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া করা: নামাজের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় হাত-পা নড়াচড়া করা, জামা ঠিক করা, চুল বা দাড়ি টানা ইত্যাদি নামাজ নষ্ট করে দিতে পারে।
১০. মোবাইল বা অন্য কিছু দেখা: নামাজে মোবাইল দেখা বা ব্যবহার করা নামাজ ভঙ্গের কারণ।
১১. ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ বন্ধ করা: কোনো কারণ ছাড়াই ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ ছেড়ে দিলে তা বাতিল হয়ে যাবে।
১২. সিজদায় শরীরের কোনো অংশ মাটিতে না লাগানো: সিজদায় ললাট, দুই হাত, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের আঙুল মাটিতে লাগানো বাধ্যতামূলক। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এসব অংশ মাটিতে না রাখে, তবে নামাজ বাতিল হবে।
১৩. সালামের আগেই নামাজ শেষ করা: নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী সালাম ফেরানোর আগেই যদি কেউ নামাজ ছেড়ে দেয়, তবে তা বাতিল হয়ে যাবে।
১৪. পোষাকের মধ্যে নাপাকি থাকা: কাপড়ে বা শরীরে যদি নাপাক কিছু লেগে থাকে, তাহলে নামাজ হবে না।
১৫. পশুর ডাক শুনে উত্তর দেওয়া: যদি কেউ নামাজের মধ্যে কোনো পশুর ডাক শুনে তাকে উত্তর দেয়, তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে।
১৬. নামাজের মধ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে থুতু ফেলা: নামাজের মধ্যে থুতু ফেলা বা নাক ঝাড়া নামাজের আদবের পরিপন্থী, যা নামাজ নষ্ট করতে পারে।
১৭. নামাজে অন্য কিছু চিন্তা করা ও মনোযোগ হারানো: নামাজে দুনিয়াবি চিন্তাভাবনায় ডুবে গেলে তা নামাজের খুশু-খুজু নষ্ট করে, যা নামাজ ভঙ্গের কারণ হতে পারে।
১৮. ইচ্ছাকৃতভাবে কুরআনের আয়াত পরিবর্তন করা: যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো আয়াত পরিবর্তন করে, তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে।
১৯. ভুলভাবে তাকবির বলা: তাকবিরে তাহরিমা সঠিকভাবে না বললে নামাজ শুরুই হবে না।
২০. নামাজের মধ্যে সুন্নতি কাজ সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া: যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে সুন্নাতি নিয়মগুলো অনুসরণ না করে, তাহলে তার নামাজ নষ্ট হতে পারে।
২১. নামাজে ইচ্ছাকৃতভাবে ফাতিহা না পড়া: সুরা ফাতিহা নামাজের একটি অপরিহার্য অংশ। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে তা না পড়ে, তাহলে নামাজ হবে না।
২২. দুই পা সম্পূর্ণ তুলে দাঁড়ানো: নামাজে দাঁড়ানোর সময় যদি কেউ দুই পা সম্পূর্ণ তুলে ফেলে, তবে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
২৩. ইমামের আগে রুকু বা সিজদা করা: যদি কেউ ইমামের আগে রুকু বা সিজদা করে, তাহলে তার নামাজ বাতিল হয়ে যাবে।
২৪. ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজের নিয়মের বিপরীতে কাজ করা: নামাজের ফরজ ও ওয়াজিব নিয়ম মানতে হবে। ইচ্ছাকৃতভাবে নিয়মের ব্যতিক্রম করলে নামাজ ভেঙে যাবে।
২৫. অন্য কাউকে ইঙ্গিত করা বা সংকেত দেওয়া: নামাজের মধ্যে হাত বা মাথা নাড়িয়ে অন্য কাউকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করলে নামাজ বাতিল হবে।
২৬. নামাজে জেনে-বুঝে ভুল সূরা পড়া: ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল সূরা পড়লে নামাজ হবে না।
২৮. শরীরের কোনো স্থান অনাবৃত হয়ে গেলে: যদি নামাজের মধ্যে এমন স্থান খোলা হয়ে যায়, যা ঢেকে রাখা জরুরি, তাহলে নামাজ ভেঙে যাবে।
২৯. নামাজে দৃষ্টির স্থিরতা হারানো: নামাজের মধ্যে বারবার এদিক-ওদিক তাকানো বা চোখ ঘোরানো নামাজের শৃঙ্খলা নষ্ট করে দিতে পারে।
৩০. নামাজের মধ্যে গন্ধযুক্ত কিছু খাওয়া ও উচ্চস্বরে নিঃশ্বাস নেওয়া: যদি কেউ নামাজের আগে পেঁয়াজ-রসুন ইত্যাদি খায় এবং নামাজের মধ্যে বারবার নিঃশ্বাস ছাড়ে, যা অন্য মুসল্লিদের জন্য কষ্টদায়ক হয়, তাহলে তার নামাজ নষ্ট হতে পারে।
নামাজ ভঙ্গ না হওয়ার কারণসমূহ
- প্রয়োজনে নামাজে থাকাবস্থায় সামান্য-সামনে বা পিছনে গেলে।
- জাহান্নামের ভয়ে নামাজে অনুচ্চস্বরে কাঁদলে।
- বেহেশতের আশায় নামাজে আনন্দিত হলে।
- প্রয়োজন রোধে নামাজে হাঁচি বা কাশি দিলে।
- কোন লেখা দেখলে তার অর্থ বুঝলে।
- মুখের মধ্যে আটকিয়ে পড়া চনাবুটের চেয়ে ছোট কোন জিনিস খেয়ে ফেললে।
নামাজের ব্যক্তিগত ও সামাজিক কল্যাণ
- নামাজের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয় এসে যায়। আল্লাহর ভয় মানুষের দিলে থাকলে মানুষ কখনও কোন অপকর্ম করতে পারে না। সুদ, ঘুষ, যেনা, গীবত ইত্যাদি পাপ কাজ করতে পারে না।
- একই কাতারে আমীর-গরীব দাঁড়িয়ে পারস্পারিক হৃদ্যতা, স্নেহ মমতা ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রদর্শন করতে পারে।
- পরস্পরের অভ্যন্তরীণ খোঁজ খবর নেয়া যায়।
- সামাজিক নিয়ম-পদ্ধতির ভিত্তিতে নামাজ সুদৃঢ করে এবং এতে মানুষ তাদের আনুগত্য ও পারস্পারিক শৃঙ্খলাবোধ শিখতে পারে। ইমামের পিছনে একতেদা করা দ্বারা এটাই প্রমানিত হয়।
- নামাজ আদর্শ সমাজ গঠনের এক বাস্তব প্রশিক্ষণ, যাতে অহমিকা, অহঙ্কার, গৌরব ও হিংসা-বিদ্বেষ দূর হয়ে যায়।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে নামাজ ভঙ্গের কারণ এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url