কম্পিউটার রচনা বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে কম্পিউটার রচনা এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে কম্পিউটার রচনা বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কম্পিউটার রচনা বিস্তারিত জেনে নিন
আধুনিক বিজ্ঞানের বিষ্ময়কর আবিষ্কার হলো কম্পিউটার। কম্পিউটার শব্দটি ইংরেজী। এর অর্থ হলো যন্ত্রগণক বা গনণাকারী যন্ত্র। কম্পিউটার যোগ, বিয়োগ, গুন-ভাগ ইত্যাদি সবধরনের অঙ্ক কষতে পারদর্শী। কিন্তু এর কাজ শুধু গণনা কাজেই সীমাবদ্ধ নয়। তথ্য-উপাত্তের বিশ্লেষণ ও তুলনা করা এবং সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি ও অনেক উন্নত। তাই বিশ শতকের শেষপ্রান্তে কম্পিউটার ঘরে, অফিসে, ব্যাংকে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, বিমানে, পত্রিকায়, কারখানায় ইত্যাদি প্রায় সর্বত্র বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।

কম্পিউটার রচনা

কম্পিউটারের আবিষ্কার: আধুনিক কম্পিউটারের জনক ব্রিটিশ গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজ। পাঁচটি অংশে বিভক্ত আধুনিক কম্পিউটারের গঠন কৌশল আবিষ্কারের কৃতিত্বও তার। ১৯৫২ সালে আমেরিকার বিজ্ঞানী জন ডন নিউম্যানের পরিকল্পনা মতে ইলেকট্রনিক অটোমেটিক ক্যালকুলেটর আবিষ্কৃত হয়। ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত কম্পিউটার তৈরির কাজ ধাপে ধাপে এগিয়ে চলে। 

গঠন ও শ্রেনিবিভাগ: কম্পিউটারের গঠনরীতির প্রতি লক্ষ করলে এর প্রধান দুটি দিক আমাদের নজরে পড়ে। একটি হলো এর যান্ত্রিক সরঞ্জাম এবং অপরটি হলো প্রোগ্রাম সংঞ্জাম। কম্পিউটারের যন্ত্রপাতির সাধারণ নাম হার্ডওয়্যার। যান্ত্রিক সরঞ্জামের আওতায় আসে তথ্য সংরক্ষণের স্মৃতি, অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার জন্য ব্যবহৃত বহির্মুখ অংশ। 

কম্পিউটারকে প্রদেয় নির্দেশাবলির নাম প্রোগ্রাম। প্রোগ্রাম ইত্যাদিকে বলা হয় সফটওয়্যার। কাজের ধরন বা পদ্ধতি অনুসারে কম্পিউটারকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। যেমন: সুপার কম্পিউটার, মেইনফ্রেম কম্পিউটার, মিনি কম্পিউটার ও মাইক্রো কম্পিউটার।

কম্পিউটারের ব্যবহার: কম্পিউটারমানব জীবনের নানা ক্ষেত্রে দিন দিন খুলে দিচ্ছে নিত্যনতুন দিগন্ত। কম্পিউটার শুধু ব্যবসা-বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশই কষে না, নানা কাজে কম্পিউটারের রয়েছে ব্যাপক ব্যবহার। বহু মানুষের কাজ সে একাই করে নির্ভুলভাবে এবং বলতে গেলে চোখের পলকে করে দেয় বলা যায়। এখন বর্তমানে কম্পিউটারের সাহায্যে জটিল হিসাব সহজেই নিরূপণ করা হচ্ছে। সর্বাধুনিক কল-কারখানা ও পারমাণবিক চুল্লি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কম্পিউটারের সাহায্যে। 

চিকিৎসা ক্ষেত্রে কম্পিউটার সূচনা করেছে নতুন যুগের। এর সাহায্যে রোগ নিরূপণে খুলে গেছে বিষ্ময়কর ও অভাবনীয় দিক-দিগন্ত। তা ছাড়া বহুতল ভবন, বিমান, ডুবোজাহাজসহ বড় বড় কাজের জটিল নকশা কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরি করা হচ্ছে। বড় বড় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রন করছে কম্পিউটার। বিমান ও রেলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সংরক্ষণ ও টিকিট ব্রিক্রিতেও তা তৎপর। কম্পিউটারের সাহায্যে বর্তমানে বই-পুস্তক ও পত্র-পত্রিকা ইত্যাদির কম্পোজ ও মুদ্রণের কাজ নির্ভুল এবং দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। পরিক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, নৈর্ব্যক্তিক উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও ফলাফল তৈরির কাজে কম্পিউটার পালন করছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। 

কম্পিউটার খেলার জগতেও অসামান্য চৌকস। কম্পিউটারে দাবাসহ নানারকম খেলা খেলা যায়। তার মধ্যে রয়েছে রয়েছে নানারকম ভিডিও গেমস। সেগুলো ইতোমধ্যেই বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এসবের মধ্যে রয়েছে: কার গেমস, যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, ভিনগ্রহীদের মোকাবেলা, জলে জঙ্গলে শিকার এবং এমনি আরও কত কি। রয়েছে শিক্ষামূলক নানা তাক-লাগানো খেলা। খেলার মাধ্যমেই টাইপ শেখার সুযোগও এনে দিয়েছে কম্পিউটার। 
কম্পিউটারে চলচ্চিত্র দেখা যায়, গান শোনা যায়, ছবি স্ক্যানিং করে সংরক্ষণ করা যায়। কম্পিউটারের সাহায্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে দূর-দূরান্তে যোগাযোগ করা যায় ই-মেইলের মাধ্যমে; পড়া যায় দেশ বিদেশের পত্র পত্রিকা, সংগ্রহ করা যায় যে-কোনা বিষয়ের তথ্য। সেখানে নানা তথ্য সংরক্ষণও করা যায়। শিক্ষাক্ষেত্রেও কম্পিউটারের অবদান অনেক। কম্পিউটারের মাধ্যমে বর্ণপরিচয় থেকে শুরু করে ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান, গণিত সবই শেখা যায়।

কম্পিউটার ও বেকার সমস্যা: কম্পিউটার মানুষের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে অনেক কাজ। বহু লোকের কাজ একা করার ফলে কলকারখানসহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে বসানো হয়েছে কম্পিউটার-চালিত স্বয়ংক্রিয় বা অটোমেটিক ব্যবস্থা। এর ফলে নিয়োগ কমছে, বেকারত্ব বাড়ছে। তাই আমাদের দেশের মতো জনবহুল ও উন্নয়শীল দেশে অর্থনৈতিক সাশ্রয় ও বহুমুখী কর্মসংস্থানের দিক বিবেচনায় রেখে কম্পিউটার ব্যবহারের পরিকল্পনা নেওয়া দরকার। বহুমুখী কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কম্পিউটার শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে যে এই সমস্যা সমাধান করা যায় সেই বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার।

পরিশেষে বলা যায় যে, কম্পিউটার আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিষ্ময়করা উদ্ভাবন। তা মানুষকে বেকার করলেও তার বিষ্ময়কর কার্যক্ষমতা মানুষের মনকে জয় করেছে। আমাদের দেশও তাই কম্পিউটারকে স্বাগত জানিয়েছে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন অধিকাংশ মানুষ কম্পিউটারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। আমাদের দেশেও কম্পিউটারের প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিন বেড়ে চলেছে। মানুষ ক্রমেই হয়ে পড়ছে কম্পিউটারনির্ভর।

কম্পিউটার কত প্রকার ও কি কি?

কম্পিউটারকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়, যেমন গঠন, কাজের পদ্ধতি, আকার এবং ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে। নিচে বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

গঠন অনুযায়ী কম্পিউটারের প্রকারভেদ

ক. এনালগ কম্পিউটার: এনালগ কম্পিউটার মূলত গাণিতিক হিসাব-নিকাশ এবং বিজ্ঞানসম্মত গবেষণার জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি বিভিন্ন শারীরিক মান যেমন তাপমাত্রা, চাপ, গতি ইত্যাদির পরিবর্তন বিশ্লেষণ করে ফলাফল প্রদান করে। বিজ্ঞান গবেষণা, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং আবহাওয়া বিশ্লেষণে এটি ব্যবহৃত হয়।

খ. ডিজিটাল কম্পিউটার: ডিজিটাল কম্পিউটার ০ এবং ১ এই বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতির মাধ্যমে কাজ করে। এটি তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রসেসিং করতে পারে এবং দ্রুতগতিতে কাজ সম্পন্ন করে। আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহারের কম্পিউটার, যেমন ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন—সবই ডিজিটাল কম্পিউটারের অন্তর্ভুক্ত।

গ. হাইব্রিড কম্পিউটার: এনালগ এবং ডিজিটাল কম্পিউটারের সংমিশ্রণকে হাইব্রিড কম্পিউটার বলা হয়। এটি শিল্প প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা এবং গবেষণাগারে ব্যবহৃত হয়। এই ধরনের কম্পিউটার তথ্য সংগ্রহ করে সেটিকে ডিজিটাল ফরম্যাটে বিশ্লেষণ করতে পারে, যা উন্নত প্রযুক্তিগত গবেষণায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আকার ও ক্ষমতা অনুযায়ী কম্পিউটারের প্রকারভেদ

ক. সুপার কম্পিউটার: সুপার কম্পিউটার হলো সর্বাধিক শক্তিশালী এবং দ্রুতগতির কম্পিউটার। এটি প্রধানত বৈজ্ঞানিক গবেষণা, মহাকাশ অনুসন্ধান, আবহাওয়া পূর্বাভাস, পরমাণু গবেষণা এবং উচ্চ পর্যায়ের গণনামূলক কাজে ব্যবহৃত হয়।

খ. মেইনফ্রেম কম্পিউটার: মেইনফ্রেম কম্পিউটার বৃহৎ সংস্থা ও সরকারী প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে, যেখানে বিশাল পরিমাণ তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে হয়। ব্যাংক, বিমা কোম্পানি এবং বড় বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে এটি ব্যবহৃত হয়।

গ. মিনি কম্পিউটার: মিনি কম্পিউটার আকারে ছোট হলেও মেইনফ্রেমের তুলনায় কম ক্ষমতাসম্পন্ন। এটি মাঝারি মানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গবেষণা কেন্দ্রে ব্যবহৃত হয়, যেখানে একাধিক ব্যবহারকারী একসাথে কাজ করতে পারে।
ঘ. মাইক্রো কম্পিউটার: মাইক্রো কম্পিউটার হলো আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত ব্যক্তিগত কম্পিউটার (PC)। এটি অফিস, বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ছোট ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহৃত হয়। ডেস্কটপ, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, স্মার্টফোন ইত্যাদি মাইক্রো কম্পিউটারের অন্তর্ভুক্ত।

কাজের ভিত্তিতে কম্পিউটারের প্রকারভেদ

ক. পারসোনাল কম্পিউটার (PC): ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তৈরি কম্পিউটারকে পারসোনাল কম্পিউটার বলা হয়। এটি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত হয়।

খ. ওয়ার্কস্টেশন: উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার, যা বিশেষ গবেষণা, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি মাইক্রো কম্পিউটারের তুলনায় বেশি শক্তিশালী।

গ. সার্ভার কম্পিউটার: সার্ভার কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা বিভিন্ন কম্পিউটারের মধ্যে তথ্য সংরক্ষণ ও বিতরণ করতে সাহায্য করে। বড় সংস্থা, ওয়েবসাইট হোস্টিং এবং ক্লাউড স্টোরেজের জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে কম্পিউটার রচনা এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url