মহানবী সাঃ এর জীবনী রচনা - ৫০০ শব্দ বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে মহানবী সাঃ এর জীবনী রচনা ৫০০ শব্দ এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েবেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে মহানবী সাঃ এর জীবনী রচনা বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
মহানবী সাঃ এর জীবনী রচনা ৫০০ শব্দ বিস্তারিত জেনে নিন
হজরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইসলামের সর্বশেষ নবী ও রাসুল। তিনি মানবজাতির জন্য আদর্শ জীবনধারা প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর জীবন, চরিত্র ও শিক্ষাগুলো শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য অনুকরণীয়। এই নিবন্ধে আমরা মহানবীর জীবনী, তাঁর চরিত্র, ইসলামের প্রচার ও তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

মহানবী সাঃ এর জীবনী রচনা ৫০০ শব্দ

ভূমিকা: যেসব মহাপুরুষ মানবসভ্যতার ইতিহাসে স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে আছেন, তাঁদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হচ্ছেন হজরত মুহাম্মদ (সা.)। সত্য, ন্যায় ও আদর্শে মহান করে স্রষ্টা তাঁকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। আইয়ামে জাহেলিয়াত বা অন্ধকার যুগে তিনি আলোকবর্তিকা হিসেবে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন। তাঁর আদর্শ পথভ্রষ্ট মানুষকে মুক্তিমন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল। 

হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর উদারতা, মানবিকতা, সত্য ও ন্যায়ের প্রতি অবিচল আস্থা, তাঁর ব্যক্তিত্ব ও কর্মতৎপরতা দেশ-কাল-সম্প্রদায় ও জাতি-ধর্মকে অতিক্রম করে বিশ্বমানবিকতার স্তরে উত্তীর্ণ হয়েছে। তিনি যেমন আরব জাতিকে মুক্তি দিয়েছেন আল্লাহর নির্দেশিত পথে, তেমনি সমগ্র বিশ্বের মানুষের জন্য নির্বিরোধ শান্তির এক জ্যোতির্ময় পথ প্রদর্শন করে গেছেন।

জন্ম ও বংশ পরিচয়: হজরত মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ রাসূল। তিনি ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক। আরবের সম্ভ্রান্ত কুরাইশ বংশে, পবিত্র নগরী মক্কায় ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই রবিউল আউয়াল তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আব্দুল্লাহ এবং মাতার নাম আমেনা। হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর দুধ মাতা ছিলেন হালিমা। আমাদের প্রিয় নবী জন্মের পূর্বেই পিতাকে হারান এবং ছয় বছর বয়সে তাঁর মাতা ইন্তেকাল করেন। 

এরপর শিশু মুহাম্মদ (সা.)-কে তাঁর দাদা আব্দুল মোত্তালিব পরম স্নেহে লালন পালন করেন। কিন্তু আট বছর বয়সে দাদা আব্দুল মোত্তালিবও এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। পিতৃব্য আবু তালিব এরপর তাঁর লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই মহানবী ছিলেন সহজ সরল ও কোমল স্বভাবের অধিকারি। সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, ধর্মবোধ প্রভৃতি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারি ছিলেন তিনি। সত্যবাদিতার জন্য শৈশবেই তিনি আল-আমিন বা বিশ্বাসী উপাধিতে ভূষিত হন।

বিবাহ ও নবুয়ত প্রাপ্তি: হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর সততা, ন্যায়পরায়ণতার কথা সৌরভের মতো মক্কা নগরীতে ছড়িয়ে পড়ে। কারণ সেই যুগে এ ধরনেরঅকৃত্রিম চরিত্রের অধিকারী কেউ ছিলেন না। মক্কার ধনবতী বিধবা মহিলা বিবি খাদিজা (রা.) তার সু খ্যাতি শুনে তাকে তার ব্যবসার দায়িত্বভার দেন। বিশ্বস্ততার সঙ্গে হজরত মোহাম্মদ সাঃ ব্যবসা পরিচালনা করে বিবি খাদিজার ব্যবসায় সমৃদ্ধি আনয়ন করেন। 

হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর দক্ষতা, সততা ও অতুনীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে মুগ্ধ হয়ে বিবি খাদিজা তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দেন। তখন হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বয়স পঁচিশ বছর আর বিবি খাদিজার বয়স চল্লিশ বছর। হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিবি খাদিজাকে বিবাহ করতে রাজি হন এবং তাকে বিবাহ করেন। সে যুগে আরবের অবস্থা ছিল দ্বন্দ্বক্ষুব্ধ। 

গোত্রে গোত্রে হানাহানি, মারামারি, পারস্পরিক যুদ্ধ ও লড়াইয়ের ফলে নিয়ত রক্তাক্ত ছিল আরবভূমি। একদিকে অশিক্ষা-কুশিক্ষা, অন্যদিকে ধর্মের নামে প্রচলিত ছিল নানা কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, গোঁড়ামি ও অর্থহীন আচার-অনুষ্ঠান। কন্যাশিশুকে জীবন্ত পুঁতে ফেলার মতো জঘন্য অপরাধ ছিল সেই সময়ের নিত্য ঘটনা। মক্কার কাবা ঘরেই ছিল অসংখ্য মূর্তি। মূর্তিপূজার নানা স্বতন্ত্র রীতি ছিল। গোত্রে গোত্রে বিরোধ ছিল। 

জাতির জীবনে অনাচার, অবিচার ও অন্ধকার অমানিশা হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে বিচলিত করত। তিনি সবসময় এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য চিন্তাভাবনা করতেন। মক্কার অদূরে হেরা পর্বতে গিয়ে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ধ্যানে হজরত মুহাম্মদ (সা.) আত্ম নিয়োগ থাকতেন। সুদীর্ঘ পনোরো বছর ধ্যান করার পর আল্লাহর দূত জিব্রাইল (আ.) ফেরেশতা ঐশী বানী বা আসমানি বানি নিয়ে আসেন এবং তাঁকে আল্লাহর বানী পাঠ করে শোনান। এভাবে ওহি নাজিল হয় এবং তিনি নবুয়ত প্রাপ্ত হন।

ইসলাম প্রচার: হজরত মুহাম্মদ (সা.) ৪০ বছর বয়ছে যখন নবুয়ত প্রাপ্ত হন তখন থেকেই আল্লাহর আদেশে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। প্রথমে স্ত্রী বিবি খাদিজা ইমান এনে মুসলমান হলেন। তারপর ইসলাম গ্রহণ করেন হজরত আবু বকর (রা.) তারপর ইসলাম গ্রহন করেন হজরত আলী রা. তারপর ইসলাম গ্রহন করেন হজরত যায়েজ বিন হারেস প্রমুখ। 

তিনি মানুষকে আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস স্থাপন করতে আহ্বান জানান এবং মূর্তিপূজা পরিহার করতে বলেন। ক্রমেই মক্কায় মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে মক্কার কুরাইশ নেতারা তাঁর এই প্রচারকে ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। তারা তাঁকে ও তাঁর অনুসারীদের প্রতি নানা ধরনের নির্যাতন চালায়। 

তবুও তিনি ধৈর্য ও সহনশীলতার মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত চালিয়ে যান। এক পর্যায়ে কুরাইশরা হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে হত্যার পরিকল্পনা করেন ঠিক তখনই আল্লাহর নির্দেশে হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেন।

মদিনায় হিজরত: কুরাইশদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে অবশেষে হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নির্দেশে মক্কা থেকে ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় হিজরত করেন। হিজরতের সময় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তার বিশিষ্ট সাহাবি আবু বকর কে সঙ্গে করে হিজরতের উদ্দেশ্য রওনা দেয়। কিন্তু মক্কার কুরাইশরা তাদের হত্যা করার উদ্দেশ্য তাদের পিছু নেয় একপর্যায়ে মহনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এবং তার সাহাবি আবু বকর কে সঙ্গে করে একটি গুহায় আশ্রয় নেয়। কিন্তু সেই গুহা পর্যন্ত মক্কার কাফেররা চলে চায়। 

কিন্তু আল্লাহ তায়ালার আদেশে তারা সেই গুহাতেই খুজতে থাকে কিন্তু তারা মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এবং আবু বকর কে দেখতে পায়না। ফলে তারা সেই গুহা থেকে চলে যায়। আল্লাহর কুদরতে প্রিয় নবী এবং আবু বকর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। পরবতীত যেসব মক্কাবাসী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর সাথে মদিনায় গিয়েছিলেন তাদের মুজাহির (শরণার্থী) এবং যারা তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন তাদের আনসার (সাহায্যকারি) বলা হয়। 

মদিনায় মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) হিজরত করার পর মদিনাবাসী তাদের গ্রহণ করেন এবং তারা ইসলাম গ্রহণ করেন। কিছু ঐতিহাসিকদের মতে মদিনা বাসি অতি সহজেই ইসলাম গ্রহণ করার কয়েকটি কারণ মনে করেন। তার মধ্য অন্যতম কারণ হলো মদিনায় হজরতম মুহাম্মদ (সা.) এর নানার বাড়ি। আব্দুল ওহাব ছিলেন প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর নানাজান। তাই বিভিন্ন ঐতিহাসিকরা মনে করেন মুহাম্মাদের আত্মীয়তার সম্পর্কে কারণে প্রথমত মদিনাবাসী অতি সহজেই ইসলাম গ্রহণ করেন। 

আবার কিছু ঐতিহাসিক রা মনে করেন মদিনার আবহাওয়া ছিল খুবই অনকূল যা মদিনাবাসীদের মনে কোনো রাগ অভিমান জমা হতো না। কিন্তু সেই হিসেবে মক্কার আবহাওয়া ছিল খুবই প্রতিকূল তাই মক্কাবাসীর প্রায় সবসময় মেজাজ খারাপ থাকতো। এবং তার সাথে সাথে বাপ দাদার ধর্মে বিশ্বাসী ছিল তারা। তাই কিছু ঐতিহাসিক রা মনে করেন মদিনার আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে মদিনাবাসীর মেজাজ ভালো ছিল এবং অতি সহজেই তারা ইসলাম গ্রহন করেছিলো। 

যাই হোক হজরত মুহাম্মাদ (সা.) মদীনায় হিজরত করার পর মদীনা বাসী হজরত মুহাম্মদ সা.কে মদিনার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেন এবং তার সাথে সাথে ইসলামের বিজয় পতাকা অতি সহজেই উড়তে থাকে। মদীনায় ইসলামের পতাকা উড়িয়ে নবী করিম সা. বসে থাকেন নি তিনি মক্কা বিজয়ের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) তার জীবনদশায় কয়েকটি যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। 
তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো: বদরের যুদ্ধ, খন্দকের যুদ্ধ, আহযাবের যুদ্ধ এর সাথে সাথে আরো কয়েকটি যুদ্ধ। বদরের যুদ্ধে মাত্র ৩১৩ জন সাহাবী নিয়ে নবী করিম সা, যুদ্ধ করেছেন এবং জয়লাভও করেছেন। তৎকালীন সময়ে সবচেয়ে কঠিন এবং পরাশক্তি ছিলো রোমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তিনি সেই যুদ্ধও পরিচালনা করেছেন এবং জয়লাভ করে ইসলামের পতাকা মুক্ত আকাশে উড়িয়েছেন।

মক্কা বিজয় ও মদিনা সনদ: মদিনায় ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠা ও হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধিতে মক্কার কুরাইশগণ শঙ্কিত ও ঈর্ষান্বিত হয়ে ওঠেন। মহানবী শুধু একজন ধর্মপ্রচারকই ছিলেন না, তিনি একজন শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রনায়ক, দূরদর্শী রাজনীতিবিদও ছিলেন। তাঁর দূরদর্শিতার কারণে মক্কার ইহুদিদের সঙ্গে তাঁর একটি চুক্তি হয়। 

তা হুদায়বিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) তার সাবাহিদের নিয়ে তথা মদিনা বাসীদের নিয়ে যখন মক্কা বিজয় করতে যান তখন হুদায়বিয়া নামক স্থানে তারা বাধাপ্রাপ্ত হন এবং সেখানে মক্কার কুরাইশ এবং নবী করিম (সা.) দের সাথে একটি চু্ক্তি সাক্ষরিত হয় যা ইসলামের ইতিহাসে হুদায়বিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত।

হুদায়বিয়ার সন্ধির শর্তাবলি: এ বছর (৬২৮) মুসলমানরা হজ না করে মদিনায় ফিরে যাবেন। পরবর্তী বছর মাত্র তিনদিনের জন্য মুসলমানরা হজ পালন করতে পারেব। মুসলমানরা মক্কায় অবস্থানকালে মক্কা বাসী মক্কার বাহিরে চলে যাবে। মক্কার কোনো নাবালেক তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া ইসলাম গ্রহন করলে তাকে তাদের পরিবারের কাছে ফেরত দিতে হবে। 

হুদায় বিয়ার সন্ধির মেয়াদ দশ বছর স্থায়ী থাকবে। এই সন্ধির শর্তাবলি উভয় পক্ষ পূর্ণ রুপে পালন করবে। এই সন্ধিতে আরও অনেক বিষয় গুলো উল্লেখ ছিল। মাত্র দুই বছরের মাথায় কুরাইশরা হুদায়বিয়ার সন্ধি ভঙ্গ করলে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা বিজয়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।

অবশেষে হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা বিজয় করেন। এবং তাদের সাহাবিদের নিয়ে হজ পালন করেন। এটাই ছিল হজরত মুহাম্মাদ (সা.) প্রথম এবং শেষ হজ। হজ শেষে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা,) একটি ভাষণ দেন যা ইসলামের ইতিহাসে বিদায় হজের ভাষণ বলা হয়।

বিদায় হজের ভাষণ: মহানবী (সা.) সাহাবীদের ও মক্কা বাসিদের উদ্দেশ্য বলেন, হে লোকেরা! আমার কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করো। আমার মনে হয়, এরপর আর আমার পক্ষে হজের মহান আনুষ্ঠানিকতায় যোগদান করা সম্ভব হবে না।

(১) (হত্যার বদলে হত্যা প্রথা বন্ধ করে বলেন) ‘শুনে রাখো, অন্ধকার যুগের সব কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস আর অনাচার আজ আমার পায়ের নিচে দাফন করা হলো। বর্বর যুগের শোণিত-প্রতিশোধ প্রথা আজ থেকে রহিত করা হলো।… আমি সর্বপ্রথম আমার স্বগোত্রের প্রাপ্য সুদ এবং সব ধরনের রক্তের দাবি রহিত ঘোষণা করছি।… মনে রেখো! একজনের অপরাধে অন্যকে দণ্ড দেওয়া যাবে না। পিতার অপরাধে পুত্র এবং পুত্রের অপরাধে পিতাকে অভিযুক্ত করা চলবে না।’

(২) (সুদ প্রথা সম্পর্কে বলেন) অজ্ঞ যুগের সব সুদ আজ থেকে বাতিল করা হলো। আমি সর্বপ্রথম আমার স্বগোত্রের প্রাপ্য সুদ ও সব ধরনের রক্তের দাবি রহিত ঘোষণা করছি।’

(৩) (নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যের ব্যাপারে বলেন) যদি কোনো নাককাটা হাবশি ক্রীতদাসকেও তোমাদের আমির নিযুক্ত করা হয় এবং সে আল্লাহর কিতাব অনুসারে তোমাদের পরিচালনা করে, তাহলে তোমরা সর্বতোভাবে তার আনুগত্য করবে, তার আদেশ মান্য করবে। সাবধান!’

(৪) (ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি সম্পর্কে বলেন) ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। সীমালঙ্ঘনের কারণে তোমাদের পূর্ববর্তী বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে। মনে রেখো! তোমাদের সবাইকেই আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতে হবে। তাঁর কাছে এসব কথার জবাবদিহি করতে হবে। সাবধান, তোমরা খোদাদ্রোহী হয়ে পরস্পর রক্তপাতে লিপ্ত হয়ো না।’
(৫) (অন্যের সম্পত্তি, ইজ্জতের হেফাজত সম্পর্কে বলেন) স্মরণ রেখো, আজকের এই দিন, এই মাস যেমন মহিমান্বিত, মক্কার হেরেম যেমন পবিত্র, প্রতিটি মুসলমানের ধনসম্পদ, সবার ইজ্জত-সম্ভ্রম এবং প্রতিটি মুসলমানের রক্তবিন্দু তোমাদের কাছে সে রকমই পবিত্র। আগের বিষয়গুলোর পবিত্রতা নষ্ট করা যেমন তোমরা পরিত্যাজ্য ও হারাম বলে জানো, তেমনি কোনো মুসলমানের সম্পদ, সম্ভ্রম ও জীবনের ক্ষতিসাধন তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, মহাপাপ।’

(৬) (মানুষে-মানুষে ভেদাভেদ নেই সে ব্যাপারে বলেন) ‘অনারবদের ওপর আরবদের প্রাধান্যের কোনো কারণ নেই। শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গেও ভেদাভেদ নেই। প্রাধান্যের মাপকাঠি হলো একমাত্র খোদাভীতি। মানুষ সবাই আদমের সন্তান আর আদম মাটি থেকে সৃষ্ট। জেনে রাখো, জগতের সব মুসলমান মিলে এক অবিচ্ছেদ্য ভ্রাতৃসংঘ।’

(৭) (শেষ নবী এর ব্যাপারে বলেন) হে লোকেরা, জেনে রাখো, আমার পরে আর কোনো নবীর আগমন হবে না। আমি যা বলছি, মনোযোগ দিয়ে শোনো। এ বছরের পর হয়তো তোমরা আর আমার সাক্ষাৎ পাবে না। জ্ঞান উঠে যাওয়ার আগেই আমার কাছ থেকে শিখে নাও। চারটি বিষয় বিশেষ করে স্মরণ রেখো! (১) কখনো শিরক করো না, (২) অন্যায়ভাবে নরহত্যা করো না, (৩) অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করো না, (৪) কখনো ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ো না। সাবধান, কারো অসম্মতিতে তার সামান্য সম্পদও গ্রহণ করো না। জুলুম করো না। জুলুম করো না! কোনো মানুষের ওপর জুলুম করো না।’

(৮)(শয়তান সম্পর্কে সাবধানবাণী দিয়ে বলেন) আমি তোমাদের কাছে যা রেখে যাচ্ছি, যত দিন তোমরা সেগুলো আঁকড়ে ধরে রাখবে, পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হলো আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর রাসুলের সুন্নাত। হে লোকেরা, সাবধান! এমন অনেক বিষয়কে তোমরা ক্ষুদ্র বলে জ্ঞান করো, অথচ শয়তান তারই মাধ্যমে তোমাদের সর্বনাশ করে ছাড়ে। সে বিষয়গুলো সম্পর্কে খুবই সাবধান থাকবে।’

(৯) (স্ত্রীদের প্রতি সদাচরণ সম্পর্কে বলেন) অতঃপর, হে লোকেরা! নারীদের বিষয়ে আমি তোমাদের সতর্ক করছি। তাদের প্রতি নির্দয় ব্যবহার করার সময় তোমরা আল্লাহর শাস্তির কথা ভুলে যেয়ো না। নিশ্চয়ই তোমরা তাদের আল্লাহর জামিনে গ্রহণ করেছ এবং তাঁরই কালাম দ্বারা তাদের সঙ্গে তোমাদের দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। মনে রেখো, তোমাদের সহধর্মিণীদের ওপর তোমাদের যেমন দাবিদাওয়া ও অধিকার রয়েছে, তেমনি তোমাদের ওপরও তাদের দাবিদাওয়া ও স্বত্বাধিকার রয়েছে। পরস্পরকে নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করবে। স্মরণ রাখবে, এ অসহায়দের একমাত্র সহায় তোমরাই।’

(১০) (দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার সম্পর্কে বলেন) স্মরণ রেখো, তোমাদের অধীন দাস-দাসীরা অসহায়-নিরাশ্রয়। সাবধান! তাদের ওপর কখনো জুলুম করবে না, তাদের অন্তরে আঘাত দেবে না। তোমাদের মতো তাদেরও একটি হৃদয় আছে। ব্যথা দিলে কষ্ট পায় আর আনন্দে আপ্লুত হয়। শুনে রাখো! ইসলামের নির্দেশ হলো, তোমরা যা খাবে দাস-দাসীদেরও তা-ই খাওয়াবে। তোমরা যা পরবে, তাদের তা-ই পরাবে। কোনো ধরনের তারতম্য করা চলবে না।’

(১১) (আত্মপরিচয় অস্বীকারের বিষয়ে নিষেধ করে বলেন) যে নিজের বংশের পরিবর্তে নিজেকে অন্য বংশের বলে প্রচার করে, তার ওপর আল্লাহর, ফেরেশতাকুলের ও সমগ্র মানবজাতির অনন্ত অভিশাপ।’

(১২) (কোরআনের বাণী প্রচা্রের ব্যাপারে বলেন) আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর কিতাব রেখে যাচ্ছি। যত দিন তোমরা সে কিতাব অবলম্বন করে চলবে, তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। আজ যারা এখানে উপস্থিত আছ, তারা আমার এসব পয়গাম অনুপস্থিতদের কাছে পৌছেঁ দেবে। হতে পারে উপস্থিত কারো কারো থেকে অনুপস্থিত কেউ কেউ এর দ্বারা বেশি উপকৃত হবে।

হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মৃত্যেুর বছর: ৬৩ বছর বয়সে, হিজরি একাদশ বৎসরে, ১২ রবিউল আউয়াল তারিখ (৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জুন) সোমবার দ্বিপ্রহরে হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এই পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়ে চলে যান।

পরিশেষে বলা যায় যে, হজরত মুহাম্মাদ (সা.) নবীদের মধ্যে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী। তিনি রাহমাতুল্লিল আলামিন অর্থাৎ জগতের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। তিনি ছিলেন ফুলের মতো সৌরভময় মহাপুরুষ। শিশুর মতো সরল। সত্য ন্যায়ের প্রতি ছিল তাঁর অনড় বিশ্বাস। তাঁর জীবনাদর্শ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে বিশ্বের সকল মানুষের জন্য অনুসরণীয়।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এর জীবনী রচনা ৫০০ শব্দ এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url