হিজরত শব্দের অর্থ কি? বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে হিজরত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচন করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে হিজরত শব্দের অর্থ কি বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
হিজরত শব্দের অর্থ কি? বিস্তারিত জেনে নিন
মহানবী হজরত মুহাম্মদ ( সা.) ৫৭০ মতান্তরে ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দে মক্কার বিখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম হলো আব্দুল্লাহ এবং মাতার নাম হলো আমিনা। মহানবী হজরত মুহাম্মদ ( সা.) তার জীবনে কোনো দিন মিথ্যা কথা বলেননি। এবং তিনি ছিলেন একজন বিশ্বাসী মানুষ তাই তৎকালীন মক্কার মানুষেরা তাকে আলআমীন উপাধি দিয়েছিলো। তিনি ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা ছেড়ে মদিনায় হিজরত করেন মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে। পোস্ট সূচিপত্র

হিজরত শব্দের অর্থ কি?

হিজরত শব্দের অর্থ হলো গমণ করা। নবি করিম ( সা.) ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে কুরাইশদের অত্যাচারে অতিষ্টিত হয়ে আল্লাহর নির্দেশে খুলাফায়ে রাশেদিনের ১ম খলিফা আবু বকরকে নিয়ে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্য মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন। উল্লেখ্য যে বিভিন্ন ঐতিহাসিক হিজরতকে বিভিন্ন ভাবে মূল্যায়ন করেছেন। 

যেমন- কোনো কোনো ঐতিহাসিক হিজরতকে তথাকথিক পলায়ন বলে উল্লেখ করেছেন। পক্ষান্তরে অর্থাৎ প্রকৃত বানী হলো এই যে ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের মূল হিজরতের কারন হলো আল্লাহর নির্দেশ ও ইসলাম প্রচার করা। হিজরতের কয়েকটি কারণ হলোঃ ১. ভৌগলিক কারন, ২. মনসতান্ত্রিক কারন ৩. আত্মীয়তার কারন ও ৪. মুসাবের অনুকূল রিপোর্ট।

আত্মীয়তার সম্পর্ক

মহানবি হজরত মুহাম্মদ ( সা.) এর পিতামহ এবং পিতা আব্দুল্লাহ মদিনায় বিয়ে করেছিলেন। ফলে কুরাইশদের নির্মম অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে উঠলে মদিনাবাসীরা তার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে আশ্রয় দেন। মদীনায় নানা-নানীর সূত্রে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকায় মহানবি হজরত মুহাম্মদ (সা.) মদিনারে ইসলাম প্রচারের একটি অনুকূল স্থান হিসেবে মনে করেন। এবং মদিনায় হিজরত করেন।

ভৌগলিক কারন

অনুর্বর ও পবর্তময় মক্কার অধিবাসীরা উষ্ণ আবহাওয়া ও শুস্ক জলবায়ুর জন্য রুক্ষ ও বদমেজাজী ছিল। অপরদিকে মনিনার আবহাওয়া শীতল হওয়ার জন্য মদীনা বাসীরা অপেক্ষাকৃত শান্ত স্বভাবের, হিতাহিত জ্ঞান সম্পন্ন ও সরলমনা ছিলো। তাই মহানবি হজরত মুহাম্মদ ( সা.) ইসলাম প্রচারের জন্য মদিনা অনুকূল পরিবেশ বলে মনে করেন এবং মদিনায় হিজরত করেন।

মূসাবের অনুকূল প্রতিবেদন

মদিনাবাসীর আগ্রহ দেখে মহানবি হজরত মুহাম্মদ ( সা.) মুসাব ইবনে উমাইর নামক এক সাহাবীকে হিজরতের ১ বছর আগে মদীনায় ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্য পাঠায়। মুসাব মদিনায় ইসলাম প্রচারের অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান বলে মহানবি হজরত মুহাম্মদ ( সা.) কে অবগত করলে তিনি মদিনায় হিজরতের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন।

মহানবি হজরত মুহাম্মদ ( সা.) আবিসিনিয়ায় হিজরত

মক্কায় ইসলাম প্রচারের শুরুর দিক থেকেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর অনুসারীরা মুশরিক কুরাইশদের দ্বারা চরম নির্যাতনের শিকার হন। অত্যাচারের মাত্রা এতটাই বেড়ে যায় যে মুসলমানদের পক্ষে মক্কায় বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে মহানবী (সা.) তাঁর সাহাবীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান করতে থাকেন। এ সময় তিনি জানতে পারেন যে আবিসিনিয়ার (বর্তমান ইথিওপিয়া) নাজাশি রাজা ন্যায়পরায়ণ এবং ধর্মীয় স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তাই ৬১৫ খ্রিস্টাব্দে মহানবী (সা.) তাঁর কয়েকজন সাহাবাকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করার অনুমতি দেন।

আবিসিনিয়ার নাজাশি রাজা মুসলমানদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান এবং তাঁদের পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদান করেন। তবে কুরাইশরা এ হিজরত মেনে নিতে পারেনি। তারা নাজাশির দরবারে দূত পাঠিয়ে মুসলমানদের ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানায়। কিন্তু নাজাশি ইসলাম সম্পর্কে শুনে মুগ্ধ হন এবং মুসলমানদের রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। এভাবেই আবিসিনিয়ায় হিজরত ইসলামের ইতিহাসে প্রথম প্রবাসী মুসলিম সমাজের সূচনা করে এবং নিপীড়িত সাহাবিদের জন্য স্বস্তি নিয়ে আসে।

মদিনার পূর্ব নাম কি ছিল

মদিনার পূর্ব নাম ছিল "ইয়াসরিব"। ইসলামের আবির্ভাবের আগে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ ছিল, যেখানে বিভিন্ন আরব গোত্র, বিশেষ করে আওস ও খাজরাজ গোত্রের লোকেরা বসবাস করতেন। ইয়াসরিব মূলত একটি কৃষিপ্রধান জনপদ ছিল এবং এখানকার বাসিন্দারা খেজুর চাষ ও ব্যবসার ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। তবে এই শহরে শুধু আরবরা নয়, বেশ কিছু ইহুদিও বসবাস করত, যারা বণিক ও ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিল।

ইয়াসরিব নামটি ইসলামের ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে যখন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে হিজরত করে এখানে আগমন করেন। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে তিনি সাহাবিদের নিয়ে ইয়াসরিবে পৌঁছালে এখানকার জনগণ তাঁকে সাদরে গ্রহণ করে এবং ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। মহানবী (সা.) এখানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং শহরটির নাম পরিবর্তন করে "মদীনাতুন নবী" বা "নবীর শহর" রাখেন, যা সংক্ষেপে "মদিনা" নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। মদিনা ইসলামের ইতিহাসে এক বিশেষ স্থান লাভ করে, কারণ এখানেই ইসলামের প্রথম রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে ওঠে এবং এখান থেকেই ইসলাম বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করে।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে হিজরত শব্দের অর্থ কি এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুয়ায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url