সততা ও সত্যবাদিতা রচনা বিস্তারিত জেনে নিন
ভূমিকা: সততা একটি সর্বশ্রেষ্ঠ মানবীয় গুন। মানুষের আমৃত্যু সাধনা সততার লালনে, সৎ থাকায়। সততার গুণ অর্জন ছাড়া মানুষের জীবন পশুত্বে পর্যবসিত হতে বাধ্য। তাই সততা ব্যক্তি-মানুষের জীবন-উৎকর্ষের জন্য যেমন মহামূল্যবান তেমনি মানব সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সততার চেতনাশূন্য সমাজ নরকতুল্য। মানুষের স্বাভাবিক জীবন বিকাশের জন্য তা মোটেই সহায়ক নয়। তাই ব্যক্তিগত ও সামাজিক পর্যায়ের সর্বত্র সততার চর্চা করা সকলের কাম্য।
সততা কী: সততা মূলত একটি বিমূর্ত ধারণা। তবে এটি একটি কাঙ্ক্ষিত ও ইতিবাচক প্রত্যয়। সততা মূলত সৎ মানুষের সামগ্রিক জীবনাচরণেরই স্বরূপ। দেশ-কাল-পাত্রভেদে সততার কোনো প্রার্থক্য নেই। তবে ধর্ম-সংস্কৃতি ও জাতিগত পার্থক্যে এ প্রত্যয়টির চেতনাগত কিছু পার্থক্য আছে বৈকি! প্রকৃতপক্ষে সততা হচ্ছে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের অপর নাম। কখনো ধর্ম সততার নির্ধারক হয়, কখনোবা সমাজের প্রচলিত ধারণা একে নির্দেশ করে। যেভাবেই হোক সততার একটি অভিন্ন স্বরূপ মানুষের মধ্যে বদ্ধমূল হয়েছে এবং সততার লক্ষণ যার মধ্যে স্পষ্ট হয়ে উঠে তাকেই মানুষ নির্দ্বিধায় সৎ বলে থাকেন। তবে সততা বিশেষ কোনো একটি গুণ নয়, এটি একটি সমন্বিত বিষয়। অর্থাৎ সকল প্রকার সুন্দর গুণের অনুশীলনেই মানুষ সৎ হয়ে উঠে।
মানবজীবনে সততার প্রয়োজনীয়তা: মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। কিন্তু মানুষ জন্মমাত্রই এ শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী হয় না। তাকে সত্য-সুন্দর ও কল্যাণের সাধনায় মনুষ্যত্ব অর্জনের মাধ্যমে মানুষ হয়ে উঠতে হয়। সততার সৌন্দর্যে যখন সে প্রোজ্জ্বল হয়ে উঠে তখনই সে হয়ে যায় আশরাফুল মাখলুকাত। আবার মানুষ যখন তার কুপ্রবৃত্তিকে দমন করতে ব্যর্থ হয়ে নিজেকে রিপুর দাসানুদাসে পরিণত করে তখন সে ইতর প্রাণীর চেয়েও নিকৃষ্ট হয়ে পড়ে। তখন তার দ্বারা মানবতা উপকৃত হয় না, সমাজ কল্যাণ ধারায় সিক্ত হয় না।
আরো পড়ুন: সময়ের মূল্য রচনা
মানুষ তার মুখদর্শনে পুলকিত হয় না এবং ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয় সকলে। একজন সৎ মানুষ সকলের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় অভিষিক্ত হয়। বস্তুগত অভাব থাকলেও সে জীবনে কোনো দিনই অভা-তাড়িত হয় না, কোনো দিনই তার জীবন থেকে যায় না। অন্যের সহমর্মিতা ও সহযোগিতায় তার জীবন সাবলীলতা পায়। সৎ মানুষকে সকলে অনুসরণ ও অনুকরণের যোগ্য বলে মানে। সততার মাধ্যমে একজন মানুষ নিজেকে সর্বজয়ী করে তোলে। সত্যের আলো, কল্যাণের স্বর্গশ্রী ও সুন্দরের প্রেরণায় সে নিজেকে অভিষিক্ত করে।
সততার স্বরূপ: সততা বিমূর্ত ধারণা হলেও এটি কোনো আপেক্ষিক বিষয় নয়। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিত্বে সময় ও পরিস্থিতিতে সততার রং পরিবর্তিত হয় না। এটি কোনো মুখে আওড়ানোর বিষয়নও নয়। কারণ এটি কোনো মন্ত্র বা দোয়া নয়। কর্ম ও আচরণের সংমিশ্রণে সততা বাস্তবতা পায়। তবে চিন্তা-চেতনা ও মনোগত বিষয়টি উপেক্ষণীয় নয়। প্রকৃতপক্ষে মানুষের চিন্তা ও কর্মের যুগপৎ সৌন্দর্যেই সততা প্রকাশ পায়। একজন সৎ মানুষ কোনো কুচিন্তা করতে পারেন না, মানুষের অমঙ্গলের কথা ভাবতে পারেন না। তার আচরণে বিনয়, মাধুর্য ও শালীনতা প্রকাশ পায়।
লোভ-লালসা, ক্ষমতা ও প্রতিপত্তিকে সে নির্মোহভাবে এড়িয়ে চলে। সৎকর্ম সে লোক দেখানোর জন্য করে না। সততা মুখের উচ্চারণে প্রমাণ হয় না। একজন মানুষ তখনই সৎ যখন অসৎ কর্ম করে না। পাপ ও অপরাধ তাকে স্পর্শ করতে পারে না। তবে অসৎ কর্ম না করার মানেই সততা নয়। প্রকৃতপক্ষে অসততাকে সর্বতোভাবে প্রতিরোধ করাই সততা।
সততা অর্জনের সময়: সততা জীবনের কোনো আংশিক বা বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। এটি জীবনের কোনো বিশেষ সময়ের প্রয়োজনও নয়। মূলত এটি জীবনব্যাপী একটি সাধনা। মুহূর্তের লোভে বা ভুলে মানুষ খাদে নিপতিত হতে পারে। মূলত অসততাকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সজ্ঞানে এড়িয়ে চলতে হয়। বলাবাহুল্য, সততাকে অক্ষুণ্ণ ও অব্যাহত রাখা একটি কঠিন সাধনার বিষয়। এ সাধনার কোনো বিরতি নেই।
আরো পড়ুন: ২১ ফেব্রুয়ারি রচনা
তবে সততার চেতনাটি মানুষের মনে গেঁথে দিতে হয় বাল্যকালেই। সেজন্য পরিবারই সততা রপ্ত করার মূল কেন্দ্র। পরিবারের সদস্যদের জীবনে সততা ও পবিত্রতার অনুশীলন থাকলে শিশুমনেই একটি পবিত্র ও নীতিবৃক্ষ বিকশিত হতে থাকে। তবে ছাত্রজীবন, কর্মজীবন ও সামাজিক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সৎ মানুষের অনুসরণে সততার চেতনাকে জাগ্রত রাখতে হবে।
উপসংহার: আজকের দিনে সৎ-অসৎ, সুন্দর-অসুন্দর, ভালো-মন্দ প্রভৃতির পার্থক্য যেন একাকার হয়ে গেছে। একজন সৎ মানুষ সমাজে দুর্লভ এবং বলাবাহুল্য, যে সৎ মানুষ সে সমাজে বোকা ও অচল বলেই পরিহাসের পাত্র হয়ে থাকে। তা সত্বেও সততার নীতিকে উপেক্ষা করা যাবে না। আজকের সর্বময় অবক্ষয়ে ধ্বংসসোন্মুখ সমাজকে কল্যাণকামী করে তোলার জন্য সততার চেতনাটি সকলের মনে প্রজ্বলিত রাখতে হবে। সততার সাধনাকে আমাদের জীবনব্রত হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url