লিঙ্গ কাকে বলে? লিঙ্গ কত প্রকার ও কি কি? বিস্তারিত জেনে নিন
লিঙ্গ কাকে বলে?
নামবাচক পদের স্ত্রী, পুরুষ ইত্যাদি ভেদে শ্রেণিকরণ করাকে লিঙ্গ বলে। মানুষ বা অন্য প্রাণীদের দু ভাগে ভাগ করা হয়। নারী ও পুরুষ। যেমন- মা-নারী বাবা-পুরুষ, বোন নারী, ভাই পুরুষ। আবার নারীও নয়, পুরুষও নয়-এমন কিছু আছে। এগুলোকে বলা হয় বস্তু। বস্তুর প্রাণ নেই। তা অচেতন পদার্থ। যেমন বই, কলম, ঘর, টেলিভিশন ইত্যাদি।
ভাষার এই পুরুষ, নারী বা অচেতন পদার্থ কিংবা কোনো ভাব বুঝানোর জন্য নির্দিষ্ট থাকে। বাংলা ভাষায় এমন বহু শব্দ রয়েছে, যেগুলো পুরুষবাচক। যেমন, বাবা, চাচা, ভাই, ছেলে ইত্যাদি। আবার কতগুলো শব্দ রয়েছে, যেগুলো স্ত্রীবাচক। যেমন, মা, চাচী, মেয়ে ইত্যাদি। শব্দের এই স্ত্রী-পুরুষ ভেদাভেদই লিঙ্গ হিসেবে ব্যাকরণে উল্লেখ করা হয়েছে।
লিঙ্গ কত প্রকার ও কি কি?
লিঙ্গ চার প্রকার। যেমন - ১. পুংলিঙ্গ ২. স্ত্রীলিঙ্গ ৩. উভয় লিঙ্গ, ৪. ক্লীবলিঙ্গ।
১. পুংলিঙ্গঃ যেসব শব্দ দ্বারা জাতি বুঝায়, সে সব শব্দকে পুংলিঙ্গ বলে। যেমন - পিতা, ভাই, শিক্ষক, বালক, রাজা, দাদা, নানা, বন্ধু, জেলে, চাকর, সেবক, লেখক, সৎ, নদ ইত্যাদি।
২. স্ত্রীলিঙ্গঃ যেসব শব্দ দ্বারা স্ত্রী জাতি বুঝায়, সে সব শব্দকে স্ত্রীলিঙ্গ বলে। যেমন - মাতা, খালা, ভাবী, বোন, মেয়ে, শ্যালিকা, রাণী, সখী, স্ত্রী, জেলেনী, সেবিকা, লেখিকা, সতী, নদী ইত্যাদি।
৩. উভয় লিঙ্গঃ যেসব শব্দ দ্বারা পুরুষ-স্ত্রী উভয় জাতিকে বুঝায়, সে সব শব্দকে উভয়লিঙ্গ বলে। যেমন - মানুষ, সন্তান, পাখি, শিশু, শিক্ষক, গরু ইত্যাদি।
৪. ক্লীবলিঙ্গঃ যেসব শব্দ দ্বারা পুরুষ কিংবা স্ত্রী কিছুই বুঝায় না সে সব শব্দকে ক্লীবলিঙ্গ বলে। যেমন - ঘর, কলম, বই, ফুল, টুপি, দালান, জামা, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি।
বাংলায় পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ
সব ভাষায় লিঙ্গভেদে শব্দভেদ রয়েছে, বাংলা ভাষায়ও আছে। বাংলা ভাষায় বহু বিশেষ্য পদ রয়েছে যাদের কোনটিতে পুরুষ ও কোনটিতে স্ত্রী বুঝায়। যে শব্দে পুরুষ বুঝায় তাকে পুরুষবাচক শব্দ এবং যে শব্দে স্ত্রী বুঝায় তাকে স্ত্রীবাচক শব্দ বলে। যেমন, বাপ-মা, ভাই-বোন, ছেলে-মেয়ে। এ বাক্যে বাপ, ভাই ও ছেলে পুরুষবাচক শব্দ আর মা, বোন মেয়ে স্ত্রীবাচক শব্দ।
আরো পড়ুন: অ ধ্বনি উচ্চারণের পাঁচটি নিয়ম
বাংলা ভাষায় পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ মূলত দুইভাগে বিভক্তি। যেমনঃ ১. পতি ও পত্নীবাচক অর্থে। যেমন আব্বা-আম্মা, চাচা-চাচী, জেঠা-জেঠী, দাদা-দাদী, নানা-নানী ইত্যাদি। ২. পুরুষ ও মেয়ে বা স্ত্রী জাতীয় অর্থে। যেমনঃ খোকা-খুকী, ভাই-বোন, বালক-বালিকা, পাগল-পাগলী, ভেড়া-ভেড়ী ইত্যাদি।
পুরুষ ও স্ত্রীবাচক শব্দ গঠন
১. পতি ও পত্নীবাচক অর্থেঃ যেমন
- আব্বা-আম্মা
- ভাই-ভাবী
- রাজা-রাণী
- বর-কনে
- বাবা-মা
- চাচা-চাচী
- জেঠা-জেঠী
- কাকা-কাকী
- নানা-নানী
- মামা-মামী
- গোলাম-বাঁদী
- বলদ-গাই
- জামাই-বউ
- ভূত-পেত্নী
- সাহেব-মেম
- কুলি-কামিন
- চাকর-ঝি
- পতি-পত্নী
- বাদশা-বেগম
- দেবর-জা
২. পুরুষ ও মেয়ে বা স্ত্রীজাতীয় অর্থেঃ যেমন
- খোকা-খুকী
- ভাই-বোন
- পাগল-পাগলী
- বামন-বামনী
- ভেড়া-ভেড়ী
- মোরগ-মুরগী
- বালক-বালিকা
- দেবর-ননদ
৩. পুরুষবাচক শব্দের শেষে আ-প্রত্যয় যোগ করে। যেমন
- মৃত-মৃতা
- বৃদ্ধ-বৃদ্ধা
- সরল-সরলা
- চপল-চপলা
- প্রিয়-প্রিয়া
- প্রবীণ-প্রবীণা
- নিপুণ-নিপুণা
- সভ্য-সভ্যা
- কনিষ্ঠ-কনিষ্ঠা
- কৃপণ-কৃপণা
- শিষ্য-শিষ্যা
- চতুর-চতুরা
- নবীন-নবীনা
- দরিদ্র-দরিদ্রা
- সদস্য-সদস্যা
- কোকিল-কোকিলা
- তনয়-তনয়া
- পশ্চিম-পশ্চিমা
- মাননীয়-মাননীয়া
- মলিন-মলিনা
- আধুনিক-আধুনিকা
- অধ্যক্ষ-অধ্যক্ষা
- মহাশয়-মহাশয়া
- জ্যেষ্ঠ-জ্যেষ্ঠা
- মহোদয়-মহোদয়া
- প্রথম-প্রথমা
- বিবাহিত-বিবাহিতা
- দ্বিতীয়-দ্বিতীয়া
পুরুষবাচক শব্দে ঈ-প্রত্যয় যোগ করে। যেমনঃ
- কুমার-কুমারী
- তরুণ-তরুণী
- নর্তক-নর্তকী
- সুন্দর-সুন্দরী
- সখা-সখী
- মানব-মানবী
- বুড়া-বুড়ী
- ময়ূর-ময়ূরী
- পাত্র-পাত্রী
- গুণবান-গুণবতী
- বেঙ্গমা-বেঙ্গমী
- ঘটক-ঘটকী
- ছোঁড়া-ছুঁড়ী
- ছাত্র-ছাত্রী
- নদ-নদী
- নেতা-নেত্রী
- কপোত-কপোতী
- কিশোর-কিশোরী
- রজক-রজকী
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে লিঙ্গ কাকে বলে? লিঙ্গ কত প্রকার ও কি কি? এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। প্রিয় পাঠক, এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url