প্রতিবেদন লেখার নিয়ম বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম গুলো বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

প্রতিবেদন বলতে কি বুঝ?

প্রতিবেদন শব্দটি বহুল ব্যবহৃত ও পরিচিত একটি শব্দ । প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা ধারাবাহিক বিবরণীকে বোঝায়। কোন তথ্য, ঘটনা বা বক্তব্য সম্পর্কে বর্ণনা দানই প্রতিবেদন। এতে কোনো কাজের বিভিন্নমুখী বর্ণনা প্রকাশ পায়। এতে কাজের নির্দেশ, পরামর্শ, সিদ্ধান্ত ইত্যাদি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। প্রতিবেদন কোন বিষয়ের তথ্য, উপাত্ত, সিদ্ধান্ত, ফলাফল ইত্যাদি যে কোন একটি বা কয়েকটি যথাযথ অনুসন্ধানের পর বিবরণী তৈরি করে কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা বিভাগে পেশ করেন। প্রতিবেদন বিশেষ কৌশল বা পদ্ধতিতে রচিত বিবৃতি বা বিবরণী। কারো কারো মতে তথ্যগত সত্যনিষ্ঠ বিবরণীকেই প্রতিবেদন বলা হয়।
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম বিস্তারিত জেনে নিন
অধ্যাপক মাইক হ্যাচ বলেন, প্রতিবেদন হল একটি সুসংগঠিত তথ্যগত বিবৃতি যা কোন বক্তব্য সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত অথচ সঠিক বর্ণনা বিশেষ। একে যথেষ্ট সতর্কতা, পর্যক্ষণ, পর্যালোচনা, গবেষণা ও বিচার বিশ্লেষণের পর তৈরি করা হয়। মনে রাখতে হবে প্রতিবেদন হল কোন বিষয়ের পুনঃউপস্থাপনা। এটি একটি বিশেষ কলা-কৌশল যার মাধ্যমে লেখক প্রত্যক্ষভাবে পরীক্ষিত, বিশ্লেষিত, পর্যালোচিত ও নিরুপিত তথ্য বা ঘটনার বিবরণী তৈরি করে প্রকাশ করে থাকেন। এতে লেখকের সুপারিশ থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। আইন আদালত ও ব্যবসায়-বাণিজ্যে প্রতিবেদনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। পূর্বে প্রতিবেদন বলতে বোঝাত কেবল পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিবরণীকে। 

কিন্তু বর্তমানে কর্মজীবনে নানা রকম সংকট ও জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিবেদনের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দৈনন্দিন জীবনে এর উপযোগিতা সম্প্রসারিত হচ্ছে। প্রতিবেদনের প্রয়োজন এ কারণে যে, এর মাধ্যমে কোন বিষয় সম্পর্কে খুঁটিনাটি ও বিস্তারিত তথ্যাদি অবগত হওয়া যায় এবং তার প্রেক্ষিত কোন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। প্রতিবেদন কোন সংস্থার ব্যবস্থাপনার কার্যাবলিকে সহজ করে থাকে। কোন বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহন, সংগঠন, নির্দেশনা, নিয়ন্ত্রণ, ফলাফল নিরূপণ, সমন্বয় সাধন ইত্যাদি কাজে প্রতিবেদন বিশেষ সাহায্য করে থাকে। প্রতিবেদন পাঠের মাধ্যমে তার বিষয় সম্পর্কে যথাযথ অবহিত হওয়া যায়। 

এ কারণে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে প্রতিবেদন বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। সংগঠনের ব্যবস্থাপনার কাজে প্রতিবেদন বিশেষভাবে সহায়ক। প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিচালনা ও নীতি নির্ধারণে প্রতিবেদন থেকে বিশেষ সহায়তা পাওয়া যায়। কোন বিরোধপূর্ণ ও জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলার পন্থা প্রতিবেদনে নির্দেশিত হয়ে থাকে। প্রতিবেদন একটি স্থায়ী ও প্রামাণ্য দলিল এবং এ থেকে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।

প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য কি? ইহা কয় প্রকার ও কি কি?

প্রতিবেদন রচনার সুনির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। যেমন (ক). বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্টভাবে সবাইকে অবহিত করা, (খ). নিরপেক্ষভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করা, (গ). জটিল বিষয়ের ব্যাখ্যা প্রদান করা, (ঘ). কোন বিষয়ে মতামত প্রদান করা, (ঙ). কার্যের সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন করা, (চ). সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করা।

প্রতিবেদনের শ্রেণীবিভাগ

প্রতিবেদন নানা রকম হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
  • রীতি সিদ্ধ প্রতিবেদন
  • নিয়মিত প্রতিবেদন
  • বিশেষ প্রতিবেদন
  • প্রার্থিত প্রতিবেদন
  • কোম্পানি প্রতিবেদন
  • অবিধিবদ্ধ প্রতিবেদন
  • সংবাদপত্রের প্রতিবেদন
  • রীতি বিরুদ্ধ প্রতিবেদন
  • সাময়িক প্রতিবেদন
  • নির্বাহী প্রতিবেদন
  • অপ্রার্থিত প্রতিবেদন
  • বিধিবদ্ধ প্রতিবেদন
  • সরকারি প্রতিবেদন
  • তদন্ত প্রতিবেদন ইত্যাদি।

প্রতিবেদন তৈরি করার সময় কি কি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে?

১। নির্দিষ্ট কাঠামো: প্রতিবেদন রচনার জন্য একটি নির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করতে হবে। এতে সাধারণত শিরোনাম, প্রাপকের নাম ঠিকানা, সূচিপত্র, বিষয়বস্তু, তথ্যপঞ্জী, স্বাক্ষর, তারিখ ইত্যাদি থাকে।

২। সঠিক তথ্য: প্রতিবেদন রচনার পূর্বেই পর্যাপ্ত সঠিক তথ্য, প্রতিবেদকের হাতে থাকতে হবে এবং তা দিয়ে রচিত হবে প্রতিবেদন।

৩। সম্পূর্ণতা: প্রতিবেদনে পরিবেশিত তথ্য হবে নির্ভুল, সম্পূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য।

৪। স্পষ্টতা: অস্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে প্রতিবেদন রচিত হয় না। প্রতিবেদনের দেয় বক্তব্য সুস্পষ্ট হতে হয়।

৫। সংক্ষিপ্ত: দীর্ঘ ও বাহুল্যপূর্ণ বক্তব্য বরাবরই বর্জন করতে হয়। প্রতিবেদনের বক্তব্য হবে সংক্ষিপ্ত।

৭। উপস্থাপনা ও পরিবেশন পদ্ধতি: প্রতিবেদনের উপস্থাপনা হবে আকর্ষণীয়। প্রতিবেদন এর বক্তব্য হবে সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় পরিবেশিত।

৮। সুপারিশ: একটি পরিপূর্ণ প্রতিবেদনের উপসংহারে সুপারিশ সংযোজিত হবে।

পরিশেষে বলা যায় যে, একটি সুন্দর প্রতিবেদন তৈরি করতে হলে উপরোক্ত বিষয়গুলো অবগত থাকতে হবে। প্রতিবেদনের আকার, শ্রেণী, বৈশিষ্ট্য, রীতি-নীতি ও বিষয়বিন্যাসের ওপর ধারণা থাকতে হবে। প্রতিবেদন ছোট হতে পারে, আবার বড়ও হতে পারে। ছোট প্রতিবেদনে শিরোনাম, বিষয়বস্তু, সুপারিশ ও উপসংহার থাকে। আবার বৃহৎ প্রতিবেদন পুস্তকারে হতে পারে। সেখানে সারণী, চিত্র, নকশা, ছক, পরিশিষ্ট, তথ্য নির্দেশ, পরিভাষা পরিচিতি ইত্যাদি থাকতে পারে। এখানে বহু কিছুর বর্ণনা ব্যাখ্যা ও পাদটীকা থাকতে পারে।

প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

১. মাছের চাষ সম্পর্কিত একটি বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি কর।

প্রতিবেদনের শিরোনাম/প্রকৃতিঃ ---------------------

সরেজমিনে তদন্তের স্থানঃ ---------------------------

প্রতিবেদক তৈরির সময়ঃ -----------------------------

প্রতিবেদকের নাম ও ঠিকানাঃ -----------------------

তারিখঃ --------------------------------------------------

বিষয়ঃ ভাসমান পুকুরে মাছ চাষের এক অভিনব পদ্ধতি।

ঢাকা কৃষি কলেজের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের বিজ্ঞানিগণ ভাসমান পুকুরে মাছ চাষের একটি অভিনব পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এ পদ্ধতিতে নদ-নদী, পুকুর-ডোবা, হাওড় ও বিলে ভাসমান পুকুর তৈরি করে অতি সাধারণ প্রযুক্তি খাটিয়ে নিবিড় মাছ চাষ করা সম্ভব, যাকে প্রাকৃতিকভাবে একটি জলাশয়ে যে পরিমাণ মাছের চাষ করা যায় তার চেয়ে ভাসমান পুকুর ব্যবহার করে মাছ চাষের নিবিড়তা বিভিন্ন মাছের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০০ গুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে। ফলে প্রায় একই হারে মাছ উৎপাদনও বৃদ্ধি পেতে পারে।

ঢাকা কৃষি কলেজের ফিসারিজ, বায়োলজী ও লিমনোলজী বিভাগ ১৯৯৮ সালে ভাসমান পুকুরে মাছ চাষের কাজ প্রথম শুরু করে। এ প্রকল্পটির শুরুতে বিজ্ঞাণিগণ পানিতে ভাসমান সরঞ্জামাদি দিয়ে মাছ রাখার মতো খাঁচা তৈরি করেন। এ খাঁচাগুলো মাছের আকার ও পরিমাণের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন আকার ও আয়তনের করা হয়। স্থির জলাশয়ে এবং নদীতে এ খাঁচাগুলোর তিন ভাগের দুভাগ এমনভাবে ডুবানো হয় যাতে খাঁচাগুলো মাটি স্পর্শ না করে। মাছ রাখার উপযোগী এ খাঁচাগুলোকে ভাসমান পুকুর বলে আখ্যায়িত করা হয়। বাঁশজাতীয় দ্রব্যাদির তৈরি ফ্রেমের বাইরে এক প্রকার সিনথেটিক জাল দ্বারা খাঁচাকে আবৃত করা হয় এবং এরূপ তৈরিকৃত ভাসমান পুকুরে বিজ্ঞানিগণ পরিক্ষামূলকভাবে তেলাপিয়া জাতীয় নাইলোটিকা মাছের চাষ করে আকর্ষণীয় সাফল্য লাভ করেন।

ফিলিপাইন ও থাইল্যাণ্ডসহ তৃতীয় বিশ্বের বহুদেশে প্রচলিত এ পদ্ধতিতে বাংলাদেশের মৎস্যবিজ্ঞানিগণ রুই, কমন কার্প, কই, মাগুর এবং কালো মৃগেল চাষেরও উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রকল্পের জনৈক গবেষক জানান যে, মাছের সম্পূরক খাদ্য হিসেবে ফিসমিল, তৈলবীজ, খৈল, চালের কুঁড়া ও গমের ভূষিসহ বাংলাদেশে সহজলভ্য মাছের খাদ্য ব্যবহার করে তারা ভাসমান পুকুরে মাছের উল্লেখযোগ্য উৎপাদন লাভ করেন।

এ গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৫ মাসের ব্যবধানে প্রতিটি রুই মাছের ওজন ১০০ গ্রাম থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়েছে। কমন কার্পের ওজন ১৬ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ গ্রাম পর্যন্ত পাওয়া গেছে। তবে এই পরিক্ষাকাল শীত মওসুমে হওয়ায় গ্রীষ্মকাল থেকে মাছের বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে এতে কম হয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক জলাশয়ের বৈজ্ঞানিক উপায়ে নিবিড় মাছ চাষে মাছের যে সর্বাধিক ঘনত্ব রাখা হয় তার তুলনায় রুই এবং কমন কার্পের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৩০ গুণ এবং নাইলোটিকার ক্ষেত্রে ২৫ থেকে ১শ গুন ঘনত্ব ভাসমান পুকুরে ব্যবহার করা চলে। এতে মাছের বৃদ্ধি কিছু কম হলেও সাধারণ জলাশয়ের চেয়ে ভাসমান পুকুরে মাছচাষ করে অনেক বেশি উৎপাদন পাওয়া সম্ভব।

একজন বিজ্ঞানী জানান, বাংলাদেশের পানি সম্পদকে আরও ফলপ্রসূভাবে কাজে লাগাতে ভাসমান পুকুরে মাছ চাষ দেশের নিবিড় মৎস্য চাষের ক্ষেত্রে এবং মাছ আহরণে একটি অভিনব পন্থা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url