বাস্তব সংখ্যা কাকে বলে? বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে বাস্তব সংখ্যা কাকে বলে এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে বাস্তব সংখ্যা কাকে বলে তা বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বাস্তব সংখ্যা কাকে বলে? বিস্তারিত জেনে নিন
সংখ্যার ইতিহাস মানব সভ্যতার ইতিহাসের মতোই প্রাচীন। পরিমাণকে প্রতীক দিয়ে সংখ্যা আকারে প্রকাশ করার পদ্ধতি থেকে গনিতের উৎপত্তি। গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলের মতে, প্রাচীন মিশরের পুরোহিত সম্প্রদায়ের অনুশীলনের মাধ্যমে গনিতের আনুষ্ঠানিক অভিষেক ঘটে। তাই বলা যায় সংখ্যাভিত্তিক গণিতের সৃষ্টি যীশুখ্রিষ্টের জন্মের প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বে। এরপর নানা জাতি ও সভ্যতার হাত ঘুরে সংখ্যা ও সংখ্যারীতি অধুনা একটি সার্বজনীন রুপ ধারণ করেছে। পোস্ট সূচিপত্র

বাস্তব সংখ্যা কাকে বলে?

বাস্তব সংখ্যা হলো সেই সমস্ত সংখ্যা যা মূলত সকল স্বাভাবিক সংখ্যা, পূর্ণ সংখ্যা, ভগ্নাংশ, সংখ্যা এবং দশমিক সংখ্যার সমন্বয়ে গঠিত একটি সংখ্যা সেট। এটি একটি বিস্তৃত সংখ্যা শ্রেণি যেখানে ধনাত্মক, ঋণাত্মক এবং শূন্যসহ সব ধরণের গাণিতিক সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা দৈনন্দিন জীবনের গাণিতিক হিসাব-নিকাশে ব্যবহৃত হয়।
বাস্তব সংখ্যা রেখায় যেকোনো বিন্দু দিয়ে একটি বাস্তব সংখ্যা উপস্থাপন করা যায়, যা এদের একটি ধারাবাহিক প্রকৃতি নির্দেশ করে। গাণিতিক জগতে বাস্তব সংখ্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এটি বীজগণিত, জ্যামিতি, বিশ্লেষণ ও গণিতের অন্যান্য শাখায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

স্বাভাবিক সংখ্যা কাকে বলে

স্বাভাবিক সংখ্যা হল সেই সংখ্যাগুলি, যা গণনার জন্য স্বাভাবিকভাবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণভাবে, ১, ২, ৩, ৪, ৫ ইত্যাদি সংখ্যা স্বাভাবিক সংখ্যা হিসাবে গণ্য করা হয়। স্বাভাবিক সংখ্যাগুলি ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা এবং শূন্য ছাড়া শুরু হয়। কিছু গণিতবিদ শূন্যকেও স্বাভাবিক সংখ্যার অন্তর্ভুক্ত করেন, তবে প্রচলিতভাবে স্বাভাবিক সংখ্যা ১ থেকে শুরু হয়। এদেরকে ইংরেজিতে Natural Numbers বলা হয় এবং সাধারণত N দ্বারা প্রকাশ করা হয়। 

অর্থাৎ, N={1,2,3,4,5,...}N = \{1, 2, 3, 4, 5, ...\}N={1,2,3,4,5,...}। এই সংখ্যা গুলি গণনা, সংখ্যা বিন্যাস, এবং গাণিতিক ক্রিয়াকলাপের মৌলিক ভিত্তি গঠন করে। গুণনীয়ক, গ.সা.গু, ল.সা.গু ইত্যাদি গাণিতিক কার্যাবলীতে স্বাভাবিক সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দৈনন্দিন জীবনে যেকোনো বস্তুর সংখ্যা গণনা করতে, বয়স নির্ধারণ করতে, সিরিয়াল নম্বর দিতে এবং বিভিন্ন গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে আমরা স্বাভাবিক সংখ্যা ব্যবহার করি।

পূর্ন সংখ্যা কাকে বলে

পূর্ণ সংখ্যা হল সেই সংখ্যাগুলি, যা শূন্য, ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক স্বাভাবিক সংখ্যাকে অন্তর্ভুক্ত করে। এটি গণিতের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা প্রকার, যা Whole Numbers এবং Integers নামে পরিচিত। পূর্ণ সংখ্যা সাধারণত Z দ্বারা প্রকাশ করা হয় এবং এদের সেটটি নিম্নরূপ:

Z={...,−3,−2,−1,0,1,2,3,...}Z = \{ ..., -3, -2, -1, 0, 1, 2, 3, ... \}Z={...,−3,−2,−1,0,1,2,3,...}

পূর্ণ সংখ্যার প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এতে শূন্যসহ সব ধনাত্মক ও ঋণাত্মক সংখ্যা থাকে, কিন্তু ভগ্নাংশ বা দশমিক সংখ্যা অন্তর্ভুক্ত থাকে না। পূর্ণ সংখ্যার মাধ্যমে সংখ্যা যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ ইত্যাদি গাণিতিক ক্রিয়াগুলি সহজে করা যায়।

প্রাত্যহিক জীবনে পূর্ণ সংখ্যা ব্যবহারের অনেক উদাহরণ রয়েছে। যেমন, কোনো দেশের তাপমাত্রা প্রকাশ করতে, ঋণ ও সম্পদের হিসাব রাখতে, ভূগোল বা গণিতের বিভিন্ন গাণিতিক পরিমাপে আমরা পূর্ণ সংখ্যা ব্যবহার করি। বিশেষ করে, ঋণাত্মক পূর্ণ সংখ্যা তাপমাত্রা বা উচ্চতা পরিমাপের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

ভগ্নাংশ সংখ্যা কাকে বলে

ভগ্নাংশ হল এমন একটি সংখ্যা, যা সম্পূর্ণ সংখ্যার অংশকে প্রকাশ করে। এটি দুইটি সংখ্যার অনুপাত বা ভাগফল দ্বারা গঠিত হয়, যেখানে একটি সংখ্যা অন্য সংখ্যা দ্বারা বিভক্ত হয়। ভগ্নাংশকে সাধারণত p/q আকারে লেখা হয়, যেখানে p হল লব (numerator) এবং q হল হর (denominator)। এখানে, q ≠ 0 হতে হবে, কারণ কোনো সংখ্যাকে শূন্য দিয়ে ভাগ করা যায় না। উদাহরণস্বরূপ, 34\frac{3}{4}43​ একটি ভগ্নাংশ, যেখানে ৩ হল লব এবং ৪ হল হর।

ভগ্নাংশের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এটি পরিমাপ, ভাগাভাগি এবং অসম্পূর্ণ পরিমাণ প্রকাশ করতে ব্যবহৃত হয়। দৈনন্দিন জীবনে আমরা অনেক সময় ভগ্নাংশ ব্যবহার করি, যেমন—একটি পিজ্জা সমান ৮ টুকরো করলে প্রতিটি অংশ 18\frac{1}{8}81​ হবে, অথবা ১ কেজি মিষ্টি দুইজনের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করলে প্রত্যেকে 12\frac{1}{2}21​ কেজি করে পাবে।

ভগ্নাংশকে সাধারণত তিনটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করা হয়: সাধারণ ভগ্নাংশ (যেমন 25\frac{2}{5}52​), মিশ্র সংখ্যা (যেমন 3123\frac{1}{2}321​), এবং দশমিক ভগ্নাংশ (যেমন 0.75)। ভগ্নাংশের ব্যবহার গাণিতিক সমস্যা সমাধান, মাপজোখ, অর্থনীতি এবং বিজ্ঞানে ব্যাপকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

মূলদ সংখ্যা কাকে বলে

মূলদ সংখ্যা হল সেই সংখ্যাগুলি, যেগুলোকে দুইটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত বা ভগ্নাংশ আকারে প্রকাশ করা যায়। অর্থাৎ, যদি কোনো সংখ্যা p/q আকারে লেখা যায়, যেখানে p এবং q পূর্ণ সংখ্যা এবং q ≠ 0, তাহলে সেই সংখ্যা একটি মূলদ সংখ্যা। মূলদ সংখ্যাকে ইংরেজিতে Rational Number বলা হয় এবং সাধারণত Q দ্বারা প্রকাশ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, 34\frac{3}{4}43​, −52-\frac{5}{2}−25​, এবং 777 (যা 71\frac{7}{1}17​ হিসেবে লেখা যায়) সবই মূলদ সংখ্যা।

মূলদ সংখ্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল, এটি সীমিত বা অসীম পুনরাবৃত্ত দশমিক সংখ্যা হতে পারে। যেমন, 0.75 (যা 34\frac{3}{4}43​ হিসাবে লেখা যায়) একটি মূলদ সংখ্যা, আবার 0.333... (যা 13\frac{1}{3}31​ হিসাবে প্রকাশ করা যায়) সেটিও মূলদ সংখ্যা। তবে, এমন কোনো সংখ্যা যা দশমিক আকারে শেষ হয় না এবং কোনো পুনরাবৃত্ত ধরণও তৈরি করে না (যেমন, √2 বা π) তা মূলদ সংখ্যা নয়, বরং অমূলদ সংখ্যা।

অমূলদ সংখ্যা কাকে বলে

অমূলদ সংখ্যা হল সেই সংখ্যাগুলি, যেগুলোকে p এবং q আাকারে প্রকাশ করা যায় না। অর্থাৎ, যেসব সংখ্যার দশমিক রূপ অনন্তকাল ধরে চলতে থাকে এবং কখনো পুনরাবৃত্ত হয় না, সেগুলোই অমূলদ সংখ্যা। অমূলদ সংখ্যাকে ইংরেজিতে Irrational Number বলা হয় এবং সাধারণত I দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

উদাহরণস্বরূপ, √2, √3, π (পাই), e (নেপিয়ারের ধ্রুবক) ইত্যাদি অমূলদ সংখ্যা। √2 = 1.41421356..., যেখানে দশমিক অংশ অনন্তকাল ধরে চলতে থাকে এবং কোনো নির্দিষ্ট প্যাটার্ন পুনরাবৃত্ত হয় না, তাই এটি একটি অমূলদ সংখ্যা। একইভাবে, π (3.141592653...) এর মানও শেষ হয় না এবং কোনো নির্দিষ্ট ক্রমে পুনরাবৃত্ত হয় না, তাই এটিও অমূলদ সংখ্যা।

অমূলদ সংখ্যাগুলি বাস্তব সংখ্যার (Real Numbers) অন্তর্ভুক্ত, তবে এগুলো কখনোই ভগ্নাংশে প্রকাশ করা যায় না। গাণিতিক সমীকরণ, জ্যামিতিক পরিমাপ এবং প্রকৃতির বিভিন্ন গাণিতিক নিদর্শনগুলিতে অমূলদ সংখ্যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো বর্গক্ষেত্রের কর্ণের দৈর্ঘ্য নির্ণয়ে পিথাগোরাসের উপপাদ্য ব্যবহার করলে অনেক সময় ফলাফল অমূলদ সংখ্যা হয়, যেমন √2 বা √5।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে বাস্তব সংখ্যা কাকে বলে এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url