সঞ্চয় বলতে কী বুঝায়? জেনে নিন

সঞ্চয় বলতে কী বুঝায়?

আয় থেকে ভোগব্যয় বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাকে ‘সঞ্চয়’ বলা হয়। মানুষ তার আয়ের সবটাই বর্তমান ভোগের জন্য ব্যয় করে না, বরং আয়ের একটি অংশ ভবিষ্যতের জন্য জমা রাখে। সুতরাং মানুষ তার আয়ের যে অংশ বর্তমান ভোগের জন্য ব্যয় না করে ভবিষ্যতের জন্য জমা রাখে তাকেই সঞ্চয় বলে। অর্থাৎ আয় ও ভোগব্যয়ের পার্থক্যই হলো সঞ্চয়। ধরা যাক, কোন ব্যক্তির মাসিক আয় হল ১০,০০০ টাকা। সে যদি উক্ত আয় থেকে ভোগের জন্য ৮,০০০ টাকা ব্যয় করে তাহলে তার মাসিক সঞ্চয়ের পরিমাণ হলো ২,০০০ টাকা।
সঞ্চয় বলতে কী বুঝায়? জেনে নিন
সূত্রাকারে বলা যায়ঃ S = Y - C এখানে S হলো সঞ্চয় Y হলো আয় এবং C হলো ভোগব্যয়। সঞ্চয় মূলত আয় ও ভোগব্যয়ের উপর নির্ভরশীল। এ জন্য আয় প্রদত্ত অবস্থায় ভোগব্যয় যতবেশি হয় সঞ্চয় তত কম হয় এবং ভোগব্যয় যত কম সঞ্চয় ততবেশি হয়। সংক্ষেপে বলা যায় যে, মোট আয় থেকে মোট ভোগব্যয় বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাকে সঞ্চয় বলা হয়।

সঞ্চয়ের নির্ধারক সমূহ

সঞ্চয় সাধারণত আয়ের উপর নির্ভর করে। তবে আয় ছাড়াও বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক উপাদান সঞ্চয়কে প্রভাবিত করে। এগুলোকে সঞ্চয়ের নির্ধারক বলা হয়। সঞ্চয়ের উপর প্রভাব বিস্তারকারী বিভিন্ন উপাদান বা সঞ্চয়ের নির্ধারকগুলা নিচে দেওয়া হলো:

১। আয়: সঞ্চয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হলো আয়। মানুষের আয় বাড়লে সঞ্চয় বাড়ে এবং আয় কমলে সঞ্চয় কমে।

২। দামস্তর: সঞ্চয়ের উপর প্রভাব বিস্তারকারী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো দামস্তর। কারণ, দামস্তর বাড়লে মানুষের সঞ্চয় ক্ষমতা হ্রাস পায়। আবার দামস্তর কমলে সঞ্চয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ দামস্তর বেশি থাকেল সঞ্চয়ের পরিমাণ কম হয় এবং দামস্তর কম থাকলে সঞ্চয় বৃদ্ধি পায়।

৩। সঞ্চয়ের ইচ্ছা: মানুষের সঞ্চয় প্রবণতা সঞ্চয়কে প্রভাবিত করে। জনগণের মধ্যে সঞ্চয়ের ইচ্ছা প্রবল হলে সঞ্চয় বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে, সঞ্চয়ের ইচ্ছা কম হলে আয় বেশি হলেও অনেক সময় সঞ্চয় বৃদ্ধি পায় না।

৪। ভোগ প্রবণতা: ভোগ প্রবণতা সঞ্চয়কে প্রভাবিত করে। আয় থেকে ভোগব্যয় বাদ দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাই হল সঞ্চয়। এ জন্য মানুষের ভোগ প্রবণতা বেশি হলে সঞ্চয় কম হয়। পক্ষান্তরে, ভোগ প্রবণতা কম হলে সঞ্চয় বেশি হয়।

৫। সুদের হার: সুদের হার হল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক। সুদের হার বেশি হলে মানুষ সঞ্চয়ে উৎসাহিত হয়। এর ফরে সঞ্চয় বাড়। পক্ষান্তরে, সুদের হার কম হলে মানুষ সঞ্চয়ে নিরুৎসাহিত হয়। এর ফলে সঞ্চয় হ্রাস পায়।

৬। কর নীতি: সরকারের কর নীতি সঞ্চয়কে প্রভাবিত করে। কর হার বেশি হলে মানুষের ব্যয়যোগ্য আয় কমে। এর ফলে সঞ্চয়ের পরিমাণ হ্রাস পায়। পক্ষান্তরে, কর হার কম হলে মানুষের ব্যয়যোগ্য আয় বাড়ে। এর ফলে সঞ্চয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

৭। আয়ের বণ্টন: জাতীয় আয়ের বণ্টনের উপরও সঞ্চয় নির্ভর করে। জাতীয় আয়ের সুসম বণ্টন হলে সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষ কম-বেশি সঞ্চয় করতে পারে। এর ফলে সমাজের সামগ্রিক সঞ্চয় বেশি হয়। পক্ষান্তরে, আয় বণ্টনে অসমতা থাকলে আয় ও সম্পদ মুষ্টিমর লোকের হাতে কেন্দ্রীভূত হয় এবং বাকী ‍বৃহত্তর জনগোষ্ঠী দরিদ্র থাকে। এর ফলে সমাজের সামগ্রিক সঞ্চয় কম হয়।

৮। ভবিষ্যত প্রতাশা: ভবিষ্যত প্রত্যাশা মানুষর সঞ্চয়কে প্রভাবিত করে। যদি এমন হয় যে, ভবিষ্যতে আয় বাড়তে পারে তাহলে বর্তমানে সঞ্চয় কম হয়। পক্ষান্তরে, ভবিষ্যতে আয় কমে যেতে পারে এমন আশঙ্কা থাকলে বর্তমানে সঞ্চয়ের পরিমাণ হ্রাস পায়।

৯। ব্যাংক ও বীমা ব্যবস্থা: দেশের ব্যাংক ও বীমা ব্যবস্থা সঞ্চয়কে প্রভাবিত করে। দেশের ব্যাংক ও বীমা ব্যবস্থা উন্নত হলে মানুষের সঞ্চয়ের পরিমাণ বাড়ে। পক্ষান্তরে, ব্যাংক ও বীমা ব্যবস্থা অনুন্নত ও অসংগঠিত হলে মানুষের সঞ্চয়ের পরিমাণ হ্রাস পায়।

১০। সামাজিক নিরাপত্তা: সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি জনগণের সঞ্চয়কে প্রভাবিত করে। দেশের বয়স্কভাতা, বেকার ভাতা, পেনশন ভাতা প্রভৃতি কর্মসূচি চালু থাকলে জনগণ ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিরাপদ বোধ করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url