শ্রমের মর্যাদা রচনা বিস্তারিত জেনে নিন
শ্রমের মর্যাদা রচনা
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে শ্রমের মর্যাদা রচনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে শ্রমের মর্যাদা রচনা টি বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ভূমিকা: মানবসভ্যতার সকল সৃষ্টির মূলেই রয়েছে শ্রম। আজকের সভ্যতা যুগ-যুগান্তরের অগণিত মানুষের নিরলস শ্রমের ফসল। জীবনধারণের তাগিদেই মানুষ কর্মব্যস্ত। গুহাবাসী মানুষ একমাত্র শ্রমের মাধ্যমেই বর্তমানের এ উন্নত সভ্যতার জন্ম দিয়েছে। কৃষকের ফসল উৎপাদন, শিল্পীর শিল্পকর্ম, জ্ঞানীর জ্ঞানার্জন, বিজ্ঞানীর নব নব আবিষ্কার সবই শ্রমলব্ধ ফসল। মানবজীবনের সবক্ষেত্রেই যা কিছু দৃশ্যমান তা সবই পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে।
শ্রমের কার্যকারিতা
জন্মগতভাবেই মানুষ কিছু না কিছু সুপ্ত প্রতিভার অধিকারী। আর সুপ্ত প্রতিভার একমাত্র শ্রমের মাধ্যমেই সম্ভব। মানুষ নিজেই তার ভাগ্যনির্মাতা। পরিশ্রমের মাধ্যমেই মানুষ নিজের ভাগ্য গড়ে তোলে। ইতিহাসলব্ধ জ্ঞান থেকে আমরা দেখতে পাই, যে সকল মানুষ পৃথিবীতে স্মরণীয়-বরণীয় তাঁদের সাধনাই ছিল পরিশ্রম। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের সাফল্যেই মানবসভ্যতা সমৃদ্ধ হয়েছে। উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, তাঁদের উন্নতি পরিশ্রমেরই অবদান। যে জাতি শ্রমকে মূল্য দিতে পেরেছে, সে জাতিই জগতে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। কঠোর পরিশ্রমই তাদের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের মহিমা দিয়েছে।
শ্রমের গুরত্ব
মানবজীবন ও মানসভ্যতার উন্নতির জন্যে শ্রম অপরিহার্য উপাদান। মানুষের জন্ম তার নিজের অধীন নয়, কিন্তু কর্ম নিজের অধীন। কারণ কর্মই পারে মানুষকে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে পৌঁছে দিতে। শ্রমের মাধ্যমেই মানুষ জীবন সংগ্রামে জয়ী হতে পারে। অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে মানুষকে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়। এসব ক্ষেত্রে পরিশ্রমই তার একমাত্র হাতিয়ার। তাই ব্যক্তিজীবনে এবং সমাজে শ্রমের যথাযথ মর্যাদা ও স্বীকৃতি দিতে হবে। সামাজিক প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী প্রতিটি স্তরের শ্রমই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পড়ুন: শিশুশ্রম রচনা
কৃষক, মজুর, শিক্ষক, ডাক্তার, শিল্পী, বিজ্ঞানী, রাষ্ট্রনায়ক প্রত্যেকের যথাযথ পরিশ্রমই সমাজ ও দেশের অগ্রগতি সাধন করে। শ্রমই মানুষকে সৃজনশীল করে। নব নব সৃজনের মাধ্যমে মানুষ তার অগ্রগতি সাধন করে। আজকের দিনের মানুষের শ্রমসাধিত কর্ম আগামী দিনের মানুষকে নতুন কর্মে উজ্জীবিত করে। এককথায়, মানুষকে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা এবং কাল-থেকে কালান্তরে অমর করে রাখার একমাত্র উপায় শ্রম। শ্রমবিমুখ ব্যক্তি মৃত্যেুর সাথে সাথেই পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যায়। অন্যথায় শ্রমের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষ ইতিহাসের পাতায় বেঁচে থাকে চিরকাল।
নতুন নতুন আবিষ্কারে শ্রম
বিজ্ঞানীরা আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আবিষ্কার করে জীবনকে করেছেন সহজ ও গতিশীল। দুর্গমকে করেছেন সুগম। অজানাকে সবার কাছে করেছেন পরিচিত। অবজয়কে করেছেন জয়। আর এগুলোর সবকিছুই শ্রমের ফলাফল। শ্রম ব্যতীত কোনো কিছু আবিষ্কার করা সম্ভব নয়। বিজ্ঞানী নিউটন, আইনস্টাইন, স্টিফেন হকিংস দিনরাত নিরলস শ্রমের ফলেই এত গুরুত্বপূর্ণ সবকিছু আবিষ্কার করতে পেরেছেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিরলস শ্রমের মাধ্যমেই তাঁর সাহিত্যসম্ভারকে জগদ্বিখ্যাত করেছেন। কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেছিলেন নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমেই। তাই নতুন কিছু আবিষ্কারে শ্রমের বিকল্প নেই।
মানসিক ও শারীরিক শ্রম
সকল কাজের সাফল্য প্রাপ্তির জন্য মানসিক ও শারীরিক পরিশ্রমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মানসিক পরিশ্রম মানসিক উন্নতি দান করে এবং নবচিন্তার জন্ম দেয়। আর মানসিক শ্রম যে কাজের চিন্তা করে শারীরিক শ্রম তা সম্পাদন করে। কিন্তু কার্যত আমরা দেখি, মানসিক পরিশ্রমের মর্যাদা মানুষ স্বীকার করলেও শারীরিক পরিশ্রমকে অনেকেই অবজ্ঞার চোখে দেখে। ফলে সামাজিক ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিক্ষক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ প্রমুখ পেশাজীবী মানুষের অবস্থান সমাজের উপরতলায়। অন্যদিকে কুলি-মজুর-কৃষক-শ্রমিক এদের অবস্থান সমাজের নীচুতলায়। অন্নহীন, বস্ত্রহীন, শিক্ষাহীন মানবেতর জীবনই তাদের নিত্যসঙ্গী।
আরো পড়ুন: অধ্যবসায় রচনা
যদিও শারীরিক শ্রম সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভের উপায়, আত্মসম্মানের পরিপন্থী নয়। প্রতিটি মানুষই দেশ ও জাতির কল্যাণ করার উদ্দেশ্য নিজ যোগ্যতা অনুসারে মানসিক কিংবা শারীরিক শ্রমকে অবলম্বন করেছে। এদের অবদান স্বীকার করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, গাহি তাহাদের গান, ধরণীর হাতে দিল যারা আনি ফসলের ফরমান। শ্রম কিণাঙ্ক-কঠিন যাদের নির্দয় মুঠি-তলে ত্রস্তা ধরণী নজরানা দেয় ডালি ভরে ফুলে ফুলে।
ব্যক্তিজীবনে শ্রমের গুরুত্ব
সামাজিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে হলে প্রত্যেক ব্যক্তিকেই শারীরিক ও মানসিক শ্রমকে সমান মূল্য দেওয়া উচিত। অন্যথায় জীবনে নেমে আসে অভিশাপ। সমষ্টিগত জীবনকে সুন্দর ও মহিমাময় করতে শ্রমের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কিন্তু ব্যক্তিজীবনে শ্রমের গুরুত্ব আরও গভীর ও ব্যাপক। কেননা শ্রমবিমুখ ব্যক্তি সাফল্যের ছোঁয়া থেকে চিরকালই বঞ্চিত। ইতিহাসবিখ্যাত ব্যক্তি জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিঙ্কন, আলবার্ট আইনস্টাইন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাক্সিম গোর্কি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ ব্যক্তির জীবন থেকেও আমরা একই শিক্ষা গ্রহণ করি। শ্রমবিমুখতা ব্যক্তিকে ব্যর্থতার গ্লানিতে পর্যবসিত করে, তার অগ্রগতির পথকে করে রুদ্ধ। তাই ব্যক্তিজীবনের সাফল্য শ্রমেরই সাফল্য।
সভ্যতা বিকাশে শ্রম
মানবসভ্যতার বুনিয়াদ তৈরি করেছে শ্রম। মানুষ যদি নিষ্কর্মা হয়ে ভাগ্যের হাতে আত্মসম্পর্ণ করে বসে থাকত তাহলে আমাদের সামনে ও সমুন্নত সভ্যতার বিকাশ হতো না। শ্রমের শক্তিতেই মানুষ নতুন নতুন সাম্রাজ্যের পত্তন করেছে, করেছে সভ্যতার ক্রমবিস্তার। শ্রম ব্যক্তিজীবনকে সমৃদ্ধ ও ঐশ্বর্যশালী করে তারই প্রভাব পড়ে সমাজজীবনের ওপর। তাই শুধু ব্যক্তিজীবনের বিকাশ নয়, সভ্যতার বিকাশেও শ্রমই হাতিয়ার। যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী সে জাতি তত বেশি উন্নত। যুগ যুগ ধরে মানুষের কঠোর শ্রমই পৃথিবীকে বাসযোগ্য করেছে, সভ্যতাকে করেছে সমৃদ্ধ। একবিংশ শতাব্দীর উন্নত ও প্রগতিশীল সভ্যতাও মানুষের নিরলস শ্রমের ফসল।
পরিশেষে বলা যায় যে, পৃথিবী সৃষ্টি থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রমের অবদান অপরিসীম। ব্যক্তিজীবন থেকে জাতীয় জীবনের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য একমাত্র শ্রমশক্তির মাধ্যমই সম্ভব। তাই দেশের জন্যে, সমাজের জন্যে অবস্থান ও দক্ষতা অনুযায়ী যে পরিশ্রমই করা হোক না কেন তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। সব শ্রেণীর শ্রমকে যদি সম্মান মর্যাদা দেওয়া হয় তবেই দেশ ও জাতির যথার্থ কল্যাণ সাধিত হবে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে শ্রমের এবং শ্রমজীবি মানুষের অধিকার ও মর্যাদা স্বীকৃত। আমাদের দেশের উন্নতিও এ মূল্যবোধের মাধ্যমে সম্ভব।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে শ্রমের মর্যাদা রচনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। আমরা সবসময় সঠিক তথ্য উপস্থাপন করে পোস্ট দিয়ে থাকি। প্রিয় পাঠক, এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url