অধ্যবসায় রচনা ২০ পয়েন্ট সকল ক্লাসের জন্য
অধ্যবসায় রচনা ২০ পয়েন্ট
ভূমিকাঃ যে-কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ও একনিষ্ঠ প্রচেষ্টার নাম অধ্যবসায়। অবিচল সংকল্প নিয়ে, সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে, অপরিসীম ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে সাফল্য লাভ করা। চরিত্রের এই গুণটিই অধ্যবসায়। সেই সঙ্গে উদ্যম, নিরন্তর কর্মপ্রচেষ্টা আর আন্তরিক কঠোর পরিশ্রম অধ্যবসায়কে দেয় পূর্ণতা।
অধ্যবসায়ের গুরুত্বঃ মানবসভ্যতার বিকাশের অন্যতম চালিকাশক্তি অধ্যবসায়। আদিম মানুষ মাটিতে, পানিতে, আকাশে বৈরীশক্তিকে মোকাবেলা করে নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় সফল হয়েছে অধ্যবসায়ের মাধ্যমে। অনাবাদি জমি আবাদ করে ফসল ফলানো, জলাভূমি ভরাট করে নগর পত্তন, মরুভূমিকে মরুদ্যানে রূপান্তর-সবই অধ্যবসায়ের দান। আদিম গুহাচারী মানুষ আজ মহাশূন্যে পাড়ি জমিয়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-দর্শন, চিকিৎসা-শিল্পকলা ইত্যাদি প্রতিটি শাখায় মানুষের যে অভাবনীয় অগ্রগতি তার মূলে রয়েছে নিরন্তর সাধনা, উদ্যম, উদ্যেগ আর নিরবচ্ছিন্ন কর্মপ্রচেষ্টা। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেও অধ্যবসায়কে একটি চারিত্রিক গুণের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন: স্বদেশপ্রেম রচনা
অধ্যবসায়ের প্রয়োজনীয়তাঃ মানব জীবনে সাফল্য লাভের মূলে অনেকেই প্রতিভার উল্লেখ করে থাকেন। তবে অধ্যবসায় এবং প্রতিভা-এ দুটি গুণকে তুলনামূলকভাবে বিচার করলে এ কথাই স্থিরকৃত হয় যে, প্রতিভার চেয়ে অধ্যবসায় বাস্তব জীবনে অধিকতর কার্যকারী। জগতের কীর্তিমান পুরুষদের কাছে প্রতিভার চেয়ে পরিশ্রমের মর্যাদাই বেশি। প্রতিভাকে আসলে ধৈর্য ও পরিশ্রমের সমষ্টি বলে অনেকের ধারণা। মানুষের কর্ম-সাধনার সাথে চাই অসীম ধৈর্যগুন। আশু ফল লাভের প্রত্যাশা না করে দীর্ঘদিন ধৈর্য সহকারে কাজ করে গেলে পরিণামে সে কাজে জয়ী হওয়া যায়। কর্মে আনন্দ থাকলে মানুষের মনে প্রেরণা জন্মে, মানুষ ভুলে যায় ব্যর্থতার গ্লানি।
অধ্যবসায়ী জীবনাদর্শঃ অধ্যবসায় হচ্ছে জীবন সংগ্রামের সাফল্যের চাবিকাঠি। জীবনের লক্ষ্য অর্জনে মানুষকে দুর্বার সাহস নিয়ে অগ্রসর হতে হয়। আত্ম প্রতিষ্ঠার জন্য তাই অধ্যবসায়ের প্রয়োজন। মানব সভ্যতার বিকাশের ইতিহাস অধ্যবসায়ের মহৎগুণের সাথে জড়িত। মনীষীরা দিনের পর দিন মাসের পর মাস সাধনা করে সফলতা অর্জন করেছেন। তাঁদের অধ্যবসায়ের ফলেই আজকের মানুষ উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করেছে।
আরো পড়ুন: আমাদের বিদ্যালয় রচনা
ব্যক্তিজীবনে অধ্যবসায়ঃ জীবনের পথে পরিক্রমায় নানা সমস্যা মোকাবেলার উপায় অধ্যবসায়। অধ্যবসায়ী ব্যক্তির পক্ষেই জীবনসংগ্রাম জয়ী হওয়া সম্ভব। যে অধ্যবসায়ী নয়, তার দ্বারা কোনো মহৎ কাজ সম্ভব নয়। মানবজীবনে অধ্যবসায়ের এ গুণটি চমৎকারভাবে প্রকাশিত হয়েছে নিম্নলিখিত কাব্যপঙক্তিতে: ‘কেন পান্থ ক্ষান্ত হও হেরি দীর্ঘ পথ? উদ্যম বিহনে কার পুরে মনোরথ? এ উদ্যম অধ্যবসায়েরই নামান্তর মাত্র।
প্রতিভা ও অধ্যবসায়ঃ কেউ কেউ মনে করেন, প্রতিভাই সফলতার মূল নিয়ামক। এ ধারণা পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য নয়। অধ্যবসায় ছাড়া সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত হয় না। প্রতিভাবানদের জীবনেও আত্মপ্রতিষ্ঠা আসে অধ্যবসায়ের মাধ্যমে।
ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়ঃ ছাত্র জীবন ভবিষ্যৎ জীবন রচনার অনুশীলনক্ষেত্র। তাই অধ্যবসায় ছাত্রজীবনের সবক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অধ্যয়ন এবং অধ্যবসায়ের মধ্যে রয়েছে অবিচ্ছেদ্য সংযোগ। বারবার পাঠ অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে জ্ঞান আহরণ করতে হয়। ছাত্রজীবনে অধ্যবসায়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিলে রচিত হয় জীবনের সাফল্যের বুনিয়াদ। অধ্যবসায় না থাকলে কেবল মেধা কাজে লাগে না। অনেক মেধাবী বিদ্যার্থী যথেষ্ট প্রয়াসের অভাবে জীবনে সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হয়।
আরো পড়ুন: সময়ের মূল্য রচনা
মনীষীদের জীবনে অধ্যবসায়ঃ জগতে যাঁরা মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার আদর্শ হয়েছেন তাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন অধ্যবসায়ী। মহাকবি ফেরদৌসীর অমর মহাকাব্য ‘শাহানামা’ দীর্ঘ তিরিশ বছরের কাব্যপ্রয়াস। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাশ বিশ বছরের সাধনায় রচনা করেন ‘বাংলা ভাষার অভিধান’। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা ছাড়াই একক প্রচেষ্টায় প্রায় দু হাজার প্রাচীন পুঁথি সংগ্রহ করেন খ্যাতনামা সংগ্রাহক আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ। স্কটল্যান্ডের রাজা রবার্ট ব্রুস পরপর ছয়বার ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হলেও হাল ছাড়েননি। শেষ পর্যন্ত তিনি জয়ী হয়েছিলেন। বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী নিউটনের অকুণ্ঠ স্বীকৃতি: বিজ্ঞানে তাঁর অবদানের মূলে আছে বহু বছরের একনিষ্ঠ সাধনা ও নিরবচ্ছিন্ন পরিশ্রম।
জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ঃ সামগ্রিকভাবে জাতির সগৌরব প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যেক নাগরিকরই অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়োজন। জাতীয় জীবনে অধ্যবসায়ের প্রতিষ্ঠা করতে হলে ব্যক্তিজীবনে তার অনুশীলন প্রয়োজন। এদিক থেকে জাতির বৃহত্তর কল্যাণে অধ্যবসায়ী ব্যক্তির গুরুত্ব অনেকখানি।
পরিশেষে বলা যায় যে, জীবনে সাফল্য লাভ করে জাতিকে গৌরবান্বিত করার ক্ষেত্রে অধ্যবসায়ের বিকল্প নেই। লক্ষ্যে পৌঁছানোর উদ্যমী নিরন্তর প্রচেষ্টা থাকলে কোনো প্রতিকূলতাই জাতিকে নিরস্ত করতে পারে না। অধ্যবসায়ী মানুষ ধৈর্য ও অবিচলতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে একসময়-না একসময় সাফল্য ছিনিয়ে আনে। প্রতিটি সফল জীবন এক অর্থে অধ্যবসায়েরই চালচিত্র। তাই ছোটবেলা থেকে প্রত্যেকের উচিত এই বিশেষ গুণের অধিকারী হওয়া।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে অধ্যবসায় রচনা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট প্রকাশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url