বায়োমেট্রিক কাকে বলে? জেনে নিন
বায়োমেট্রিক কাকে বলে?
মানুষের দৈহিক গঠন বা আচরণগত বৈশিষ্ট্য পরিমাপের ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তিকে অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্ত করার জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তিকে বায়োমেট্রিক বলে। একজন মানুষের সাথে অন্য মানুষের আচরণ বা গাঠনিক বৈশিষ্ট্য কখনোই একরকম হবে না। বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতায় বায়োমেট্রিকের প্রকারভেদ দুই রকম; (১) শরীরবৃত্তীয় বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ও (২) আচরণত বায়োমেট্রিক পদ্ধতি।
শরীরবৃত্তীয় বায়োমেট্রিক পদ্ধতি
আঙুলের ছাপ শনাক্তকরণঃ এ পৃৃথিবীতে প্রকৃতিগতভাবে প্রতিটি মানুষের আঙুলের ছাপ ভিন্ন অর্থাৎ একজনের সাথে অন্য আরেকজনের আঙুলের ছাপের মিল নেই। একজনের টিপসই কখনোই অন্যজনের সাথে খাপ খাবে না। ফিংগার প্রিন্ট রিডারে কারো আঙুলের ছাপ দেওয়ার পর ছাপটির ছবি কম্পিউটার ডেটাবেজ সংরক্ষিত হয়ে যায়। ফিংগার প্রিন্ট মেশিনটি আঙুলের রেখার বিন্যাস, ত্বকের টিস্যু এবং ত্বকের নিচের রক্ত সঞ্চালনের উপর ভিত্তি করে ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক পদ্ধতিতে আঙুলের ছাপচিত্র তৈরি করে।
হাতের রেখা শনাক্তকরণঃ এ পদ্ধতিতে হাতের আকার, পুরুত্ব, হাতের রেখার বিন্যাস ও আঙুলের দৈর্ঘ্য বিশ্লেষণ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। তবে কায়িক পরিশ্রম করে এমন মানুষ, বিশেষ করে শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি খুব বেশি কার্যকর নয়। তাছাড়া হাতে কিছু লেগে থাকলেও এ পদ্ধতির কার্যকারিতা সেভাবে পরিলক্ষিত হয় না।
আইরিশ শনাক্তকরণঃ এ পদ্ধতিতে চোখের মণির চারপাশে বেষ্টিত রঙিন বলয় বা আইরিশ বিশ্লেষণ করে শনাক্তকরনের কাজ সম্পন্ন করা যায়। শনাক্তকরণের জন্য সময়ও তুলনামূলকভাবে কম লাগে এবং সূক্ষ্মতাও গ্রহনযোগ্য মাত্রায় হয়ে থাকে। তবে কন্টাক্ট লেন্স পরা থাকলে এ পদ্ধতি সবসময় কার্যকারী নাও হতে পারে।
আরো পড়ুন: ডিজিটাল কম্পিউটার কি
মুখমন্ডলের অবয়ব শনাক্তকরণঃ এ পদ্ধতিতে পুরো মুখমন্ডলের ছবি তুলে শনাক্ত করা হয়। আগে থেকে রক্ষিত স্যাম্পল মানের সাথে যার মুখমন্ডলের আকৃতি তুলনা করা হবে তার ছবি ক্যামেরার মাধ্যমে ধারন করে সেটি তুলনা করা হয়।
ডিএনএ পর্যবেক্ষণঃ ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে যে কোনো ব্যক্তিকে অত্যন্ত নিখুঁত ও প্রশ্নাতীতভাবে শনাক্ত করা যায়। মানব শরীরের যে কোনো উপাদান যেমন: রক্ত, চুল, আঙুলের নখ, মুখের লালা হতে ডিএনএ’র নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর এগুলোর গঠন প্রকৃতি শনাক্তের দ্বারা ম্যাপ বা ব্লু-প্রিন্ট বায়োলজিক্যাল ডেটাবেজ সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীকালে নমুনা নিয়ে পূর্ববর্তী ডেটার সাথে মিলিয়ে কোনো ব্যক্তিকে অদ্বিতীয়ভাবে শনাক্ত করা যায়।
আচরণগত বায়োমেট্রিক পদ্ধতি
কিবোর্ডে টাইপিং গতি যাচাইকরণঃ কিবোর্ড কিংবা এ জাতীয় কোনো ইনপুট ডিভাইসে তার গোপনীয় কোড কত দ্রুত টাইপ করে দিতে পারে তার সময় পূর্বের সময়ের সাথে মিলিয়ে কোনো ব্যক্তিকে শনাক্তকরণের কাজ সম্পন্ন করা হয়।
হাতে করা স্বাক্ষর যাচাইকরণঃ এটি একটি বহুল ব্যবহৃত ও দীর্ঘদিনের প্রচলিত পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কোনো ব্যক্তিকে শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে স্বাক্ষরের আকার, ধরন, লেখার গতি, সময়, লেখার মাধ্যমের (যেমন - কলম, পেনসিল ইত্যাদি) চাপকে যাচাই করে শনাক্তকরণ করা হয়।
কন্ঠস্বর যাচাইকরণঃ এ পদ্ধতিতে ব্যবহারকারীর কণ্ঠস্বরকে মাইক্রোফোনের মাধ্যমে ধারণপূর্বক কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এর সাহায্যে ইলেকট্রনিক সিগন্যালে রূপান্তর করে ডেটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীকালে ভয়েস রেকর্ডারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর কণ্ঠস্বর রেকর্ড করা হয় এবং পূর্বের ধারণকৃত কণ্ঠস্বরের সাথে তুলনা করে শনাক্তকরণের কাজ সম্পন্ন করা হয়। এ পদ্ধতিতে ব্যক্তির সর্দি, কাশি হলে শনাক্তকরণে বিঘ্নের সৃষ্টি হয়।
বায়োমেট্রিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রসমূহ
মৃতদেহ শনাক্তকরণ, অপরাধী শনাক্তকরণ, পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব শনাক্তকরণ, জাতীয় পরিচয়পত্র, বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার নিবন্ধন, এটিএম ও অনলাইন ব্যাংকিং, প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ ও উপস্থিতি নির্ণয়, কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন লগইন, ই-কমার্স ও স্মার্ট কার্ড ইত্যাদিতে বায়োমেট্রিক প্রযু্ক্তির ব্যবহার হয়ে থাকে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url