প্রতিবেদন লেখার নিয়ম বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম গুলো বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
প্রতিবেদন বলতে কি বুঝ?
প্রতিবেদন শব্দটি বহুল ব্যবহৃত ও পরিচিত একটি শব্দ । প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পেশ করা ধারাবাহিক বিবরণীকে বোঝায়। কোন তথ্য, ঘটনা বা বক্তব্য সম্পর্কে বর্ণনা দানই প্রতিবেদন। এতে কোনো কাজের বিভিন্নমুখী বর্ণনা প্রকাশ পায়। এতে কাজের নির্দেশ, পরামর্শ, সিদ্ধান্ত ইত্যাদি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। প্রতিবেদন কোন বিষয়ের তথ্য, উপাত্ত, সিদ্ধান্ত, ফলাফল ইত্যাদি যে কোন একটি বা কয়েকটি যথাযথ অনুসন্ধানের পর বিবরণী তৈরি করে কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা বিভাগে পেশ করেন। প্রতিবেদন বিশেষ কৌশল বা পদ্ধতিতে রচিত বিবৃতি বা বিবরণী। কারো কারো মতে তথ্যগত সত্যনিষ্ঠ বিবরণীকেই প্রতিবেদন বলা হয়।
অধ্যাপক মাইক হ্যাচ বলেন, প্রতিবেদন হল একটি সুসংগঠিত তথ্যগত বিবৃতি যা কোন বক্তব্য সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত অথচ সঠিক বর্ণনা বিশেষ। একে যথেষ্ট সতর্কতা, পর্যক্ষণ, পর্যালোচনা, গবেষণা ও বিচার বিশ্লেষণের পর তৈরি করা হয়। মনে রাখতে হবে প্রতিবেদন হল কোন বিষয়ের পুনঃউপস্থাপনা। এটি একটি বিশেষ কলা-কৌশল যার মাধ্যমে লেখক প্রত্যক্ষভাবে পরীক্ষিত, বিশ্লেষিত, পর্যালোচিত ও নিরুপিত তথ্য বা ঘটনার বিবরণী তৈরি করে প্রকাশ করে থাকেন। এতে লেখকের সুপারিশ থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। আইন আদালত ও ব্যবসায়-বাণিজ্যে প্রতিবেদনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। পূর্বে প্রতিবেদন বলতে বোঝাত কেবল পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিবরণীকে।
কিন্তু বর্তমানে কর্মজীবনে নানা রকম সংকট ও জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিবেদনের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং দৈনন্দিন জীবনে এর উপযোগিতা সম্প্রসারিত হচ্ছে। প্রতিবেদনের প্রয়োজন এ কারণে যে, এর মাধ্যমে কোন বিষয় সম্পর্কে খুঁটিনাটি ও বিস্তারিত তথ্যাদি অবগত হওয়া যায় এবং তার প্রেক্ষিত কোন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। প্রতিবেদন কোন সংস্থার ব্যবস্থাপনার কার্যাবলিকে সহজ করে থাকে। কোন বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহন, সংগঠন, নির্দেশনা, নিয়ন্ত্রণ, ফলাফল নিরূপণ, সমন্বয় সাধন ইত্যাদি কাজে প্রতিবেদন বিশেষ সাহায্য করে থাকে। প্রতিবেদন পাঠের মাধ্যমে তার বিষয় সম্পর্কে যথাযথ অবহিত হওয়া যায়।
এ কারণে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে প্রতিবেদন বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। সংগঠনের ব্যবস্থাপনার কাজে প্রতিবেদন বিশেষভাবে সহায়ক। প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিচালনা ও নীতি নির্ধারণে প্রতিবেদন থেকে বিশেষ সহায়তা পাওয়া যায়। কোন বিরোধপূর্ণ ও জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলার পন্থা প্রতিবেদনে নির্দেশিত হয়ে থাকে। প্রতিবেদন একটি স্থায়ী ও প্রামাণ্য দলিল এবং এ থেকে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।
প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য কি? ইহা কয় প্রকার ও কি কি?
প্রতিবেদন রচনার সুনির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। যেমন (ক). বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্টভাবে সবাইকে অবহিত করা, (খ). নিরপেক্ষভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করা, (গ). জটিল বিষয়ের ব্যাখ্যা প্রদান করা, (ঘ). কোন বিষয়ে মতামত প্রদান করা, (ঙ). কার্যের সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন করা, (চ). সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করা।
প্রতিবেদনের শ্রেণীবিভাগ
প্রতিবেদন নানা রকম হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোঃ
- রীতি সিদ্ধ প্রতিবেদন
- নিয়মিত প্রতিবেদন
- বিশেষ প্রতিবেদন
- প্রার্থিত প্রতিবেদন
- কোম্পানি প্রতিবেদন
- অবিধিবদ্ধ প্রতিবেদন
- সংবাদপত্রের প্রতিবেদন
- রীতি বিরুদ্ধ প্রতিবেদন
- সাময়িক প্রতিবেদন
- নির্বাহী প্রতিবেদন
- অপ্রার্থিত প্রতিবেদন
- বিধিবদ্ধ প্রতিবেদন
- সরকারি প্রতিবেদন
- তদন্ত প্রতিবেদন ইত্যাদি।
প্রতিবেদন তৈরি করার সময় কি কি বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে?
১। নির্দিষ্ট কাঠামো: প্রতিবেদন রচনার জন্য একটি নির্দিষ্ট কাঠামো অনুসরণ করতে হবে। এতে সাধারণত শিরোনাম, প্রাপকের নাম ঠিকানা, সূচিপত্র, বিষয়বস্তু, তথ্যপঞ্জী, স্বাক্ষর, তারিখ ইত্যাদি থাকে।
২। সঠিক তথ্য: প্রতিবেদন রচনার পূর্বেই পর্যাপ্ত সঠিক তথ্য, প্রতিবেদকের হাতে থাকতে হবে এবং তা দিয়ে রচিত হবে প্রতিবেদন।
৩। সম্পূর্ণতা: প্রতিবেদনে পরিবেশিত তথ্য হবে নির্ভুল, সম্পূর্ণ ও নির্ভরযোগ্য।
৪। স্পষ্টতা: অস্পষ্ট বক্তব্য দিয়ে প্রতিবেদন রচিত হয় না। প্রতিবেদনের দেয় বক্তব্য সুস্পষ্ট হতে হয়।
৫। সংক্ষিপ্ত: দীর্ঘ ও বাহুল্যপূর্ণ বক্তব্য বরাবরই বর্জন করতে হয়। প্রতিবেদনের বক্তব্য হবে সংক্ষিপ্ত।
৭। উপস্থাপনা ও পরিবেশন পদ্ধতি: প্রতিবেদনের উপস্থাপনা হবে আকর্ষণীয়। প্রতিবেদন এর বক্তব্য হবে সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় পরিবেশিত।
৮। সুপারিশ: একটি পরিপূর্ণ প্রতিবেদনের উপসংহারে সুপারিশ সংযোজিত হবে।
পরিশেষে বলা যায় যে, একটি সুন্দর প্রতিবেদন তৈরি করতে হলে উপরোক্ত বিষয়গুলো অবগত থাকতে হবে। প্রতিবেদনের আকার, শ্রেণী, বৈশিষ্ট্য, রীতি-নীতি ও বিষয়বিন্যাসের ওপর ধারণা থাকতে হবে। প্রতিবেদন ছোট হতে পারে, আবার বড়ও হতে পারে। ছোট প্রতিবেদনে শিরোনাম, বিষয়বস্তু, সুপারিশ ও উপসংহার থাকে। আবার বৃহৎ প্রতিবেদন পুস্তকারে হতে পারে। সেখানে সারণী, চিত্র, নকশা, ছক, পরিশিষ্ট, তথ্য নির্দেশ, পরিভাষা পরিচিতি ইত্যাদি থাকতে পারে। এখানে বহু কিছুর বর্ণনা ব্যাখ্যা ও পাদটীকা থাকতে পারে।
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
প্রতিবেদন লেখার একটি সুসংগঠিত ও সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে, যা লেখার উদ্দেশ্য, পাঠক এবং বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। একটি সফল প্রতিবেদন স্পষ্ট, সংগঠিত, এবং তথ্যবহুল হওয়া উচিত।
১. মাছের চাষ সম্পর্কিত একটি বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি কর।
প্রতিবেদনের শিরোনাম/প্রকৃতিঃ ---------------------
সরেজমিনে তদন্তের স্থানঃ ---------------------------
প্রতিবেদক তৈরির সময়ঃ -----------------------------
প্রতিবেদকের নাম ও ঠিকানাঃ -----------------------
তারিখঃ --------------------------------------------------
বিষয়ঃ ভাসমান পুকুরে মাছ চাষের এক অভিনব পদ্ধতি।
ঢাকা কৃষি কলেজের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের বিজ্ঞানিগণ ভাসমান পুকুরে মাছ চাষের একটি অভিনব পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। এ পদ্ধতিতে নদ-নদী, পুকুর-ডোবা, হাওড় ও বিলে ভাসমান পুকুর তৈরি করে অতি সাধারণ প্রযুক্তি খাটিয়ে নিবিড় মাছ চাষ করা সম্ভব, যাকে প্রাকৃতিকভাবে একটি জলাশয়ে যে পরিমাণ মাছের চাষ করা যায় তার চেয়ে ভাসমান পুকুর ব্যবহার করে মাছ চাষের নিবিড়তা বিভিন্ন মাছের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১০০ গুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা যেতে পারে। ফলে প্রায় একই হারে মাছ উৎপাদনও বৃদ্ধি পেতে পারে।
ঢাকা কৃষি কলেজের ফিসারিজ, বায়োলজী ও লিমনোলজী বিভাগ ১৯৯৮ সালে ভাসমান পুকুরে মাছ চাষের কাজ প্রথম শুরু করে। এ প্রকল্পটির শুরুতে বিজ্ঞাণিগণ পানিতে ভাসমান সরঞ্জামাদি দিয়ে মাছ রাখার মতো খাঁচা তৈরি করেন। এ খাঁচাগুলো মাছের আকার ও পরিমাণের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন আকার ও আয়তনের করা হয়। স্থির জলাশয়ে এবং নদীতে এ খাঁচাগুলোর তিন ভাগের দুভাগ এমনভাবে ডুবানো হয় যাতে খাঁচাগুলো মাটি স্পর্শ না করে। মাছ রাখার উপযোগী এ খাঁচাগুলোকে ভাসমান পুকুর বলে আখ্যায়িত করা হয়। বাঁশজাতীয় দ্রব্যাদির তৈরি ফ্রেমের বাইরে এক প্রকার সিনথেটিক জাল দ্বারা খাঁচাকে আবৃত করা হয় এবং এরূপ তৈরিকৃত ভাসমান পুকুরে বিজ্ঞানিগণ পরিক্ষামূলকভাবে তেলাপিয়া জাতীয় নাইলোটিকা মাছের চাষ করে আকর্ষণীয় সাফল্য লাভ করেন।
আরো পড়ুন: স্বদেশপ্রেম রচনা
ফিলিপাইন ও থাইল্যাণ্ডসহ তৃতীয় বিশ্বের বহুদেশে প্রচলিত এ পদ্ধতিতে বাংলাদেশের মৎস্যবিজ্ঞানিগণ রুই, কমন কার্প, কই, মাগুর এবং কালো মৃগেল চাষেরও উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রকল্পের জনৈক গবেষক জানান যে, মাছের সম্পূরক খাদ্য হিসেবে ফিসমিল, তৈলবীজ, খৈল, চালের কুঁড়া ও গমের ভূষিসহ বাংলাদেশে সহজলভ্য মাছের খাদ্য ব্যবহার করে তারা ভাসমান পুকুরে মাছের উল্লেখযোগ্য উৎপাদন লাভ করেন।
এ গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৫ মাসের ব্যবধানে প্রতিটি রুই মাছের ওজন ১০০ গ্রাম থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়েছে। কমন কার্পের ওজন ১৬ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ গ্রাম পর্যন্ত পাওয়া গেছে। তবে এই পরিক্ষাকাল শীত মওসুমে হওয়ায় গ্রীষ্মকাল থেকে মাছের বৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে এতে কম হয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক জলাশয়ের বৈজ্ঞানিক উপায়ে নিবিড় মাছ চাষে মাছের যে সর্বাধিক ঘনত্ব রাখা হয় তার তুলনায় রুই এবং কমন কার্পের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৩০ গুণ এবং নাইলোটিকার ক্ষেত্রে ২৫ থেকে ১শ গুন ঘনত্ব ভাসমান পুকুরে ব্যবহার করা চলে। এতে মাছের বৃদ্ধি কিছু কম হলেও সাধারণ জলাশয়ের চেয়ে ভাসমান পুকুরে মাছচাষ করে অনেক বেশি উৎপাদন পাওয়া সম্ভব।
একজন বিজ্ঞানী জানান, বাংলাদেশের পানি সম্পদকে আরও ফলপ্রসূভাবে কাজে লাগাতে ভাসমান পুকুরে মাছ চাষ দেশের নিবিড় মৎস্য চাষের ক্ষেত্রে এবং মাছ আহরণে একটি অভিনব পন্থা।
প্রতিবেদন: ২ দেশের বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন তৈরি কর।
প্রতিবেদনের শিরোনাম/প্রকৃতিঃ ---------------------
সরেজমিনে তদন্তের স্থানঃ ----------------------------
প্রতিবেদন তৈরি সময়ঃ --------------------------------
প্রতিবেদকের নাম ও ঠিকানাঃ ------------------------
তারিখঃ ---------------------------------------------------
বিষয়ঃ বান ভাসিদের করুণ কাব্য।
ঢাকার পূর্বাঞ্চলে ডেমরা, রূপগঞ্জ ও নারায়নগঞ্জের শীতলক্ষ্য নদীর তীর ঘেঁষে বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রবল বন্যার পানিতে প্রায় ৩শ কারখানা ডুবে গেছে। ফলে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। পুরো এলাকা জুড়ে অভাবের হাহাকার দানা বাঁধছে। বন্যার কারণে মিল-কারখানা বন্ধ হয়ে মানুষজন সাময়িক বেকার হচ্ছে, অন্যদিকে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। সব মিলিয়ে এক দুঃসহ অবস্থা চলছে সমগ্র এলাকায়। গতকাল দুপুরে গিয়ে দেখি, এলাকার সবগুলো মিলই ৩/৪ ফুট পানির নিচে ডুবন্ত অবস্থায় রয়েছে। এসব কারখানার শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে। অনেকে ইতিমধ্যে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে, অনেকে টাকা পয়সার অভাবে নিজ বাড়িতেও যেতে পারছেনা।
কারখানার মালিক সূত্রে জানা যায় যে, পানিতে ডুবে যাওয়ার ফলে, স্বল্প পুঁজি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত কারখানার যন্ত্রপাতি বিনষ্টের কারণে, পুনরায় কারখানা চালু করা তাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। ঢাকার মেট্রোপলিটন এলাকা পূর্ব যাত্রাবাড়িতে গিয়ে শেষ হয়েছে। এখান থেকে শুরু ঢাকা-ডেমরা সড়কের। ডেমরা গুদারাঘাট পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকায় সড়কের উত্তর পার্শ্বের সব শিল্প কারখানা বন্যার পানিতে ডুবে আছে। এখানেও কাজলা রিরোলিং, সরদার রিরোলিং, সুফিয়া রিরোলিং, এ কে এম স্টিল মিলস,
আরো পড়ুন: আমাদের গ্রাম রচনা
সিটি রিরোলিং, ইসলাম ক্রোকারিজ ইন্ডাস্ট্রিজ, সুখ টেক্সটাইলস, এক্সাম স্টিল মিলস, তাহের ফাউন্ড্রি এগু ইঞ্জিরিয়ারিং, কোয়ালিটি ডাইং সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। ছনপাড়ায় রূপালি টেক্সটাইল মিল এখন ৫/৬ ফুট পানির নিচে। ডেমরায় ঐতিহ্যবাহী বাওয়ানী জুট মিল, বাওয়ানি কটন মিল, করিম জুট মিলেও পানি ঢুকে পড়েছে। তবে শ্রমিকরা রাতদিন কাজ করে কারখানা ভবনের চতুর্দিকে মাটির বাঁধ দিয়ে এবং পাশ দিয়ে সেচে মিলগুলোতে আংশিক উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমার দেশের উচ্চমহল এবং প্রশাসন সু ব্যবস্থা গ্রহন করবে এবং সাময়িক বেকার মানুষদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিবে। ধন্যবাদ।
৩. কলেজ গ্রন্থাগার সম্পর্কে একটি প্রতিবদেন।
প্রতিবেদনের শিরোনা/প্রকৃতিঃ ----------------
সরেজমিনে তদন্তের স্থানঃ --------------------
প্রতিবেদন তৈরি সময়ঃ ------------------------
প্রতিবেদকের নাম ও ঠিকানাঃ ----------------
তারিখঃ ------------------------------------------
বিষয়ঃ কলেজ গ্রন্থাগার সম্পর্কিত প্রতিবেদন।
মহোদয়,
স্মারক নং ২৫, তাং ১০ই জানুযারি, ১৯৯৮ বরাতে কলেজ গ্রন্থাগারের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যানুসন্ধান পূর্বক আমার বক্তব্য সদয় অবগতির জন্য পেশ করিছি।
১। কলেজ গ্রন্থাগারটি কলেজ প্রতিষ্ঠার সাথে সাথেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। তবে প্রয়োজনীয় বইপত্র ক্রয় না করার জন্য এর আশানুরূপ সমৃদ্ধি সাধিত হয়নি। ক্রমান্বয়ে কলেজে ছাত্র সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তবে তাদের প্রয়োজনের দিকটি উপেক্ষিত হয়েছে। কলেজের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হলেও গ্রন্থাগারের জন্য ব্যয় বরাদ্দ যথেষ্ট ছিল না। সে জন্য বর্তমানে কলেজ গ্রন্থাগারে সর্বমোট বইয়ের সংখ্যা মাত্র ২৫,৫০০।
২। গ্রন্থাগার গঠনকালে কোন প্রশিক্ষণ-প্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক না থাকায় তা সুষ্ঠুভাবে রূপায়িত হয়নি। বইয়ের সংখ্যার সাথে বইয়ের বিষয় ও মানের সঙ্গতি নেই বললেই চলে।
৩। বইয়ের তালিকা তৈরিতে কোন বিজ্ঞানসম্মত পন্থা অনুসরণ করা হয়নি। দশমিক পদ্ধতি সম্পর্কে গ্রন্থাগারিক অনভিজ্ঞ বলে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়নি।
৪। পুস্তকের রক্ষণাবেক্ষণে তেমন কোন সচেতনতা নেই। ছাত্র শিক্ষকদের মধ্যে বই ইস্যু করার ব্যাপারেও কোন নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি। এসব অবস্থা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, গ্রন্থাগারটি কলেজের জন্য তেমন কোন উপকারে আসেনি।
৫। এ অবস্থার নিম্নরূপ সুপারিশ করছি, যার বাস্তবায়নে গ্রন্থাগারটির যথার্থ উপকারে আসতে পারে।
(ক). অনতিবিলম্বে গ্রন্থগারের সকল পুস্তকের হিসেব গ্রহণ করে দশমিক পদ্ধতিতে তালিকা তৈরি করা জরুরি।
(খ). ছাত্রদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য আরও বইপত্র সংগ্রহ করা দরকার। বিষয় নির্বাচনে বিশেষ তৎপর হতে হবে।
(গ). বইপত্র বাড়িতে ইস্যু করা এবং পাঠাগারে পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের দু ধরনের গ্রন্থাগার কার্ড ইস্যু করা উচিৎ।
(ঘ). বই রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা থাকতে হবে।
(ঙ). গ্রন্থাগারের জন্য স্বতন্ত্র তহবিল গড়ে তুলতে হবে এবং তাতে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক চাঁদা দিতে হবে।
(চ). গ্রন্থাগারের সঠিক উন্নয়ন ও তত্বাবধানের জন্য একটি কমিটি তৈরি করতে হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখার নিয়ম
প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন হলো একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম, উন্নয়ন, আর্থিক অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরার লিখিত দলিল। এটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বোর্ড, শেয়ারহোল্ডার, বিনিয়োগকারী, কর্মচারী এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভালো প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বচ্ছতার প্রতীক। প্রিয় পাঠক চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখার সঠিক নিয়ম।
প্রতিবেদন লেখার উদ্দেশ্য
প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো:
- প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরা
- আর্থিক ফলাফল ও ব্যবসার উন্নয়ন বিশ্লেষণ করা
- স্টেকহোল্ডারদের তথ্য জানানো
- ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও লক্ষ্য নির্ধারণ করা
প্রতিবেদন লেখার ধাপসমূহ
১. শিরোনাম নির্বাচন: প্রতিবেদনের শিরোনাম হতে হবে স্পষ্ট, সংক্ষিপ্ত এবং অর্থবহ। উদাহরণ:
- বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২৫
- আর্থিক বিবৃতি ২০২৪-২৫
- কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রতিবেদন
২. ভূমিকা ও সারসংক্ষেপ: প্রতিবেদনের শুরুতেই প্রতিষ্ঠানের পরিচয়, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সংক্ষেপে তুলে ধরা উচিত। এখানে প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস, মিশন ও ভিশন উল্লেখ করা যায়।
৩. সূচিপত্র: বড় আকারের প্রতিবেদন হলে সূচিপত্র সংযুক্ত করা প্রয়োজন, যাতে পাঠক সহজে প্রয়োজনীয় অংশ খুঁজে পেতে পারে।
৪. কার্যক্রমের বিবরণ: প্রতিষ্ঠানের গত এক বছরের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম, অর্জন এবং চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করতে হবে। এতে থাকতে পারে: উৎপাদন, বিক্রয় ও বিপণন কার্যক্রম নতুন পণ্য বা পরিষেবা চালু, বাজারের প্রবণতা এবং প্রতিযোগিতা বিশ্লেষণ, কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম।
৫. আর্থিক তথ্য ও বিশ্লেষণ: এটি প্রতিবেদন লেখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা, আয়-ব্যয়, মুনাফা, ব্যালেন্স শীট, নগদ প্রবাহ, এবং শেয়ারহোল্ডারদের আয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য থাকতে হবে।
প্রতিবেদন লেখার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম
- সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষা ব্যবহার করুন: কঠিন আর জটিল শব্দ এড়িয়ে সহজ ভাষায় লিখুন।
- বাস্তব তথ্য ও পরিসংখ্যান দিন: অনুমানের ভিত্তিতে নয়, সঠিক তথ্য ও ডেটা ব্যবহার করুন।
- স্বচ্ছতা বজায় রাখুন: প্রতিটি তথ্য ও উপাত্তে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করুন।
- চিত্র ও গ্রাফ সংযোজন: আর্থিক তথ্য বুঝতে সহায়ক হতে গ্রাফ, চার্ট ও টেবিল ব্যবহার করুন।
- সম্পাদনা ও প্রুফরিডিং: প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগে একাধিকবার সম্পাদনা ও প্রুফরিড করুন।
পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখার সময় শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানের সাফল্য নয়, দুর্বলতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও উল্লেখ করা উচিত। এটি প্রতিষ্ঠানকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সহায়তা করে এবং স্টেকহোল্ডারদের আস্থা বাড়ায়।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন
প্রতিষ্ঠান: চকমহব্বতপুর উচ্চ বিদ্যালয়
প্রকাশের তারিখ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫
প্রস্তাবনা
সম্মানিত অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং প্রিয় শুভাকাঙ্ক্ষীরা,
চকমহব্বতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ আমাদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বছর ছিল। এই বছরে আমরা শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের মানসিক উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। এই প্রতিবেদনে আমরা আমাদের বিদ্যালয়ের সার্বিক অগ্রগতি, একাডেমিক সাফল্য, শিক্ষক উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
সূচিপত্র
- বিদ্যালয়ের পরিচিতি
- মিশন ও ভিশন
- একাডেমিক সাফল্য
- সহশিক্ষা কার্যক্রম
- অবকাঠামোগত উন্নয়ন
- শিক্ষার্থী উন্নয়ন
- শিক্ষক প্রশিক্ষণ
- চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
- উপসংহার
- সংযুক্তি (ফলাফল বিশ্লেষণ, শিক্ষার্থী উপবৃত্তি তালিকা)
১।. বিদ্যালয়ের পরিচিতি: রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলাধীন ১১ নং গনিপুর ইউনিয়নে প্রত্যন্ত এলাকায় চকমহব্বতপুর উচ্চ বিদ্যালয়টি অবস্থিত। এই এলাকার অধিকাংশ লোক মধ্যবিত্ত। এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব উন্নত নয়। এই এলাকা হইতে উপজেলা সদর প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। শিক্ষা ব্যবস্থার দুরবস্থা উপলব্ধি করিয়া স্থানীয় লোকজনের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় এই বিদ্যালয়টি ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর হইতে এলকার জনসাধারণ শিক্ষার আলো দেখিতে পায় এবং ১৯৭২ সালে বিদ্যালয়টি মাধ্যমিক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
আরো পড়ুন: ইচ্ছা থাকিলে উপায় হয় ভাবসম্প্রসারণ
এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আশপাশের গ্রামের অনেক মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে মেয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত আছেন। এমনকি পি.এস.ডি ডিগ্রি অর্জন করে দেশের বাহিরে কর্মরত আছেন। অদুর ভবিষ্যতে বিদ্যালয়ের মান অনেক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। অত্র বিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীগণ কে অভিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলী দ্বারা পাঠদান করানো হয়।
২।. মিশন ও ভিশন: মিশন: শিক্ষার মাধ্যমে মানবিক মূল্যবোধ ও নেতৃত্বের গুণাবলী গড়ে তোলা। ভিশন: চকমহব্বতপুর অঞ্চলের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
৩।. একাডেমিক সাফল্য: ২০২৪ সাল একাডেমিক ক্ষেত্রে আমাদের জন্য অত্যন্ত সফল একটি বছর। এ বছর আমাদের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পরীক্ষায় চমৎকার ফলাফল অর্জন করেছে। এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৯৫%, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৭% বেশি। এসএসসি পরীক্ষায় গড় জিপিএ: ৪.৬৫, প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী: ৭০ জন, শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী: মোঃ আরিফ হোসেন (গড় জিপিএ ৫.০০)।
৪।. সহশিক্ষা কার্যক্রম: শুধু পড়াশোনা নয়, শিক্ষার্থীদের বহুমুখী প্রতিভা বিকাশেও আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এ বছর আমরা বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রম আয়োজন করেছি, যেমন: বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, বিতর্ক ও বক্তৃতা প্রতিযোগিতা, বিজ্ঞান মেলা ও প্রকল্প প্রদর্শনী, সংস্কৃতি সন্ধ্যা ও নাট্যোৎসব, স্কাউট এবং রেড ক্রিসেন্ট কার্যক্রম।
৫।. অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষার মান উন্নয়নে অবকাঠামো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪ সালে আমরা: নতুন কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন, লাইব্রেরি উন্নয়ন ও ডিজিটাল রিডিং জোন, বিজ্ঞান ল্যাব আধুনিকায়ন, নতুন খেলার মাঠ প্রস্তুত, স্যানিটেশন ব্যবস্থা উন্নয়ন
৬।. শিক্ষার্থী উন্নয়ন: আমাদের শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও মানসিক উন্নয়নে আমরা নিয়মিত কাউন্সেলিং সেশন, লিডারশিপ প্রশিক্ষণ এবং ক্যারিয়ার গাইডেন্স সেমিনার আয়োজন করেছি। এছাড়াও, আমরা বিশেষ মেধা বিকাশ ক্লাসের মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি।
৭।. শিক্ষক প্রশিক্ষণ: আমাদের শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নে নিয়মিত প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করা হয়। এ বছর আমরা ৫টি পেশাগত উন্নয়ন প্রশিক্ষণ আয়োজন করেছি, যা শিক্ষকদের পাঠদানে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
৮।. চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: ২০২৪ সাল আমাদের জন্য শিক্ষার মানোন্নয়নের বছর ছিল, তবে কিছু চ্যালেঞ্জও ছিল। যেমন: প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, অবকাঠামোর ঘাটতি, শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ, আগামী বছর আমরা বিদ্যালয়ের ডিজিটালাইজেশন, আরও উন্নত বিজ্ঞান ল্যাব, এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষার দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছি।
পরিশেষে বলা যায় যে, চকমহব্বতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সকল অভিভাবক, শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং শুভানুধ্যায়ীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের বিদ্যালয় আরও উচ্চতায় পৌঁছাবে এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সংবাদ প্রতিবেদন কি?
সংবাদ প্রতিবেদন হলো এমন একটি প্রতিবেদন বা লেখা যা সাম্প্রতিক ও সময়োপযোগী তথ্য উল্লেখ করে। সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্যের ভিত্তিতে সাধারণ মানুষের কাছে ঘটনা, পরিস্থিতি বা কোনো বিষয়ে সচেতনতা পৌঁছে দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয় যে প্রতিবেদন তাকে সংবাদ প্রতিবেদন বলে। এটি সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও এবং অনলাইন মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়। সংবাদ প্রতিবেদন লেখার সময় কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা প্রতিবেদনটিকে বিশ্বাসযোগ্য ও আকর্ষণীয় করে তোলে।
সংবাদ প্রতিবেদন লেখার প্রধান নিয়ম
- শিরোনাম (Headline) ঠিক করা
- সংক্ষেপে মূল ঘটনা বা বিষয়বস্তুর সারসংক্ষেপ তুলে ধরা।
- পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম এমন প্রতিবেদন তৈরি করা।
- নির্দিষ্ট, স্পষ্ট এবং প্রাসঙ্গিক করে প্রতিবেদন তুলে ধরা।
- সন্দেহজনক বা বিভ্রান্তিকর শব্দ পরিহার করা।
ভূমিকা (Lead) লেখা
- প্রতিবেদনের প্রথম অংশ যা পুরো প্রতিবেদনটির সারমর্ম তুলে ধরে।
- ৩০-৪০ শব্দের মধ্যে মূল বিষয়বস্তু উল্লেখ করতে হবে।
- ৫টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের (কখন, কোথায়, কেন, কীভাবে, কী) উত্তর দিতে হবে।
- উদাহরণ: "গতকাল রাতের প্রবল বর্ষণে দেশের উত্তরাঞ্চলের ১০টি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে, এতে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।"
তথ্যভিত্তিক ও নির্ভুল লেখা
- নিশ্চিত তথ্য ব্যবহার করতে হবে।
- অনুমাননির্ভর বা অযাচিত তথ্য পরিহার করতে হবে।
- উৎস উল্লেখ করতে হবে (যদি প্রয়োজন হয়)।
- বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিহার করতে হবে।
নিরপেক্ষ ও সুনির্দিষ্ট ভাষা ব্যবহার
- পক্ষপাতমূলক বা মতামতমূলক শব্দ এড়িয়ে চলতে হবে।
- সংক্ষিপ্ত, সরল ও স্পষ্ট ভাষায় লেখা উচিত।
- জটিল বাক্য পরিহার করতে হবে।
ছবি ও ভিডিও ব্যবহার
- তথ্যকে আরও বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্য করতে প্রয়োজনীয় ছবি ও ভিডিও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
- ছবি ব্যবহার করলে অবশ্যই ক্যাপশন দিতে হবে।
ভাষণ কি?
ভাষণ বা বক্তৃতা একটি শিল্প। ইহা বাচনিক শিল্প হিসেবেই স্বীকৃত। প্রায় প্রত্যেক মানুষকেই জীবনের কোথাও না কোথাও ভাষণ দিতে হয়। হয় সেটা আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক। সহজ ও সুন্দর ভাষায় সাবলীল ভংগীতে ভাষণ দেয়াকেই আর্ট বা শিল্প বলা হয়। বিষয়টি সহজ নয়। প্রশিক্ষণ বা অনুশীলনের মাধ্যমে এ সুকুমার বৃত্তিটি আয়ত্ব করা সম্ভব।
১। জনসমক্ষে দাঁড়িয়ে যে কোন বিষয়ে কথা বলা, ভাষণ দেওয়া বক্তার ভেতরে আত্ম-প্রত্যয়ের জন্ম দেয়।
২। কোন ব্যাপক বিস্তারিত বিষয়কে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শ্রোতার কাছে সংক্ষিপ্তভাবে পেশ করার কৌশল ও অভিজ্ঞতা অর্জন ভাষণের অন্যতম উদ্দেশ্য।
৩। ভাষণের মাধ্যমে কোন জটিল বিষয় কিংবা সমস্যাকে শ্রোতার কাছে সহজবোধ্য ও মনোজ্ঞ করে উপস্থাপন করার দক্ষতা অর্জিত।
৪। ভাষণের মাধ্যমে কোন বিবেচ্য বিষয় বাঁ ঘটনার ০ বিশ্লেষণ ক্ষমতার বিকাশ সাধন করা সম্ভব।
৫। সীমিত বা স্বল্প সময়ে কোন বিষয়কে তাৎক্ষনিক উপলদ্ধি করা ও সহজ ভাষায় তা জনসমক্ষে তুলে ধরার ক্ষমতা অর্জন করা যায় ভাষণের মাধ্যমে।
লক্ষ্যণীয় বিষয়ঃ পূর্বেই বলা হয়েছে ভাষণ একটি শিল্প বা আর্ট। এ শিল্প উপস্থাপনে লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে প্রধানত দুটি। ক. বিষয়বস্তু এবং খ. উপস্থাপন দক্ষতা। বক্তা যে বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করবেন, লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে করে বক্তব্য উপস্থাপনকালে বিষয়বহির্ভূত কোন অপ্রাসঙ্গিক কথার অবতারণা না হয়। তাতে বক্তার গুণগতমান নষ্ট হয়। এছাড়া উপস্থাপন দক্ষতার মধ্যে লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে সময়ানুবর্তিতা অর্থাৎ নির্দিষ্ট বা পরিমিত সময়ের মধ্যেই বক্তব্য শেষ করা। বাচনভঙ্গী এটি বক্তার স্বকীয়তা। এটি সহজাত হলেও চর্চার ভেতর দিয়ে উৎকর্ষ সাধন করা সম্ভব। বক্তার উচ্চারণ সঠিক হওয়া কর্তব্য। অশুদ্ধ উচ্চারণে ভাষণদান, ভাষণ শিল্পের মান নষ্ট করে দেয়। অব্যাহত চর্চায় এটিও শুদ্ধ করা সম্ভব।
আরো পড়ুন: পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি ভাবসম্প্রসারণ
শ্রেণীকরণঃ ভাষণের শ্রেণীকরণ করা অসম্ভব। কারণ এর পরিধি এত ব্যাপক ও বিস্তৃত যে নির্দিষ্ট কোন বিষয় এর অন্তর্গত নয়। মানুষের যে কোন স্থানে, যে কোন অবস্থায় ভাষণ দেবার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে এবং তার বিষয়টিও হবে বিচিত্র। ফলে এ বিচিত্র বিষয়কে শ্রেণীবদ্ধ করে আলোচনা করা যায় না। তবে ভাষণ উপস্থাপন স্থানের ওপর এবং শ্রোতার শ্রেণী বিচারে ভাষণের তারতম্য হয়। যেমন প্রকাশ্য মঞ্চে জনসাধারণের সামনে উপস্থাপিত ভাষণ এবং বেতার ভাষণের মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। আবার আবিষ্কার কাহিনী বিষয়ক ভাষণ ও নিত্যদৃষ্ট বস্তুর ওপর প্রদত্ত ভাষণের মধ্যে থাকে মৌলিক পার্থক্য।
ভাষণের প্রয়োজনীয়তা দিকগুলো কি কি?
১। ভাষণের ধরণ-ধারণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতনতা আবশ্যক। বিষয়বস্তু বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ভাষা ব্যবহার করতে হয়।
২। মনে রাখতে হবে ভাষণ শ্রোতার শোনার জন্য। তাই এর ভাষা যত সহজও সরল হয় ততই ভাল। অলংকার বাহুল্য ও কথার মার প্যাঁচ যতদূর সম্ভব বর্জনীয়।
৩। ভাষণের জন্য মাত্রাতিরিক্ত সময় নেওয়া উচিৎ নয়। কারণ তাতে শ্রোতার ধৈর্যচ্যুতি ঘটতে পারে এবং একঘেঁয়েমী সৃষ্টি হতে পারে। এ ব্যাপারে বক্তার বিচারবুদ্ধিই সর্বাপেক্ষা বড় সহায়।
৪। ভাষণ আকর্ষণীয় হওয়া প্রয়োজন। যাতে করে শ্রোতা আগ্রহী হয়ে ওঠে।
৫। সূচনা ও সমাপ্তি নাটকীয় হলে ভাল হয়। এতে করে শ্রোতার আগ্রহ সৃষ্টি হবে।
৬। ভাষণে বক্তার চিন্তার মৌলিকতা থাকা উচিৎ অপ্রাসঙ্গিক বিষয় বর্জন করে সাবলীলভাবে উপস্থাপন করতে হবে।
৭। লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে প্রতিষ্ঠিত সত্য ও তথ্যের অপলাপ না ঘটে। সত্য তথ্য নিজের ভাষায় সহজ ভঙ্গিতে বলতে হবে। রসহীন বিষয় যাতে সাহিত্য পদবাচ্য হয়, তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
৮। ভাষণে বক্তার মনের প্রতিক্রিয়া ও ব্যক্তিত্ব পরিস্ফুটিত হবে।
৯। শ্রোতা শ্রবণ করে; বর্ণিত বিষয় সম্পর্কে যাতে করে দৃশ্যকল্প তৈরি করতে পারে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url