ইমান শব্দের অর্থ কি? বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে ইমান শব্দের অর্থ কি এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে ইমান শব্দের অর্থ বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ইসলাম হলো আল্লাহ তায়ালার প্রবর্তিত ধর্ম বা পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। এটি মানব জাতির জন্য আল্লাহ তাআলার একটি বিশেষ নেয়ামত। মানব জীবনের সকল বিষয় ও সমস্যার পরিপূর্ণ সমাধানের দিকনির্দেশনা এতে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জীবন ব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত করলাম ( সূরা মায়দা আয়াত ৩)।
মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকল কাজকর্মের যথাযথ দিকনির্দেশনা ইসলামের বিদ্যমান। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সকল বিষয়ই ইসলামে যথাযথভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এমনকি মানুষের মৃত্যুর পরবর্তী জীবন বা পরকালের অবস্থার বর্ণনাও ইসলামের রয়েছে। সুতরাং সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে জীবন পরিচালনার জন্য ইসলামের বিকল্প নেই।
ইমান শব্দের অর্থ কি?
ইমান শব্দটি আরবি ভাষা থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ হলো বিশ্বাস বা দৃঢ় বিশ্বাস। ইসলামের দৃষ্টিতে, ইমান বলতে আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলগণ, কিয়ামতের দিন এবং তাকদিরের (ভাগ্য) ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা বোঝায়। ইমান হলো মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনের মূল ভিত্তি এবং এটি অন্তরের একটি দৃঢ় অনুভূতি যা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য এবং তাঁর নির্দেশের প্রতি নিরঙ্কুশ বিশ্বাসকে প্রকাশ করে।
আরো পড়ুন: তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
ইমানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটি শুধুমাত্র অন্তরের বিশ্বাসেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি মানুষের আচরণ, কার্যকলাপ এবং নৈতিকতার ওপরও প্রভাব ফেলে। প্রকৃত ইমান মানুষকে সৎ, ন্যায়পরায়ণ এবং সমাজের কল্যাণে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। এটি মানুষের জীবনকে আলোকিত করে, তাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রেরণা জোগায়।
ইমান শব্দের মূল ধাতু কি
ইমান শব্দটি ' আমনুন ' মূল ধাতু হতে নির্গত। যার অর্থ বিশ্বাস স্থাপন, আস্থা স্থাপন, স্বীকৃতি দেয়া, নির্ভর করা, মেনে নেওয়া ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায়, শরিয়তের যাবতীয় বিধি বিধান অন্তরে বিশ্বাস করা, মুখে স্বীকার করা এবং তদানুযায়ী আমল করাকে ইমান বলে।
ইমান ও ইসলামের মধ্যে সম্পর্ক
ইমান ও ইসলামের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে, যা মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনের মূল ভিত্তি। ইমান হলো অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস, যা আল্লাহ, তাঁর রাসূলগণ, ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ, কিয়ামতের দিন এবং তাকদিরের প্রতি অটুট আস্থার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। অন্যদিকে, ইসলাম হলো সেই বিশ্বাসের বাহ্যিক প্রকাশ, যা মানুষের কথাবার্তা, আচরণ এবং কর্মের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। সহজভাবে বললে, ইমান হলো অভ্যন্তরীণ বিশ্বাস আর ইসলাম হলো সেই বিশ্বাস অনুযায়ী জীবন পরিচালনার প্রক্রিয়া।
ইমান ছাড়া ইসলাম পূর্ণাঙ্গ হয় না, এবং ইসলাম ছাড়া ইমানের বাস্তব রূপ প্রকাশিত হয় না। একজন মুসলমানের জীবন তখনই পূর্ণতা পায়, যখন সে ইমানের মাধ্যমে অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করে এবং ইসলাম অনুসারে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সেই বিশ্বাসকে বাস্তবে রূপ দেয়। এ দুইয়ের মধ্যে এমন সম্পর্ক যেমন হৃদয় ও কর্মের, যেখানে একটির অভাব অন্যটিকে অসম্পূর্ণ করে। সুতরাং, ইমান ও ইসলাম পরস্পর পরিপূরক এবং ইসলামের পরিপূর্ণতা অর্জনের জন্য দুটোই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
ইমানের সাতটি মূল বিষয়
ইমান অর্থ বিশ্বাস। একজন মুসলিমকে ইমানের কতগুলো মৌলিক বিষয় বিশ্বাস করতে হয়। এগুলো হল আল কুরআন ও হাদিস দ্বারা অকাট্টভাবে প্রমাণিত। এ বিষয়গুলিতে বিশ্বাস ব্যতীত কেউ মুমিন বা মুসলিম হতে পারে না। এরূপ বিষয় মোট সাতটি। এগুলো হলো
আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশ্বাস: ইমানের সর্বপ্রথম ও সর্বপ্রধান বিষয় হলো আল্লাহ তায়ালার প্রতি বিশ্বাস। আল্লাহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয়। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ বা মাবুদ নেই। তিনি সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা পালনকর্তা ও রিজিকদাতা। তিনি সকল গুণের আঁধার। তার সত্তা ও গুণাবলী তুলনাহীন। সমস্ত প্রশংসা ও ইবাদত একমাত্র তারই জন্য নির্ধারিত। আল্লাহ তাআলার প্রতি ইমানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আসমানী কিতাবের উপর বিশ্বাস: আসমানী কিতাব সমূহ আল্লাহ তাআলার বাণী।এগুলোরর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে নিজ পরিচয় প্রদান করেছেন। নানা আদেশ-নিষেধ, বিধি-বিধান, সুসংবাদ, সতর্কবাণী ইত্যাদি এগুলোর মাধ্যমেই এসেছে। আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূলগণের নিকট এসব কিতাব পাঠিয়েছেন। দুনিয়াতে সর্বমোট 104 খানা আসমানী কিতাব নাযিল করা হয়েছে। এ সমস্ত কিতাবের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক।
ফেরেশতাগণদের প্রতি বিশ্বাস: ফেরেশতাগণ মহান আল্লাহর এক বিশেষ সৃষ্টি। তারা নূরের তৈরি। তারা সবসময় আল্লাহ তায়ালার ইবাদত ও হুকুম পালনে নিয়োজিত। তাদের সংখ্যা অগণিত তারা নারীও নন আবার পুরুষও নন। তারা পানাহার ও যৌগিক চাহিদা থেকে মুক্ত। তাদের প্রতি এরূপ বিশ্বাস রাখা ঈমানের অন্তর্ভুক্ত।
নবী রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস: মানবজাতির হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে বহু রাসূল প্রেরণ করেছেন। নবী রাসূলগণ ছিলেন আল্লাহ তায়ালার মনোনীত বান্দা। সকল সৃষ্টির মধ্যে তারাই সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। আল্লাহ তা'আলা নির্দেশে তারা মানব জাতিকে মহান আল্লাহর পথে ডেকেছেন, সত্য ও ন্যায়ের পথ দেখিয়েছেন, ইহকালীন ও পরকালীন শাস্তি ও মুক্তির দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। নবী-রাসূলগণের প্রতি এরূপ বিশ্বাস রাখা ঈমানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আখিরাতে বিশ্বাস: আখিরাত হলো পরকাল আখিরাতের জীবন চিরস্থায়ী। এ জীবনের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই। সেখানে মানুষকে দুনিয়ার জীবনের সকল কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে। কবর, হাশর, মিজান, পুলসিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি আখেরাত জীবনের এক একটি পর্যায়। দুনিয়াতে ভালো কাজ করলে মানুষ জান্নাতে লাভ করবে। আর ঈমান না আনলে, অসৎ কাজ করলে মানুষের স্থান হবে ভীষণ আজাবের স্থান জাহান্নাম তাই আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস করা অপরিহার্য।
তকদিরে বিশ্বাস: তকদির হলো নির্ধারিত পরিমাণ, ভাগ্য বা নিয়তি। আল্লাহ তায়ালা মানুষের তকদিরের নিয়ন্ত্রক। তিনিই তকদিরের ভালো-মন্দ নির্ধারণকারি। মানুষ যা চাই তাই করতে পারবে না। বড় মানুষ শুধু তার কাজের জন্য চেষ্টা সাধন করবে। অতঃপর ফলাফলের জন্য আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করবে। যদি চেষ্টা করার পরও কোন কিছু না পায় তবে হতাশ হবে না। আর যদি পেয়ে যাই তবুও খুশিতে আত্মহারা হবে না। বরং ধৈর্য ধারণ করবে ও শোকর কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। আর তকবীরের ভালো-মন্দ একমাত্র আল্লাহ তায়ালার হাতে, মনে প্রানে এরূপ বিশ্বাস স্থাপন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
আরো পড়ুন: আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
মৃত্যুর পর পুনরুত্থানে বিশ্বাস: মৃত্যুর সাথে সাথে মানুষের জীবন শেষ হয়ে যায় না। বরং মানব জীবন দুই ভাগে বিভক্ত। ইহকাল ও পরকাল। ইহকাল হল দুনিয়ার জীবন আর পরকাল হল মৃত্যুর পরবর্তী জীবন। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে মৃত্যুর পর আবার জীবিত করবেন। সেসময় সকল মানুষ হাশরের ময়দানে একত্রিত হবে। আল্লাহ তা'আলা সেদিন বিচারক হিসেবে মানুষের সকল কাজের হিসাব নেবেন। অতঃপর মানুষকে তার ভালো কাজের জন্য পুরস্কার স্বরূপ জান্নাতে ও মন্দ কাজের শাস্তি স্বরূপ জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। সুতরাং মৃত্যুর পর আমরা সবাই পুনরায় জীবিত হব এই বিশ্বাস রাখা ঈমানের অপরিহার্য বিষয়।
ইমানের সর্বোচ্চ শাখা কোনটি
ইমানের সর্বোচ্চ শাখা হলো "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বা আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই—এ বিশ্বাসের স্বীকৃতি। এটি ইসলামের মৌলিক মূলমন্ত্র এবং একজন মুসলমানের ইমানের কেন্দ্রবিন্দু। এই ঘোষণা মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করতে এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আল্লাহকেই পূজ্য ও প্রভু হিসেবে গ্রহণ করতে বাধ্য করে। "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" শুধু একটি বাক্য নয়; এটি মানুষের অন্তরের গভীরে থাকা দৃঢ় বিশ্বাস, যা তার কর্ম ও আচরণে প্রতিফলিত হয়।
এই শাখার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রকাশ করে এবং তাঁর আইন ও নির্দেশের প্রতি নিজেকে সমর্পিত করে। এটি ইমানের এমন এক শিখর যা মানুষের অন্তরকে বিশুদ্ধ করে, তাকে অহঙ্কার থেকে মুক্ত করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে পরিচালিত করে। সুতরাং, "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" শুধু ইমানের সর্বোচ্চ শাখা নয়, বরং মুসলমানদের জীবনধারার মূল ভিত্তি।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে ইমান শব্দের অর্থ কি এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হয়েছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url