আজানের দোয়া ও অর্থ বিস্তারিত জেনে নিন
আজান আরবি শব্দ এর অর্থ আহ্বান করা বা ডাকা। শরিয়তের পরিভাষায় কতকগুলো নির্দিষ্ট কালিমা দ্বারা নির্দিষ্ট সময়ে মানুষকে নামাজের জন্য আহ্বান করাকে আজান বলে। তাই নামাজের সময় হলেই শরিয়তের বিধান মোতাবেক একজন মোয়াজ্জেম মসজিদের বাইরে উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে নির্দিষ্ট কতগুলো শব্দ দ্বারা উচ্চস্বরে নামাজের জন্য আজান দেয় বা ডেকে থাকে।
আজান দেওয়ার সুন্নত নিয়ম হল মুয়াজ্জিম অযু করে মসজিদের বাইরে একটি উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে কেবলামুখী হয়ে দু হাতের দু শাহাদত আঙুল দু কানের মধ্যে প্রবিষ্ট করে সুন্দর সুরে বা সুন্দর লাহানে উচ্চস্বরে আজানের বাক্যগুলো উচ্চারণ করবে বা মানুষজনকে আহ্বান করবে। পোস্ট সূচিপত্র
আজানের দোয়া
আল্লাহহুমা রব্বা হাজিহিদ দাওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াস সালাতিল কায়িমাতি আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাদিলাতা ওয়াদ দারজাতার রফিআতা ওয়াবআসহু মাকামাম মাহমুদানিল্লাজি ওয়াআত্তাহু ওয়ারজুকনা শাফাআতাহু ইয়াওমাল কিয়ামাতি, ইন্নাকা লা কুখলিফুন মিআদ।
আরো পড়ুন: আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ
এর অর্থ হলো হে আল্লাহ! আপনি এ পরিপূর্ণ আহ্বান ও অনুষ্ঠাতব্য নামাজের মালিক। আপনি নিজ কৃপায় মুহাম্মদ (স) এর জন্য আমাদের মুক্তির উপায়, তাঁর সম্মান ও উঁচু মর্যাদা প্রদান করুণ এবং আপনার অঙ্গীকারকৃত মহাম্মদ (স) তথা প্রশংসিত স্থানে তাঁকে অধিষ্ঠিত করুন। নিশ্চয়ই আপনি অঙ্গীকারের ব্যতিক্রম করেন না।
আজানের জবাব দেওয়ার নিয়ম
আজানের জবাব বা উত্তর হলো দুই প্রকার। জাওয়ব বিল কওল এবং জাওয়াব বিল ফেল। জাওয়ব বিল কওল অর্থ হলো কথার মাধ্যমে মুখে জওয়াব দেওয়া এবং জাওয়াব বিল ফেল এর অর্থ হলো কাজের মাধ্যমে জাওয়াব দেওয়া।
তাই জাওয়াব বিল কওল, অর্থাৎ মুয়াজ্জিনের আজান শব্দ শোনার সাথে সাথে শ্রবণকারী উত্তর দেওয়া সুন্নত এবং জওয়াব বিলফেল অর্থাৎ আজান শোনার সাথে সাথেই দুনিয়াবী সমস্ত কাজ কর্ম ছেড়ে দেওয়া ও নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে যাওয়া । জওয়াব বিল কওলের মধ্যে কিছু ব্যতিক্রম আছে। আর তা হল মুয়াজ্জিন যে শব্দ উচ্চারণ করবে শ্রবণকারীরাও সাথে সাথে সে শব্দ উচ্চারণ করবে শুধু মাত্র হাইয়্যা
আলাছ ছলাহ ও হাইয়্যা আলাল ফালাহ এর পরিবর্তে বলতে লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ্। এর অর্থ হলো আল্লাহর সাহায্যে বা অনুগ্রহ ব্যতীত কারো নেক কাজ করার শক্তি নেই বা নামাজে হাজির হওয়ার শক্তি নেই।
ফজরের ওয়াক্তের আযানে আস্ সালাতু খইরুম মিনান নাউম বলার সময় শ্রবণকারীরা বলবে ছদাক্বতা ওয়া বাররতা যার অর্থ তুমি সত্য বলেছ ও উত্তম বলেছ ঘুম থেকে নামাজ উত্তম।
আজানের সময় করণীয় ও বর্জনীয়
পৃথিবীর সবচেয়ে সুমধুর ধ্বনির নাম হলো আজান। এটি মুসলিম অমুসলিম নির্বিশেষে কোটি মানুষের মধুর ধ্বনি। তা আবার হবে না কেন? এ আজান তো সৃষ্টির প্রতি মহান সৃষ্টিকর্তা ও পালন কর্তার আহ্বান। একজন মানুষকে যখন তার মহান মালিকের প্রতি আহ্বান করা হয়, তার উপলব্ধি তখন কেমন হতে পারে?
তাই আজানের আওয়াজ শুধু মাত্র মুসলমানের অন্তরেও নাড়া দেয় না, বরং তা অসুলিমের অন্তরকেউ আকর্ষণ করে। যুগে যুগে তার অজস্র উদাহরণ রয়েছে। তাই ইসলামে আজানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। আজান শুনে আজানের জবাব দেওয়ারও রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।
আজানের উত্তর দেওয়া সুন্নত। আজানের সময় চুপচাপ থেকে আজানের উত্তর দিতে হবে। আজানের জবাব দেওয়ার পদ্ধতি হলো মুয়াজ্জিন সাহেব প্রত্যেকটি ব্যাক্য বলে থামার পর শ্রোতা ওই ব্যাক্যটি হুবহু ভাবে বলবে শুধু মাত্র মুয়াজ্জিন হাইয়্যা আলাস সালাহ হাইয়্যা আলাল ফালাহ বলার সময়ে শ্রোতা লা হাওলা ওয়ালা কুইয়তা ইল্লাবিল্লাহ বলবে।
আজানের সুন্নাতসমূহ
আজানের জন্য নিম্নে বর্ণিত কাজগুলো সুন্নাত। যেমন মুয়াজ্জিন পুরুষ হওয়া, মুয়াজ্জিন সুস্থ মস্তিষ্ক হওয়া, মুয়াজ্জিনের প্রয়োজনীয় মাসয়ালা-মাসায়েল জানা থাকা, মুয়াজ্জিন দিনদার পরেজগার হওয়া, ময়াজ্জিনের আওয়াজ বড় বা উচ্চস্বর হওয়া, মসজিদের বাহিরে আযান দেওয়া, কোন উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে আজান দেওয়া,
উচ্চস্বরে আযান দেওয়া, আজানের শব্দগুলো টেনে টেনে এবং থেমে থেমে বলা, হাইয়া আলাছ্লাহ বলার সময় ডান দিকে হওয়া এবং হাইয়া আলাল ফালাহ্ বলার সময় বামদিকে মুখ ফিরানো। এসব সুন্নত মেনে একজন মুয়াজ্জিন কে আজান দিতে হবে। মুয়াজ্জিন সাহেব দীনদ্বার পরেজগার না হলে তাকে মুয়াজ্জিন করা যাবে না।
মুয়াজ্জিন হতে হলে দ্বীন দার ব্যক্তি হতে হবে। একজন মুয়াজ্জিনের গুরুত্ব পরকালে অপরিসীম তাই আগে মুয়াজ্জিন দীনদ্বার ও পরেজগার ব্যক্তি দেখে বাছাই করতে হবে।
আজানের ফজিলত
যারা ইবাদত করে তারা বড় নেকির অধিকারী হয়, মুয়াজ্জিন হলো তাদের একজন। আজান দেওয়ার বিনিময়ে জাহান্নাম হতে মুক্তি ও জান্নাত লাভ। কিয়ামতের ময়দানে বড় সম্মানের অধিকারী হবেন। মানুষ জিন ও পৃথিবীর সকল বস্তু কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনের জন্য কল্যাণের সাক্ষী দিবে।
আল্লাহ তায়ায়া আজানের ব্যাপারে বলেন হে ঈমাদারগণ! যখন তোমাদেরকে জুম্মার দিন সালাত আদায়ের জন্য ডাকা হবে, কথন তোমরা আল্লাহকে ডাকার জন্য দৌড়ে আসো। আর ক্রয়-বিক্রয় ছেড়ে দাও। এটা তোমাদের উত্তম। আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) যে কোন মানুষ ও জিন অথবা যে কোন বস্তু মুয়াজ্জিনের কণ্ঠ শুনবে সে কিয়ামতের দিন তার জন্য সাক্ষ্য দিবে।
অত্র হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পৃথিবীর সকল বস্তু কিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনের জন্য কল্যাণ চাইবে। জাহান্নাম হতে মুক্তি এবং জান্নাত লাভের জন্য আল্লাহর নিকট দাবি জানাবে। আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনে আছ (রা.) বলেছেন, যখন তোমরা মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে শুনবে তখন তার জওয়াবে বল মুয়াজ্জিন যা বলবে। এই হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, মুয়াজ্জিনের সাথে শ্রোতাকেও জওয়াব দিতে হবে। আর হাইয়্যা আলা দ্বয় ব্যতীত মুয়াজ্জিন ও শ্রোতার শব্দ একই হবে।
আজান শেষে রাসুলের প্রতি দরুদ পড়তে হবে। জান্নাতের মর্যাদাপূর্ণ সুউচ্চ স্থান রাসূল এর জন্য চাইতে হবে। বিশিষ্ট সাহাবী আনাস (রা.) বলেন, নবি করীম (সা.) ফজরের আজানের সময় কান পেতে থাকতেন। একদা এক ব্যক্তিকে আল্লাহ আকবার আল্লাহ আকবার বলতে শুনলেন, তখন রাসুল (সা.) বললেন তুমি ইসলামের উপর আছ।
অতঃপর লোকটি বলল আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তখন রাসূল (সা.) বললেন তুমি জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করলে। অতঃপর সাহাবিগণ সেই মুয়াজ্জিনের দিকে লক্ষ্য করলেন দেখলেন সে একজন রাখাল। উপরের আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে আজানের গুরুত্ব অপরিসীম।
বাচ্চা হলে আজান দেওয়ার নিয়ম
আজান একটি গোষ্ঠীর ইসলামিক প্রাথমিক ধর্মীয় অনুষ্ঠান, যা একটি নবজাতক শিশুর কানে আজান পাঠ করে তাকে ইসলামের মূল ধার্মিক শৈশীতে প্রবেশ করানোর জন্য করা হয়। এর নিয়ম এবং প্রক্রিয়াটি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় পরিবেশে ভিন্ন হতে পারে। অনেক সময় এটি বাচ্চার জন্মের পরে বাচ্চার কানে আল্লাহ আকবার উচ্চারণ করে শিশুকে ইসলামের পথে প্রবেশ করানোর জন্য আজান দেওয়া হয়।
ডান কানে আযান বা বাঁ কানে ইকামতের হাদিসটার দুর্বলতা প্রমাণিত হয়েছে। এ জন্য আযান দিলেই যটেষ্ট। তবে আজানটা জোরে দেওয়া যাবে না যেন বাচ্চার কান ফেটে না যায়, বাচ্চা ভয় না পায়, কান্নাকাটি আরম্ভ না করে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আসলে বাচ্চা হলে আযান কেন দেওয়া হয় এর উদ্দেশ্য কি তা আমাদের জানতে হবে। আজানের উদ্দেশ্য হলো বাচ্চা যেন ইসলামের ওপর থাকে, ফেতরাতের ওপর থাকে।
এ জন্য প্রথম ধ্বনি তার কানে যেন যায়, আল্লাহ আকবার, আল্লাহ সবচেয়ে বড় এবং সর্বশেষ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এটাও যেন তার কানে যায়। আল্লাহর তাওহিদের সাক্ষ্য, কল্যাণের সাক্ষ্য এগুলো সবই যেন আপনার সন্তানের ওপর আসর করে, তার ওপর যেন প্রভাব পড়ে, এটাই শরিয়ত চায়। এটা যদি আপনি আদায় করতে পারেন। আস্তে আস্তে বলুন কানের কাছে যেন আযানের শব্দগুলো যায় জোরে নয়। অনেক বাড়িতে আযান দিয়ে বসে।
এটা আবার ভুল কাজ। বাড়িতে আজান দেওয়া ঠিক নয়। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আস্তে আস্তে তার কানের কাছে আজানটি বলুন। পুরুষ-নারী যে কেউ আজান দিতে পারবেন কারো জন্য কোনো বাঁধা নিষেধ নেই। তবে উত্তম হচ্ছে পুরুষ বলা আযান যেহেতু পুরুষের কাজ। এখানে উদ্দেশ্য হলো বাচ্চাকে শোনানো নামাজের জন্য ডাকা বা আহ্বান করা নয়।
বাচ্চাকে এটা শোনানোর অর্থ হলো বাচ্চা যেন তাওহিদবাদি হয় রাসুল সা. এর রিসালাতকে যেন স্বীকার করে দিনের ওপর যেন থাকে, নামাজ আদায়কারী হয় এটাই মূল উদ্দেশ্য।
ফজরের আজানের জবাব দেওয়ার নিয়ম
ফজরের আজানের সময় মুয়াজ্জিন যখন হাইয়্যা আলাস সালাহ ও হাইয়্যা আলাল ফালাহ বলবে শ্রোতা তখন বলবে লা হাওলা ওয়া লা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ এটাই বিশুদ্ধ। আর বাকি বাক্য গুলো মুয়াজ্জিনের হুবহু বাক্য গুলো পড়বে। লা হাওলা ওয়া লা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ এর অর্থ হলো ঘুম থেকে নামাজ উত্তম।
আমাদের উপর প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মহান আল্লাহ তায়ালা ফরজ করেছেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজান হলে তার সাথে সাথে আমাদের জবাব দিতে হয় আমরা সবাই হয়ত জানিনা। মুয়াজ্জিন যখন মসজিদে আজান দেয় তখন আযানের সাথে সাথে আমাদের জবাব দিতে হবে। জবাব দেওয়ার নিয়ম হলো মুয়াজ্জিন প্রত্যেকটি বাক্য বলে থামার পর শ্রোতা ওই বাক্যটি নিজেও হুবহু বলবে।
যেমন মুয়াজ্জিন যদি বলে আল্লাহ আকবার, আল্লাহ আকবার তাহলে শ্রোতাও বলতে আল্লাহ আকবার আল্লাহ আকবার। আবার মুয়াজ্জিন যখন বলতে আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ তখন শ্রোতাও বলবে আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহ। এভাবে আযানের জবাব দিতে হবে।
ফজরের আজানের সময়
আজকে ফজরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু ভোর 4:12 মিনিটে এবং ফজরের ওয়াক্তের শেষ সময় ভোর 5:30 মিনিটে। ফজরের নামাজের গুরুত্ব অনেক এর ফজিলত বলে শেষ করা যাবে না। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, মসজিদে যখন মুয়াজ্জিন আজান দেবে তখন যদি কোন ব্যক্তি তার আরামের ঘুম ত্যাগ করে মসজিদে যায় ফজরের সালাত আদায় করার জন্য
আরো পড়ুন: তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
তাহলে ঐই ব্যক্তি যত সওয়াব পাবে তা এই সমস্ত পৃথিবীকে সাতবার বিক্রি করলেও ঐই সালাতের সমান হবে না। এই আয়াত থেকে তাহলে বুঝা যায় যে ফজরের সালাতের গুরুত্ব কেমন? আবার মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজিদে উল্লেখ করেছেন, কোনো ব্যক্তি যদি শেষ রাতে এশার সালাত আদায় করে এবং আরামের ঘুম ত্যাগ করে ফজরের সালাত আদায় করে তাহলে
ঐই ব্যক্তি সারারাত ইবাদত করলে যে সওয়াব পেতো এশার এবং ফজরের সালাত আদায় করার জন্য ঐই ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ তায়ালা সারারাত ইবাদতের সওয়াব তার আমল নামায় দান করবেন। তাহলে এশার সালাত ও ফজরের সালাতের গুরুত্ব কেমন তা বুঝা যাচ্ছে।
আজান শুনলে পাঁচটি করণীয়
আজান শ্রবণকারীর পাঁচটি করণীয় সুন্নত আমল রয়েছে। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় অতএব আজানের সময় মাত্র পাঁচ মিনিট সময় অপচয় করলে বা ব্যয় করলে আমলগুলো করার কারণে পরকালে মিলবে অসামান্য পুরস্কার। এক আজান শ্রবণকারীর জন্য আজানের বাক্যগুলো তেমনভাবে বলা সুন্নাত যেমনভাবে মুয়াজ্জিন বলে থাকেন।
আজানের সময় মুয়াজ্জিন যখন বলবেন হাইয়া আলাস সালাহ ও হাইয়া আলাল ফালাহ তখন শ্রোতা বলবে লা হাওলা ওয়া লা কুউয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। মুসলিম শরিফের একটি হাদিসে এসেছে, কোনো ব্যক্তি এ আমল করলে তার জন্য জান্নাত অবধারিত। দুই নং হলো: আজান শ্রবণকারীর জন্য এই দোয়া পাঠ করা সুন্নত আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াদাহু লা শারিকা লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।
অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে এক আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। তার কোনো শরিক নেই তার সাথে কাউকে তুলনা করা যাবে না। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহ তায়ালার বান্দা ও রাসুল। পালনকর্তা হিসেবে আমি আল্লাহকে পেয়ে রাসুল হিসেবে হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে পেয়ে এবং দ্বীন হিসেবে ইসলামকে পেয়ে আমি সন্তুষ্ট আছি। রাসুল সা. বলেন যে, ব্যক্তি আজান শ্রবণ করার পর এই দোয়া পাঠ করলো তার অতীতের সব গুনাহগুলো ক্ষমা করে দিলো
মহান আল্লাহ তায়ালা। তিন নং হলো: মুয়াজ্জিনের জবাব দেওয়ার পর মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. এর ওপর দরুদ শরিফ পাঠ করা। মহানবি হজরত মুহাম্মদ সা. বলেছেন, যখন তোমরা মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে শোনো তখন তার জবাব দাও। এরপর আমার উপর দরুদ শরিফ পাঠ করো। কেননা যে ব্যক্তি আমার ওপর দরুদ শরিফ পাঠ করে মহান আল্লাহ তায়ালা তার ওপর দশবার করুণাধারা বর্ষণ করেন।
চার নং হলো: দরুদ শরিফ পাঠ করার পর এই দোয়া পড়া আল্লাহুম্মা রাব্বা হাযিহিদ দাওয়াতিত তা-ম্মাহ, ওয়াসসালাতিল ওয়াল ফাদিলাহ, ওয়াব আসহু মাকামাম মাহমুদা নিল্লাজি ওয়াআদতাহ, ইন্নাকা লা তুখলিফুল মিআদ। এর দোয়ার অর্থ হলো হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান এবং প্রতিষ্ঠিত নামাজের প্রভু! আপনি মুহাম্মাদ সা. কে ওয়াসিলা (মর্যাদাপূর্ণ একটি স্থানের নাম) ও ফাজিলাহ মর্যাদাপূর্ণ দান করুন এবং মাকামে মাহমুদে পৌঁছে দিন যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাকে দিয়েছো।
নিশ্চয় তুমি প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করোনা। পাঁচ নং হলো: নিজের জন্য দোয়া করা এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে তাঁর করুণা ও অনুকম্পা প্রার্থনা করা। মহানবি হজরত মুহাম্মদ সা. বলেছেন, মুয়াজ্জিন যেমন উচ্চারণ করেন তেমন তুমিও উচ্চারণ করো। এবং এই আজানের জবাব দেওয়ার পর তুমি যদি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করো তাহলে তোমাকে
মহান আল্লাহ তায়ালা কখনোই খালি হাতে ফেরত দিবেন না। তাই আমাদের মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন কোনো ব্যক্তি যদি আমার কাছে মন থেকে কিছু চায় তাহলে আমি সেই ব্যক্তিকে খালি হাতে ফেরত দিয়না।
আজানের জবাব দেওয়া কি?
আজানের জবাব দেওয়া হলো সুন্নাত। আজান শ্রবণকারী মৌখিকভাবে জবাব দিবে। রসুলুল্লাহ সা.বলেন যখন তোমরা আযান শুনবে মুয়াজ্জিনের সাথে সাথে তোমরাও বলবে। আজান আরবি শব্দ। ইসলামের ফরজ বিধান নামাজ আদায়ের জন্য বিশেষ আহ্বানকে আজান বলা হয়।
দিনে পাঁচবার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য মুয়াজ্জিন আজান দিয়ে থাকেন। আজান মুসলিমদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন ফরজ বিধান নামাজ আদায়ের জন্য আজান দেয়া হয়। যিনি আজান দেন তাকেই মুয়াজ্জিন বলা হয়। নামাজের যেমন গুরুত্ব রয়েছে, ঠিক তেমনি আজানেও গুরুত্ব রয়েছে।
আজানের জবাব না দিলে কি গুনাহ হবে?
আজানের জবাব দেওয়া অত্যন্ত ফজিলত পূর্ণ আমল যা আলেমদের সর্বসম্মতি মতে মুস্তাহাব। ইবনে কুদামা বলেন, এটি মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে আহলুল ইলমদের মধ্যে কোনও দ্বিমত আছে বলে আমার জানা নাই। আপনি যত ব্যস্ততাই থাকুন না কেন, আজান শুনলে সুন্নত পালনার্থে আজানের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করা কর্তব্য।
এ ক্ষেত্রে অলসতা করা উচিত নয়। কেউ যদি জবাব দেয় তাহলে সে সুন্নতের উপর আমল করার কারণে সওয়াব পাবে কিন্তু না দিলে কোনো গুনাহ হবে না। তবে জবাব দেওয়ার সাথে সালাত শুদ্ধ হওয়ার কোনও সম্পর্ক নাই।
কেননা আজানের জবাব দেয়া এবং সালাত প্রত্যেকটি স্বতন্ত্র আমল। একটি অপরটির উপর নির্ভরশীল নয়। সুতরাং কেউ যদি আজানের জবাব না দেয় তাতেও সালাতের কোনো ক্ষতি হবে না। তবে আজানের জবাব দিলে সওয়াব হবে।
লেখকের মন্তব্য
আজকে আমি আপনাদের সাথে আজানের দোয়া, আজানের জবাব দেওয়ার নিয়ম, আজানের সময় করণীয় এবং বর্জনীয়, আজানের জবাব না দিলে গুনাহ হবে কি না এই বিষয়গুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই আর্টিকেলটি পুরো পড়ে উপকৃত হতে পেরেছেন। এই রকম আরো ইসলামিক তথ্যমূলক আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী আর্টিকেল লিখে থাকি। এই আর্টিকেলটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url