মহাবিশ্ব কি? - মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে? বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে মহাবিশ্ব কি? - মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে? এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে মহাবিশ্ব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।এ সৃষ্টি জগতে যা কিছু আছে তার সব কিছু নিয়েই মহাবিশ্ব। ক্ষুদ্র পোকামাকড় ও ধূলি কণা থেকে শুরু করে আমাদের এই পৃথিবী, দূর দূরান্তের গ্রহ নক্ষত্র, ধূমকেতু, গ্যালাক্সি এবং দেখা না দেখা সবকিছু নিয়েই মহাবিশ্ব। মহাবিশ্ব যে কত বড় তা কেও জানেনা। কেউ জানেনা মহাবিশ্বের আকার বা আকৃতি কেমন। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন মহাবিশ্বের শুরু ও শেষ নেই। তবে কেউ কেউ এখনো বিশ্বাস করেন মহাবিশ্বের আকার ও আকৃতি আছে।
মানুষ প্রতিনিয়তই মহাবিশ্ব সম্পর্কে নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার করছে। তবুও এর অনেক কিছুই এখনো অজানা রয়ে গেছে। অনেক কিছু অজানা থাকলেও বিজ্ঞানীরা এটা জানতে পেরেছেন যে মহাবিশ্বের কোন কোন অংশে বস্তু বা পদার্থের উপস্থিতি অন্য অংশের চেয়ে বেশি। যেসব অংশে পদার্থ বা বস্তু বেশি জোর বা-ঘনীভূত হয়েছে, তাদের বলা হয় গ্যালাক্সি বা নক্ষত্র জগৎ। গ্যালাক্সি হল গ্রহ ও নক্ষত্র এক বৃহৎ দল। আমাদের বাসভূমি পৃথিবী যে গ্যালাক্সিতে অবস্থিত তার নাম ছায়াপথ বা মিক্সিওয়ে।
এরকম কোটি কোটি গ্যালাক্সি রয়েছে, যেখানে রয়েছে কোটি কোটি নক্ষত্র। গ্যালাক্সি গুলো মহাকাশে ঘুরে বেড়ায়। গ্যালাক্সির নক্ষত্রগুলোকে যত কাছাকাছি মনে হয়, আসলে তা নয়। এরা পরস্পরের থেকে অনেক দূরে। এদের মধ্যকার দূরত্ব সম্পর্কে তোমাদের একটু ধারণা দেওয়া যাক। আমরা জানি যে, আলো এক সেকেন্ডে প্রায় তিন লক্ষ কিলোমিটার পথ যেতে পারে। পৃথিবী ও সূর্যের দূরত্ব প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার।
আরো পড়ুন: জলবায়ু কাকে বলে
সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে সময় লাগে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড। অন্যদিকে সূর্য এর সবচেয়ে নিকটবর্তী নক্ষত্র আলফা সেন্টারিতে আলো পৌঁছাতে সময় লাগতে পারে কয়েক মিলিয়ন বছর। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ নক্ষত্রের মধ্যে মধ্যবর্তী দূরত্ব কত বেশি আর কত বিশাল। সৌরজগৎ ম্যাক্সি ওয়ে বা আকাশগঙ্গা নামক গ্যালাক্সির অন্তর্গত। পৃথিবী থেকে নক্ষত্রগুলোকে মিটমিট করে জ্বলতে দেখা যায়।
নক্ষত্রগুলো প্রত্যেক এক একটি জ্বলন্ত গ্যাসপিণ্ড বলে এদেরকে সবারে আলো ও উত্তাপ আছে। মহাবিশ্বের নক্ষত্রগুলোকে তাদের আলোর তীব্রতা অনুসারে লাল, নীল হলুদ ইত্যাদি বিভিন্ন বর্ণে ভাগ করা হয়েছে। অতি বৃহৎ নক্ষত্রের রং লাল, মাঝারি নক্ষত্রের রং হলুদ এবং ছোট নক্ষত্রের রং নীল হয়ে থাকে।
মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে?
মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও বিকাশ সংক্রান্ত যে সব তথ্য আছে, তার মধ্যে বহুল প্রচলিত হলো বিগব্যাং তত্ত্ব। বাংলায় এদেরকে বলা হয় মহাবিস্ফোরণ তথ্য। এই তথ্য মতে মহাবিশ্ব একসময় অত্যন্ত উত্তপ্ত ও একক বিন্দুতে অসীম ঘনত্বের অবস্থায় ছিল। বিগব্যাং তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্ব স্বতঃস্ফূর্তভাবে অতি দ্রুত প্রসারিত হয়ে যায়।
দ্রুত প্রসারণের ফলে মহাবিশ্ব ঠান্ডা হয়ে যায় এবং বর্তমান প্রসারণশীল অবস্থায় পৌঁছায়। অতি সম্প্রতি জানা গেছে যে, বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ সংঘটিত হয়েছিল প্রায় ১৩.৭৫ বিলিয়ন বছর পূর্বে এবং এটাই মহাবিশ্বের বয়স। বিগব্যাং তত্ত্ব একটি বহুল পরীক্ষিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব যা বেশিরভাগ বিজ্ঞানে গ্রহণ করেছেন। এর কারণ, জ্যোতির্বিদদের পর্যবেক্ষিত প্রায় সকল ঘটনায় এই তত্ত্ব সঠিক ও ব্যাপকভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। বর্তমান কালের বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংসহ সকল জ্যোতিবিজ্ঞানী এই তত্ত্বের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন।
মহাকাশ কি
আমরা আকাশের দিকে তাকালে দূর-দূরান্তে অনেক বস্তু দেখতে পাই। দিনের আকাশের সূর্য রাতের আকাশের গ্রহ, উপগ্রহ নক্ষত্র ইত্যাদি আমাদের চোখে পড়ে। আমরা যদি দূরবীক্ষণ দিয়ে আকাশের দিকে তাকায়, আরো অনেক কিছু দেখতে পায়। বৃহস্পতি গ্রহ তার উপগ্রহ সহ জ্বলজ্বল করতে থাকে। গ্রহ, নক্ষত্র, ছায়াপথ, গ্যালাক্সি ইত্যাদির মাঝখানে যে খালি জায়গা, তাকে মহাকাশ বা মহাশূন্য বলে। মহাকাশের দিকে তাকালে আমরা যে সব বস্তু দেখতে পাই তাহলে পদার্থ, যেমন আমাদের এই পৃথিবী।
মহাকাশ বা মহাশূন্যের শুরু কোথা থেকে
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর সাথেই মহাকাশ ঘুরছে। এজন্য বায়ুমণ্ডল কে মহাকাশের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। তাহলে কোথা থেকে বায়ুমণ্ডলের শেষ এবং মহাকাশের শুরু? অধিকাংশ বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর বেশ কাছাকাছি। পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে দূরত্ব যত বাড়তে থাকে, বায়ুমণ্ডল ততো হালকা হতে থাকে এবং ১৬০ কিলোমিটারের পর বায়ুমণ্ডল থাকে না বললেই চলে।
অধিকাংশ বিজ্ঞানী মনে করেন যে পৃথিবী থেকে ১৬০ কিলোমিটার উচ্চতায় বায়ুমন্ডলের শেষ এবং মহাকাশ শুরু। মহাকাশ কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত? মহাকাশের কি কোন সীমা আছে? এক সময় মানুষ ভাবতো, মহাকাশের সীমা আছে। তারা ভাবতো যে, যতদূর পর্যন্ত সবচেয়ে দূরের বস্তুতি তারা দেখতে পায়, সে পর্যন্তই মহাকাশ বিস্তৃত এবং মহাকাশ বকাকৃতির। পরবর্তীতে দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কারের পর মানুষ তার দৃষ্টিসীমার বাহিরের অনেক গ্রহ, নক্ষত্র ও গ্যালাক্সি দেখতে পেল।
কৃত্রিম উপগ্রহ ও এর ইতিহাস
কৃত্রিম উপগ্রহ বলতে বোঝায় এমন একটি যন্ত্র বা বস্তু, যা মানুষের তৈরি এবং পৃথিবী বা অন্য কোনো গ্রহের কক্ষপথে স্থাপন করা হয়। এগুলো মহাকাশ গবেষণা, যোগাযোগ, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, প্রতিরক্ষা এবং নানাবিধ বৈজ্ঞানিক কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। মানুষের আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ একটি মাইলফলক। তবে এটি একদিনে গড়ে ওঠেনি। কৃত্রিম উপগ্রহের ইতিহাস অনেক প্রাচীন এবং কৌতূহলোদ্দীপক।
১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর, সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম সফলভাবে মহাকাশে একটি কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে, যার নাম ছিল স্পুটনিক-১ (Sputnik-1)। এটি ছিল পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপিত প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ। মাত্র ৮৩.৬ কিলোগ্রাম ওজনের এই উপগ্রহটি মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল। এই উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মহাকাশ প্রতিযোগিতা শুরু হয়, যা পরবর্তী কয়েক দশক ধরে চলেছে।
এরপর ১৯৫৮ সালে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ এক্সপ্লোরার-১ (Explorer-1) উৎক্ষেপণ করে। এক্সপ্লোরার-১-এর মাধ্যমে পৃথিবীর কক্ষপথে রেডিয়েশন বেল্ট সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়, যা ভ্যান অ্যালেন বেল্ট নামে পরিচিত। এই আবিষ্কার মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।
বছরের পর বছর ধরে কৃত্রিম উপগ্রহ প্রযুক্তি উন্নত হয়েছে। বিভিন্ন দেশে উপগ্রহ উৎক্ষেপণের প্রতিযোগিতা শুরু হয় এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে থাকে। ১৯৬৫ সালে, প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ ইনটেলস্যাট-১ (Intelsat-1) উৎক্ষেপণ করা হয়, যা সারা বিশ্বে টেলিভিশন সম্প্রচার এবং টেলিযোগাযোগে বিপ্লব ঘটিয়েছিল।
আধুনিক যুগে কৃত্রিম উপগ্রহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। আবহাওয়া পূর্বাভাসে ব্যবহৃত GOES উপগ্রহ, সামরিক গোয়েন্দাগিরিতে ব্যবহৃত গুপ্তচর উপগ্রহ, এবং জিপিএস নেভিগেশন সিস্টেমে ব্যবহৃত উপগ্রহ প্রযুক্তি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় নক্ষত্র কোনটি
মহাবিশ্বে লক্ষ কোটি নক্ষত্রের মধ্যে কিছু নক্ষত্র তাদের বিশাল আকার ও বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য আমাদের কল্পনাশক্তিকে বিস্মিত করে। এই বিশাল নক্ষত্রগুলোর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বড় হিসাবে পরিচিত UY স্কুটাই (UY Scuti)। এটি আমাদের পরিচিত সূর্যের তুলনায় এতটাই বড় যে একে তুলনা করতে গেলে ভাবনার বাইরে চলে যায়।
UY স্কুটাই হলো একটি লাল অতিদানব নক্ষত্র, যা পৃথিবী থেকে প্রায় ৯,৫০০ আলোকবর্ষ দূরে স্কুটাম তারামণ্ডলে অবস্থান করছে। এই নক্ষত্রটি প্রথম ১৮৬০ সালে জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন এবং এর আকার ও বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ শুরু হয়। UY স্কুটাই-এর ব্যাস সূর্যের চেয়ে প্রায় ১,৭০০ গুণ বড়। সহজ কথায়, যদি UY স্কুটাইকে সূর্যের জায়গায় স্থাপন করা হয়, তবে এটি বৃহস্পতি গ্রহের কক্ষপথ পর্যন্ত প্রসারিত হবে।
UY স্কুটাই-এর ভর সূর্যের চেয়ে বেশি না হলেও এর আকারের বিশালত্বের কারণ হলো এর ঘনত্ব খুব কম। লাল অতিদানব নক্ষত্রগুলো জীবনের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে এভাবে ফুলে ওঠে এবং UY স্কুটাই-ও তার জীবনের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এটি পরবর্তী কয়েক মিলিয়ন বছরের মধ্যে সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে যাবে।
UY স্কুটাই ছাড়াও মহাবিশ্বে বেশ কয়েকটি বড় নক্ষত্র রয়েছে, যেমন VY Canis Majoris, Betelgeuse, এবং Westerlund 1-26, যেগুলোর আকার ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। তবে আকারের দিক থেকে UY স্কুটাই এখন পর্যন্ত সবার শীর্ষে রয়েছে।
এই নক্ষত্র আমাদের মহাবিশ্বের বিশালতা ও অজানা রহস্যের একটি স্মারক। এটি প্রমাণ করে যে মহাবিশ্বে এমন অনেক জিনিস রয়েছে, যা কেবল আমাদের কল্পনাকে নয়, বিজ্ঞানের সীমানাকেও চ্যালেঞ্জ জানায়।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে মহাবিশ্ব কি? - মহাবিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে? এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url