বিন্দু স্থিতিস্থাপকতা কাকে বলে? বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে বিন্দু স্থিতিস্থাপকতা কাকে বলে এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে বিন্দু স্থিতিস্থাপকতা কাকে বলে তা বিস্তারিত জানতে পারবেনা প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বিন্দু স্থিতিস্থাপকতা কাকে বলে বিস্তারিত জেনে নিন
বৃত্তচাপ স্থিতিস্থাপকার তুলনায় বিন্দু স্থিতিস্থাপকতা ধারণাটি আরো সূক্ষ্ম। কোন চাহিদা রেখার একটি সুনির্দিষ্ট বিন্দুতে স্থিতিস্থাপকতার মান নির্নয় করা হলে তাকে বিন্দু স্থিতিস্থাপকতা বলা হয়। বিন্দু স্থিতিস্থাপকতার ক্ষেত্রে দামের পরিবর্তন হয় অতি অল্প মাত্রায়। ফলে, দাম এবং চাহিদার পরিমাণের পরিবর্তন হলেও চাহিদা রেখার প্রাথমিক বিন্দু এবং পরিবর্তিত বিন্দু খুবই কাছাকাছি অবস্থান করে। প্রাথমিক বিন্দু এবং পরিবর্তিত বিন্দু পরস্পরের এত নিকটে অবস্থান করে যে দুটি বিন্দুকে একই বিন্দু বলে মনে করা হয়। এই কারনে বিন্দু স্থিতিস্থাপকতা নির্ণয় করার ক্ষেত্রে অন্তরকরণের সাহায্যের প্রয়োজন।

চাহিদার আয় স্থিতিস্থাপকতা কাকে বলে?

চাহিদার আয় স্থিতিস্থাপকতা (Income Elasticity of Demand) হলো অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা কোনো পণ্যের চাহিদা এবং ভোক্তার আয়ের মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে। সহজভাবে বলতে গেলে, এটি একটি পরিমাপ যা দেখায় যে ভোক্তার আয় পরিবর্তনের ফলে একটি নির্দিষ্ট পণ্যের চাহিদা কীভাবে পরিবর্তিত হয়।

যখন ভোক্তার আয় বৃদ্ধি পায় বা হ্রাস পায়, তখন সাধারণত তার খরচ করার ক্ষমতাও পরিবর্তিত হয়। আয় স্থিতিস্থাপকতা এই পরিবর্তনকে একটি গাণিতিক অনুপাতে রূপান্তরিত করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো পণ্যের চাহিদা ভোক্তার আয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পায়, তাহলে ওই পণ্যটির আয় স্থিতিস্থাপকতা ইতিবাচক এবং একের বেশি হবে। অন্যদিকে, যদি আয়ের পরিবর্তনে চাহিদার কোনো বড় পরিবর্তন না ঘটে, তাহলে পণ্যটির আয় স্থিতিস্থাপকতা শূন্যের কাছাকাছি বা কম হবে।
পণ্যের ধরন অনুযায়ী আয় স্থিতিস্থাপকতার প্রকৃতি বিভিন্ন হতে পারে। বিলাসবহুল পণ্য (যেমন গাড়ি বা বিদেশ ভ্রমণ) সাধারণত উচ্চ আয় স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শন করে, কারণ এই ধরনের পণ্যের চাহিদা শুধুমাত্র উচ্চ আয়ের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে, প্রয়োজনীয় পণ্য (যেমন চাল, আটা, বা তেল) কম আয় স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শন করে, কারণ এই পণ্যের চাহিদা ভোক্তার আয়ের পরিবর্তন সত্ত্বেও তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকে।

চাহিদার আয় স্থিতিস্থাপকতা হিসাব করার জন্য একটি সূত্র ব্যবহৃত হয়, যা হলো:
Ei = (% চাহিদার পরিবর্তন) ÷ (% আয়ের পরিবর্তন)

এই সূত্রের মাধ্যমে অর্থনীতিবিদরা এবং ব্যবসায়ীরা পণ্যের চাহিদা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে এবং বাজারের কৌশল নির্ধারণ করতে পারেন। সঠিক আয় স্থিতিস্থাপকতার মূল্যায়ন করার মাধ্যমে উৎপাদকরা বুঝতে পারে কোন পণ্যগুলোতে বেশি বিনিয়োগ করলে লাভজনক হবে এবং কোন ক্ষেত্রে কম।

পরিশেষে বলা যায়, চাহিদার আয় স্থিতিস্থাপকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা ব্যক্তি, উৎপাদক, এবং অর্থনীতিবিদদের মধ্যে চাহিদার গতিবিধি বোঝার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক।

চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতা কাকে বলে

চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতা (Cross Elasticity of Demand) হলো অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা এক পণ্যের দাম পরিবর্তনের কারণে আরেক পণ্যের চাহিদার পরিবর্তনের মাত্রা পরিমাপ করে। এটি মূলত দুটি ভিন্ন পণ্যের মধ্যে চাহিদার আন্তঃসম্পর্ক বোঝার একটি উপায়। যখন একটি পণ্যের দাম পরিবর্তিত হয়, তখন অন্য পণ্যের চাহিদায় যে পরিবর্তন ঘটে, সেটি চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতা দ্বারা পরিমাপ করা হয়।

এই স্থিতিস্থাপকতার প্রকৃতি পণ্যের প্রকারভেদ অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। যদি দুটি পণ্য পরস্পর বিকল্প (substitute) হয়, যেমন চা এবং কফি, তবে একটি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলে অন্য পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতার মান হবে ধনাত্মক। অন্যদিকে, যদি দুটি পণ্য পরিপূরক (complementary) হয়, যেমন গাড়ি এবং জ্বালানি, তবে একটি পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলে অন্য পণ্যের চাহিদা হ্রাস পাবে। এক্ষেত্রে স্থিতিস্থাপকতার মান হবে ঋণাত্মক।

চাহিদার আড়াআড়ি স্থিতিস্থাপকতা হিসাব করার সূত্র হলো:
Eab = (% পণ্যের B চাহিদার পরিবর্তন) ÷ (% পণ্যের A দাম পরিবর্তন)

এটি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা এবং বাজার বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী। উৎপাদক এবং বিক্রেতারা এই ধারণার মাধ্যমে বুঝতে পারেন যে বাজারে তাদের পণ্য কিভাবে প্রতিযোগীদের পণ্যের উপর নির্ভরশীল। উদাহরণস্বরূপ, যদি দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী ব্র্যান্ডের মধ্যে শক্তিশালী বিকল্প সম্পর্ক থাকে, তবে একটির দাম পরিবর্তনের ফলে অন্যটির বিক্রয়ে সরাসরি প্রভাব পড়বে। একইভাবে, পরিপূরক পণ্যের ক্ষেত্রে একটির দাম বৃদ্ধি হলে, উভয়ের চাহিদা হ্রাস পেতে পারে।

বিন্দু স্থিতিস্থাপকতা কাকে বলে

বিন্দু স্থিতিস্থাপকতা হলো অর্থনীতির একটি ধারণা, যা কোনো একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে একটি পরিবর্তনের জন্য একটি নির্দিষ্ট ভেরিয়েবলের প্রতিক্রিয়াশীলতার মাত্রা নির্ধারণ করে। সহজ কথায়, এটি একটি নির্দিষ্ট সময়ে চাহিদা বা যোগানের পরিবর্তনের তুলনায় মূল্য বা আয়ের পরিবর্তনের প্রভাব মাপার একটি উপায়।

যদি একটি পণ্যের মূল্য সামান্য পরিবর্তন করা হয় এবং তার ফলে চাহিদা বা যোগানের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে, তবে বলা হয় যে সেই পণ্যটির স্থিতিস্থাপকতা বেশি। অন্যদিকে, যদি মূল্যের পরিবর্তন সত্ত্বেও চাহিদা বা যোগানে তেমন কোনো পার্থক্য না দেখা যায়, তবে তা স্থিতিস্থাপকতায় কম হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ধারণাটি অর্থনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বাজারের চাহিদা এবং যোগানের সম্পর্ক বোঝার পাশাপাশি ব্যবসার সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।
উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য যেমন চাল বা আটা। এগুলোর মূল্য সামান্য বাড়লে বা কমলেও মানুষের চাহিদা প্রায় একই থাকে, কারণ এটি অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। এই ধরনের পণ্যের স্থিতিস্থাপকতা কম। বিপরীতে বিলাসবহুল পণ্য যেমন ব্র্যান্ডেড পোশাক বা ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের ক্ষেত্রে মূল্য সামান্য পরিবর্তন হলে চাহিদার উপর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে, কারণ এগুলো প্রয়োজনীয় নয় বরং আকাঙ্ক্ষিত। তাই এই ধরনের পণ্যের স্থিতিস্থাপকতা বেশি।

বিকল্প স্থিতিস্থাপকতা কাকে বলে?

বিকল্প স্থিতিস্থাপকতা অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা, যা বোঝায় একটি পণ্যের চাহিদার পরিবর্তন কিভাবে অন্য একটি পণ্যের মূল্যের পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এটি মূলত দুইটি পণ্য বা সেবার মধ্যে সম্পর্ক এবং একটির মূল্য বৃদ্ধিতে অন্যটির চাহিদা কেমন প্রভাবিত হয় তা নির্ধারণ করে।

এই ধারণাটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ তখন, যখন বাজারে একে অপরের বিকল্প হিসেবে ব্যবহারযোগ্য পণ্য বিদ্যমান থাকে। উদাহরণস্বরূপ, চা এবং কফি হলো দুটি বিকল্প পণ্য। যদি চায়ের মূল্য বৃদ্ধি পায়, তবে অনেক ভোক্তা চায়ের পরিবর্তে কফি কেনার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে কফির চাহিদা বৃদ্ধি পাবে এবং এটি চা ও কফির বিকল্প স্থিতিস্থাপকতার একটি উদাহরণ। অন্যদিকে, যদি কফির মূল্য কমে যায়, তবে কফির চাহিদা আরও বাড়তে পারে এবং চায়ের চাহিদা হ্রাস পাবে। পোস্ট সূচিপত্র

বিকল্প স্থিতিস্থাপকতা পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত সূত্র হলো:

বিকল্প স্থিতিস্থাপকতা=পণ্যের চাহিদার শতাংশ পরিবর্তনঅন্য পণ্যের মূল্যের শতাংশ পরিবর্তন\text{বিকল্প স্থিতিস্থাপকতা} = \frac{\text{পণ্যের চাহিদার শতাংশ পরিবর্তন}}{\text{অন্য পণ্যের মূল্যের শতাংশ পরিবর্তন}}বিকল্প স্থিতিস্থাপকতা=অন্য পণ্যের মূল্যের শতাংশ পরিবর্তনপণ্যের চাহিদার শতাংশ পরিবর্তন​

এই সূত্রের মাধ্যমে দুটি পণ্যের মধ্যে বিকল্পের সম্পর্ক এবং সংবেদনশীলতার মাত্রা নির্ধারণ করা যায়।

বাজারের প্রতিযোগিতামূলক কাঠামো বিশ্লেষণ এবং ভোক্তাদের আচরণ বোঝার ক্ষেত্রে বিকল্প স্থিতিস্থাপকতা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ব্যবসা এবং অর্থনৈতিক নীতি নির্ধারণে সহায়তা করে, কারণ এটি দেখায় ভোক্তারা কীভাবে পণ্যের মূল্য পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে তাদের পছন্দ পরিবর্তন করে। এছাড়া, এটি বাজারে নতুন পণ্য প্রবর্তনের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য চাহিদা পূর্বাভাস দিতেও ব্যবহৃত হয়।

আংশিক স্থিতিস্থাপকতা কাকে বলে?

যে সমস্ত অপেক্ষকে দুই বা ততোধিক স্বাধীন চলক থাকে, সেই সমস্ত অপেক্ষকের অন্যান্য স্বাধীন চলকগুলোকে স্থির বিবেচনা করে উদ্দেশ্যমূলক একটি মাত্র স্বাধীন চলকের সাপেক্ষে যখনি স্থিতিস্থাপকতা পরিমাপ করা হয় কখন তাকে আংশিক স্থিতিস্থাপকতা বলে।

স্থিতিস্থাপক চাহিদা কাকে বলে?

কোনো দ্রব্যের দাম যে হারে পরিবর্তিত হয় চাহিদা যদি তার চেয়ে বেশি হারে পরিবর্তিত হয় তখন তাকে স্থিতিস্থাপক চাহিদা বলা হয়। স্থিতিস্থাপক চাহিদা বলতে মূলত এককের বেশি স্থিতিস্থাপকতাকে বুঝায়। এক্ষেত্রে, দ্রব্যের দাম হ্রাস পেলে ভোক্তার মোট ব্যয় বৃদ্ধি পায়। আবার দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে ভোক্তার মোট ব্যয় হ্রাস পায়।

অস্থিতিস্থাপক চাহিদা কাকে বলে

কোন দ্রব্যের দাম যে হারে পরিবর্তিত হয় চাহিদা যদি তার চেয়ে কম হারে পরিবর্তিত হয় তখন তাকে অস্থিতিস্থাপক চাহিদা বলা হয়। অস্থিতিস্থাপক চাহিদা বলতে মূলত এককের কম স্থিতিস্থাপকতাকে বুঝায়। এ ক্ষেত্রে দ্রব্যের দাম হ্রাস পেলে ভোক্তার মোট ব্যয়ও হ্রাস পায়। আবার. দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পেলে ভোক্তার মোট ব্যয় বৃদ্ধি পায়

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে বিন্দু স্থিতিস্থাপকতা কাকে বলে এই টপিক সহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ টপিকের উপর বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url