ছাত্র জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে ছাত্র জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে ছাত্র জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনাটি বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ছাত্র জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা বিস্তারিত জেনে নিন
ভূমিকা: ছাত্রজীবন মানবজীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। ছাত্রজীবনে নিজেকে যেভাবে গড়ে তোলা হয়, সারা জীবন সে রকম ফল পাওয়া যায়। ছাত্রজীবনকে বলা হয় প্রস্তুতির জীবন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করে নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হয় এই ছাত্রজীবনেই। তাই বৃহত্তর জীবনের পটভূমিতে ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক

ছাত্র জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা

ছাত্রজীবন: মানুষ সারা জীবন কিছু না কিছু শিখে। তাই বৃহত্তর অর্থে মানুষের গোটা জীবনটাই ছাত্রজীবন। কিন্তু ছাত্রজীবন বলতে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবনকে বুঝায়। জীবন গঠনের জন্য মানুষকে একটি বিশেষ সময়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নে এই সময়টুকুই মানুষের ছাত্রজীবন। তবে বৃহৎ অর্থে জন্ম থেকে আমৃত্যু মানুষ শিক্ষা অর্জন করে বলে আজীবনই মানুষ ছাত্র। কবির ভাষায় ‘‘বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র, নানান ভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবারাত্র’’।

ছাত্র কথাটির তাৎপর্য

ছাত্র কথাটির ইংরেজী প্রতিশব্দ Student. এ শব্দটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, S = Study (লেখাপড়া), T = Truthfulness (সত্যবাদিতা), U = Unity (একতা), D = Discipline (নিয়মানুবর্তিতা), E = Economy (মিতব্যয়িতা), N = Nationality (জাতীয়তা), T = Training (হাতে-কলমে শিক্ষা)। এসব কার্যক্রমের ভিত্তিতে একজন ছাত্র তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতনতা লাভ করতে পারে।

ছাত্রজীবনের মূল্য

ছাত্রজীবনের মূল্য অত্যধিক। ছাত্রজীবন মানবজীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সময়। ছাত্রজীবনকে ভবিষ্যৎ বীজ বপনের সময় বলা হয়। ক্ষেতে যে রকম বীজ বপন করা হয় শস্য সেরকম জন্মে। সেরূপ ছাত্রজীবনে যেরূপ বীজ বপন করা হয়, ভবিষ্যতে তেমন ফলই পাওয়া যায়। অর্থাৎ নিয়মিত ও রীতিমতো মনোযোগ সহকারে জ্ঞানানুশীলন করলে ভবিষ্যৎ জীবন উজ্জ্বল ও সুখময় হয়ে ওঠে।

ছাত্রজীবনের মুখ্য দায়িত্ব ও কর্তব্য

ছাত্রজীবন কর্মজীবনে প্রবেশের প্রস্তুতি পর্ব। জ্ঞানার্জনে আত্মনিয়োগ করা একজন ছাত্রের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য। অধ্যয়নই ছাত্রদের তপস্যা। অধ্যয়নের সাথে সাথে তাকে মানব চরিত্রের নানাবিধ সৎ গুণাবলিও অর্জন করতে হবে। যেমন - পিতা-মাতা, শিক্ষক-গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সময়ের সদ্ব্যবহার ইত্যাদি। নিজের মানস গঠনের জন্য একদিকে যেমন প্রয়োজন সৎ ব্যক্তির সান্নিধ্য, রুচিশীল গ্রন্থ পাঠ, ধর্মভক্তি; দৈহিক গঠনের জন্য তেমনি প্রয়োজন নিয়মিত শরীরচর্চা, সময়মতো খাদ্য গ্রহণ, খেলাধুলার অনুশীলন ইত্যাদি। পার্থিব চাকচিক্য ও ভোগ-বিলাস উপেক্ষা ও বর্জ করে ছাত্রজীবনে শুধু জ্ঞানসাধনাতেই লিপ্ত থাকা উচিত। 
পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করা সম্পূর্ণরূপে গর্হিত কাজ। আত্ম বা মানসিক উৎকর্ষ সাধন জীবনের মূল লক্ষ্য। শুধু পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনে সার্বিত জ্ঞানলাভ হয় না। বহির্জগতের জ্ঞানভান্ডার থেকে বিবিধ জ্ঞান আহরণ করতে হবে। বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস, অর্থনীতি, পৌরনীতি, রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, ধর্মনীতি, দর্শনশাস্ত্র প্রভৃতি বিষয়ে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করতে হবে। কতিপয় নির্ধারিত পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পরীক্ষায় শুধু পাস করাটাই বড় কথা নয়। প্রকৃত জ্ঞানলাভ করে চিন্তা ও মননশক্তির বিকাশের জন্য বিবিধ শাস্ত্রের অনুশীলন একান্ত আবশ্যক।

ছাত্রজীবনে দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপ্তি

ছাত্রসমাজের দায়িত্ব শুধু পড়াশোনার মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। পরিবার, সমাজ তথা দেশকে নতুন আঙ্গিকে গড়ার জন্য ছাত্রসমাজকে সঠিক পথ অনুসরণ করতে হবে। জাতীয় উন্নয়নে সচেতন নাগরিক হিসেবে ছাত্রসমাজের দায়িত্ব অত্যাধিক। ছাত্রসমাজ দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার, আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। ছাত্রসমাজই দেশ ও জাতির শিক্ষা এবং সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। দেশের দুর্দিনে ছাত্রসমাজই প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করবে। মোটকথা, জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদান করবে ছাত্রসমাজ।

দেশাত্ববোধ

দেশ ও জাতি তথা সমাজের কল্যাণসাধনই ছাত্রজীবনের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। ছাত্রসমাজকে দেশাত্মবোধে অবশ্যই উদ্বুদ্ধ হতে হবে। তাদের দেশপ্রেম, জনগণের প্রতি ভালোবাসা, সেবাপরায়ণতা, স্বাবলম্বন, অধ্যবসায়, নিয়মানুবর্তিতা, ধর্মপরায়ণতা, ধৈর্যশীলতা, উদারতা, সাহসিকতা প্রভৃতি গুণের অধিকারী হতে হবে। ছাত্রজীবনে জনসেবার বীজ উপ্ত হলে তবেই ভাবীজীবনের জন্য তা ফলপ্রসু হবে। ছাত্রজীবনে স্বার্থত্যাগ, জনসেবা ও দেশপ্রেমের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হলে তবেই তা দেশ ও জাতির জন্য হবে কল্যাণকর।

রাষ্ট্রের হিতসাধন

ছাত্ররা তারুণ্যের দীপ্তিতে প্রোজ্জ্বল। দেশ ও জাতি গঠনে সকল প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে তারাই পারে সাহস ও শক্তি নিয়ে এগিয়ে আসতে। রাশিয়া, চীন, তুরস্ক প্রভৃতি দেশের ছাত্রসমাজ দেশ ও জাতির উন্নয়নে অংশগ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস ছাত্রসমাজের অবদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ছাত্রসমাজকে রাষ্ট্রের গঠন ও কল্যাণমূলক কাজে অবশ্যই যোগদান করতে হবে। দেশ ও জাতির দুর্যোগে যথাশক্তি প্রয়োগ করে অশুভ শক্তির কবল থেকে দেশকে রক্ষা করা ছাত্রদের দায়িত্ব।

জনসেবা

ছাত্রগণকে পল্লি উন্নয়ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতে হবে। নিরক্ষতা, দারিদ্র্য দূর করতে ছাত্রদেরকেই কল্যাণকর ভূমিকা পালন করতে হবে এবং অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। সেবার হস্ত প্রসারিত করে জনগণের প্রত্যক্ষ কল্যাণসাধন করতে হবে। অভিশাপ, পল্লির বুক থেকে অশিক্ষা, কুসংস্কার, অস্বাস্থ্য ও শ্রীহীনতার অবসান ঘটিয়ে আদর্শ পল্লি গড়ে তুলতে হবে ছাত্রদেরকেই।

ঐক্য ও প্রীতি স্থাপন

ছাত্রদেরকে সকল সংকীর্ণতা পরিহার করে পারস্পরিক প্রীতি ও ঐক্য বিধান করতে হবে। তাদেরকে ব্যক্তিগত, জাতিগত, সম্প্রদায়গত বৈষম্য দূর করে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টির মাধ্যমে জাতীয় আদর্শকে সমুন্নত রাখতে হবে।

ছাত্রজীবনে বর্জনীয়

ছাত্রজীবনে কিছু কাজ না করাও তাদের পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। আলস্য, কুসংস্কার, বিভিন্ন প্রকার নেশাদ্রব্য ও অসৎ সঙ্গ তাদের অবশ্যই পরিহার করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে অসুস্থ ছাত্ররাজনীতির ধারা প্রচলিত তা থেকে অবশ্যই নিজেদের মুক্ত থাকতে হবে। তারুণ্যের অপচয় রোধ করা ছাত্রজীবনের পরিবত্র কর্তব্য।


পরিশেষে বলা যায় যে, ছাত্ররাই দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ। জ্ঞানার্জনে যেমন তাদের কর্তব্য, জাতি গঠনে অংশ নেয়াও তেমনি তাদের দায়িত্ব। তাদের কর্তব্য ও দায়িত্বের সুষ্ঠু সমন্বয়ের মধ্যেই সমাজ ও দেশের মঙ্গল নিহিত। আমাদের অস্থির সমাজ ও দুর্বল রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে ছাত্রদের যথাযথ দায়িত্ব পালন যদিও কঠিন তা সত্বেও ছাত্রদের নিজেদের দায়িত্ব পালনে পিছপা হলে চলবে না। তাই ইংরেজ কবি George Orwell বলেন, Students are the Strength, Students are the hope, Students are the prosperity, Students are the beauty.

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে ছাত্র জীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। প্রিয পাঠক, এ রকম আরো পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। প্রিয় পাঠক, এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url