বিজয় দিবস রচনা বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে বিজয় দিবস রচনা এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে বিজয় দিবস রচনা বিস্তারত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বিজয় দিবস রচনা বিস্তারিত জেনে নিন
বাঙ্গালি জাতির জীবনে যেসব দিবস রয়েছে তার মধ্যে বিজয় দিবস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। দীর্য নয় মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ এর এই দিনে অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় বিজয়। এই দিনে হানাদার পাকিস্থানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বিশ্বমানচিত্রে জন্ম নেয় নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ। তাই বিজয় দিবস আমাদের আত্মমর্যাদার ও আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক।

বিজয় দিবস রচনা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমি: বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোনো হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা ছিল না; বরং এটি দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা শোষণ, বঞ্চনা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা এক সংগ্রামের ফল। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হলেও, তখন থেকেই পূর্ব পাকিস্তান (অধুনা বাংলাদেশ) বঞ্চনার শিকার হতে থাকে। ভাষা, অর্থনীতি, রাজনীতি-সব ক্ষেত্রেই পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করতে থাকে।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তি রচনা করে। এরপর আসে ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচন এবং পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের ষড়যন্ত্র বাংলাদেশকে স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকে ঠেলে দেয়।

পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্য ও শোষণ: ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান গঠিত হওয়ার পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকদের অবহেলা ও শোষণের শিকার হতে থাকে।

অর্থনৈতিক বৈষম্য: পূর্ব পাকিস্তান থেকে উৎপাদিত পণ্য দিয়ে পাকিস্তানের রাজস্বের ৬০% আসলেও পূর্ব পাকিস্তানে বিনিয়োগ হতো মাত্র ৩০%।

রাজনৈতিক অবহেলা: পূর্ব বাংলার মানুষের মতামত উপেক্ষা করে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকেরা এককভাবে নীতিনির্ধারণ করত। 

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দমননীতি: পূর্ব পাকিস্তানের সংস্কৃতি, ভাষা ও ঐতিহ্যকে ছোট করে দেখানো হতো এবং উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টা করা হয়।

ছয় দফা আন্দোলন ও স্বাধীনতার ভিত্তি: ১৯৬৬ সালে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এবং ছাত্রজনতা ছয় দফা ঘোষণা করেন, যা ছিল বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসনের রূপরেখা। এতে উল্লেখ ছিল: অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক, ক্ষমতা বণ্টন, পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আলাদা মুদ্রা, রপ্তানি আয়ের ন্যায্য হিস্যা, সামরিক বাহিনীতে পূর্ব পাকিস্তানের সমান অংশগ্রহণ, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, অভ্যন্তরীণ লেনদেনের স্বাধীনতা

বিজয় দিবসের ইতিহাস: বাংলাদেশের বিজয় দিবসের পটভূমিতে রয়েছে বিপুল ত্যাগ ও সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস। সেই ইতিহাসের এক গরমময় মাইল ফলক মহান ভাষা আন্দোলন। এই আন্দোলনের রক্তাক্ত ইতিহাসের মধ্য দিয়ে বাঙালীর ভাষা ভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে। পরে দীর্ঘ দুই শতক ধরে চলে পাকিস্তানি স্বৈরাচারী জঙ্গি বাহিনীর বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম।পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বীর বাঙালি। 
শুরু হয় এদেশে ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ গঠন ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ।দীর্ঘ ৯ মাস ধরে চলে মুক্তি সেনাদের সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। যুদ্ধে প্রায় ৩০ লক্ষ বাঙালি জীবন বিসর্জন দেয়। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালির বিজয় সূচিত হয়। এই দিনে ঢাকায় ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরওয়ার্দি উদ্যানে) ঘটে ইতিহাসের অন্যতম গৌরবময় ঘটনা-পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী মাথা নিচু করে অস্ত্র মাটিতে ফেলে আত্মসমর্পণ করে আমাদের বীর মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীরে কাছে।

বিজয় দিবসের তাৎপর্য: ত্রিশ লক্ষ জীবনের বিনিময়ে অর্জিতে হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। অনেক অশ্রু বিসর্জনে পাওয়া এ স্বাধীনতা আমাদের কাছে অত্যন্ত গৌরবের। প্রজন্মের পর প্রজন্ম বয়ে নিয়ে চলেছে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পতাকা, গাইছে বিজয়ের গৌরবগাথা। তাই বিজয় দিবসের গুরুত্ব অপরসীম। প্রতিবছর এই দিনটি পালনের মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মকে এবং বিশ্বকে বারবার মনে করিয়ে দিই আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা, বীর শহীদদের কথা। 

আমরা আমাদের দেশের গৌরবোজ্জল ইতহাসের কথা স্মরণ করে অনুপ্রাণিত হই। উদ্ধুদ্ধ হই অগ্রগতির পদযাত্রায় এগিয়ে যেতে। বিজয় দিবস আমাদের অত্যন্ত আনন্দের একটি দিন হলেও এর সাথে জড়িয়ে আছে ৭১ এর মহান শহিদদের স্মৃতি, স্বজন হারানোর আর্তনাদ আর যুদ্ধাহত ও ঘরছাড়া মানুষের দীর্ঘশ্বাস। এই দিনটি শুধু আমাদের বিজয়ের দিন নয়, এটি আমাদের চেতনার জাগরণের দিন। তাই এই দিনে প্রতিটি বাঙ্গালি নতুন করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় দেশকে গড়তে-বিশ্বসভ্যতার সামনের সারিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে।

বিজয় দিবস ও বর্তমান বাস্তবতা: শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হলেও আমাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবের আঘাতে আজ ছিন্নভিন্ন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনেক কিছুই এখন চলে গেছে আড়ালে। গণতন্ত্র এখন সংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন স্বপ্ন বিলাসিতা। সমাজতন্ত্র ও দর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ হয়েছে পরিত্যাক্ত। আর মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিলো তা বিভেদ ও সংঘাতে পর্যবেসিত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে বিজয় দিবস এখনও আমাদের অনুপ্রাণিত করে।

বিজয় দিবসের উৎসবে অনুষ্ঠানমালা: মহাসমারোহে বিজয় দিবস উদযাপিত হয়। এ দিন সারাদেশ ছেয়ে যায় লাল-সবুজের সাজে। বাড়ির ছাদে, দোকানে, রাস্তার পাশে, গাড়ির সামনে, স্কুল-কলেজে, এমনকি রিকশার হ্যান্ডেলেও শোভা পায় লাল-সবুজ রঙ্গের জাতীয় পতাকা। প্রতিটি শহরে পরিলক্ষিত হয় উৎসবের আমেজ। রাজধানী ঢাকার রাস্তায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী আয়োজন করে গণমুখী নানারকম অনুষ্ঠানের। স্বাধীনতার আবেগে উদ্বেলিত নরনারি উৎসবের সাজে সেজে সেখানে জমায়েত হয়। 

স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা নানারকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এদিন সকালবেলা ঢাকার জাতীয় প্যারেড ময়দানে সেনাবাহিনীর উদ্যোগে কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, কূটনীতিবিদ, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষ এই কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন। চট্টগ্রামে বিজয় দিবস উপলক্ষে ৭দিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রাম এবং তার আশপাশের এলাকা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই মেলা দেখতে আসেন। দেশের প্রতিটি জেলায়ও উৎসবমুখর পরিবেশে এই দিনটি পালিত হয়।

জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা: বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো একটি শোষণমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যে মানুষের পরিপূর্ণ বিকাশের দাবি নিয়ে। অর্থনৈতিক মুক্তির মাধ্যমে স্বনির্ভর বাংলাদেশে সত্য-সুন্দর-কল্যাণ ও মানবিকতাপূর্ণ একটি গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণই ছিল মুক্তিযুদ্ধের শহীদেদের স্বপ্ন। দেশকে সার্বিকভাবে উন্নয়ন ও অগ্রগতি, গণতন্ত্র ও সাম্যের পথে নেয়ার জন্য জাতীয় চেতনার লালনই প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। 

জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিকশিত করা আজকের সময়ে দাবি। কেননা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দেশের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হয় নি। অসাম্প্রদায়িকতা, সাম্য সমাজে আজ অনুপস্থিত। দেশে যথাযথভাবে গণতেন্ত্রের বিকাশও হচ্ছে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তব রুপদানের মধ্যে দিয়েই আমরা আগামী দিনের বাংলাদেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারবো।

পরিশেষে বলা যায় যে, ১৬ই ডিসেম্বর চির প্রদীপ্ত একটি মহিমান্বিত দিন। আমাদের জাতীয় এ দিনটি অবিস্মরনীয় প্রভাব বিস্তার করে আছে। শহিদের মহান আত্মত্যাগের এই দিনটি যেমন তাৎপর্যপূর্ণ তেমনি দিনটি সত্য ও ন্যায়ের পথে মাথা তুুলে দাঁড়াবারও। এটি আমাদের চেতনার জাগরণের দিন। তাই এ দিনটিকে আমরা বগর্বে স্মরণ করব।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে বিজয় দিবস রচনা এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এর রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url