ভাষা কাকে বলে? বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে ভাষা কাকে বলে এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে ভাষা কাকে বলে তা বিস্তারিত জানতে পারেবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।ভাষা মানবজাতির একটি অন্যতম মূল্যবান এবং মৌলিক ক্ষমতা। এটি মানুষের চিন্তা, আবেগ এবং অভিজ্ঞতাগুলো প্রকাশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ভাষা শুধুমাত্র শব্দ বা বাক্যের একটি সংগ্রহ নয়; এটি মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক পরিচয়ের একটি প্রতিচ্ছবি। প্রতিটি ভাষার নিজস্ব গঠন, ব্যাকরণ, শব্দভান্ডার এবং ধ্বনি ব্যবস্থা থাকে, যা একে অন্য ভাষা থেকে আলাদা করে। পোস্ট সূচিপত্র
ভাষা কাকে বলে?
মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য কন্ঠধ্বনি এবং হাত, পা, চোখ ইত্যাদি অঙ্গ-পত্যঙ্গের সাহায্যে ইঙ্গিত করে থাকে। কন্ঠধ্বনির সাহায্যে মানুষ যত বেশি পরিমাণ মনোভাব প্রকাশ করতে পারে ইঙ্গিতের সাহায্যে ততটা পারে না। আর কন্ঠধ্বনির সহায়তায় মানুষ মনের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাবও প্রকাশ করতে পারে। কন্ঠধ্বনি বলতে মুখগহব্বর, কণ্ঠ, নাক ইত্যাদির সাহায্যে উচ্চারিত বোধগম্য ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টিকে বোঝায়। অতএব ভাষা বলতে মনের ভাব প্রকাশ করার মাধ্যমকে বুঝায়।
ভাষা হলো মানুষের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। এটি এমন একটি কাঠামোবদ্ধ ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে মানুষ তাদের চিন্তা, অনুভূতি, এবং ধারণা একে অপরের সাথে বিনিময় করে। ভাষা শুধু কথা বলার মাধ্যম নয়, এটি লিখিত রূপ, অঙ্গভঙ্গি এবং চিহ্নের মাধ্যমেও প্রকাশ পায়। প্রতিটি ভাষার নিজস্ব নিয়ম, শব্দভাণ্ডার এবং ব্যাকরণ থাকে, যা ভাষাকে সহজবোধ্য ও কার্যকর করে তোলে।
আরো পড়ুন: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
ভাষা মানব সংস্কৃতির একটি অপরিহার্য অঙ্গ। এর মাধ্যমে মানুষ ইতিহাস সংরক্ষণ, জ্ঞান প্রচার এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে মূল্যবোধ ও অভিজ্ঞতা হস্তান্তর করে। ভাষার মাধ্যমে আমরা শুধু আমাদের ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনা প্রকাশ করি না, বরং একটি সামাজিক বন্ধনও গড়ে তুলি।
মানুষের মনের ভাব প্রকাশ এবং যোগাযোগের ক্ষমতা ভাষার মাধ্যমেই সম্ভব হয়। এটি আমাদের জীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে এবং বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সংযোগ স্থাপন করে। সংক্ষেপে, ভাষা মানবজীবনের অপরিহার্য একটি উপাদান যা আমাদের চিন্তা, সংস্কৃতি এবং সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করে।
কথ্য, চলিত ও সাধু রীতি
কথ্য রীতি মূলত মানুষের দৈনন্দিন কথোপকথনে ব্যবহৃত ভাষার ধরন। এটি সাধারণত অনানুষ্ঠানিক এবং স্বাভাবিক পরিবেশে ব্যবহৃত হয়। কথ্য ভাষার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর সরলতা, স্বতঃস্ফূর্ততা এবং অঞ্চলভিত্তিক বৈচিত্র্য। উদাহরণস্বরূপ, বাংলার কথ্য রীতিতে "তুমি কি খেয়েছ?" প্রশ্নটি অনেক সময়ে "তুই খাইছস?" বা "তুমি খাইছ?" রূপে ব্যবহৃত হয়।
কথ্য রীতির বড় সুবিধা হলো এটি আন্তরিকতা প্রকাশ করে এবং সহজে মানুষের অনুভূতিতে পৌঁছায়। তবে, একে সাহিত্যিক বা আনুষ্ঠানিক লেখালেখির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় না। কথ্য রীতি মূলত নাটক, সিনেমার সংলাপ এবং মানুষের দৈনন্দিন কথোপকথনের জন্য উপযোগী।
চলিত রীতি
চলিত রীতি আধুনিক বাংলা ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি সাহিত্য, মিডিয়া এবং আনুষ্ঠানিক আলোচনার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। চলিত রীতির বৈশিষ্ট্য হলো এটি কথ্য রীতির মতো সহজ এবং সাবলীল হলেও তুলনামূলকভাবে কিছুটা নিয়ন্ত্রিত ও গঠিত। এতে ব্যাকরণের সঠিক প্রয়োগ ও শব্দের সঠিক ব্যবহার বজায় রাখা হয়।
চলিত রীতিতে বাক্য গঠন সংক্ষেপিত এবং সরল থাকে। উদাহরণস্বরূপ, "তোমার খবর কী?" এটি চলিত রীতির একটি উদাহরণ। চলিত রীতি আধুনিক সাহিত্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়, কারণ এটি পাঠকের জন্য সহজবোধ্য এবং প্রাসঙ্গিক।
চলিত রীতির একটি বড় দিক হলো এর প্রাসঙ্গিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা। আধুনিক বাংলা সাহিত্য, পত্র-পত্রিকা, এবং অনলাইন মিডিয়ায় এটি প্রধানত ব্যবহৃত হয়। এটি প্রথাগত সাধু রীতির তুলনায় অধিক প্রয়োগযোগ্য ও বাস্তবসম্মত।
সাধু রীতি
সাধু রীতি বাংলার প্রাচীন সাহিত্য ও আনুষ্ঠানিক লেখার অন্যতম মাধ্যম। এটি তুলনামূলকভাবে বেশি অলংকারময়, গম্ভীর এবং শব্দের উচ্চতর রূপের উপর নির্ভরশীল। সাধু রীতিতে ক্রিয়াপদের পূর্ণরূপ এবং গঠিত বাক্য ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, "তাহার খবর জানিতে ইচ্ছা জাগিল।"
সাধু রীতি প্রধানত কবিতা, প্রাচীন সাহিত্য এবং আনুষ্ঠানিক ভাষায় ব্যবহৃত হতো। তবে, আধুনিক যুগে এটি প্রায় অপ্রচলিত হয়ে গেছে। সাধু রীতির একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর গাম্ভীর্য এবং ভাষার শুদ্ধতা। এটি বিশেষ অনুষ্ঠান বা ঐতিহাসিক প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হতে পারে, তবে এর দৈনন্দিন ব্যবহার সীমিত।
বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডার
বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডার অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময়। এই ভাষার শব্দসমূহের মূল উৎসকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়—তৎসম, তদ্ভব, দেশজ এবং বিদেশি শব্দ। প্রতিটি বিভাগ বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
তৎসম শব্দ
তৎসম শব্দ হল সেই শব্দ, যা সংস্কৃত ভাষা থেকে প্রায় অপরিবর্তিত অবস্থায় বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে। এই শব্দগুলো সাধারণত গুরুতর এবং আনুষ্ঠানিক প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়। যেমন: জ্ঞান, ধর্ম, বুদ্ধি, কর্ম ইত্যাদি। তৎসম শব্দের মাধ্যমে বাংলা ভাষা তার প্রাচীন ঐতিহ্য এবং শাস্ত্রীয় রূপ বজায় রেখেছে। এই শব্দগুলো সাহিত্য ও আনুষ্ঠানিক প্রবন্ধে বেশি ব্যবহৃত হয়।
তদ্ভব শব্দ
তদ্ভব শব্দ হলো সেই শব্দ, যা সংস্কৃত থেকে বাংলায় রূপান্তরিত হয়ে সাধারণ কথ্য ভাষায় ব্যবহৃত হয়। এগুলো সাধারণত দৈনন্দিন কথোপকথনে এবং চলিত রীতিতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণস্বরূপ, গাছ (সংস্কৃত "বৃক্ষ"), মাটি (সংস্কৃত "মৃত্তিকা"), জল (সংস্কৃত "জল") ইত্যাদি। তদ্ভব শব্দের ব্যবহার বাংলা ভাষাকে সহজবোধ্য ও স্বতঃস্ফূর্ত করে তুলেছে।
দেশজ শব্দ
দেশজ শব্দ হলো বাংলার আদি ও নিজস্ব শব্দভাণ্ডার, যা কোনো বিদেশি বা সংস্কৃত ভাষার প্রভাব ছাড়াই উদ্ভূত হয়েছে। এই শব্দগুলো স্থানীয় সংস্কৃতি ও জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। উদাহরণস্বরূপ, মাছ, ধান, পাখি, ঠাকুরমা ইত্যাদি। দেশজ শব্দ বাংলা ভাষার লোকজ জীবনের প্রতিফলন ঘটায় এবং এর সহজাত সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।
বিদেশি শব্দ
বাংলা ভাষার শব্দ ভাণ্ডারে অনেক বিদেশি শব্দ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা বিভিন্ন সময়ে বাংলার ইতিহাসে অন্য সংস্কৃতির সংস্পর্শে এসেছে। আরবি, ফারসি, তুর্কি, পর্তুগিজ, ইংরেজি এবং অন্যান্য ভাষা থেকে শব্দ ধার নেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, আরবি ও ফারসি থেকে নেওয়া শব্দ: মসজিদ, দপ্তর, বাজার; ইংরেজি থেকে: টেবিল, কাগজ, রেল ইত্যাদি। এই বিদেশি শব্দগুলো বাংলা ভাষার আধুনিকীকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে ভাষা কাকে বলে এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url