অর্থনীতির সংজ্ঞা- এ্যাডাম স্মিথ

অর্থনীতি একটি গতিময় বিষয়। সময়ের বিবর্তনে মানুষের চিন্তা-চেতনা এবং ধ্যান-ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের কর্মক্ষেত্র বহুগুণে সম্প্রসারিত হয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নানাবিধ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
অর্থনীতির সংজ্ঞা- এ্যাডাম স্মিথ
ফলে অর্থনীতি সম্পর্কিত পুরনো ধারণারও পরিবর্তন হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পেক্ষিত অনুসারে অর্থনীতিবিগণ অর্থনীতির সংজ্ঞা প্রদান করেছে। নিচে কয়েকজন অর্থনীতিবিদ প্রদত্ত অর্থনীতির সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো: পোস্ট সূচি
  • এ্যাডাম স্মিথ এর মতে অর্থনীতির সংজ্ঞা: এ্যাডাম সিম্মথ ১৭৭৬ সালে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। অর্থনীতি হলো সম্পদের বিজ্ঞান।
  • জন স্টুয়ার্ট মিলের মতে অর্থনীতির সংজ্ঞা: অর্থনীতি হলো এমন এক ধরনের ব্যবহারিক বিজ্ঞান যা সম্পদের উৎপাদন ও বন্টণ ‘নিয়ে আলোচনা করে।
  • আলফ্রেড মার্শালের মতে অর্থনীতির সংজ্ঞা: অধ্যাপক মার্শাল ১৯৯০ সালে তার বিখ্যাত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। অর্থনীতি হলো এমন একটি বিষয় যা মানব কল্যাণের সাথে সম্পর্কিত দৈনন্দিন জীবনের কার্যাবলি নিয়ে আলোচনা করে।
  • লায়েনেল রবিন্স এর মতে অর্থনীতির সংজ্ঞা: অধ্যাপক রবিন্স বলেন, অর্থনীতি হলো এমন একটি বিজ্ঞান যা অসীম অভাব এবং বিকল্প ব্যবহারযোগ্য সম্পর্দের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে মানব আচরণ নিয়ে আলোচনা করে।
  • পল এ. স্যামুয়েলসনের মতে অর্থনীতির সংজ্ঞা: বর্তমান সময়ের শ্রেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ পল এ. স্যামুয়েলসন অর্থনীতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন অর্থ দ্বারা কিংবা অর্থের ব্যবহার ব্যতিত বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সমাজ কিভাবে বিকল্প ব্যবহারযোগ্য সম্পদসমূহকে বিভিন্ন উৎপাদন ক্ষেত্রে নিয়োগের জন্য নির্বাচন করে এবং কিভাবে সমাজের বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যক্তিবর্গের বর্তমান এবং ভবিষ্যত ভোগের জন্য বন্টন করে তা নিয়েই অর্থনীতি আলোচনা করে থাকে।

অর্থনীতির বিষয়বস্তু


অর্থনীতি একটি গতিময় বিষয়। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে সমাজে নানাবিধ নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়।অর্থনীতি এমন একটি বিষয়বস্তু, যা সমাজের প্রয়োজনীয় সম্পদসমূহের উৎপাদন, বণ্টন, এবং ব্যবহারের ওপর আলোকপাত করে। 

এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ অর্থনীতি মানুষের জীবনযাত্রার মান নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। মানুষের প্রয়োজন এবং সম্পদের সীমাবদ্ধতা অর্থনীতির মূল বিষয়বস্তু গঠন করে। এক কথায়, কিভাবে সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে সর্বাধিক প্রয়োজন মেটানো যায়, সেটাই অর্থনীতির প্রধান লক্ষ্য।

অর্থনীতির দুটি প্রধান শাখা আছে: মাইক্রোইকোনোমিক্স এবং ম্যাক্রোইকোনোমিক্স। মাইক্রোইকোনোমিক্স হলো অর্থনীতির সেই শাখা, যা ব্যক্তি এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের আচরণ নিয়ে কাজ করে। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, কিভাবে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানরা তাদের সম্পদ ব্যবহার করে এবং 

তাদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। অন্যদিকে, ম্যাক্রোইকোনোমিক্স হলো অর্থনীতির বৃহৎ স্কেল বা সামগ্রিক অর্থনীতি নিয়ে কাজ করে। এতে বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, এবং জাতীয় উৎপাদনের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত।

অর্থনীতি মানুষের জীবনকে সহজ এবং আরামদায়ক করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একজন অর্থনীতিবিদ বিভিন্ন নীতি ও কৌশল তৈরি করেন, যা সমাজের সব শ্রেণীর মানুষের জন্য উপকারি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কর এবং সরকারি ব্যয়ের মাধ্যমে অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যা একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে।

অর্থনীতির বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে, ব্যবসায়িক চক্র, মুদ্রা নীতি, এবং আর্থিক নীতি নিয়েও কথা বলা হয়। ব্যবসায়িক চক্র বোঝায়, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মন্দার পর্যায়গুলো, যা নির্দিষ্ট সময়ে ঘটে। 

মুদ্রা নীতি হলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা পরিচালিত নীতি, যা মুদ্রার সরবরাহ এবং সুদের হার নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে, আর্থিক নীতি হলো সরকারের রাজস্ব এবং ব্যয়ের নীতি, যা দেশটির অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ব্যবহৃত হয়।

একটি সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থা তার সামাজিক, রাজনৈতিক, এবং সাংস্কৃতিক দিকগুলোর ওপরও প্রভাব ফেলে। অর্থনৈতিক উন্নতি সমাজে স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি, এবং শান্তি নিয়ে আসে। 

তবে, অর্থনৈতিক বৈষম্য সমাজে অস্থিরতা ও অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই, অর্থনীতির সঠিক ব্যবহার এবং প্রয়োগের মাধ্যমে একটি সমাজের সামগ্রিক উন্নতি সম্ভব।

অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে দেশগুলো তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা বিনিময় করে। এটি শুধু দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করে না, বরং তাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাও নিশ্চিত করে।

অর্থনীতি একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয়। নতুন প্রযুক্তি, নীতি, এবং বৈশ্বিক ঘটনা অর্থনীতির গতিপথকে প্রভাবিত করে। তাই, অর্থনীতির জ্ঞান এবং সচেতনতা আমাদের সবার জন্য প্রয়োজন, কারণ এটি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলে।

সর্বশেষে বলা যায়, অর্থনীতি শুধুমাত্র একটি বিষয় নয়, এটি একটি পদ্ধতি যা আমাদের সমাজের উন্নতির জন্য অপরিহার্য। একে সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারি এবং সমাজকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারি।

অর্থনীতি এমন একটি বিষয়, যা সমাজ, ব্যক্তি, এবং ব্যবসায়ের মধ্যে সম্পর্ককে বোঝার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতি পাঠের মাধ্যমে আমরা আমাদের চারপাশের বিশ্বকে আরও গভীরভাবে বুঝতে পারি। এটি কেবলমাত্র সংখ্যা এবং তথ্যের উপর ভিত্তি করে নয়, বরং মানুষের আচরণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া, এবং সম্পদের সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করে।

অর্থনীতি পাঠের প্রয়োজনীয়তা

অর্থনীতি পাঠের প্রথম এবং প্রধান কারণ হলো, এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। আমরা প্রতিদিন অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেই—হোক সেটা বাজারে কেনাকাটা করা, বিনিয়োগের জন্য সঞ্চয় করা, অথবা চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া। অর্থনীতি শেখার মাধ্যমে আমরা এই সিদ্ধান্তগুলোকে আরও সুচিন্তিত ও কার্যকরীভাবে নিতে পারি।

দ্বিতীয়ত, অর্থনীতি পাঠ আমাদের বিশ্বের বিভিন্ন ইস্যু বোঝার জন্য সহায়ক। বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, মুদ্রা বিনিময় হার, এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য—এগুলো সবই অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত বিষয়। এগুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে আমরা বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপট বুঝতে পারি এবং কীভাবে এই ইস্যুগুলো আমাদের সমাজ ও দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে, তা বুঝতে সক্ষম হই।

অর্থনীতি পাঠের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এটি আমাদের নীতি নির্ধারণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন করে। সরকার এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কীভাবে সম্পদের বণ্টন করে, কর নির্ধারণ করে, এবং বাজেট তৈরি করে, এসব বিষয় অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই জ্ঞান আমাদেরকে একটি সক্রিয় ও সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে, যা সমাজের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়াও, অর্থনীতি পাঠ কর্মজীবনে সাফল্য অর্জনের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতির বোধশক্তি না থাকলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অর্থনীতি শেখার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি ব্যবসায়িক কৌশল, বাজার বিশ্লেষণ, এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করতে পারে, যা তাকে কর্মজীবনে সাফল্য অর্জনে সহায়তা করে।

অর্থনীতির জ্ঞান শুধুমাত্র পেশাগত দিকেই নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যক্তিগত বাজেট পরিকল্পনা, সঞ্চয়, এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করা যায়। এটি আমাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি সুরক্ষিত আর্থিক পরিকল্পনা করতে সাহায্য করে।

সব মিলিয়ে বলা যায়, অর্থনীতি পাঠ আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। এটি আমাদেরকে একটি জ্ঞানসমৃদ্ধ, সচেতন এবং কার্যকরী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তাই, অর্থনীতি পাঠের গুরুত্ব অপরিসীম এবং আমাদের প্রত্যেকের জীবনে এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url