এসএসসি পরীক্ষার পর অবসর দিনগুলো কীভাবে কাটাবে তা জানিয়ে বন্ধুর কাছে পত্র

তারিখ: ১০-২৫-২০২৫

প্রিয় বন্ধু তারেক,

আসসালামু আলাইকুম। শুভেচ্ছা নিও বন্ধু। আশা করি তুমি ভালো আছো। তোমার পরিবারের সবাইও নিশ্চয় ভালো আছেন। অনেক দিন তোমার সঙ্গে দেখা হয়নি। অনেকদিন পর তোমার চিঠি হাতে পেলাম। চিঠিতে তুমি জানতে চেয়েছো, আসন্ন পরিক্ষার পর কী করব? কীভাবে আমি সময় কাটাবো? আসলে পরীক্ষার পর তিনমাস যে খুব দীর্ঘ সময় তা কিন্তু নয়। দেখতে দেখতে হয়তো সময় কেটে যাবে। তোমার চিঠির উত্তর দিতে আমি আজ চিঠি লিখতে বসেছি।
এসএসসি পরীক্ষার পর অবসর দিনগুলো কীভাবে কাটাবে তা জানিয়ে বন্ধুর কাছে পত্র
তুমি তো জানো, এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর মাত্র তিন মাস আমরা হাতে সময় পাবো। এই সময়টাকে অনেকেই শুধুমাত্র বিনোদনে ব্যয় করে ফেলে। কেউ ঘুরতে যায়, কেউ সারাদিন মোবাইল বা টিভিতে সময় কাটায়। কিন্তু আমি ভাবলাম, জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টা যদি কোনো কাজে লাগাতে পারি, তাহলে ভবিষ্যতের জন্য সেটা অনেক উপকারী হবে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এই অবসর সময়ে আমি কম্পিউটার শেখার কোর্স করব।

আজকাল সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে কম্পিউটার জ্ঞান থাকা একান্ত প্রয়োজন। শিক্ষা, অফিস, ব্যবসা, এমনকি ঘরোয়া কাজেও কম্পিউটারের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। তাই আমি মনে করি, এখন থেকেই এর মৌলিক বিষয়গুলো ভালোভাবে শেখা উচিত। তাছাড়া আমাদের ভবিষ্যতের পড়াশোনা—বিশেষ করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে—কম্পিউটার জানা ছাড়া প্রায় অসম্ভব।

আমার পরিকল্পনা হলো, পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের আগ পর্যন্ত সময়টায় আমি স্থানীয় একটি ভালো কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে ভর্তি হবো। এখানে আমি মৌলিক কম্পিউটার শিক্ষা (Basic Computer Course) দিয়ে শুরু করবো। এতে থাকবে—কম্পিউটারের অংশগুলো সম্পর্কে ধারণা, Windows অপারেটিং সিস্টেম চালানো, ফাইল ব্যবস্থাপনা, টাইপিং প্র্যাকটিস, এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের মৌলিক দিকগুলো শেখা।

এর পাশাপাশি আমি শিখব Microsoft Office প্রোগ্রামগুলো—যেমন MS Word, Excel, PowerPoint ইত্যাদি। এগুলোর ব্যবহার জানা থাকলে ভবিষ্যতে পড়াশোনা, প্রজেক্ট তৈরি, এমনকি চাকরির ক্ষেত্রেও অনেক সুবিধা হবে।

তুমি তো জানো, আমার ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ আছে। যখনই কারও কম্পিউটার দেখি, কেমন যেন জানার কৌতূহল হয়—কীভাবে এগুলো কাজ করে, কীভাবে এত কিছু করা যায়! তাই ভাবছি, এবার সময়টা কাজে লাগিয়ে কম্পিউটারের জগতে একটু গভীরভাবে প্রবেশ করবো।

আমি শুধু সাধারণ কম্পিউটার ব্যবহার শেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাই না। মৌলিক কোর্স শেষে আমি গ্রাফিক্স ডিজাইন বা ওয়েব ডিজাইন শেখারও ইচ্ছে রাখি। এখন অনেকেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ঘরে বসেই কাজ করে আয় করছে—এই বিষয়গুলো জানলে ভবিষ্যতে আমিও সেই পথে এগোতে পারি। গ্রাফিক্স ডিজাইন বা ওয়েব ডিজাইন শেখা একদিকে যেমন মজার, অন্যদিকে তা ভবিষ্যতের ক্যারিয়ারের জন্যও কার্যকর।

তবে পড়াশোনার পাশাপাশি বিশ্রাম ও বিনোদনের দিকটাও ভুলব না। মাঝে মাঝে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে বের হব, গল্প করব, বই পড়ব, কিংবা নতুন কিছু জানার চেষ্টা করব। আমি চাই, অবসরটা যেন আনন্দ ও শিক্ষায় ভরপুর হয়।

তুমি কেমন কাটাবে তোমার অবসর? শুনেছি তুমি ইংরেজি শেখার পরিকল্পনা করছো। এটা খুব ভালো আইডিয়া! ইংরেজি ও কম্পিউটার—এই দুটি জিনিস আজকের যুগে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতা। আমরা চাইলে একসাথে কিছু সময় একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারি। যেমন, আমি তোমাকে কম্পিউটার শেখায় সাহায্য করব, তুমি আমাকে ইংরেজি শেখায় গাইড করতে পারো। এতে দুজনেরই উপকার হবে।

আমার বাবা-মাও আমার সিদ্ধান্তে খুশি। তারা বললেন, “এই বয়সে যদি শেখার আগ্রহ রাখো, ভবিষ্যতে নিশ্চয় অনেক দূর যেতে পারবে।” তাদের কথায় অনুপ্রাণিত হয়েছি। আমি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ধরে কম্পিউটার শেখার পাশাপাশি কিছু সময় বই পড়া ও অনলাইন রিসোর্স করবো। এখন তো ইউটিউব বা অনলাইন কোর্সের মাধ্যমেও অনেক কিছু শেখা যায়।

কম্পিউটার শেখার মধ্যে আমি সবচেয়ে বেশি আগ্রহী টাইপিং ও ইন্টারনেট রিসার্চে। আমি চাই দ্রুত ও সঠিকভাবে টাইপ করতে শিখতে। এতে সময় বাঁচবে এবং কাজের গতি বাড়বে। আর ইন্টারনেট ব্যবহার করে কীভাবে তথ্য সংগ্রহ, ই-মেইল পাঠানো, কিংবা অনলাইন লার্নিং করা যায়—সেসবও জানতে চাই।

এছাড়া, আমি কিছুটা সময় বাংলা টাইপিং ও সফটওয়্যার ব্যবহার শিখতেও ব্যয় করব। ভবিষ্যতে যদি কোনো লেখালেখির কাজ করি বা চাকরির আবেদনপত্র তৈরি করি, তখন এই দক্ষতা খুব কাজে দেবে।

অবসরকালীন এই সময়টা কেবল আরাম বা ঘোরাঘুরির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে জীবনের মূল্যবান সময় নষ্ট হবে। বরং এই সময়টা যদি দক্ষতা অর্জনের জন্য ব্যবহার করা যায়, তাহলে তা ভবিষ্যতের জন্য এক বিশাল বিনিয়োগ হয়ে উঠবে। আমি বিশ্বাস করি, তোমার মতো বন্ধুরা যদি উৎসাহ দেয়, তাহলে আমি আরও ভালোভাবে এগোতে পারব।

তুমি যদি চাও, আমরাও একসাথে ভর্তি হতে পারি। এতে শেখাটা আরও মজার হবে। শেখার পাশাপাশি প্রতিদিন কিছু সময় একে অপরের সঙ্গে প্র্যাকটিস করলে বিষয়গুলো ভালোভাবে মনে থাকবে।

অবসরের এই সময়টা আমরা যদি এমনভাবে কাজে লাগাতে পারি যাতে ভবিষ্যতে আমাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে, তাহলে এ সময়ের প্রকৃত মূল্য পাওয়া যাবে। তাই আমি দৃঢ় সংকল্প নিয়েছি, এই সময়টাকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাবো।

শেষে আবার বলি—কম্পিউটার শেখা শুধু পেশাগত নয়, ব্যক্তিগত উন্নতিরও পথ খুলে দেয়। এটি আমাদের চিন্তাশক্তি, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা এবং আত্মবিশ্বাস—সবকিছু বাড়ায়। তাই আমি মনে করি, এই সময়ের সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগ হলো কম্পিউটার শেখা।

এই ছিল আমার অবসর কাটানোর পরিকল্পনা। তুমি কেমন আছো এবং কী পরিকল্পনা করছো, সেটা জানিও। তোমার চিঠির অপেক্ষায় রইলাম।

ইতি
তোমার প্রিয় বন্ধু,
সুজন মাহমুদ

১। প্রেরক                         ২। প্রাপ্রক
সুজন মাহমুদ                    তারেক মাহমুদ
পোড়াকয়া, একডালা        রাজশাহী, বাগমারা
বাগমারা, রাজশাহী           গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url