মাত্রাগত উৎপাদন কাকে বলে? জেনে নিন

অর্থনীতির একটি মৌলিক বিষয় হলো উৎপাদন। যে কোন উৎপাদন পরিচালনা করার ক্ষেত্রে চারটি উপকরন ব্যবহৃত হয়। যথা শ্রম (Labour) , ভূমি (Land) , মূলধন (Capital) এবং সংগঠন (Organization)। এই চারটি উপরকরণকে বলা হয় উৎপাদন উপকরণ। পুঁজিবাদী অর্থ ব্যবস্থায় উৎপাদন পরিচালনা করার মূল উদ্দেশ্য হল মুনাফা অর্জন করা। কোন উপাদান কতটুকু নিয়োগ করা হলে উৎপাদনের পরিমাণ সর্বোচ্চ হবে।
মাত্রাগত উৎপাদন কাকে বলে? জেনে নিন
কিংবা নির্দিষ্ট পরিমাণ উৎপাদন করার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন খরচে কোন উপাদান কতটুকু নিয়োগ করা যায় ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতার সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। উৎপাদন পরিচালনা করতে গেলে উপাদান নিয়োগ করতে হয়। আর উপাদান নিয়োগ করতে হলে খরচ হয়। এমতবস্থায়, সর্বনিম্ন খরচে কিভাবে সর্বোচ্চ উৎপাদন করা যায় সে বিষয়ে উৎপাদকগণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

উৎপাদন কাকে বলে?

সাধারণভাবে উৎপাদন বলতে কোন কিছু সৃষ্টি করাকে বুঝায়। কিন্তু, বাস্তবে মানুষ কোন কিছু সৃষ্টি বা ধ্বংস করতে পারে না। সে শুধু শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম দ্বারা প্রযুক্তি জ্ঞানের সহায়তায় প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদের গুণগত, পরিমাণগত এবং অবস্থানগত পরিবর্তন সাধন করতে পারে। সম্পদের গুণগত, পরিমাণগত এবং অবস্থানগত পরিবর্তন সাধণের দরুন এর উপযোগের মাত্রায় পরিবর্তন ঘটে। এ ক্ষেত্রে, উপযোগের ধনাত্মক পরিবর্তনকেই বলা হয় উৎপাদন। 
বস্তুত প্রযুক্তি জ্ঞানের সহায়তায় মানুষ তাঁর শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম দ্বারা যখন প্রকৃতি প্রদত্ত সম্পদের আকারগত, রূপগত কিংবা অবস্থানগত পরিবর্তন সাধনের মাধ্যমে বস্তুকে মানুষের ব্যবহার উপযোগী কিংবা অধিকতর ব্যবহার উপযোগী করে তোলে, তখন তাকে বলা হয় উৎপাদন। উদাহারণস্বরূপ বলা যায়, বনে প্রাপ্ত এক খন্ড কাঠকে চেঁড়াই করে, বিভিন্ন আকৃতিতে সাজিয়ে অতঃপর পলিশ এবং বার্ণিশ করে যখন টেবিল বা চেয়ার তৈরি করা হয়, তখন তাকে বলা হয় উৎপাদন। এক্ষেত্রে কাঠের আকারগত, রূপগত এবং অবস্থানগত পরিবর্তন সাধন করে কাঠের উপযোগ বৃদ্ধি করা হয় মাত্র।

মাত্রাগত উৎপাদন কাকে বলে?

অন্যান্য বিষয় অপরিবর্তিত রেখে উৎপাদনের উপকরণ পরিবর্তন করার ফলে উৎপাদনের পরিমাণে যে পরিবর্তন সাধিত হয়, তাকে বলা হয় মাত্রাগত উৎপাদন। দীর্ঘকালে উৎপাদনের সকল উপকরণ ব্যবহারের মাত্রায় পরিবর্তন আনা সম্ভব। অর্থাৎ, দীর্ঘকালে উপকরণের হ্রাস-বৃদ্ধি করে উৎপাদনের পরিমাণে পরিবর্তন আনা যায়।

মাত্রাগত উৎপাদন কত ধরণের?

মাত্রাগত উৎপাদন তিন ধরণের যথা- (১) স্থির মাত্রাগত উৎপাদন (২) ক্রমবর্ধমান মাত্রাগত উৎপাদন (৩) ক্রমহ্রাসমান মাত্রাগত উৎপাদন।

১। স্থির মাত্রাগত উৎপাদন: উৎপাদনের উপকরণের ব্যবহার যে হারে পরিবর্তন হয়, উৎপাদক যদি ঠিক ঐ হারেই পরিবর্তিত হয়, তখন তাকে বলা হয় স্থির মাত্রাগত উৎপাদন। ধরি, Q = f (L, K) উৎপাদন অপেক্ষক অনুসারে ১০ একক শ্রম এবং ১০ একক মূলধন ব্যবহার করলে মোট উৎপাদন হয় ১০০ একক। এখন, শ্রম এবং মূলধন ২০ একক করে ব্যবহার করার দরুন যদি মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ২০০ একক হয়, তখন তাকে স্থির মাত্রাগত উৎপাদন বলা হয়।
২। ক্রমবর্ধমান মাত্রাগত উৎপাদন: উপকরণের ব্যবহার যে হারে বৃদ্ধি করা হয়, উৎপাদন যদি তার চেয়ে বেশি হারে বৃদ্ধি পায়, তখন তাকে ক্রমবর্ধমান মাত্রাগত উৎপাদন বলে। যেমন; ধরি, Q = f (L, K) উৎপাদন অপেক্ষক অনুসারে, শ্রম এবং মূলধন ১০ একক করে ব্যবহার করার দরুণ মোট উৎপাদন হয় ১০০ একক। এখন, শ্রম ও মূলধন ২০ একক করে ব্যবহার করার দরুণ যদি মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৩০০ একক হয়, তখন তাকে বলা হবে ক্রমবর্ধমান মাত্রাগত উৎপাদন।

৩। ক্রমহ্রাসমান মাত্রাগত উৎপাদন: উপকরণের ব্যবহার যে হারে বৃদ্ধি করা হয়, উৎপাদন যদি তার চেয়ে কম হারে বৃদ্ধি পায়, তখন তাকে বলা হয় ক্রমহ্রাসমান মাত্রাগত উৎপাদন। যেমন; ধরি, Q = f (L, K) উৎপাদন অপেক্ষক অনুসারে, শ্রম এবং মূলধন ১০ একক করে ব্যবহার করার দরুন মোট উৎপাদন হয় ১০০ একক। এখন, শ্রম ও মূলধন ২০ একক করে ব্যবহার করার দরুণ যদি মোট উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ১৫০ একক হয়, তখন তাকে বলা হয় ক্রমহ্রাসমান মাত্রাগত উৎপাদন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url