ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা বিস্তারিত জেনে নিন
প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই রচনাটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই রচনাটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনার খুটি-নাটি বিষয়গুলো বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
সূচনাঃ
ডিজিটাল বাংলাদেশ হলো এমন একটি স্বপ্ন, এমন একটি প্রত্যয় যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি বা ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে দেশের প্রতিটি খাতকে আধুনিক, উন্নত এবং সমৃদ্ধ করা হয়েছে বা এখনো সেই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বিরাট এক পরিবর্তন ও ক্রান্তিকালের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে এখন বর্তমান বিশ্বের সাথে তালমিলিয়ে এগিয়ে চলছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাটি মূলত ২০০৮ সালে গঠিত "ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন ২০২১" পরিকল্পনার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পায়। এর মূল লক্ষ্য হলো তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন করা। যেখানে সরকারি ও বেসরকারি সেবা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প, ও বাণিজ্য খাতে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
প্রথমেই, শিক্ষা খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। অনলাইন ক্লাস, ই-বুক, ডিজিটাল লাইব্রেরি এবং ভার্চুয়াল লার্নিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এখন ঘরে বসেই মানসম্পন্ন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে। পাশাপাশি, স্বাস্থ্য খাতেও ডিজিটাল সুবিধার ছোঁয়া লেগেছে। টেলিমেডিসিন, ই-হেলথ রেকর্ড এবং অনলাইন অ্যাপয়েন্টমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণ সহজে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে।
ব্যবসা ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে ই-কমার্স এবং মোবাইল ব্যাংকিং একটি বড় পরিবর্তন এনেছে। আজকাল মানুষ ঘরে বসেই পণ্য ক্রয়-বিক্রয় এবং অর্থ লেনদেন করতে পারছে, যা অর্থনীতিকে আরও গতিশীল করেছে। কৃষিক্ষেত্রেও স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। ফসলের তথ্য, আবহাওয়ার পূর্বাভাস এবং আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে তথ্য পেতে কৃষকরা বর্তমানে মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করছে।
তবে, ডিজিটাল বাংলাদেশের সফলতার জন্য সাইবার নিরাপত্তা, ইন্টারনেট সুবিধা এবং ডিজিটাল সাক্ষরতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। সবমিলিয়ে বলা যায় যে, ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হলে সরকার এবং জনগণের যৌথ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্থ
ডিজিটাল বাংলাদেশ কি এই বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদের প্রথমে জানতে হবে একটি দেশ কিভাবে ডিজিটাল দেশে পরিণত করা যায়। একটি দেশকে ডিজিটাল করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একটি দেশকে তখনই ডিজিটাল দেশ বলা যাবে যখন তা ‘ই-স্টেট’-এ পরিণত হবে। অর্থাৎ ঐ দেশের যাবতীয় কার্যবলি যেমন; সরকার ব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি প্রভৃতি কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালিত হবে।
তাই আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে তখনই ডিজিটাল বাংলাদেশ বলা যাবে যখন মাতৃভূমি বাংলাদেশের সকল প্রকার কার্যবলি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে পরিচালনা হবে। ইতো মধ্যে বাংলাদেশের প্রায় সকল প্রকার কার্যবলি ডিজিটালে পরিণত হয়েছে। তাই বলা যায় ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্থ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের সকল কার্যবলি কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচালনা করা।
ডিজিটাল বাংলাদেশ ও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি
"একটি ডিজিটাল সমাজ গড়ে তুললে আমরা একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজের পথে এগিয়ে যেতে পারব। এখানে সরকারি, আধা-সরকারি এবং বেসরকারি সব খাতে তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে, যাতে সব কাজ অনলাইনের মাধ্যমে সহজে ও দ্রুত সম্পন্ন করা যায়।" তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ নিশ্চয়তা দেবে দ্রুত ও কার্যকর তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি সুশাসিত সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার। এ ক্ষেত্রে শক্তিশালী তথ্য প্রযুক্তি কাঠামো মূলভিত্তি। কঠিন বাস্তবতাকে অতিক্রম করে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে গেলে এর সঙ্গে আনুষঙ্গিক কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে। যেমন: বিদ্যুৎ ঘাটতি দূরা করা, নেটওয়ার্ক-কাঠামো, ইন্টারনেট ব্যবহার, ইংরেজী শিক্ষার হার, সমুদ্রের তলদেশের সাবমেরিন ক্যাবল ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
বিদ্যুৎ ঘাটতি
২০১১ সালের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় বাংলাদেশের ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার ক্ষেত্রে দৈনিক ২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতির মুখোমুখি হতে হয়। এ কথা জেনে রাখতে হবে যে, একটি পরিপূর্ণ তথ্য প্রযুক্তি কাঠামো গড়ে ওঠার জন্য চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান শর্ত হলো নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ। কারণ প্রযুক্তিনির্ভর যেকোনো কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিদ্যুৎ একটি মৌলিক প্রয়োজন। অথচ আমাদের দেশে এখনও অনেক অঞ্চল বিদ্যুৎ ঘাটতির সমস্যায় ভুগছে, যা ডিজিটাল কার্যক্রম বাস্তবায়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইন্টারনেট, কম্পিউটার, মোবাইল নেটওয়ার্কসহ অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহার নির্ভর করে বিদ্যুৎ সরবরাহের উপর। তাই বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকলে ডিজিটাল সুবিধা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রথমেই বিদ্যুৎ ঘাটতি নিরসন করতে হবে। তার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে নানা ধরণের উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন, গ্রিড সম্প্রসারণসহ নানা প্রকল্প হাতে নিতে হবে সেই প্রকল্পের কাজগুলো তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে। কারণ বিদ্যুৎ ঘাটতি ডিজিটাল বাংলাাদেশ গড়ার প্রধান বাধা।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভূমিকা
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, এদের সমৃদ্ধির পিছনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযক্তিগত উন্নয়ন অনকে বড় ভূমিকা পালন করেছে। এই খাতে প্রচুর বিনিয়োগ বেড়েছে মূলধন এবং প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বেড়েছে বহুগুনে। ইউরোপীয় এবং উন্নত দেশগুলোর জিডিপি অর্থাৎ গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট বৃদ্ধির কারণ হিসেবে অর্থনীতির গবেষকগণ টেলিকমিউনিকেশন খাতের উন্নয়নকে চিহ্নিত করে থাকলেও সিংগাপুর, কোরিয়ার মতো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণ হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নকেই চিহ্নিত করেছেন।
উন্নয়ন প্রক্রিয়া : গবেষণায় প্রমানিত হয়েছে যে, উন্নয়নশীল দেশেগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংঘটনের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিচে উল্লিখিত প্রক্রিয়ায় কাজ করে থাকে:
শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও বেকারত্ব দূরীকরণের ক্ষেত্রে সমঅধিকার নিশ্চিতকরণ।
সহজ পদ্ধতিতে তথ্য প্রাপ্তির ব্যবস্থাকরণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সক্ষমতা সৃষ্টি।
মানসম্মত কিন্তু তুলনামূলকভাবে কম দামের আইসিটি দ্রব্যের সহজলভ্যতা।
দেশের সর্বস্তরে ই-নর্ভর্নেন্সে চালুর মাধ্যমে সরকারি আমলাতন্ত্র হ্রাস।
প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বৃহৎ বাজার-সুবিধা প্রদান এবং স্টোক হোল্ডারদের মধ্যে যোগাযোগ এবং সহযোগিতা মনোভাব তৈরি।
জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনীতি: আইসিটির উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে জন্ম নিচ্ছে নতুনতর অর্থনীতি, যার নাম জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি বা নলেজ ইকোনমি। জ্ঞান ভিত্তিক অর্থনীতি বিকাশের সাথে সাথে আমেরিকা, ইউরোপ কিংবা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে বিপুল পরিমাণ ডেটা প্রসেসিং বা প্রক্রিয়াকরণের। যার ফলে উন্নয়নশীল দেশসমূহ আইসিটি এনাবল্ড
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url