ব্যান্ডউইথ কি? - ব্যান্ডউইথ কিভাবে কাজ করে? জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে ব্যান্ডউইথ কি? ব্যান্ডউইথ কিভাবে কাজ করে? এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে ব্যান্ডউইথ কি? ব্যান্ডউইথ কিভাবে কাজ করে? তা বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ব্যান্ডউইথ কি? ব্যান্ডউইথ কিভাবে কাজ করে?

বর্তমান বিশ্বে আমাদের সবারই কম-বেশি ইন্টারনেট এবং তার গতি বা স্পিড সম্পর্কে একটি ধারণা আছে। এই ইন্টারনেট এর গতি বা স্পিড তার ব্যান্ডউইথের উপর নির্ভরশীল। প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ ডেটা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয় তাকে অর্থাৎ ডেটা স্থানান্তরের হারকে ব্যান্ডউইথ বলে। ব্যান্ডউইথ সাধারণত bit per second (bps)-এ হিসাব করা হয়। তবে ইদানীং নেটওয়ার্কে অনেক বেশি ব্যান্ডউইথ পাওয়া যায় বলে বিপিএস (bps) এর পরিবর্তে কেবিপিএস (kbps: প্রতি সেকেন্ডে এক হাজার বিট) বা এমবিপিএস (Mbps: প্রতি সেকেন্ডে এক বিলিয়ন বিট) অনেক বেশি ব্যবহৃত হয়।
ব্যান্ডউইথ কি? ব্যান্ডউইথ কিভাবে কাজ করে? জেনে নিন
আট বিটকে বাইট বলা হয় বলে এক Mbps বলতে আট Mbps বোঝানো হয়। একটি কমিউনিকেশন নেটওয়ার্কের ব্যান্ডউইথ সেখানে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি এবং মিডিয়মের উপর নির্ভর করে। যেমন মিডিয়ম হিসেবে সাধারণ টেলিফোনের তার ব্যবহার করতে যত ব্যান্ডউইথ পাওয়া যায়, ফাইবার অপটিক ক্যাবলে তার থেকে অনেক গুন বেশি পাওয়া যায়। আবার ফাইবার অপটিক ক্যাবলের সাথে যদি যথাযথ স্পীডের টারমিনাল ইকুইপমেন্ট ব্যবহার করা না হয় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যান্ডউইথ পাওয়া সম্ভব হয়না

একটি কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক যেহেতু অনেক ব্যবহার করে তাই নেটওয়ার্কের ব্যান্ডউইথ সকল ব্যবহারকারীর মাঝে ভাগ হয়ে যায়। অনেক সময় একজন ব্যবহারকারী কিংবা একটি সার্ভিস ব্যান্ডউইথের একটা বড় অংশ দখল করে অন্যদের শেয়োর কমিয়ে দেয়। একটি নেটওয়ার্কে একজন ব্যবহারকারী কতটুকু প্রকৃত ব্যান্ডউইথ পাচ্ছে সেটি মাপার নানা ধরনের পদ্ধতি রয়েছে, নেটওয়ার্কের ডিজাইনে কিংবা যন্ত্রপাতিতে কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলো বের করা সম্ভব। সে কারণে ব্যান্ডউইথ ম্যানেজমেন্ট বর্তমান সময়ে অনেক বড় একটি চ্যালেঞ্জ।

কয়েকটি সার্ভিসের জন্য ব্যান্ডউইথ তালিকা

ইমেইল ব্যবহার করার জন্য 0.5 Mbps ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন। ওয়েব ব্রাউজিং করার জন্য 0.5 থেকে 1.5 Mbps ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন। স্ট্রিমিং মিউজিকের জন্য 0.5 Mbps ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন। ফোন কলের জন্য (Volp) 0.5 Mbps ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন। স্ট্রিমিং ভিডিওর জন্য 0.7 Mbps ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন। স্ট্রিমিং মুভি দেখার জন্য 1.5 Mbps ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন। স্ট্রিমিং HD মুভি দেখার জন্য 4 Mbps ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন। HD ভিডিও কনফারেন্সিং এর জন্য 4 Mbps ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন। অনলাইন HD মাল্টিপ্লেয়ার গেমিং এর জন্য 4 Mbps ব্যান্ডউইথ প্রয়োজন। কাজেই একজন ব্যবহারকারীর যদি নির্দিষ্ট একটি সার্ভিসের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যান্ডউইথ না থাকে তাহলে তার পক্ষে সেই সার্ভিসটি সঠিকভাবে গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।

ডেটা ট্রান্সমিশন মেথড কাকে বলে?

ডেটা কমিউনিকেশনে এক ডিভাইস হতে অন্য অন্য ডিভাইসে ডেটা বিটের বিন্যাসের মাধ্যমে স্থানান্তরের প্রক্রিয়াকে ডেটা ট্রান্সমিশন মেথড বলে। বিটের বিন্যাসের উপর ভিত্তি করে ডেটা ট্রান্সমিশন মেথডকে প্যারালাল ডেটা ট্রান্সমিশন এবং সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশন এই দুভাবে ভাগ করা হয়েছে। সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশনে একটি মাধ্যম দিয়ে একবারে একটি বিট পাঠানো হয়। প্যারালাল ডেটা ট্রান্সমিশনে অসংখ্য মাধ্যম দিয়ে একবারে অনেক বিট পাঠানো হয়।

প্যারালাল ডেটা ট্রান্সমিশন

প্যারালাল ডেটা ট্রান্সমিশন একসাথে ডেটা ট্রান্সমিশন করার জন্য অনেক ডেটা লাইনের সাথে প্রেরক ও গ্রাহক যন্ত্র পরস্পরের সাথে সবন্বয় করার জন্য একটি বা দুটি কন্ট্রোল লাইনও থাকে। বিটগুলো ঠিক একই সময়ে একই সাথে স্থানান্তরিত হয়। কম্পিউটারের ভেতরের সার্কিটে যেহেতু ডেটাগুলো প্যারালাল পদ্ধতিতে কাজ করে সেজন্য প্যারালাল ডেটা ট্রান্সমিশনে তার স্বাভাবিক বিন্যাস। একই সাথে অসংখ্য লাইনে ডেটা পাঠানো হয় বলে এটি অনেক দ্রুতগতির ট্রান্সমিশন। তবে অনেক দূরে ডেটা পাঠাতে হলে এটি বাস্তবসম্মত নয়। দ্রুতগতিসম্পন্ন এই পদ্ধতি অনেক সময় ভিডিও স্ট্রিমিংয়ে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া, প্যারালাল প্রিন্টার পোর্ট ও ক্যাবল ব্যবহার করে কম্পিউটারের সাথে প্রিন্টারের সংযোগ ইত্যাদি এর উদাহারণ।

সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশন

এই ট্রান্সমিশনে যেকোনো দূরত্বে অবস্থিত প্রেরক এবং প্রাপকের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে এক বিটের পর অপর বিট স্থানান্তরিত করা হয়। এটি একটি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি কেননা, এতে পূর্ববর্তী ডেটা বিট প্রেরণের পর অপরটি প্রেরিত হয়। একটি মাত্র তার ব্যবহার হয় বলে যন্ত্রপাতি তুলনামূলকভাবে সহজ এবং সাশ্রয়ী। পাশাপাশি অনেক তার নেই বলে নিজেদের ভেতর নয়েজের প্রভাব কম। কম্পিউটার এবং প্রায় সকল ডিভাইসে আজকাল যে ইউএসবি পোর্ট দেখা যায় সেটি সিরিয়াল ট্রান্সমিশনের উদাহারণ।

বিট সিনক্রোনাইজেশন

সিরিয়াল পদ্ধতিতে ডেটা স্থানান্তরের সময় প্রেরক এবং গ্রাহক দুটি ডিভাইসকেই ক্লক ব্যবহার করতে হয় এবং ক্লকের প্রতি পালসে একটি করে বিট প্রেরণ করা হয়। এই ক্লক ব্যবহার করে বিটের শুরু ও শেষ বোঝার জন্য একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়, যাকে বিট সিনক্রোনাইজেন বলে। বিট সিনক্রোনাইজেশেনের কারণেই প্রাপক সিগন্যাল থেকে ডেটা শনাক্ত এবং পুনরুদ্ধার করতে পারে। বিট সিনক্রোনাইজেশনের উপর ভিক্তি করে সিরিয়াল ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। (১). অ্যাসিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন (২). সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশন (৩). আইসোক্রোনাস ট্রান্সমিশন।

অ্যাসিক্রোনাস ট্রান্সমিশনঃ অ্যাসিক্রোনাস ট্রান্সমিশনে প্রেরক যখন খুশি তখন ডেটা প্রেরণ করতে পারে, গ্রাহক সবসময়েই সেই ডেটা গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকে। শুধু তাই নয় একবার ডেটা পাঠিয়ে তার পরবর্তী সময় আরেকবার ডেটা পাঠানোর মাঝখানে যতক্ষণ ইচ্ছা ততক্ষণ সময় নেয়া যায়। ডেটা পাঠানোর আগে একটি স্টার্ট বিট পাঠানো হয় এবং সেই বিটটি দেখে গ্রাহকযন্ত্র বুঝতে পারে ডেটা আসতে শুরু করেছে এবং তার ক্লক সেই বিটের শুরুর সাথে সমন্বয় করে নেয়। ডেটা পাঠানো শেষ হওয়ার পর একটা স্টপ বিট পাঠানো হয় এবং সেটি দেখে গ্রাহক যন্ত্র বুঝতে পারে ডেটা পাঠানো শেষ হয়েছে। 

যখন প্রয়োজন তখন ডেটা প্রেরণ করা যায় বলে এই ক্ষেত্রে প্রাইমারি স্টোরেজ ডিভাইসের (কম্পিউটার ব্যবহৃত RAM, Cache, or CPU memory ইত্যাদি) প্রয়োজন হয় না। ধীর গতিতে অল্প পরিমাণ ডেটা পাঠানোর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার সুবিধাজনক। অ্যাসিক্রোনাস ট্রান্সমিশনের একটি উদাহারণ হচ্ছে কম্পিউটারের কী-বোর্ড। এখানে একটি কী (Key) চাপার পর পরবর্তী কী চেপে চাইপ করার মধ্যবর্তী সময়সীমা অসম বা অনির্ধারিত হতে বাধ্য। এজন্যই এই ট্রান্সমিশন পদ্ধতির নাম অ্যাসিনক্রোনাস রাখা হয়েছে।

সিনক্রোনাস ট্রান্সমিশনঃ সিনক্রোনাস ডেটা ট্রান্সমিশনকে বলা যায় বিরতিহীন ডেটা ট্রান্সমিশন। এই পদ্ধতিতে বিরতিহীনভাবে প্রেরক যন্ত্র থেকে গ্রাহক যন্ত্রে ডেটা পাঠানো হয়। যেহেতু প্ররিত ডেটা ব্যবহার করে গ্রাহক যন্ত্র তার ক্লককে সমন্বিত করে তাই প্রেরণ করার জন্য কোনো ডেটা না থাকলেও আইডল সিকোয়েন্স হিসেবে পূর্ব নির্ধারিত ডেটা পাঠানো হয়।

সিনক্রোনাস ডেটা ট্রান্সমিশন পদ্ধতিতে প্রেরক-স্টেশনে প্রথমেই ডেটাকে প্রাইমারি স্টোরেজ (কম্পিউটারে ব্যবহৃত RAM, Cache, or CPU memory ইত্যাদি) সংরক্ষণ করে ডেটার ক্যারেক্টারগুলোকে ব্লক বা ফ্রেম আকারে ভাগ করে নেয়। প্রতিবার একটি করে ব্লক বা ফ্রেম ক্লকের সাথে সমন্বয় করে সমান বিরতি দিয়ে প্রেরণ করা হয়। প্রতিটি ব্লক-ডেটার শুরুতে 1বা 2 বাইটের একটি হেডার ইরফরমেশন এবং ব্লক-ডেটার শেষে একই পরিমাপের একটি ট্রেইলার ইরফরমেশন সিগন্যাল পাঠানো হয় এবং বিশাল নেটওয়ার্কে গন্তব্য খুঁজে বের করার জন্য এর মাঝে সাধারণত প্রেরক ও গ্রাহককে চিহ্নিতকরণের সংখ্যা বা অ্যাড্রেস দেয়া থাকে। 

গ্রাহক যন্ত্র এই হেডার সিগন্যাল ব্যবহার করে প্রেরকের ক্লক-স্পীডের সাথে সিনক্রোনাইজ বা সমন্বিত করে। ট্রেইলার ব্লকের শেষ নির্দেশ করে এবং কোনো ক্ষেত্রে ব্লকের ভেতরকার ভুল নির্ণয় এবং সংশোধনে সহায়তা করে। প্রযুক্তিগত ভাবে এ পদ্ধতি অপেক্ষাকৃত জটিল এবং ব্যয়বহুল হলেও বেশি ব্যান্ডউইথের ডেটা দূরবর্তী স্থানে পাঠানোর জন্য এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। তাই বড় ধরনের নেটওয়ার্কসহ মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক, টি.ভি. নেটওয়ার্ক ইত্যাদি ক্ষেত্রে এটি অপরিহার্য।

আইক্রোনাস ট্রান্সমিশনঃ অ্যাসিনক্রোনাস ও সিনক্রোনাস-এর একটি মিশ্র পদ্ধতি হচ্ছে আইসোক্রোনাস ট্রান্সমিশন। এ প্রক্রিয়ায় অ্যাসিনক্রোনাস পদ্ধতির স্টার্ট ও স্টপ বিটের মাঝখানে সিনক্রোনাস পদ্ধতিতে ব্লক আকারে ডেটা ট্রান্সফার করা হয়। যেহেতু পুরোটা সিনক্রোনাস নয়, তাই স্টোরেজ ডিভাইসে ডেটা সংরক্ষণ না করেই যখন প্রয়োজন তখন সেই ডেটা ট্রান্সমিট করা যায়। সাধারণত রিয়েল টাইম অ্যাপ্লিকেশনে এর প্রচলন বেশি। বিভিন্ন মাল্টিমিডিয়া কমিউনিকেশন যেমন, অডিও বা ভিডিও কল-এর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে ডেটা ট্রান্সমিশন হয়ে থাকে।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি ব্যান্ডউইথ কি? - ব্যান্ডউইথ কিভাবে কাজ করে? এই টপিক সহ কিছু গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। প্রিয় পাঠক, এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url