মাদকাসক্তির লক্ষণ গুলো জেনে নিন

ড্রাগ আসক্তি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ড্রাগের একটি সংজ্ঞা দিয়েছে। এই সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ড্রাগ এমন কিছু পদার্থ, যা জীবিত প্রাণী গ্রহণ করলে তার এক বা একাধিক স্বাভাবিক আচরণের পরিবর্তন ঘটে। ড্রাগকে সাধারণ ভাষায় আমরা মাদক বলি। ক্রমাগত মাদকদ্রব্যে সেবনের কারণে যখন এমন অবস্থা সৃষ্টি হয় যে মাদকদ্রেব্যের সাথে মানুষের এক ধরনের দৈহিক ও মানসিক সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং নিয়মিতভাবে মাদক গ্রহণ না করলে শারীরিক এবং মানসিক সমস্যায় পড়ে, তখন তাকে বলে মাদকাসক্ত বা ড্রাগ নির্ভরতা। 
মাদকাসক্তির লক্ষণ গুলো জেনে নিন
উল্লেখযোগ্য ড্রাগ যেগুলোর ওপর মানুষের আসক্তি সৃষ্টি হয়, সেগুলো হচ্ছে বিড়ি, সিগারেট, আফিম ও আফিজতা পদার্থ, হেরোইন, মদ, কোকেন, ভাং, চরস ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে হেরোইন একটি মারাত্মক ড্রাগ। ড্রাগের ওপর কোনো ব্যক্তির আসক্তি নানাভাবে জাগতে পারে, যেমন: কৌতূহল, সঙ্গদোষ, হতাশা দূর করার প্রচেষ্টা, মানসিক যন্ত্রণা ভুলে থাকার পদ্ধতি, নিজেকে বেশি কার্যক্ষম করা, পারিবারিক অশান্তি থেকে মুক্তির চেষ্টা কিংবা পারিবারিক অভ্যাসগত। বাবা কিংবা মা কোনো মাদকে আসক্ত থাকলে তার থেকে সন্তানে ওই মাদকে আসক্ত হওয়ার সবচেয়ে বেশি আশঙ্কা থাকে।

মাদকাসক্তির লক্ষণ গুলো 

যে ব্যক্তি মাদকদ্রব্যে আসক্ত, তার মধ্যে কতগুলো লক্ষণ প্রকাশ পায়। অনেকগুলো লক্ষণ সাধারণত স্বাভাবিক মানুষের মধ্যে দেখা যায় না। উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলো হলোঃ

১। খাওয়ার প্রতি আকর্ষণ কমে যাওয়া।

২। সবসময় অগোছালোভাবে থাকা।

৩। দৃষ্টিতে অস্বচ্ছতা এবং চোখ লাল হওয়া।

৪। কোনো কিছুতে আগ্রহ না থাকা এবং ঘুম না হওয়া।

৫। কর্মবিমুখতা ও হতাশা।

৬। শরীরে অত্যধিক ঘাম নিঃসরণ।

৭। সবসময় নিজেকে সবার থেকে দূরে রাখা।

৮। আলস্য ও উদ্বিগ্ন ভাব।

ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা অনিচ্ছা ছাড়াও কিছু সামজিক তথা পরিবেশের কারণেও মাদকদ্রব্যের প্রতি মানুষের আকর্ষণ জন্মাতে পারে, যেখান থেকে সে ধীরে ধীরে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। মাদকাসক্তির পরিবেশগত কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হলোঃ

মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা
  • বেকারত্ব
  • অসামাজিক পরিবেশ
  • অল্প বয়সে স্কুল থেকে বিদায়
  • আশপাশে ড্রাগের রমরমা ব্যবসা
  • অসামাজিক কাজ ও অপরাধ বেশি হয়, সে সব স্থানে বসবাস করা
  • বাবা-মায়ের নিয়ন্ত্রণের অভাব
  • হতাশা
  • একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতা
  • সন্তানের বেপরোয়া ভাবকে প্রশ্রয় দেওয়া
  • পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা
  • সন্তানের প্রতি যত্নহীনতা
  • উগ্র জীবনযাত্রা বা মানসিকতা

ড্রাগ আসক্তি নিয়ন্ত্রণ

কোনো ব্যক্তি ড্রাগের উপর আসক্ত হলে তা বন্ধ করা বেশ কঠিন কাজ। কারণ ড্রাগ আসক্ত মানুষ নিজের শরীরে মাদকের কুপ্রভাব বুঝতে পেরেও সেটা ছাড়তে পারে না। সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় মাদকদ্রব্যে আসক্তি কমানো যায়, তবে সে ক্ষেত্রে মাদকাসক্ত ব্যক্তি যদি সহযোগিতা না করে তাহলে তেমন ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। মাদক নিরাময় হাসপাতাল অথবা কেন্দ্রে মাদকাসক্ত মানুষকে ভর্তি করতে হবে এবং যথেষ্ট সহানুভূতির সাথে তার চিকিৎসা করতে হবে। প্রথমে আসক্ত ব্যক্তিকে তার ড্রাগ নেওয়া বন্ধুদের কাছ থেকে আলাদা করতে হবে। 

লক্ষ রাখতে হবে কোনোভাবেই যেন তার কাছে মাদকদ্রব্যে পৌঁছাতে না পারে। এরপর তার মানসিক চিকিৎসা করতে হবে যেন সে ড্রাগের কথা মনে আনতে না পারে, তার জন্য তাকে বিশেষ কোনো কাজে যুক্ত করতে হবে। সে যে মাদকদ্রব্যে আসক্ত হয়, সেটি একবারে হঠাৎ করে বন্ধ না করে ধীরে ধীরে মাত্রা কমিয়ে কমিয়ে শেষে একেবারে বন্ধ করতে হবে। হঠাৎ করে বন্ধ করা শারীরিকভাবে বিপজ্জনক হতে পারে। ঘুম ঠিকমতো না হলে বেশি অস্থিরতা বা বিদ্রোহীভাব দেখা দিলে ডাক্তাররা স্নায়ু শিথলকারক করার জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। 

মাদক সেবন শুধু যে ড্রাগ আসক্ত মানুষটির ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সমস্যা তা নয়, মাদক সেবন যেকোনো পরিবারে বড় রকমের সমস্যা ও বিশৃঙ্খলা বয়ে আনে। এই সমস্যা সামগ্রিকভাবে সমাজ ও দেশের উন্নতির পরিপন্থী। মাদকদ্রব্যের ব্যবসা করে সমাজের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ধনী হয়, কিন্তু অন্যদিকে অনেক মানুষের ও সমাজজীবনে ভয়াবহ দুর্যোগের কালো ছায়া নেমে আসে। সম্ভাবনাময় ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখা নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। 

শুধু তা-ই নয় মাদকাসক্তির কারণে অকালমৃত্যেু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এ জন্য মাদকদ্রব্যে সেবন ও এর ব্যবসা-বাণিজ্য কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে তার জন্য সরকারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এবং তার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও সমাজসেবামূলক সংস্থাগুলোর উদ্যেগ গ্রহণ করতে হবে।

সামাজিক প্রচেষ্টা

১। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা এবং তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।

২। মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে পরামর্শ দেওয়া।

৩। পুনর্বাসন করে সমাজের স্বাভাবিক স্রোতে এনে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা।

সরকারি প্রচেষ্টা

১। মাদক সেবন, বিক্রয় নিষিদ্ধ করা। এ ব্যাপারে কড়া আইন প্রণয়ন করে কঠোরভাবে সেগুলো প্রয়োগ করা।

২। মাদক সেবনের কুপ্রভাবগুলো সরকারি ও বেসরকারি প্রচারমাধ্যম দ্বারা মানুষকে অবহিত করা।

৩। আমাদের দেশে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন বলবৎ আছে। আইনগুলো যথাযথভাবে প্রয়োগ হলে মাদকের বিষাক্ত ছোবল থেকে মানুষ ও দেশকে অনেকটুকু বাঁচানো সম্ভব হবে। সেই ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে সরকারকে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url