ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ গুলো কি কি তা বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ বিস্তারিত জেনে নিন
যান্ত্রিক সভ্যতা বিশ্ব মানবতাকে দিয়েছে ভোগ সুখের অঢেল প্রাচুর্য। ভোগ সম্পদের আর বিলাস-ব্যবনে গা ভাসিয়ে দিয়ে মানুষ হয়েছে সৌভাগ্য গর্বে গর্বিত। কোন সভ্যতায় মানুষকে দেয়নি অবিমিশ্র সুখ স্বাচ্ছন্দ, শান্তি ও সুস্থিরতা। বর্তমান এক বিংশ শতাব্দীর যান্ত্রিক সভ্যতা তার ব্যতিক্রম নয়। সেও আমাদের জীবনে প্রসারিত করেছে বহুবিধ সংকটের কালো ছায়া। তার মধ্যে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ অন্যতম। 

এই পরিবেশ দূষণের ফলে আজকের দিনে আমাদের নোংরা পরিবেশে জন্ম নিয়েছে এক ভয়াবহ আতঙ্ক ময় জীবাণু বহনকারী ক্ষুদ্র পতঙ্গ এডিস মশা যার দংশনে মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান এই ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাবের ভাবনায় সারাদেশের মানুষ আজ দুশ্চিন্তিত, প্রতিকারের চিন্তায় উদভ্রান্ত, এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কত আলোচনা, কত বৈঠক, কত সমাবেশ। তাই আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশকে কিভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখে এডিস মশার হাত থেকে রক্ষা এবং ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতে পারি তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ

ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণত সংক্রমণের ৪-১০ দিনের মধ্যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে শুরু করে। ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণ ফ্লুর মতো হলেও এটি ধীরে ধীরে মারাত্মক রূপ নিতে পারে।

প্রথম লক্ষণ হিসেবে হঠাৎ করে উচ্চমাত্রার জ্বর (১০২-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট) দেখা যায়, যা সাধারণত ২-৭ দিন স্থায়ী হয়। জ্বরের পাশাপাশি প্রচণ্ড মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং শরীরে ও গিঁটে গিঁটে ব্যথা অনুভূত হয়। অনেক সময় রোগীরা জানান যে, তাদের হাড়ে বা মাংসপেশিতে এতটাই ব্যথা হয় যে মনে হয় যেন শরীর ভেঙে যাচ্ছে, এজন্য ডেঙ্গুকে "ব্রেকবোন ফিভার"ও বলা হয়।

ডেঙ্গুর আরেকটি সাধারণ লক্ষণ হলো ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি বা র‍্যাশের উদ্ভব হওয়া। এটি সাধারণত জ্বরের প্রথম বা তৃতীয় দিন দেখা দিতে পারে এবং ধীরে ধীরে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। পাশাপাশি, অনেক রোগীর বমি বমি ভাব, বমি হওয়া এবং ক্ষুধামন্দা দেখা যায়, যা শরীরে পানিশূন্যতার সৃষ্টি করতে পারে।

যদি ডেঙ্গু গুরুতর পর্যায়ে চলে যায়, তবে রক্তপাতজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন নাক ও মাড়ি থেকে রক্ত পড়া, শরীরে নীলচে দাগ পড়া বা মলের সঙ্গে রক্ত আসা। এটি ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার (DHF) বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম (DSS) এর লক্ষণ হতে পারে, যা জীবনঘাতী হতে পারে। এ সময় রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে যেতে পারে, ফলে রোগী শকে চলে যেতে পারে।

ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা, বিশ্রাম নেওয়া এবং চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।

ডেঙ্গুজ্বর কি

ডেঙ্গু জ্বর একটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ, যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে এডিস এজিপ্টাই এবং এডিস অ্যালবোপিক্টাস প্রজাতির মশা এই ভাইরাস বহন করে। ডেঙ্গু ভাইরাস (DENV) ফ্ল্যাভিভিরিডি পরিবারের অন্তর্গত এবং এটি মূলত চারটি প্রধান সেরোটাইপ (DENV-1, DENV-2, DENV-3, DENV-4) দ্বারা সংঘটিত হয়। এর মানে হলো, একজন ব্যক্তি একবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে পুনরায় অন্য সেরোটাইপের মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়, যা দ্বিতীয়বারে আরও মারাত্মক হতে পারে।
ডেঙ্গু মূলত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এবং উপগ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, বিশেষত যেখানে উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া মশার বংশবৃদ্ধির জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে। সাধারণত বর্ষাকালে বা বর্ষার পরপরই ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি দেখা যায়, কারণ এ সময় বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে এবং দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে।

রক্তক্ষরা ডেঙ্গুজ্বর

রক্তক্ষরা ডেঙ্গু জ্বর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রধানত শিশুদের একটি রোগ। রক্তক্ষরা ডেঙ্গু জ্বর হলো ডেঙ্গুর একটি মারাত্মক ধরন। রক্তক্ষরা ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো বয়স নির্বিশেষে সকলের ক্ষেত্রেই অভিন্ন। এই ডেঙ্গু জ্বরের শুরুতে হঠাৎ দেহের তাপ বেড়ে যায় এবং দুই থেকে সাত দিন পর্যন্ত দেহের তাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এতে মাথাব্যথা, ক্রমাগত জ্বর, দুর্বলতা এবং অস্থি-সন্ধি ও মাংসপেশীর তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। শ্বাসযন্ত্রের ঊর্ধ্বাংশের সংক্রণসহ রোগটি হালকাভাবে শুরু হলেও আচমকা শক ও ত্বকের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ ও কান দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায়।

ডেঙ্গু-শক সিনড্রম

এটি রক্তক্ষরা ডেঙ্গুরই আরেকটি রকমফের, তাতে সংকুচিত নাড়িচাপ, নিম্ন রক্তচাপ অথবা সুস্পষ্ট শকসহ রক্ত সঞ্চালনের বৈকাল্য তৈরি হয়। দেহের বাইরে থেকে যকৃৎ স্পর্শ করা যায় ও নরম হয়ে ওঠে। কদাচিৎ জন্ডিস হয়ে যায়, অব্যাহত পেট ব্যথা, থেকে থেকে বমি, অস্থিরতা বা অবসন্নতা এবং হঠাৎ জ্বর ছেড়ে ঘামসহ শরীর ঠান্ডা হওয়া ও দেহ সম্পূর্ণ নেতিয়ে পড়া এই রোগের লক্ষণ।

রোগ সংক্রমণ

Aedes aegypti মশা জন বসতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকেই বংশবৃদ্ধি করে। এতে লার্ভা বেশিরভাগই পরিত্যক্ত টায়ার, বালতি, ফেলে দেওয়া নারিকেলের খোল, ফুলদানি, ফুলের টবের নিচের থালায় জমে থাকা পানিতে, এমন কি জমে থাকা গাছের গর্তে এবং এ ধরনের অন্যান্য প্রাকৃতিক স্থানে বড় হয়। পূর্ণবয়স্ক মশা সাধারণত ঘরের ভিতর অন্ধকার জায়গায় আলমারি, বিছানা বা খাটের তলায় থাকতে পারে। 

এই প্রজাতি দিনের বেলায় বেশি সক্রিয় থাকে, বেশিরভাগ কামড়ের ঘটনা ঘটে সকালের প্রথম দেক বা বিকালের শেষে। কোন আক্রান্ত লোকের রক্ত খেয়ে থাকলেই মশা সংক্রমিত হয় এবং দশ থেকে বারো দিনের নির্ধারিত উপ্তিকাল যাপনের পর সংক্রমন ক্ষমতা অর্জন করে। মশা সংক্রমণক্ষম হয়ে উঠলে লোকের শরীর থেকে রক্ত শোষণের সময় এমনকি ত্বকে গুঁড় ঢুকালেও ডেঙ্গু সংক্রমণ ঘটতে পারে।

ডেঙ্গু বাহক নিয়ন্ত্রণ:

ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে কার্যকর কোন ওষুধ বা প্রতিষেধক নেই বললেই চলে। দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় কেবল রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।। সাধারণত ক্লাসিকাল ডেঙ্গুর বিরুদ্ধেই দেহের রোগ প্রতিরোধে সামর্থ্য থাকে, কিন্তু রক্তক্ষরা ডেঙ্গু থেকে বেশিরভােই রোগী মারা যায়। তাই মশার বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ পরিচালিত আবশ্যক। বাংলাদেশের ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণের উল্লেখযোগ্য তেমন কার্যক্রম নেই। 

বাংলাদেশের কোন কোন শহরে মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম থাকলেও এডিস মশার বিরুদ্ধে নয়। এই জাতের মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। এগুলো যেহেতু পানি ভরা পাত্রে বৃদ্ধি পায়, তাই যত্রতত্র কীটনাশক ছড়িয়ে কোন সকল পাওয়া যাবে না। এই মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য পানি ভরা পাত্র বাসার বাহিরে ফেলে দিয়ে আসতে হবে। 

ঘরের চারিদিকে স্প্রে করতে হবে অথবা খুব সকালে বা সন্ধ্যার শেষে ঘরে বিষ ধোঁয়া বা এরোসল দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।এভাবে প্রতিনিয়ত উদ্যোগ গ্রহণ করলে এ প্রাণঘাতি মশা কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

ডেঙ্গু হলে কি খাবেন?

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে, তাই সঠিক পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডেঙ্গুর কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই, তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো এবং শরীরকে হাইড্রেট রাখা ডেঙ্গু থেকে সুস্থ হওয়ার মূল চাবিকাঠি।

প্রথমত, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা জরুরি, কারণ ডেঙ্গুর কারণে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। স্যালাইন, ডাবের পানি, ফলের রস (বিশেষ করে পেঁপে, কমলা, মাল্টা ও জাম্বুরার রস), ওরস্যালাইন ইত্যাদি পান করলে শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য ঠিক থাকে এবং দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।

পুষ্টিকর খাবারের মধ্যে ফলমূল ও শাকসবজি বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত। বিশেষ করে পেঁপে পাতা রস, মাল্টা, কমলা, কিউই, বেদানা ও ড্রাগন ফল ডেঙ্গু রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এসব ফলে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং প্লাটিলেট বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়া, গাজর, ব্রোকোলি, পালং শাক, লালশাক এবং কুমড়ার মতো সবজি খেলে শরীরের শক্তি বজায় থাকে।

প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন ডাল, সেদ্ধ ডিম, সেদ্ধ মাছ বা মুরগির মাংস রোগীকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে। তবে ভাজা-তেলে ভাজা ও গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

ডেঙ্গু হলে দুগ্ধজাত খাবার যেমন দুধ, দই, ঘোল খাওয়া উপকারী, কারণ এগুলো শরীরের এনার্জি বাড়ায় এবং হজমেও সহায়তা করে।

অন্যদিকে, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (চা, কফি, সফট ড্রিংক) এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার (ফাস্টফুড, চিপস, বিস্কুট, চকলেট) এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো শরীরের পানিশূন্যতা বাড়াতে পারে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির খাদ্যতালিকায় এসব স্বাস্থ্যকর খাবার রাখলে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব এবং জটিলতা কমে যায়। তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা এবং বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

পরিশেষে বলা যায় যে, মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ সহজবোধ্য নয়। সাধারণত নিয়ন্ত্রণের জন্য সবাইকে মশা বৃদ্ধির অকুস্থল যেমন পরিত্যাক্ত পাত্র, টায়ার, ডাবের খোসা ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে এবং বাসস্থানের আশপাশ থেকে জমা পানি নিষ্কাশন করতে হবে। বস্তুত কার্যকর ও টেকসই নিবারণ ব্যবস্থার জন্য ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অবশ্যই স্থানীয় জনগণের সম্পৃক্তি আবশ্যক।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url