ভূমিকম্প কি?- ভূমিকম্পের সময় করনীয় কি? বিস্তারিত জেনে নিন
ভূমিকম্প কি? ভূমিকম্প হলো পৃথিবীর অভ্যন্তরে শক্তি সঞ্চিত হয়ে তা হঠাৎ মুক্তি পাওয়ার ফলে সৃষ্ট কম্পন। এটি সাধারণত টেকটনিক প্লেটের সঞ্চালনজনিত কারণে ঘটে থাকে।
ভূমিকম্পের কারণ ভূমিকম্পের মূল কারণ হলো টেকটনিক প্লেটের গতিবিধি। এই প্লেটগুলি যখন একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় বা পৃথক হয়, তখন ভূমিকম্প ঘটে। এছাড়া আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এবং মানুষের ক্রিয়াকলাপও ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে। পোস্ট সূচি
ভূমিকম্পের প্রকারভেদ ভূমিকম্প বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে যেমন- টেকটোনিক, আগ্নেয়গিরি, মানবসৃষ্ট এবং প্লেটের মধ্যকার সংঘর্ষজনিত ভূমিকম্প।
ভূমিকম্পের প্রভাব
- স্থাপত্য ও অবকাঠামোগত ক্ষতি ভূমিকম্পের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ভবন, সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামোর। শক্তিশালী ভূমিকম্পে সম্পূর্ণ শহর ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
- পরিবেশগত প্রভাব ভূমিকম্পের ফলে ভূমিধস, অগ্নিকাণ্ড, নদী বা জলাধারের গতিপথ পরিবর্তন সহ নানা পরিবেশগত ক্ষতি হতে পারে।
- সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ভূমিকম্পের ফলে মানুষের মৃত্যু, আহত হওয়া, গৃহহীন হওয়া এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে পারে। এটি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে।
ভূমিকম্পের মাপ ও মাত্রা
- রিখটার স্কেল রিখটার স্কেল হলো ভূমিকম্পের কম্পনের মাত্রা মাপার একটি পদ্ধতি। এটি ১ থেকে ১০ পর্যন্ত মাত্রায় ভূমিকম্পের তীব্রতা প্রকাশ করে।
- মোমেন্ট ম্যাগনিচুড স্কেল এই স্কেলটি ভূমিকম্পের মোট শক্তি মাপতে ব্যবহার করা হয়, যা ভূমিকম্পের প্রকৃত শক্তি সম্পর্কে আরও সঠিক ধারণা দেয়।
ভূমিকম্প পূর্বাভাস ও সতর্কতা
- পূর্বাভাসের বর্তমান অবস্থা বর্তমানে ভূমিকম্পের সঠিক পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব নয়। তবে বিজ্ঞানীরা কিছু প্রাথমিক সংকেত শনাক্ত করতে পারেন যা ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হিসেবে কাজ করতে পারে।
- সতর্কতা ব্যবস্থা ভূমিকম্পের সতর্কতা ব্যবস্থা হিসেবে কিছু এলাকায় বিশেষ সিস্টেম বসানো হয়েছে যা ভূমিকম্পের প্রাথমিক কম্পন শনাক্ত করে সতর্ক সংকেত দিতে পারে।
ভূমিকম্পের সময় করণীয়
- ঘরে অবস্থান করলে করণীয় ১. শক্ত টেবিল বা ডেস্কের নিচে আশ্রয় নিন। ২. জানালা থেকে দূরে থাকুন। ৩. দরজা এবং ভারী আসবাব থেকে দূরে থাকুন।
- বাইরে অবস্থান করলে করণীয় ১. খোলা স্থানে আশ্রয় নিন, ভবন, গাছ বা বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দূরে থাকুন। ২. গাড়ির মধ্যে থাকলে রাস্তার পাশে পার্ক করুন এবং গাড়ির মধ্যে থাকুন।
ভূমিকম্পের পর করণীয়
- ১. বাড়ির বাইরে বের হয়ে নিরাপদ স্থানে যান। ২. আহতদের সহায়তা করুন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দিন। ৩. রেডিও বা অন্যান্য তথ্যসূত্র থেকে আপডেট নিন।
ভূমিকম্প পূর্ব প্রস্তুতি
- প্রাথমিক প্রস্তুতি ভূমিকম্পের আগে বাড়ির কাঠামো শক্তিশালী করা, আসবাবপত্র সঠিকভাবে স্থাপন করা এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের সুরক্ষা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
- জরুরি কিট প্রস্তুত করা জরুরি কিটে প্রয়োজনীয় ওষুধ, খাবার, পানীয়, প্রথমিক চিকিৎসার সামগ্রী, টর্চ, ব্যাটারি ইত্যাদি রাখা উচিত।
- পরিবারের সাথে পরিকল্পনা পরিবারের সকল সদস্যের সাথে ভূমিকম্পকালীন করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করা এবং তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত।
ভূমিকম্পের পরবর্তী সহায়তা ও পুনর্বাসন
- ত্রাণ ব্যবস্থা ভূমিকম্পের পর সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ত্রাণ প্রদান করে। প্রয়োজনীয় খাবার, পানীয়, ওষুধ এবং আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়।
- মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ভূমিকম্পের পরে মানুষ মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। এজন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ।
- পুনর্বাসন পরিকল্পনা পুনর্বাসনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির পুনর্নির্মাণ এবং জনগণের জীবিকা ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
ভূমিকম্প সংক্রান্ত মিথ ও বাস্তবতা
- সাধারণ মিথ ভূমিকম্প সম্পর্কে অনেক মিথ প্রচলিত আছে, যেমন- ভূমিকম্পের সময় পশুপাখির অস্বাভাবিক আচরণ। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে এটি প্রমাণিত নয়।
- বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা ভূমিকম্পের বৈজ্ঞানিক কারণ এবং এর পূর্বাভাসের ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য জানা গুরুত্বপূর্ণ। ভূমিকম্পের প্রকৃত কারণ এবং এর পূর্বাভাসের প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত।
বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ঝুঁকি ও প্রস্তুতি
- বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক অবস্থা বাংলাদেশ একটি ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ। এর ভূতাত্ত্বিক অবস্থা ও প্লেট টেকটনিক গতিবিধি এটি প্রমাণ করে।
- সরকারের প্রস্তুতি ও উদ্যোগ বাংলাদেশ সরকার ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ভূমিকম্প প্রতিরোধে অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করছে।
- নাগরিকদের দায়িত্ব প্রত্যেক নাগরিকের উচিত ভূমিকম্পের সময় করণীয় সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা। পরিবার ও সমাজের মধ্যে ভূমিকম্প সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং জরুরি প্রস্তুতি নিশ্চিত করা।
উপসংহার
ভূমিকম্প একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা মুহূর্তেই বড় ক্ষতি করতে পারে। সঠিক প্রস্তুতি ও সচেতনতা থাকলে আমরা ভূমিকম্পের সময় ও পরবর্তীতে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারি। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব প্রস্তুতিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url