রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া বিস্তারিত জেনে নিন
রোজা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মুসলমানদের জন্য ফরজ ইবাদত। রমজান মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক। এটি ধৈর্য এবং ত্যাগের এক মহান প্রতীক। রোজা রাখার জন্য নিয়ত করা অতান্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া

রোজা হলো আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্য প্রকাশের একটি মাধ্যম। রোজা শুরু করার আগে নিয়ত করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ কোনো ইবাদতই নিয়ত ছাড়া পূর্ণ হয় না। রোজার নিয়ত হলো অন্তরের দৃঢ় সংকল্প যে, আগামীকাল আমি সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সব ধরনের পানাহার এবং পাপ কাজ থেকে বিরত থাকব।

ইফতারের সময়েও দোয়া পড়া সুন্নত। ইফতার হলো রোজা ভঙ্গের সময় এবং এটি আল্লাহর দানকে স্মরণ করার এক বিশেষ মুহূর্ত। ইফতারের দোয়া হলো:

"اللّهُمَّ اِنِّي لَكَ صُمْتُ وَبِكَ آمَنْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ"
বাংলায়: “হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্য রোজা রেখেছি, আপনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং আপনারই দেওয়া রিজিক দিয়ে ইফতার করছি।”
রোজা শুধুমাত্র পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম নয়; এটি শারীরিক, মানসিক এবং আত্মিক সংযমের একটি পরিপূর্ণ প্যাকেজ। রোজার মাধ্যমে একজন মুসলিম নিজের অভ্যাস, আচরণ ও চিন্তাধারাকে শুদ্ধ করার সুযোগ পান। নিয়ত ও দোয়ার পাশাপাশি রোজা পালনের সময় কিছু বিশেষ বিষয় খেয়াল রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

রোজা ভঙ্গের কারণসমূহ:

রোজা ভঙ্গের কারণগুলো জানা একজন রোজাদারের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যেমন:

১. ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করা।

২. ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা।

৩. দিনের বেলা স্ত্রী সহবাস করা।

৪. কোনো ধরনের ঔষধ বা ইনজেকশন গ্রহণ করা 

এগুলো থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি ছোটখাটো গুনাহ থেকেও বিরত থাকতে হবে। যেমন মিথ্যা কথা বলা, কারো সাথে ঝগড়া করা, বা কারো প্রতি খারাপ আচরণ করা।

রোজার ফজিলত:

১. রোজার মাধ্যমে তাকওয়া অর্জন হয়, যা আল্লাহ তাআলার এক বিশেষ প্রিয় গুণ।

২. রোজা মানুষের ধৈর্যশক্তি বৃদ্ধি করে।

৩. রোজা আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি মাধ্যম।

৪. রোজাদারের জন্য জান্নাতে বিশেষ দরজা  সংরক্ষিত রয়েছে।

৫. রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েও প্রিয়।

রোজার বিশেষ পুরস্কার:

পবিত্র কোরআন মাজিদে মহান আল্লাহ তায়ালা উল্লেখ করেছেন যে ব্যক্তি আমার সন্তষ্টি লাভের জন্য রোজা পালন করবে, সেই ব্যক্তিকে আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব। রোজার পুরস্কার এত বেশি যে তা আল্লাহ নিজ হাতে প্রদান করবেন। এছাড়াও হাদিসে রোজাদারদের জন্য জান্নাতে বিশেষ দরজা "রয়েছে বলে উল্লেখ করা আছে।

রমজানের বিশেষ ইবাদত:

১. তারাবি নামাজ: রমজানের রাতে তারাবি নামাজ আদায় করা সুন্নত। এটি রমজানের অন্যতম বরকতময় আমল মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজিদে উল্লেখ করেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের রোজা রাখার পর তারাবির নামাজ আদায় করবে সেই ব্যক্তির অতীতের সকল গুনা ক্ষমা করা হবে।

২. ইতিকাফ: রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করার মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি দুনিয়ার ঝামেলা থেকে দূরে থেকে একান্তভাবে আল্লাহর ইবাদতে মনোযোগ দিতে পারেন। যা আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয় ইবাদত।

৩. লাইলাতুল কদর: রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে লাইলাতুল কদরের সন্ধান করতে বলা হয়েছে। এটি এমন একটি রাত, যা হাজার মাসের ইবাদতের উত্তম।

রোজা ভঙ্গের ক্ষেত্রে করণীয়:

কোনো কারণে যদি রোজা ভঙ্গ হয়ে যায়, তাহলে এর কাফফারা আদায় করা জরুরি। কাফফারা হিসেবে একজনকে ৬০ দিন একটানা রোজা রাখতে হবে অথবা ৬০ জন গরিব মানুষকে খাবার খাওয়াতে হবে। রোজার মাধ্যমে একজন মুমিন নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে পারেন। এটি মানুষের ধৈর্য বৃদ্ধি করে এবং আল্লাহর প্রতি পূর্ণ নির্ভরতা তৈরি করে। পাশাপাশি এটি মানুষের মধ্যে দুনিয়াবি লোভ-লালসা কমিয়ে আখিরাতমুখী চিন্তাধারার বিকাশ ঘটায়।

রমজানের দানশীলতার শিক্ষা:

রমজানে দান-সদকার গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এই মাসে দান-সদকা করার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, "যে ব্যক্তি রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে রোজাদারের সমান সওয়াব পাবে।" (তিরমিজি)
রমজানের প্রতিটি মুহূর্তে ইবাদতের প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও জিকির করা উচিত। এ মাসে করা ছোট্ট একটি ভালো কাজও পরকালে বিশাল পুরস্কার এনে দিতে পারে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই পবিত্র মাসের ফজিলত অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

রমজানের মাসব্যাপী বিশেষ আমল:

১. কুরআন তিলাওয়াত: রমজান হলো কুরআনের তিলাওয়াতের মাস। এ মাসে যত বেশি সম্ভব কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত এবং তার অর্থ ও তাৎপর্য নিয়ে চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন।

২. জিকির ও ইস্তেগফার: আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার এটাই সবচেয়ে উত্তম সময়।

রোজা রাখার মাধ্যমে একজন মুমিন ধৈর্য, সহমর্মিতা, এবং নিয়ন্ত্রণশক্তি অর্জন করেন। এটি একজন ব্যক্তিকে সব ধরনের খারাপ অভ্যাস পরিত্যাগ করতে উৎসাহিত করে।

১. ধৈর্য ও সংযম: রোজা মানুষকে ধৈর্য ধরতে শেখায়। সারাদিন ক্ষুধা ও তৃষ্ণা সহ্য করার মাধ্যমে সে জীবনের অন্যান্য কষ্টকেও সহজভাবে মেনে নেওয়ার মানসিক শক্তি অর্জন করে।

২. মানসিক প্রশান্তি: রোজা মানসিক শান্তি এনে দেয়। এটি মানুষের মধ্যে শক্তি বৃদ্ধি করে।

রোজার উপকারিতা কি কি

শারীরিক উপকারিতা

রোজার সময়ে শরীরের বিপাকীয় কার্যক্রমে পরিবর্তন ঘটে, যা শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত রোজা শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে এবং হজমপ্রক্রিয়া উন্নত করে। এছাড়া, এটি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মানসিক উপকারিতা

রোজা মানসিক শান্তি এনে দেয়। এটি আত্মনিয়ন্ত্রণ এবং মানসিক স্থিরতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত রোজা পালনকারীরা তাদের রাগ, হতাশা ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। পাশাপাশি এটি একজন মানুষের ধৈর্যশীলতা ও আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।

সামাজিক উপকারিতা

রোজা মানুষকে সংযম ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়। রোজাদার ব্যক্তি অভাবীদের কষ্ট অনুভব করতে সক্ষম হন, যা তাদের দানশীল হতে উৎসাহিত করে। এটি সামগ্রিকভাবে সমাজে মানবিক মূল্যবোধ ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

নৈতিক উন্নয়ন

রোজা একজন মানুষকে তার খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করতে সহযোগিতা করে। রোজা পালনকালে মিথ্যা বলা, গীবত করা, ঝগড়া ইত্যাদি থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অভ্যাস থেকে মুক্ত থেকে একজন ব্যক্তি নৈতিকভাবে আরও পরিশুদ্ধ হন এবং ভালো কাজের প্রতি আকৃষ্ট হন।

ইচ্ছাশক্তি এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের উন্নতি

রোজা মানুষের ইচ্ছাশক্তি ও আত্মনিয়ন্ত্রণ বাড়াতে সাহায্য করে। দীর্ঘ সময় পানাহার এবং শরীরিক চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করা ব্যক্তির মনোবল ও আত্মবিশ্বাসকে শক্তিশালী করে। এটি জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও সাফল্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় মানসিক দৃঢ়তা সৃষ্টি করে।

পারিবারিক এবং সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করা

রোজার সময় একত্রে ইফতার ও সেহরি করা পরিবার ও সমাজের মধ্যে গভীর সম্পর্ক তৈরি করে। রোজার সময়ে মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহানুভূতি এবং সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পায়, যা পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে তোলে।

শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনযাপন

রোজা একটি নির্ধারিত সময়সূচি মেনে চলার অভ্যাস তৈরি করে। সেহরি ও ইফতারের নির্দিষ্ট সময় মেনে চলার মাধ্যমে মানুষের জীবনে শৃঙ্খলার প্রভাব পড়ে। এটি ব্যক্তিকে সময়ের মূল্য বুঝতে সাহায্য করে এবং তার দৈনন্দিন কার্যক্রমকে আরও গঠনমূলক করে তোলে।

স্বাস্থ্যসেবা এবং ডিটক্সিফিকেশন

রোজার মাধ্যমে শরীর প্রাকৃতিকভাবে ডিটক্সিফাই হয়। দীর্ঘ সময় না খাওয়ার ফলে লিভার, কিডনি এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর ওপর চাপ কমে। এতে শরীর তার পুনরুজ্জীবনের সুযোগ পায় এবং হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে।

ধনী-গরিবের পার্থক্য হ্রাস

রোজার মাধ্যমে ধনী ব্যক্তিরা গরিবদের অভাব অনুধাবন করতে পারেন। এটি তাদের মধ্যে দানশীলতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার অনুভূতি তৈরি করে। জাকাত ও দানের মাধ্যমে সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় রোজা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ধৈর্য ও সহনশীলতার চর্চা

রোজা ধৈর্য এবং সহনশীলতার এক অনন্য শিক্ষা দেয়। দীর্ঘ সময় অভুক্ত থাকা এবং কোনো কষ্টের সময় আল্লাহর ওপর ভরসা করা মানুষের মধ্যে ধৈর্যের গুণাবলী বৃদ্ধি করে। এটি জীবনের কঠিন মুহূর্তগুলোতে মানসিক শক্তি অর্জনে সহায়তা করে।

আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি

রোজা পালনের মাধ্যমে একজন মানুষ নিজের ইচ্ছাশক্তি ও আত্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা উপলব্ধি করেন। এটি তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলে, যা ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনে তাদের আরও সফল করে তোলে।

নৈতিক শুদ্ধতা বৃদ্ধি

রোজা মানুষকে নিজের দোষত্রুটি এবং গুনাহের প্রতি সচেতন হতে শেখায়। এটি তাদের অন্তরকে শুদ্ধ করে, যা তাদের ব্যক্তিত্বের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রোজাদার ব্যক্তি সৎ পথে থাকার জন্য চেষ্টা করেন এবং খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়।

সাম্য এবং সংহতির শিক্ষা

রোজা মানুষের মধ্যে সাম্যের বোধ সৃষ্টি করে। ধনী-গরিব সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে থাকার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এটি সমাজে সংহতির বন্ধনকে দৃঢ় করে এবং পারস্পরিক সহমর্মিতা বাড়ায়। পোস্ট সূচিপত্র

আত্মসংযমের শিক্ষা

রোজা মানুষকে শুধু খাওয়া-দাওয়ার সংযম নয়, বরং দৃষ্টি, কথা, এবং আচরণের সংযম শিখায়। এটি ব্যক্তিগত চরিত্রের উন্নয়নে সহায়তা করে এবং সুশৃঙ্খল জীবনের জন্য প্রস্তুত করে।

আত্মজিজ্ঞাসা এবং আত্মউন্নয়ন

রোজা মানুষকে আত্মজিজ্ঞাসার সুযোগ করে দেয়। এক মাসের সময় তারা তাদের জীবনের ভুল এবং গুনাহগুলো বিশ্লেষণ করতে পারেন এবং ভবিষ্যতে আরও উন্নত মানুষ হওয়ার সংকল্প গ্রহণ করেন।

পাপ মোচনের সুযোগ

হাদিসে বলা হয়েছে, "যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রোজা রাখে, তার অতীতের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।" এটি রোজার এক অনন্য উপকারিতা।

ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা

রোজা মানুষকে ধূমপান, মিথ্যা কথা বলা খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকতে সহাযোগিতা করে। এ অভ্যাসগুলো রমজানের পরেও ব্যক্তির জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।

জীবনের উদ্দেশ্য উপলব্ধি

রোজার সময় মানুষ দুনিয়ার অস্থায়ী সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের চেয়ে আখিরাতের স্থায়ী জীবনের প্রতি মনোনিবেশ করেন। এটি মানুষকে জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য উদ্বুদ্ধ করে।

দেহ ও মনের বিশ্রাম

সারাদিন নির্ধারিত সময় না খেয়ে থাকার ফলে শরীরের হজম প্রক্রিয়া কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম পায়। একই সঙ্গে মানসিক চাপ কমে আসে এবং মন প্রশান্ত হয়। এভাবে দেহ ও মনের মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি হয়।

কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি

অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে রোজা রাখার মাধ্যমে মানুষের কর্মক্ষমতা বাড়ে। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ দূর করে এবং শরীর ও মনকে সতেজ করে তোলে। সঠিক পদ্ধতিতে রোজা পালন করলে এটি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

অপরাধ প্রবণতা হ্রাস

রমজান মাসে রোজার কারণে অপরাধ প্রবণতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়। ধর্মীয় অনুশাসন ও রোজার সংযমের কারণে মানুষ ভালো কাজের দিকে ঝোঁকে এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকে। এটি সমাজে শান্তি ও স্থিতি বজায় রাখতে সহায়তা করে।

রোজার নিয়ত না করলে কি হয়

রোজার নিয়ত না করলে রোজা হয় না। ইসলামী বিধান অনুসারে, প্রত্যেক ইবাদতের জন্য নিয়ত করা অধিক গুরুত্বপূর্ণ। রোজার ক্ষেত্রে নিয়ত অর্থ হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার এবং পাপাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখার অভিপ্রায় পোষণ করা। এই নিয়ত মনের মধ্যে স্থির করলেই যথেষ্ট, মুখে উচ্চারণ করা আবশ্যক নয়।
যদি কেউ রোজার নিয়ত করতে ভুলে যায়, তাহলে তার রোজা সহিহ হবে না। বিশেষ করে রমজানের রোজার ক্ষেত্রে প্রতি রাতে সুবহে সাদিকের আগে নিয়ত করা বাধ্যতামূলক। সুবহে সাদিকের পর নিয়ত করলে নফল রোজার ক্ষেত্রে তা গ্রহণযোগ্য হলেও ফরজ রোজার জন্য তা গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে।

নিয়ত না করলে রোজা রাখার মূল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হয়। কেননা, ইসলামে সকল ইবাদতের মুল্য নির্ধারিত হয় নিয়তের ভিত্তিতে। হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, “সব কাজের প্রতিফল নিয়তের উপর নির্ভর করে” (বুখারি, মুসলিম)। তাই, রোজার মত পবিত্র ইবাদত শুরু করার আগে নিয়ত করাই উচিত, যেন তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় এবং আখিরাতে পূর্ণ প্রতিদান লাভ করা যায়।

নফল রোজার নিয়ত বাংলায়

ইসলামে নফল রোজার গুরুত্ব অপরিসীম। নফল রোজা হলো অতিরিক্ত রোজা, যা ফরজ বা ওয়াজিব নয় বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে রাখা হয়। এটি রমজান মাসের বাইরে যেকোনো দিন রাখা যায়, তবে বিশেষ কিছু দিনের নফল রোজার ফজিলত আরও বেশি। যেমন, আরাফার দিন, আশুরার দিন, শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা এবং প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার।

নফল রোজার নিয়তের গুরুত্ব ও উপকারিতা

নফল রোজা আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি ফরজ বা ওয়াজিব না হলেও নিয়মিত নফল রোজা রাখা একজন মুমিনের জন্য অতিরিক্ত সওয়াব লাভের সুযোগ। ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী, যেকোনো ইবাদতের মূল হলো নিয়ত। তাই নফল রোজার ক্ষেত্রে নিয়ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

নফল রোজার সেরা সময়

নফল রোজা কোনো বিশেষ সময়ের জন্য বাধ্যতামূলক নয়, তবে কিছু সময়ের রোজা বিশেষভাবে ফজিলতপূর্ণ। যেমন: আশুরা (১০ মুহাররম): আশুরার দিন নফল রোজা রাখলে এক বছরের পাপ মাফ হয়ে যায়।
  1. আরাফার দিনে (৯ জিলহজ): আরাফার দিনে রোজা রাখলে পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী বছরের পাপ মাফ হয়।
  2. শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা: রমজানের পর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখলে সারা বছরের রোজার সওয়াব পাওয়া যায়।
  3. প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার: এই দুটি দিন নফল রোজা রাখলে আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় এবং বিশেষ সওয়াব পাওয়া যায়।
  4. প্রতি মাসে তিনদিন রোজা: প্রতি মাসে তিনদিন নফল রোজা রাখা ইসলামে উত্তম।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে রোজার নিয়ত ও ইফতারের দোয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টট পড়ে উপকৃত হতে পেরেছেন। এরকম আরো ইসলামিক তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url