বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা রচনা বিস্তারিত জেনে নিন

সূচনা: ফুল দেখলে সবার হৃদয় আনন্দে ভরে ওঠে। আমাদের বাংলাদেশ প্রকৃতিক লীলাক্ষেত্র। প্রকৃতি এখানে ভিন্ন ভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন ফুলহারে সাজিয়ে বাংলাদেশকে সুন্দর করে তোলে।

বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা রচনা

শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। বন্ধ পানিতে চাষাবাদ ছাড়াই এ ফুল জন্মে। পানির উপর মাথা তুলে এ ফুল তখন থরে থরে ফুটে থাকে তখন কতই না সুন্দর দেখায়। বর্ষার যখন মাঠ-ঘাট, খাল-বিল পানিতে ডুবে যায় তখন শাপলার মূল মাটির ভেতর থেকে অংকুরিত হয়। শুকনার সময় গাছ মরে গেলেও এর মূল মাটির ভেতর সারা বছর বেঁচে থাকে। আবার বর্ষার পানি পেলেই সেই মূল থেকে কান্ড বা ডাঁটা বের হয়। মূলের ভেতর থেকে সরু নলের মত ডাঁটাগুলো গজায় এবং যখন পানির উপর ভেসে ওঠে তখন এদের মাথায় পাতা গজায়। পাতাগুলো থালার মত পানির উপর ভাসতে থাকে। গভীর পানির মাঝেই শাপলা বাড়তে থাকে এবং একটা মূল থেকে কয়েকটা ডাঁটা বের হয়ে ঝাড়ের মত হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা রচনা বিস্তারিত জেনে নিন
ফুলের ডাঁটা পাতার ডাঁটা থেকে আলাদা হয়ে থাকে। ফুলের ডাঁটার মাথায় একটা মুচি হয় এবং প্রথমে এর পাপড়িগুলো কলার মুচির মতই বন্ধ হয়ে থাকে। দু তিন দিনের ভেতর মুচিটা পানির উপর উঠে আসে এবং রোদ ও বাতাসের ছোঁয়া পেয়ে পাপড়িগুলো মেলতে শুরু করে। তখনই এর রূপ বিকশিত হয়। দীঘি, পুকুর ও বিলের পানিতে এবং ধানের ক্ষেত্রে শাপলা ফুল এক অপূর্ব শোভা ধারণ করে। প্রশান্ত বিলের পানিতে সবুজ পাতার গালিচা ভেদ করে যখন সাদা সাদা শাপলা ফুল বের হয়ে এসে হাসতে থাকে তখন সত্যই অপরুপ দেখায়। শাপলা ফুলের মনোহর শোভা যে দেখেনি সে বাংলার রূপ পুরাপুরি দেখেনি বললেই চলে। মনে হয় আকাশের অসংখ্য তারা বিলের পানিতে পড়ে ভাসছে।

শাপলার বৈশিষ্ট্য তার এই নির্মল হাসির মাঝে। এটা যেন বাংলাদেশের সরল জনগণের প্রাণের প্রতীক। নেই গন্ধ ও রঙের বাহার ও চাষাবাদ ও যত্নের বাড়াবাড়ি। বিল, ঝিল, দীঘি, পুকুর, ডোবার স্থির পরিষ্কার পানিতে সে নিজে নিজেই জন্মে ও আপন মহিমায় ফুটে থাকে। এ জন্যে বাংলাদেশের জাতীয় ফুলের মর্যাদা একেই দেওয়া হয়েছে।
দেশী-বিদেশী বহু রকমের ফুল রুচিশীল ধনীলোকের বাগানের শোবা বাড়ায়। বহু যত্নে ও বহু অর্থ ব্যয়ে এদের দেখাশুনা ও চাষাবাদ করা হয়। গোলাপ, চাঁপা, সূর্যমুখী, যুঁই, শেফালী, গন্ধরাজ, কামিনী এদের গন্ধ আছে, রূপও আছে। কিন্তু এদের কোনটাই জাতীয় ফুলের মর্যাদা লাভ করতে পারেনি। কারণ এরা সংখ্যায় কম। এদের কোনটা আবার বাংলাদেশের সম্পদ নয়-বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে।

শাপলার আরেক বৈশিষ্ট্য হল এর কোমল ডাঁটাকে তরকারি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। বর্ষায় গাঁয়ের হাটে নৌকা ভর্তি শাপলার ডাঁটা আসে এবং তরকারির মত সেগুলো বিক্রি হয়। কৃষিজাত তরকারির তুলনায় এগুলো খুব সস্তা। শহরের বাজারেও শাপলার ডাঁটা আমদানি হয় এবং অনেকে এই সস্তা তরকারিটা আগ্রহের সাথে কিনে থাকে। শহরের হাটে এদের দেখে মনে জাগে ফেলে আসা গাঁয়ের মধূর স্মৃতি।

শাপলার কয়েকটি জাত রয়েছে। এক জাতের ফুল হয় লাল রঙের এবং এর ডাঁটাও বেশ সতেজ ও মোটা হয়ে থাকে। এগুলো বড় দীঘি ও পুকুরের জন্মে। অন্য জাতের শাপলার ডাঁটা খুবই সরু। এর পাপড়িগুলোর রঙ বেগুনী। এই জাতের শাপলা অগভীর পানিতে জন্মে এবং এর ফলনও কম। বর্ষার বিল, ঝিল, পুকুর ও ডোবার পানিতে প্রচুর ফোটে সাদা শাপলা। এরা এত বেশি হয় যে কোন জায়গা ফাঁক থাকে না। বর্ষা মৌসুমের এই সাদা শাপলাকেই দেওয়া হয়েছে আমাদের জাতীয় ফুলের মর্যাদা; বাংলাদেশের মুদ্রায়ও এর প্রতীক শোভা পাচ্ছে।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপল রচনাটি বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন। প্রিয় পাঠক, এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url