মহাদেশ কয়টি ও কি কি বিস্তারিত জেনে নিন

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে মহাদেশ কয়টি ও কি কি এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে মহাদেশ কয়টি ও কি কি তা বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
মহাদেশ কয়টি ও কি কি বিস্তারিত জেনে নিন
আমাদের পৃথিবী বিশাল এবং এটি বিভিন্ন ভৌগোলিক ও ভূরাজনৈতিক অঞ্চলে বিভক্ত। মূলত, ভূমিখণ্ডের ভিত্তিতে পৃথিবীকে সাতটি মহাদেশে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি মহাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি, ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, জলবায়ু এবং জীববৈচিত্র্য রয়েছে।

মহাদেশ কয়টি ও কি কি

ভৃপৃষ্ঠের স্থলভাগ কয়েকটি বড় বড় খন্ডে বিভক্ত। এরুপ এক একটি বড় খন্ডকে মহাদেশ বলা হয়। পৃথিবীর সমগ্র স্থলভাগকে এরুপ সাতটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। তাই পৃথিবীতে মহাদেশের সংখ্যা সাতটি। মহাদেশগুলো হলোঃ এশিয়া মহাদেশ, আফ্রিকা মহাদেশ, ইউরোপ মহাদেশ, উত্তর আমেরিকা মহাদেশ, দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ, এন্টার্কটিকা মহাদেশ ও ওসেনিয়া মহাদেশ। এন্টার্কটিকা বাদে বাকি ৬ টি মহাদেশ প্রায় ১৪ টি থেকে ৫৭ টি দেশ নিয়ে গঠিত।
এশিয়া মহাদেশ: পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশ হলো এশিয়া মহাদেশ। এর উত্তরে উত্তর মহাসাগর, দক্ষিণে ভারত মহাসাগর, পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর, দক্ষিণ-পশ্চিমে লোহিত সাগর ও আফ্রিকা এবং পশ্চিম ভূমধ্যসাগর ও ইউরোপ মহাদেশ অবস্থিত। ইউরাল পবর্তমালা এশিয়া ও ইউরোপ মহাদেশের মাঝে অবস্থিত। এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশকে পৃথক করেছে এডেন উপসাগর। জাপান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দ্বীপপুঞ্জ এ মহাদেশের অন্তর্গত।

আফ্রিকা মহাদেশ: আফ্রিকা মহাদেশ পৃথিবীর দ্বিতীয় মহাদেশ। এ মহাদেশে প্রায় ৫৪ টি দেশ রয়েছে। এর আয়তন প্রায় ৩ কোটি ২ লক্ষ ২১ হাজার বর্গকিলোমিটার। এ মহাদেশে ৩৭ ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখা থেকে থেকে প্রায় ৩৫ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষরেখা এবং ১৭ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমারেখা থেকে ৫১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমারেখা পর্যন্ত বিস্তৃত। এর পশ্চিমে আটলান্টিম মহাসাগর, দক্ষিণে দক্ষিণ মহাসাগর, পূর্বে ভারত মহাসাগর ও লোহিত সাগর এবং উত্তরে ভূমধ্যসাগর অবস্থিত। ভূমধ্যসাগর আফ্রিকা মহাদেশকে ইউরোপ মহাদেশ থেকে পৃথক করেছে। এ মহাদেশের অন্তর্গত সর্ববহৎ দ্বীপ হলো মাদগাস্কার।

উত্তর আমেরিকা মহাদেশে: উত্তর আমেরিকা পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মহাদেশ। এ মহাদেশে প্রায় ২৩ টির মতো দেশ আছে। এর আয়তন প্রায় ২ কোটি ৪২ লক্ষ ৫৬ হাজার বর্গকিলোমিটার। ত্রিভুজাকৃতি এ মহাদেশটি উত্তরে ৮৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখা থেকে দক্ষিণে ৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখা েএবং পূর্বে ৫২ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমারেখা থেকে পশ্চিমে প্রায় ১৭০ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমারেখা পর্যন্ত বিস্তৃত।

এর উত্তরে মহাসাগর, দক্ষিণে আমেরিকা, পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর ও পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর অবস্থিত। পানামা খাল উত্তর আমেরিকাকে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। উত্তর আমেরিকার চারপাশে অবস্থিত বহু ছোটবড় দ্বীপ ও মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত। এদের মধ্যে উত্তর কানাডার সংলগ্ন দ্বীপসমূহ, গ্রিনল্যান্ড, নিউফাউন্ডল্যান্ড ইত্যাদি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ: ত্রিকোণাকার এ মহাদেশটি পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম মহাদেশ। এ মহাদেশ ১২ টি দেশ নিয়ে গঠিত। এর আয়তন প্রায় ১ কোটি ৭৮ লক্ষ ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার। এ মহাদেশটি উত্তরে ১৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখা থেকে দক্ষিণে ৫৬ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষরেখা এবং পূর্বে ৩৪ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমারেখা থেকে পশ্চিমে ৮২ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমারেখার মধ্যে অবস্থিত।

এ মহাদেশের উত্তরে ক্যারিবিয়ান সাগর ও উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর, দক্ষিণে দক্ষিণ-মহাসাগর, পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর ও পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগর অবস্থিত। এ মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে বহু ছোট ছোট দ্বীপ রয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।

এন্টার্কটিকা মহাদেশ: এন্টার্কটিকা মহাদেশ পৃথিবীর পঞ্চমতম মহাদেশ এবং পৃথিবীর দক্ষিণপ্রান্তে অবস্থিত। দক্ষিণ মেরুকে কেন্দ্র করে িএন্টার্কটিকা মহাদেশ প্রায় বৃত্তাকারে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ১ কোটি ৩২ লক্ষ ৯ হাজার বর্গকিলোমিটার। ৯০ ডিগ্রি দক্ষিণ মেরু থেকে ৬০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যবর্তী স্থান পর্যন্ত এ মহাদেশ বিস্তৃত। দক্ষিণ মহাসাগর এ মহাদেশটিকে ঘিরে রয়েছে।

এটি সারা বছর বরফে ঢাকা থাকে এবং পৃথিবীর শীতলতম মহাদেশ। এর জলবায়ু জীবনধারণের অনুকূল নয়। এখানে মস শৈবাল জাতীয় উদ্ভিদ জন্মে। এ মহাদেশের প্রাণিকুলের মধ্যে সীল, পেঙ্গুইন ও অ্যালবাট্রস পাখি অন্যতম।

ইউরোপ মহাদেশ: এশিয়া ও ইউরোপকে একত্রে ইউরেশিয়া বলা হয়। ইউরেশিয়ার পশ্চিমাংশের নাম ইউরোপ মহাদেম। ইউরাল পর্বত, ইউরাল নদী, কাম্পিয়ান সাগর ও ককেশাস পবর্তশ্রেণি এশিয়া থেকে ইউরোপ মহাদেশকে পৃথক করেছে। এ মহাদেশ ৩৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখা থেকে ৭১ ডিগ্রি উত্তর অক্ষরেখা এবং ২৫ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমারেখা থেকে ৬৬ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমারেখা পর্যন্ত বিস্তৃত।

এ মহাদেশ প্রায় ৪৮ টি দেশ নিয়ে বিস্তৃত। ইউরোপের আয়তন প্রায় ৯৯ লক্ষ ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এবং এটি পৃথিবীর ষষ্ঠতম মহাদেশ। এর উত্তরে উত্তর মহাসাগর, পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর, দক্ষিণে ভূমধ্যসাগর ও কৃষ্ণ সাগর, পূর্বে কাম্পিয়ান সাগর, ইউরাল নদী ও ইউরাল পর্বত অবস্থিত। ব্রিটিশ দ্বীপপুুঞ্জ ও আইসল্যান্ড দ্বীপ এ মহাদেশের অন্তর্গত।

ওসেনিয়া মহাদেশ: প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ভাসমান ছোটবড় অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে ওসেনিয়া মহাদেশ গঠিত। তাই একে দ্বীপ মহাদেশও বলা হয়। এটি পৃথিবীর সপ্তম ও ক্ষুদ্রতম মহাদেশ। অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমা অনুসারে এটি পশ্চিমে প্রায় ১১৪ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা থেকে পূর্ব ১২০ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমা এবং উত্তরে প্রায় ২৮ ডিগ্রি উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ৪৭ ডিগ্রি অক্ষরেখা পর্যন্ত বিস্তৃত। ওসেনিয়া মহাদেশের আয়তন প্রায় ৮১ লক্ষ ১২ হাজার বর্গকিলোমিটার।

এ মহাদেশ ১৪ টি দেশ নিয়ে গঠিত। অস্ট্রেলিয়া নামক দেশটি এ মহাদেশের বৃহত্তম দেশ। এর আয়তন প্রায় ৭৬ লক্ষ ৮২ হাজার ৩০০ বর্গকিলোমিটার। সমগ্র মহাদেশটি ৪ অঞ্চলে বিভক্ত। যথা অস্ট্রালেশিয়া, মেলানেশিয়া, মাইক্রোনেশিয়া এবং পলিনেশিয়া।

অস্ট্রালেশিয়া: অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এ দেশ দুটিকে একত্রে বলা হয় অস্ট্রালেশিয়া। (অস্ট্রাল = দক্ষিণ এবং এশিয়া দেশ বা ভূখন্ড অর্থাৎ দক্ষিণের দেশ)।

মেলানেশিয়া: পাপুয়া নিউগিনি, সোলোমান দ্বীপপুঞ্জ, টুভালু, রিপাবলিক অফ ভানুয়াতু, নিউ ক্যালেডোনিয়া, ওয়ালিশ ও ফিউটান দ্বীপপুঞ্জ এবং ফিজি এই ৭টি দেশকে একত্রে মেলানেশিয়া বলে। এ অঞ্চলের প্রাচীন অধিবাসীদের গায়ের বর্ণ কালো বা মেলান থেকে এ অঞ্চলের নাম মেলানেশিয়া বা কালোদেশ।

মাইক্রোনেশিয়া: পালাউ, উত্তর ম্যারিয়ান দ্বীপপুঞ্জ, ফরাসি গুয়াম দ্বীপ, মার্শাল দ্বীপ, কিরিবাটি, নাউরু এবং ফেডারেল স্টেট অফ মাইক্রোনেশিয়া। মাইক্রো অর্থ ক্ষুদ্র। অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ ও রাষ্ট্র নিয়ে এ অঞ্চলটি গঠিত বলে একে মাইক্রোনেশিয়া বলা হয়।

পলিনেশিয়া: পশ্চিম সামোয়া, আমেরিকা সামোয়া, টোঙ্গা, কুক দ্বীপ, ফরাসি পলিনেশিয়া এবং পিটকেইন এ অঞ্চলে অবস্থিত। পলি অর্থ বহু। বহুসংখ্যক দ্বীপপুঞ্জ ও রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত বলে এই অঞ্চলকে পলিনেশিয়া বলা হয়।

পৃথিবীতে কয়টি মহাসাগর রয়েছে

পৃথিবীতে মোট পাঁচটি প্রধান মহাসাগর রয়েছে, যার মধ্যে এন্টার্কটিকা (দক্ষিণ মহাসাগর) এবং আর্কটিক মহাসাগরও অন্তর্ভুক্ত। এই মহাসাগরগুলো হলো—প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর, ভারত মহাসাগর, আর্কটিক মহাসাগর এবং দক্ষিণ মহাসাগর (এন্টার্কটিকা মহাসাগর)।

প্রশান্ত মহাসাগর পৃথিবীর বৃহত্তম ও গভীরতম মহাসাগর, যা এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যে অবস্থিত। আটলান্টিক মহাসাগর আকারে দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং এটি ইউরোপ, আফ্রিকা ও আমেরিকার মধ্যে বিস্তৃত। ভারত মহাসাগর দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অবস্থান করছে এবং এটি তাপমাত্রার দিক থেকে অন্যতম উষ্ণ মহাসাগর। 

আর্কটিক মহাসাগর হলো পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম ও সবচেয়ে শীতল মহাসাগর, যা উত্তর মেরুর চারপাশে বিস্তৃত এবং বছরের বেশিরভাগ সময় বরফে ঢাকা থাকে। সবচেয়ে নবীন স্বীকৃত মহাসাগর হলো দক্ষিণ মহাসাগর বা এন্টার্কটিকা মহাসাগর।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে মহাদেশ কয়টি ও কি কি এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েছেন এবং উপকৃত হতে পেরেছেন।  এ রকম আরো তথ্য মূলক পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url