১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির কারণ বিস্তারিত জেনে নিন
ভারতীয় উপমহাদেশে ১৯৪৭ সালে ঘটে যাওয়া বিভক্তি এক বিশাল রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের প্রতিফলন। এটি শুধুমাত্র দুটি দেশের জন্ম দেয়নি, বরং লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনেছিল। এ প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করবো কেন ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়েছিল এবং এর পেছনে কি কি কারণ ছিল
ঐতিহাসিক পটভূমি
ঐতিহাসিক পটভূমি
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস
ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাস বহু প্রাচীন এবং বহু সংস্কৃতির মিশ্রণে গঠিত। বিভিন্ন রাজবংশ, সাম্রাজ্য এবং ধর্মীয় সম্প্রদায় এখানে একত্রে বসবাস করতো। তবে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। পোস্ট সূচিপত্র
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সূচনা
১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর থেকে ব্রিটিশরা ধীরে ধীরে পুরো ভারত উপমহাদেশে তাদের শাসন কায়েম করে। তাদের শাসনব্যবস্থা, শোষণ এবং বিভাজন নীতি ভারতের রাজনৈতিক এবং সামাজিক কাঠামোকে প্রভাবিত করে।
বিভক্তির রাজনৈতিক কারণ
কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের দ্বন্দ্ব
কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের মধ্যে রাজনৈতিক মতপার্থক্য ছিল বিভক্তির অন্যতম প্রধান কারণ। কংগ্রেস একটি ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের পক্ষে ছিল, যেখানে মুসলিম লীগ একটি পৃথক মুসলিম রাষ্ট্রের দাবি জানায়।
দুটি জাতির তত্ত্ব
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দুটি জাতির তত্ত্ব অনুসারে, হিন্দু ও মুসলিমরা দুটি পৃথক জাতি এবং তাদের নিজস্ব রাষ্ট্র প্রয়োজন। এই তত্ত্ব ভারতের বিভক্তির একটি প্রধান ভিত্তি ছিল।
ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক কারণ
হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা
ধর্মের ভিত্তিতে হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধি পায় এবং তা বিভক্তির অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ব্রিটিশ শাসনের সময় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষগুলি আরো প্রকট হয়ে ওঠে।
ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্তির দাবি
মুসলিম লীগের দাবি ছিল যে মুসলিমদের একটি পৃথক রাষ্ট্র দরকার যেখানে তারা তাদের নিজস্ব ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা বজায় রাখতে পারে। এই দাবি ভারতের বিভক্তিকে ত্বরান্বিত করে।
অর্থনৈতিক কারণ
অর্থনৈতিক অসামঞ্জস্য
ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অর্থনৈতিক অসামঞ্জস্য বৃদ্ধি পায়। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলি প্রায়শই অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে ছিল, যা পৃথক রাষ্ট্রের দাবিকে জোরদার করে।
শাসনব্যবস্থার অব্যবস্থা
ব্রিটিশ শাসনের সময় শাসনব্যবস্থার অব্যবস্থা ও দুর্নীতি বৃদ্ধি পায়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ে এবং তারা স্বাধীনতা ও নিজেদের শাসনব্যবস্থার জন্য আন্দোলন শুরু করে।
সামাজিক কারণ
সমাজের ভাঙন
ভারতীয় সমাজে ব্রিটিশ শাসনের প্রভাবে বিভিন্ন বিভাজন সৃষ্টি হয়। হিন্দু-মুসলিম, উচ্চবর্ণ-নিম্নবর্ণ ইত্যাদি বিভিন্ন ভাঙন সমাজকে দুর্বল করে তোলে।
শিক্ষিত সমাজের ভূমিকা
শিক্ষিত সমাজের মধ্যে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ বৃদ্ধি পায়। তারা স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন শুরু করে এবং এর ফলে বিভক্তির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
ব্রিটিশ শাসনের ভূমিকা
বিভাজন নীতি
ব্রিটিশরা "Divide and Rule" নীতি প্রয়োগ করে ভারতীয় সমাজকে বিভক্ত করে। এর ফলে হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষ বৃদ্ধি পায় এবং বিভক্তির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
প্রশাসনিক অব্যবস্থা
ব্রিটিশ প্রশাসন তাদের শাসন বজায় রাখতে বিভিন্ন অব্যবস্থা সৃষ্টি করে। এই অব্যবস্থা সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করে এবং স্বাধীনতার আন্দোলনকে শক্তিশালী করে।
গান্ধী ও জিন্নাহর ভূমিকা
মহাত্মা গান্ধীর প্রভাব
মহাত্মা গান্ধী ছিলেন অহিংস আন্দোলনের প্রবক্তা। তার নেতৃত্বে স্বাধীনতার আন্দোলন তীব্র হয় এবং ভারতীয়রা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর প্রভাব
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মুসলিম লীগের নেতা হিসেবে পৃথক মুসলিম রাষ্ট্রের দাবিকে জোরদার করেন। তার নেতৃত্বে মুসলিম সম্প্রদায় একটি পৃথক রাষ্ট্রের জন্য আন্দোলন করে।
ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন
স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগতি
ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন ধীরে ধীরে তীব্র হয়। কংগ্রেস ও অন্যান্য দলগুলির নেতৃত্বে সাধারণ মানুষ ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে।
দেশপ্রেমিক নেতাদের অবদান
মহাত্মা গান্ধী, জওহরলাল নেহরু, সুভাষ চন্দ্র বসু প্রমুখ নেতাদের অবদান স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাব
যুদ্ধপরবর্তী পরিস্থিতি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে। যুদ্ধের ফলে ব্রিটিশ অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তারা ভারতের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হয়।
ব্রিটিশ শাসনের দুর্বলতা
যুদ্ধের পর ব্রিটিশরা ভারতের উপর শাসন বজায় রাখতে হিমশিম খায়। ফলে তারা ভারতকে স্বাধীনতা দিতে বাধ্য হয়।
বিভক্তির সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা
মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা
লর্ড মাউন্টব্যাটেন ছিলেন ভারতের শেষ ব্রিটিশ ভাইসরয়। তার পরিকল্পনার ভিত্তিতেই ভারত বিভক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url