পোটেনশিয়াল/সম্ভাব্য/সম্ভাবনাময় বা প্রত্যাশিত (GNP) জিএনপি কাকে বলে?

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে সম্ভাব্য/ সম্ভাবনাময় বা প্রত্যাশিত জিএনপি ( GNP ) কাকে বলে এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়বেন। আপনি যদি এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়েন তাহলে প্রত্যাশিত জিএনপি কাকে বলে তা বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রিয় পাঠক, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
পোটেনশিয়ালসম্ভাব্যসম্ভাবনাময় বা প্রত্যাশিত ( GNP ) জিএনপি কাকে বলে
কোন একটি নির্দিষ্ট সময়ে সাধারণত এক বছরে দেশে সকল উপকরণসমূহ উৎপাদন কাজে নিয়োজিত থেকে যে পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রী ও সেবাকর্ম উৎপাদন হয় তার আর্থিক মূল্যকে প্রকৃত জাতীয় উৎপাদন বলা হয়। পক্ষান্তরে, কোন দেশে উৎপাদনের উকরনসমূহ পরিপূর্ণ দক্ষতার সাথে উৎপাদন কাজে নিয়েজিত থাকলে যে পরিমান উৎপাদন হবে বলে প্রত্যাশা করা হয় তাকে সম্ভাব্য জিএনপি বলা হয়।

সম্ভাবনাময় বা প্রত্যাশিত ( GNP ) জিএনপি কাকে বলে?

সম্ভাবনাময় বা প্রত্যাশিত জাতীয় উৎপাদন (GNP) বলতে বোঝায় একটি দেশের নির্দিষ্ট সময়ে (সাধারণত এক বছর) উৎপাদিত সমস্ত চূড়ান্ত পণ্য ও সেবার মোট বাজারমূল্যকে।কোন দেশে উৎপাদনের উকরনসমূহ পরিপূর্ণ দক্ষতার সাথে উৎপাদন কাজে নিয়েজিত থাকলে যে পরিমান উৎপাদন হবে বলে প্রত্যাশা করা হয় তাকে সম্ভাব্য বা প্রত্যাশিত জিএনপি বলা হয়। জিএনপি একটি দেশের অভ্যন্তরে এবং দেশের বাইরে বসবাসকারী নাগরিকদের দ্বারা অর্জিত আয় এবং উৎপাদনের একটি পরিমাপ। জাতীয় অর্থনীতির শক্তি পর্যালোচনা এবং তুলনা করার জন্য জিএনপি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক হিসেবে কাজ করে।

জিএনপির মূল হিসাবধারায় দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদিত পণ্য ও সেবার পাশাপাশি বিদেশ থেকে আয় করা অর্থও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে, এতে বিদেশি প্রতিষ্ঠান বা নাগরিকদের দ্বারা আয় করা অর্থ বাদ দেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি একজন বাংলাদেশি নাগরিক বিদেশে কাজ করে আয় করে, সেটি বাংলাদেশের জিএনপিতে যুক্ত হবে, কিন্তু বাংলাদেশে কাজ করা একজন বিদেশির আয় জিএনপি থেকে বাদ হবে।
জিএনপি একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্র তুলে ধরে এবং এটি জীবনের মান, বিনিয়োগের পরিমাণ এবং সরকারের অর্থনৈতিক নীতিমালার কার্যকারিতা বোঝার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতি নির্ধারণ করতেও সাহায্য করে।

আধুনিক অর্থনীতিতে জিএনপি এবং জিডিপি (GDP) উভয়ই গুরুত্বপূর্ণ, তবে তাদের মধ্যে পার্থক্য হলো জিডিপি কেবলমাত্র দেশের ভৌগোলিক সীমানার ভেতরে উৎপাদনকে বিবেচনা করে, আর জিএনপি দেশের নাগরিকদের উৎপাদন ও আয়কে ভিত্তি করে।

ওকান বিধি কি?

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট অধ্যাপক আর্থার ওকান (Arthur Okun) জিএনপি (Gross National Product) এবং অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতার সম্পর্ক নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন, যা "ওকান বিধি" (Okun's Law) নামে পরিচিত। এই বিধি অনুযায়ী, একটি দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি এবং বেকারত্বের হারের মধ্যে একটি বিপরীত সম্পর্ক বিদ্যমান। অর্থাৎ, যখন জিএনপি বৃদ্ধির হার বাড়ে, তখন বেকারত্ব হ্রাস পায় এবং এর বিপরীত ঘটনাও ঘটে।

ওকান বিধির মূল ভিত্তি হলো অর্থনৈতিক উৎপাদনের হার (Output Growth Rate) এবং শ্রম বাজারের অবস্থার মধ্যে এই সংযোগ। তিনি পর্যবেক্ষণ করেন যে, যদি একটি দেশের প্রকৃত উৎপাদন তার সম্ভাব্য উৎপাদনের তুলনায় কম থাকে, তাহলে অর্থনীতি বেকারত্বের সমস্যার মুখোমুখি হয়। উদাহরণস্বরূপ, ওকানের মতে, জিএনপিতে প্রতি ১% বৃদ্ধি আনতে হলে বেকারত্বের হারকে প্রায় ২% হ্রাস করতে হয়। যদিও বাস্তবে এই হার বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো এবং শ্রম বাজারের পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তিত হতে পারে।
ওকান বিধি অর্থনীতির নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে। এটি অর্থনীতির সামগ্রিক কর্মক্ষমতা মূল্যায়নে এবং মুদ্রানীতি ও আর্থিক নীতিমালা নির্ধারণে সহায়ক। বিশেষ করে, এটি দেখায় যে, বেকারত্ব নিয়ন্ত্রণ করতে হলে জিএনপি বৃদ্ধির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

সারাংশে, ওকান বিধি আমাদের শেখায় যে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং শ্রম বাজারের উন্নতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই তত্ত্ব অর্থনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি কার্যকর হাতিয়ার, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার মধ্যে সম্পর্ক বোঝাতে সাহায্য করে।

বেকারত্ব কি?

বেকারত্ব হলো একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা যা সমাজের সদস্যদের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সহজ কথায়, যখন একজন মানুষ কাজ করার জন্য সক্ষম এবং কাজ করতে ইচ্ছুক, কিন্তু উপযুক্ত কাজের সুযোগ না পেয়ে কর্মহীন থাকে, তখন তাকে বেকার বলা হয়। বেকারত্ব শুধু ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক স্থিতির ক্ষতি করে না, এটি সমাজ ও রাষ্ট্রের অর্থনীতিকেও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করে।

বেকারত্বের মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শিল্পায়ন বা প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে মানুষের কাজের চাহিদা কমে যাওয়া। এর ফলে অনেক শ্রমিক কাজ হারায় এবং নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হতে দেরি হয়। এছাড়াও, শিক্ষার মান ও দক্ষতার অভাব, জনগণের মধ্যে সঠিক পেশাগত প্রশিক্ষণের ঘাটতি, এবং চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতার বৃদ্ধি বেকারত্বের কারণ হিসেবে কাজ করে।

বেকারত্বের প্রভাব খুব গভীর এবং বহুমুখী। একটি পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তির কর্মহীনতা মানে পুরো পরিবারের উপর আর্থিক চাপ বৃদ্ধি। এ থেকে মানসিক অবসাদ, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দেয়। রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেও বেকারত্বের উচ্চ হার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করে। করদাতা কমে গেলে রাষ্ট্রের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয় এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি পায়। পোস্ট সূচিপত্র

সমস্যা সমাধানের জন্য যথাযথ কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষার মানোন্নয়ন, এবং পেশাগত প্রশিক্ষণ প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে, উদ্যোক্তা মনোভাবের বিকাশ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সম্প্রসারণ বেকারত্ব কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বেকারত্বের সমাধান শুধু ব্যক্তি নয়, পুরো সমাজের সামগ্রিক উন্নতির জন্য অপরিহার্য।

উপসংহার

প্রিয় পাঠক, আজকে আমি আপনাদের সাথে সম্ভাবনাময় বা প্রত্যাশিত জিএনপি ( GNP ) কাকে বলে এই টপিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি এই পোস্টটি পড়ে উপকৃত হতে পেরেছেন। এ রকম আরো পোস্ট পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন। আমরা সবসময় পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী পোস্ট পাবলিশ করে থাকি। এই পোস্টটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url