ইসলামি ছাত্র শিবিরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছাত্র শিবিরের সংবিধান অনুযায়ী

ইতিহাসের ধারায় শিবিরের আবির্ভাব

রাসূল (সা.) এর পর যুগে যুগে আল্লাহর নেক বান্দারা এভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করে গেছেন। তারা কেউ কখনও একাকী ইসলাম নিয়ে বসে থাকেন নি। তাই ইতিহাসের ধারা অনুসরণ করে ছাত্র সমাজকে মহান সংগ্রামের পথে সংঘবদ্ধ করার জন্য জন্ম লাভ করেছে বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির।
ইসলামি ছাত্র শিবিরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছাত্র শিবিরের সংবিধান অনুযায়ী
আমাদের দেশের শতকরা প্রায় ৯০ জন মুসলমান। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হিসেবে এখানে ইসলামি বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালিত হওয়ার কথা। কেননা ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। একজন মানুষ পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশি প্রভৃতির সাথে কেমন সম্পর্ক রক্ষা করবে: সমাজের কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবি, রাজনীতিবিদ, কার কি দায়িত্ব হবে, দেশের বিবিধ সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সমস্যার সমাধান কিভাবে হবে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে কেমন সম্পর্ক রাখতে হবে ইসলামে সব কিছু বলে দেওয়া আছে। 

কিন্তু ৮৮.৪% মুসলমানদের এ দেশে কোনো দিক দিয়েই এগুলো মেনে চলা হচ্ছে না। দেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় এ সম্পর্কে শিখানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক দৈন্যতা, শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশের অভাব ও সামাজিক নানা প্রকার সমস্যাগুলো দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করেছে। আমরা এ অবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা না করলে কিয়ামতের ময়দানে আল্লাহর কাছে কঠিন জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে।

ইসলামি ছাত্র শিবিরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবিরের জন্ম ছাত্রসমাজকে আগামী দিনের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দিয়েছে। শিবির আল্লাহ প্রদত্ব আর রাসূল (সা.) প্রদর্শিত বিধানের ভিত্তিতে মানবতার সার্বিক পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন করতে চায়। আর এ কাজ করা যেহেতু প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব এবং সমষ্টিতগতভাবে মুসলিম জাতির দায়িত্ব, অতএব আলী, খালিদ, তারিক ও মুহাম্মদ বিন কাশিমের উত্তরসূরি সংগ্রামী তরুণদের জন্য শিবিরের পথ হচ্ছে-আলোকিত জীবনের পথ। ইসলামি ছাত্রশিবির ছাত্রসমাজকে আল্লাহর রাহে নিজেদের বিলিয়ে দেওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানায়। জান্নাতের পথে ডাক দিয়ে যায় বারবার: অবিরাত।

ইসলামি ছাত্র শিবিরের পাঁচ দফা দাবি

আল্লাহর পথে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া সহজ কথা নয়: বরং আগেই আলোচিত হয়েছে নিজেদের যাবতীয় যোগ্যতা আর সুযোগকে পুরোপুরি আল্লাহর কাজে লাগানোই হচ্ছে এর সঠিক পন্থা। এজন্য দরকার বৈজ্ঞানিক কর্মসূচি। যে কর্মসূচির মাধ্যমে আজকের ছাত্ররা সবচেয়ে যোগ্য রুপে গড়ে উঠতে পারবে। আর কঠিন সাধনায় গড়ে তোলা যোগ্যতা এবং ব্যক্তিত্বকে মহান আল্লাহর পথে লাগাবে। তাই শিবিরের রয়েছে পাঁচ দফা কর্মসূচি।

এক দফা: দাওয়াত

এ দফার কাজ সাধারণ ছাত্রদেরকে ইসলামের সঠিক দাওয়াত দেওয়া। ইসলাম সম্পর্কে পড়াশুনা করার জন্য তাদেরকে উৎসাহিত করা আর তাদের মাঝে ইসলাম মেনে চলার অভ্যাস সৃষ্টি করা।

দুই: সংগঠন

যারা ইসলামের দাওয়াত গ্রহন করে নিজেদের জীবনে তা মেনে চলে এবং পৃথিবীর মাঝে ইসলাম প্রতিষ্ঠার মহান সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে চায় তাদের সংঘবন্ধ করাই এ দফার কাজ।

তিন: প্রশিক্ষণ

যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য সংঘবদ্ধ হবে, তাদের সাহাবায়ে কিরামের আদর্শ অনুযায়ী তৈরি হতে হবে। তাদের উন্নতি নৈতিকতা আর চারিত্রিক যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। তাদের দুনিয়ার সবকিছু আল্লাহর রাস্তায় কুরবানি করায় অভ্যস্ত হতে হবে। তাদের ভালো ছাত্রও হতে হবে যাতে সমাজ ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তারা ইসলাম কায়েমের পথ সুগম করতে পারে। তাই এসব ধরনের যোগ্যতা ও অনুভূতি সৃষ্টি করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া এ দফার কাজ।

চার: ইসলামি আন্দোলন ও ছাত্র সমস্যা সমাধান

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদের যোগ্য নাগরিক, চরিত্রবান মানুষ এবং উপযুক্ত মুসলমান হওয়ার শিক্ষা দেয় না। তাই সমাজে ইসলাম কায়েমের জন্য চাই ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থা, যার মাধ্যমে ইসলামি সমাজ বিনির্মাণের সৈনিক তৈরি হবে। যারা উপযুক্ত শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, চাকুরিজীবি, ডাক্তার প্রভৃতি হওয়ার পাশাপাশি একজন যথার্থ মুসলিম এবং আল্লাহর যোগ্য সৈনিক হবেন। তাই ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার জন্য সংগ্রাম করা এ দফার কাজ। ইসলাম প্রতিষ্ঠাই মানবতার সবচেয়ে বড়ো খিদমত। খিদমত যারা করবেন তারা মানবতার উপকারের সকল সুযোগই কাজে লাগাবেন। তাই ছাত্র সংগঠন হিসেবে ছাত্রশিবির এ দফায় ছাত্রদের প্রকৃত সমস্যার সমাধানে সার্বিক প্রচেষ্টা চালানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছে।

পাঁচ: ইসলামি সমাজ বিনির্মাণ

পূর্ববর্তী দফার কাজগুলোর মাধ্যমে এমন নেতৃত্ব ও কর্মীবাহিনী তৈরি হবে যারা ইসলামি সমাজ বিনির্মাণ ও ইসলামি সমাজ পরিচালনায় যাবতীয় যোগ্যতার অধিকারি হবেন। তাই এ যোগ্য জনশক্তিতে সে দায়িত্ব পালনে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করা এ কর্মসূচির কাজ। সমাজে, রাষ্ট্রে ইসলাম বিরোধী যে কোনো তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রয়োজনে প্রতিরোধ গড়ে তোলাও এ দফার অন্তর্ভূক্ত

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url